somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিভাবে রুহ কবজ হয়

০৫ ই অক্টোবর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রুহ কবজের প্রক্রিয়া সম্পর্কে মিরাজ সম্পর্কিত হাদীসসমূহে এভাবে বলা হয়েছে। হযরত আজরাইলের সামনে একটি তালিকা রয়েছে যাতে সকল মানুষের নাম রয়েছে। যার মৃতু্য ঘনিয়ে আসে তার নাম ঐ তালিকা থেকে মুছে ফেলা হয় এবং হযরত আজরাইল (আঃ) সাথে সাথে তার রুহ কবজ করে নেন। হতে পারে একত্রে সহস্রাধিক মানুষের নাম মুছে যেতে পারে এবং হযরত আজরাইল (আঃ) তাদের সকলের রুহ কবজ করে নিতে পারেন তাতে আশ্চর্য হওয়ার কোন কারণ নেই। যেমন ঝড় এক মূহুর্তে সহস্র প্রদীপ নিভিয়ে দিতে পারে। এ সবই আল্লাহর ইচ্ছায় হয়ে থাকে। হযরত আজরাইল রুহ কবজ করেন কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আল্লাহই মৃত্যু দান করেন। কেননা আজরাইল আল্লাহর নির্দেশে রুহ কবজ করেন আর এ কারণেই কোরআন মাজিদে কখনো বলা হয়েছে আল্লাহ রুহ কবজ করেন। আবার কখনো বলা হয়েছে হযরত আজরাইল রুহ কবজ করেন। কখনো আবার বলা হয়েছে ফেরেশতাগণ রুহ কবজ করেন, তিনটিই ঠিক। কেননা হযরত আজরাইল(আঃ) এবং তাঁর সহকর্মী ফেরেশ্তাগণ আল্লাহর নির্দেশেই রুহ কবজ করে থাকেন। যেমন কোন সম্রাট তার সৈন্য ও সেনাবাহিনীর প্রধানদের সাহায্যে কোন দেশ জয় করে থাকে। অতএব এটা বলা ঠিক হবে যে সৈন্যরা অমুক রাষ্ট্র জয় করেছে। আবার বলতে পারি যে সিপাহসালার (সেনাপ্রধান) দেশটিকে জয় করেছে। আবার এটা বলাও ঠিক যে সম্রাট দেশটিকে জয় করেছে। উদাহরণটি বিষয়টিকে বোঝানোর জন্য আনা হয়েছে নইলে বিষয়টি এসবের অনেক উধের্্ব।
মোদ্দা কথা আল্লাহই মানুষের মৃতু্য দিয়ে থাকেন। তবে মনে রাখতে হবে যে আল্লাহ পৃথিবীকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সৃষ্টি করেছেন। অতএব মৃতু্যর জন্যেও কিছু কারণ তিনি নির্দিষ্ট করেছেন। যেমন কোন উঁচু স্থান থেকে পড়ে যাওয়া, অসুস্থ হওয়া, নিহত হওয়া ইত্যাদি। তবে এসব হচ্ছে ওছিলা বা কারণ মাত্র। কেননা এমনও দেখা যায় যে অতি মুমূর্ষ রোগীও অনেক সময় বেঁচে ওঠে আবার অতি সামান্য অসুখে অনেকে মারা যায়। সুতরাং অসুস্থতা, নিহত হওয়া, উঁচু স্থান থেকে পড়ে যাওয়া ইত্যাদি মৃতু্যর অনিবার্যর্ কারণ নয়। আয়ু শেষ হয়ে গেলে মহান আল্লাহ তার জান কবজ করে নেন। এমন প্রচুর দেখা যায় যে অনেক ব্যক্তিই কোন ধরণের অসুস্থতা ছাড়াই মারা যায়।
মালাকুল মাউত সম্পর্কে আরও একটি কথা হচ্ছে যে, যখন তিনি জান কবজ করতে আসেন ব্যক্তি অনুসারে তার চেহারায় পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত ইব্রাহীম (আঃ) বললেন,"কাফেরদের জান কবজ করার সময় আজরাইলের চেহারা কেমন হয় আমি তা দেখতে চাই।" বলা হলঃ তুমি তা দেখে সহ্য করতে পারবে না। ইব্রাহীম (আঃ) বললেন," আমার দেখার ইচ্ছা হচ্ছে।" আজরাইল (আঃ) ঐ অবস্থায় তাঁর সামনে হাজির হলেন। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) দেখলেন, একজন ময়লা ও কালো কাপড় পরা দুর্গন্ধ যুক্ত কুৎসিত লোক যার শরীরের পশম খাড়া হয়ে আছে এবং নাক ও মুখ দিয়ে আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে। ইব্রাহীম (আঃ) অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন। জ্ঞান ফিরে আসার পর বললেনঃ কাফেরদের যদি আর কোন আজাব নাও হয় তোমাকে দেখার আজাবই তাদের জন্য যথেষ্ট। মোমিনদের ক্ষেত্রে এর বিপরীত।
শয়তান বাম দিক থেকে মুমূর্ষ (মৃতু্যমুখী) ব্যক্তির কাছে আসে আর ফেরেশতাগণ ডান দিক থেকে আসেন। শয়তানদের কাজ হল প্রতারণা করা বিশেষ করে মৃতু্যর সময়। যদি সামান্যতম ঈমানও কারো অবশিষ্ট থাকে সেটাও ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য। কেননা শেষ পরিণতিই মানুষের সৌভাগ্য ও দূর্ভাগ্যকে নির্ণয় করে। যে যেমনভাবে জীবন-যাপন করেছে তেমনভাবেই মৃতু্যবরণ করবে এবং যেমনভাবে মৃতু্যবরণ করবে তেমনভাবেই পূণরুত্থিত হবে। মৃতু্যর সময় তোমরা যে আশা নিয়ে মৃতু্যবরণ করবে, যদি তোমাদের আশা থাকে হযরত আলী (আঃ)-এর পবিত্র চেহারা দেখার, তাঁকে দেখতে পাবে। আর যদি প্রবৃত্তির তাড়না থাকে তাহলে গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। তবে যদি কেউ সত্যিকার অর্থে ঈমান আনয়ন করে আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে শয়তান তাদেরকে গোমরাহ করতে পারবে না।
আবু যাকারিয়া রাজিকে মৃতু্যর সময় বলা হল, বলঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ; তিনি বললেনঃ বলব না। অতঃপর বেহুশ হয়ে গেল, জ্ঞান ফেরার পর বললঃ কেউ একজন আমাকে বলছিল যদি সৌভাগ্যবান হতে চাও তাহলে বলঃ ঈসা ইবনুল্লাহ। আমি বললাম বলবনা, অনেকক্ষণ পর বলল, বল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ; । আমি বললামঃ তুমি বলছ একারণে আমি বলবনা। তখন তার মাথায় সজোরে কিছুর আঘাত হওয়াতে সে পড়ে গেল। তখন রাজি কলেমা শাহাদৎ পাঠ করল এবং মৃতু্যবরণ করল।
যে সারা জীবন সঠিকভাবে তৌহিদের ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকেছে শয়তান কখনোই তার ওপর কর্তৃত্ব করতে পারবে না। হঁ্যা যদি কেউ তার জীবনের কিছু অংশ শয়তানের আনুগত্য করে থাকে মৃতু্যর সময়ও শয়তান তার সঙ্গী হবে।

সূরা যুমার-৪২, সূরা সিজদাহ-১১, সূরা মুহাম্মাদ-২৭,
বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড-৩
২৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×