ইভ্যালির মাধ্যমে দুইবার বিজনেস করতে গেছিলাম আমিও, অভিজ্ঞতা খুব খারাপ। যদি কারো উপকারে লাগে তাই শেয়ার করি:
প্রথমবার আজোয়া খেজুর বিক্রি করতে গেছিলাম রোজার আগে। রোজার আগে খেজুর তখন ‘হট কেক’। প্রথমেই মেয়ে অফিসারটি জিজ্ঞেস করলো মোটামুটি কত টাকার স্টক আছে? বললাম। সেম্পল দেখালাম। সেম্পল দেখে খুব খুশি। দাম ফিক্সড করলাম ৫০০ টাকা কেজি। তারা দাম নিয়ে কোন মতামত দিল না। আমি যেটা বলি সেটাই। বরং আমাকে সারপ্রাইজ করে দিয়ে বললো: ঠিক আছে, আমরা ৪০০ টাকা করে বিক্রি করে দিয়ে আপনার স্টক শেষ করে দিবো। বোকা হয়ে গেলাম। আমার থেকে ৫০০ টাকা করে কিনে ৪০০ টাকা করে বিক্রি করবে কিভাবে? জিজ্ঞেসও করে ফেললাম। বললো, সেটা নিয়ে আপনার চিন্তা করতে হবে না। আপ্নি ৫০০ করেই পাবেন। তখন জিজ্ঞেস করলো আর কি প্রোডাক্ট আছে? খেজুর শেষ হলে অন্য কি বিক্রি করবেন? আর কি কি ফ্রুট্স ইম্পোর্ট করেন ইত্যাদী ইত্যাদী…
বললাম: আপাতত খেজুর নিয়েই কাজ করি। পরেরটা পরে আলাপ করবো।
তাদের পেমেন্ট মেথড জিজ্ঞেস করলাম।
বললো: আমরা সাধারণত ৩০/৪০ দিনে পেমেন্ট দিয়ে দেই।
বললাম: ক্লিয়ার করে বলেন কত দিনে?
বললো: মনে করেন ৩০ ওয়ার্কিং ডে…
বললাম: মনে করবো মানে কি? আর ৩০ ওয়ার্কিং ডে মানে কি? আমাকে নির্দিষ্ট ডেট দিবেন না?
মেয়েটা আমতা আমতা করে….
পরে বললো: আপনার যদি বেশি টাকার দরকার হয় তখন আমাদের বলবেন, চেষ্টা করবো কিছু টাকা দিয়ে দিতে। আমি কথা দিচ্ছি না, তবে চেষ্টা করবো….
মনে মনে মেজাজ গরম হয়ে গেলো। খেজুরের তখন হিউজ চাহিদা। ডিরেক্ট বললাম: এভাবে বাকিতে বিক্রি করবো না। আগে পেমেন্ট করার কোন ওয়ে আছে?
বললো: নাই
আমি বললাম: ঠিক আছে, আমি চিন্তা করে জানাবো।
এরপর মেয়ে অফিসারটা কয়েকবার নক দিছে, রেসপন্স করি নাই।
দ্বিতীয়বারের অভিজ্ঞতা আরো খারাপ। ঈদের পরে সেই মেয়েকে আবার নক দিলাম। বললাম: আমার কিছু স্টক পলি গ্লাভস আছে, চিন থেকে ইম্পোর্ট করা, এগুলো বিক্রি করতে চাই।
অফিসে আসতে বললো। সে অন্য দুজনকে রেফার করে দিলো। তাদের সাথে কথা বললাম। কথা বলে সারপ্রাইজড হলাম। তাদের ভাষ্য একেক সময় একেক রকম। একবার বলে আপনার আর কি কি প্রোডাক্ট আছে? আমি বললাম আপাতত নাই। সে বললো: তাহলে আপনার স্টক খালি করে দিলে তো আপনার লাভ, কিন্তু আমাদের কি লাভ? আমি বললাম কমিশন নিবেন। বললো: কমিশনে পোষবে না। আপনার অন্য কোন প্রোডাক্ট ঢুকাতে হবে।
রহস্য রহস্য লাগলো। তাই ইচ্ছে করে কথা বাড়ালাম।
বললাম যেমন?
সরাসরি জিজ্ঞেস করলো: আপনার ব্যাংক একাউন্ট কয়টা? ও একাউন্টে মোট কত টাকা আছে?
আমি এক্টু কড়া করে জিজ্ঞেস করলাম: এটা কেমন প্রশ্ন? এমন প্রশ্ন আপ্নি জিজ্ঞেস করার ম্যানার কই থেকে শিখছেন?
পাশের জন তখন সরি বলে বললো: আসলে আমরা বুঝতে চাচ্ছি আপ্নি কত টাকা পরিমান আমাদের ক্রেডিট দিয়ে রাখতে পারবেন।
বললাম: এক্টু ভেঙ্গে বলুন…
বললো: যেহেতু আপ্নি ইম্পোর্ট এক্সপোর্ট বিজনেস করেন সেহেতু আপনার এক্টা প্রোডাক্ট দিয়ে আপ্নি লাভবান হতে পারবেন না। আপনাকে আরো প্রোডাক্ট আনতে হবে। তখন আপ্নি লাভবান হবেন। মনে করেন চিন থেকে এখন গ্লাভস আনছেন, এটা বিক্রি শুরু করলেন, পাশাপাশি আরো অন্য কোন প্রোডাক্ট আনলেন, সেটাও ইভযালিতে ঢুকালেন, আমরা কিছু টাকা দিলাম, আপ্নি আরো প্রোডাক্ট আনলেন, আবার কিছু দিলাম, আবার আপ্নি আনলেন, এভাবে বিজনেস রান করতে হবে। আমরা আপনাকে পরামর্শ দিবো কি প্রোডাক্ট আনলে চলবে ভালো। আপ্নি সেটা আনলেন, এভাবে আপনার বিজনেস কন্টিনিউ করে যেতে হবে।
বললাম: মনে করেন, আমি বিজনেস স্টপ করে দিতে চাই। তখন?
বললো: তখন পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে।
তাদের সাথে সব আলাপের সারমর্ম অনেকটা এমন: তাদের সাথে বিজনেস করলে ওয়ান টাইম বিজনেস করা যাবে না। ছোট সেলারদের থেকে তারা মিনিমাম ৫/৬ লাখ টাকা আটকে রাখবে। যেটাকে তারা ক্রেডিট দেয়া বলছে। সেই টাকা উঠানোর জন্য আবার প্রোডাক্ট ঢুকাতে হবে। আবার বাকি পরবে। এভাবেই বিজনেস রান করতে হবে। অনেকটা ডেসটিনির মত, শেষ হবে না। আর আপ্নি যখন স্টপ করবেন, তখন আপনার বাকি টাকা আটকে যাবে। পেমেন্টের জন্য পিছন পিছন ঘুরতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৩:১১