কবেকার কথা?
- এরশাদের আমলের কথা।
কন কি?
- হ, এরশাদরে যহন ক্ষমতা থেকে নামাইতে আন্দোলন হইছিল তখন কার্ফু দিয়া রাস্তা এমন ফাঁকা করছিলো। কিন্তু কাম হয় নাই। এরশাদরে নামাই দিছে।
আপ্নি এতদিন ধরে রিক্সা চালান?
হ, সেই ছোট বেলা থেকেই রিক্সা চালাই।
বাড়ি কই?
- বরিশাল, মেহেন্দিগঞ্জ।
কত বছর হল ঢাকায় রিক্সা চালান?
- সেই ছোট বেলায় ঢাকা শহরে আইছি, তখন থেকেই রিক্সা চালাই। ৩২/৩৩ বছর তো হইবই।
থাকেন কই?
- হেই কামড়াঙ্গীর চড়। পথ্থম যখন ঢাকায় আইছি তখন থেকেই ঐহানেই থাকি। তহন কামড়াঙ্গীর চড় থেকে নিউ মার্কেট ক্ষ্যাপ দিতাম ১২ টাকা জোড়া। আর এহন একজন আসলেও ৭০/৮০ টাকা দেয়। দিন কত বদলাইছে দেখছেন….
হুম, সেটাই তো দেখলাম।
এরপর লোকটার সাথে অনেকক্ষণ কথা বললাম। সেই ৮০ দশকের ঢাকার পরিস্থিতি নিয়ে। আমার গন্তব্য ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিউমার্কেট হয়ে ধানমন্ডি জিগাতলা। কিন্তু ধানমন্ডি লেকের পাড়ে রিক্সা থামায়ে বসে বসে দুজনে রঙ চা খেলাম আর গল্প শুনছিলাম। কি মিষ্টি সেই গল্পগুলো। মনে হচ্ছিলো যেন মনযোগ দিয়ে পুরাতন দিনের কোন মুভি দেখছি।
তো, এত বছর ধরে ঢাকা শহরে রিক্সা চালান বাড়ি ঘর কিছু করতে পারছেন নি?
- হ, মামা। মিছা কথা কমু না। বড় করে বাড়ি করছি, ঘর করছি। এছাড়া সারা বছর তো রিক্সা চালাই না। ইলিশ মাছের সিজন আসলে দেশে চলে যাই, ইলিশ মাছ ধরি। দুই পোলা শুধু সিজনে মাছই ধরে, বাকি সময় বইয়া খায়, অন্য কাম করলে আরো কিছু করতে পারতাম।
কন কী? আপ্নি নিজ হাতে ইলিশ মাছ ধরছেন?
- ধরমু না কেন? পত্তেক বছরই তো ধরি। আইজ থেকে ইলিশ ধরি নি? ছোট বেলা থেকেই ধরি।
ইলিশ মাছ ধরলে তো আপনার অনেক টাকা থাকার কথা, এত কষ্ট করে রিক্সা চালান কেন?
- আরে না মামা, বাহির থেকে যা দেখা যায় তা না। তাছাড়া, আমরা তো ট্রলার নিয়ে সমুদ্রে যাই না যে মেলা মাছ ধরমু। আমরা নদীতে কিছু কিছু ধরি, অত টেকা না।
আমার কি যে আনন্দ লাগতেছিল তার কথা শুনে। আমার আনন্দ দেখে আনোয়ার মিয়া বললো: আপনার নাম্বার দেন, আবার মাছ মারতে গেলে আপনার জন্যে নিজ হাতে মাছ ধরে নিয়া আসমু, আপনারে খাওয়ামু।
আমারে নিবেন মাছ ধরতে?
- অ কি, নিমুনা কেন? আমি কল দিমুনে, আপনে চইল্লা আইহেন, মাছ খাইয়া ও আইতে পারবেন, নিয়াও আইতে পারবেন।
হিহিহিহ…. কি যে খুশি আমি
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৩:২২