রাত ১২ টা, এসএসসি পরীক্ষার সিজন। ঘরে ঘরে আজ পরীক্ষার্থী। ঢাকা উত্তরার দক্ষিণখান থানার আশকোনা এলাকায় সন্ধার পর থেকে মাইকে উচ্চ আওয়াজে গান বাজাচ্ছে। এলাকার সকল পরীক্ষার্থীদের ডিস্টার্ব হচ্ছে।
সময় গড়িয়ে যায় তবুও গান থামে না। বিষয়টা আমি সচেতন নাগরিক হিসেবে সহ্য করতে পারছিলাম না। কিন্তু গান বন্ধ করার পদক্ষেপ নেয়ার মত কোন অপশন ও পাচ্ছিলাম না। এমন সময় হটাত মনে পরলো ৯৯৯ সেবার কথা।
মুবাইল হাতে নিয়ে চিন্তা করতে লাগলাম কল দিবো কি দিবো না। শেষমেশ সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কল দিয়ে ফেললাম।
কল ধরলেন এক ভদ্রলোক। ভদ্রলোকের সম্বোধন ও কথা বলার ধরনেই মন খুশি হয়ে গেলো। সাহস বৃদ্ধি পেলো। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কম্পানির টেকনিকাল সাপোর্টারদের মত স্যার স্যার সম্বোধন করে কথা বলছিলেন ভদ্রলোক।
নাম পরিচয় লোকেশন জানিয়ে তাকে আমার অভিযোগের কথা বলে জিজ্ঞেস করলাম: স্যার, আমার অভিযোগ যেটা সেটা কি অভিযোগ করার মত?
তিনি বললেন: হ্যা হ্যা, অবশ্যই। এভাবে সাউন্ড পলুশন কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। তারউপর ছেলে মেয়েদের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আপ্নি কল করে অনেক ভাল করেছেন।
তারপর বললেন: আপ্নি লাইনে থাকুন আমি অত্র এলাকার ডিউটি অফিসারের সাথে আপনাকে কথা বলিয়ে দিচ্ছি। তিনি অফিসারকে কল দিলেন। রিং হতে হতে কল কেটে গেলো।
সাথে সাথে তিনি কল ব্যাক করলেন। বললেন: দুঃখিত লাইনটা কেটে গেলো, আপ্নি লাইনে থাকুন আবার কল দিচ্ছি। তিনি আবার কল দিলেন। কর্তব্যরত অফিসার কল ধরলেন। আমার অভিযোগ ভাল করে শুনলেন। আমার সাপোর্ট হিসেবে ৯৯৯ থেকে ভদ্রলোকও বলে দিলেন প্লিজ বিষয়টা এখনি সমাধান করেন, কারণ ছেলে মেয়েদের পরীক্ষা।
কর্তব্যরত অফিসার জ্বি জ্বি বলে বললেন, আমি এখনি দেখছি বিষয়টা। তিনি শুধু এক্টা প্রশ্ন করলেন: কোন ওয়াজ মাহফিলের সাউন্ড না তো? আমি বললাম, না স্যার। ওয়াজ নয়, গানের আওয়াজ। এক্টু লাইনে থাকুন, আমি জানালা খুলে দিচ্ছি আপ্নি মুবাইলেই আওয়াজ শুনতে পারবেন।
আমি জানালার গ্লাস খুলে দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, স্যার আওয়াজ কি শুনা যায়? দুই জনই বললেন: হ্যা শুনা যায়, শুনা যায়। এক্ষুনি এটা বন্ধ করা দরকার। ডিউটি অফিসার আমার নাম্বারটা নিলেন, বললেন আমি আপনাকে আপডেট জানাবো।
আমি ধন্যবাদ বলে কল রেখে দিলাম।
এই পোস্ট লিখতে লিখতে মাত্রই সেই ডিউটি অফিসার কল দিলেন। এবং বললেন যে আমি আপনার দেয়া লোকেশনে আসছি। কিছুটা আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি, তবে খুঁজে বের করতে হবে ঠিক কোথা থেকে আওয়াজ টা হচ্ছে। আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করবো মাইক বন্ধ করে দেয়ার। আমি ধন্যবাদ দিয়ে ফোন রেখে দিলাম। (বুঝতে পারলাম যে অভিযোগ জায়গামত পৌঁছানোর কারণে অফিসারও এক্টু বেশী দায়িত্ববান) সে যেভাবেই হোক, আমরা নাগরীক অধিকার নিশ্চিত চাই।
———
অযথাই পুলিশের সরনাপন্ন হতে সবাই ভয় পায়, আমি এক্টু বেশীই ভয় পাই। কিন্তু সামাজিক দায়বদ্ধতা যখন প্রকট হয় তখন নিজেকে তো এক্টু এগিয়ে আসতে হবেই। তা না হলে সচেতন নাগরিক হলাম কিভাবে?
শিক্ষিত হলাম কিভাবে?
কখনো কখনো আপনার ছোট্ট এক্টা কলে বেঁচে যেতে পারে অনেক প্রাণ। কোটি টাকার ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে পারে কোন ব্যক্তি বা কারো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তাই লজ্জা বা ভয় দুর করে আপনার আশেপাশে যে কোন নাগরিক অধিকার খর্ব হলে তুলে নিন আপনার ফোন আর ডায়াল করুন ৯৯৯ নাম্বারে। সম্পুর্ণ ফ্রি সেবা।
সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:২৫