somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ম্যান্ডেলা : বন্দী, প্রেসিডেন্ট ও ‘রঙধনু দেশের’ জনক

২৮ শে জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য জীবনের বড় একটি সময় কারাগারে কাটানো ম্যান্ডেলা এক সময়ে দেশের প্রেসিডেন্ট হন। তাঁকে বলা হয়, ‘রঙধনু দেশ’ বর্ণবাদমুক্ত দক্ষিণ আফ্রিকার জনক।
ম্যান্ডেলা ২৭ বছর কারাভোগ করেছেন। সংগ্রামী জীবনের একপর্যায়ে তাঁর মাথায় ওঠে দেশটির প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্টের মুকুট। লাভ করেছেন নোবেলশান্তি পুরস্কার।
ম্যান্ডেলা আগামী মাসে ৯৫ বছরে পা দেবেন। বয়স হয়েছে তাঁর। শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা অসুখ। ফুসফুসের সংক্রমণ বেশ ভোগাচ্ছে। শারীরিক অবস্থা হঠাৎ খারাপ হয়ে যাওয়ায় ম্যান্ডেলাকে প্রায় তিন সপ্তাহ আগে আবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন তিনি। কৃত্রিম উপায়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে তাঁকে।
মানবতাবাদী নেতা ম্যান্ডেলাকে কয়েক বছর ধরে জনসমক্ষে তেমন একটা দেখা যায় নি। এরপরও দেশবাসীর প্রাণের মানুষ তিনি। শুধু নিজ দেশেই নন, ম্যান্ডেলা বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতাদের একজন।
বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের মহান এই নেতা ২৭ বছর কারাভোগ শেষে ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্র“য়ারি মুক্তি পান। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তাঁর কারামুক্তির দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। ওই দিন সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় ম্যান্ডেলার ওপর।
ম্যান্ডেলা ১৯৯৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এরপর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, ‘আজ আমরা এমন এক চুক্তিতে উপনীত হয়েছি, যেখানে কৃষ্ণাঙ্গ ও শেতাঙ্গ নির্বিশেষে দক্ষিণ আফ্রিকার সব নাগরিক মিলে একটি সমাজ গড়ে তুলব। ওই সমাজের বাসিন্দাদের মধ্যে বর্ণবৈষম্য থাকবে না। কারও হƒদয়ে কোনো ভয় থাকবে না। সব নাগরিকের মর্যাদা সমুন্নত থাকবে। একটা রঙধনু জাতি, নিজেদের ও বিশ্বের সঙ্গে সুখে শান্তিতে বসবাস করবে।’
নোবেল কমিটি ১৯৯৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার তৎকালীন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ফ্রেডেরিক ডি ক্লার্ক ও ম্যান্ডেলাকে যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে।
ম্যান্ডেলার গোত্রনাম মাদিবা। এ নামেই সমধিক পরিচিতি তাঁর। মানবিকতা ও আÍশক্তিতে বলীয়ান মাদিবা সুবক্তা। শ্রোতারা তাঁর কথা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শোনে।
ম্যান্ডেলার জš§ ১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই, দক্ষিণ আফ্রিকার দতদরিদ্র ট্রানস্কেই অঞ্চলের এমভেজো গ্রামে। পারিবারিকভাবে তাঁর নাম দেওয়া হয়েছিল রোলিহলাহলা দালিবহুঙ্গা ম্যান্ডেলা। তিনি এক তেম্বু রাজার প্রপৌত্র। একজন স্কুলশিক্ষক ম্যান্ডেলার ইংরেজি নাম নেলসন দেন।
ম্যান্ডেলা ছাত্রজীবন থেকেই বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের কর্মী ছিলেন। ১৯৫২ সালে রাজধানী জোহানেন্সবার্গে অলিভার ট্যাম্বুকে সঙ্গে নিয়ে দেশের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ আইনি পরামর্শ প্রতিষ্ঠান খোলেন। ম্যান্ডেলা ১৯৬১ সালে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের আন্ডারগ্রাউন্ড সশস্ত্র শাখার কমান্ডার-ইন-চিফ নির্বাচিত হন। পরের বছর আলজেরিয়া ও ইথিওপিয়ায় সামরিক প্রশিক্ষণ নেন।
এক বছরের বেশি সময় ধরে আÍগোপনে থাকার পর সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী সরকার ১৯৬৪ সালে ম্যান্ডেলাকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এর আগে শুনানি চলাকালে বর্ণবাদবিরোধী বক্তব্য দেন ম্যান্ডেলা। তাঁর ওই বক্তব্য পরে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের ইশতেহারে পরিণত হয়। ম্যান্ডেলা এর এক অংশে বলেন, ‘জীবদ্দশায় নিজেকে আফ্রিকার মানুষদের মুক্তির লড়াইয়ে উৎসর্গ করেছি। লড়েছি শেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে। গণতান্ত্রিক ও মুক্ত সমাজের আদর্শকে সযতেœ লালন করেছি। এ এমন এক আদর্শিক লড়াই, যে জন্য আমি মরতে প্রস্তুত আছি।’
ম্যান্ডেলাকে রোবেন দ্বীপের সুরক্ষিত কারাগারে ১৮ বছর বন্দী রাখা হয়। পরে ১৯৮২ সালে কেপটাউনে আরেকটি কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। পরে সেখান থেকে পাঠানো হয় পার্ল শহরের কারাগারে।
ততদিনে দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর আন্তর্জাতিক অবরোধ কঠোর হতে থাকে। এর একপর্যায়ে, ১৯৮৯ সালে, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পি ডব্লিউ বোথার স্থলাভিষিক্ত হন ডি ক্লার্ক। এক বছর পরই ম্যান্ডেলার মুক্তির নির্দেশ দেন তিনি।
১৯৯৪ সালে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হন ম্যান্ডেলা। পাঁচ বছর মেয়াদে মাত্র এক দফা প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯ সালে অবসর গ্রহণ করেন তিনি। তবে দেশে ও দেশের বাইরে সহিংসতা বন্ধে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন অব্যাহত রাখেন। বিশেষ করে, বুরুন্ডিতে যুদ্ধ চলাকালে ম্যান্ডেলা বলিষ্ঠ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা রাখেন।
স্ত্রী উইনি মাদিকিজেলা-ম্যান্ডেলার সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদের পর ১৯৯৮ সালে ম্যান্ডেলা তাঁর ৮০ তম জš§দিনে গ্রাসা ম্যাশেলকে বিয়ে করেন।
কারাভোগের সময় নিজের সন্তানদের মুখ দেখার সুযোগ পাননি ম্যান্ডেলা। এজন্য পরে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে শিশুদের জন্য বহু স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এজন্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেন তিনি। ৮৩ বছর বয়সে প্রোস্টেট ক্যানসার ধরা পড়ে ম্যান্ডেলার। এর সফল চিকিৎসা দেওয়া হয়।
ম্যান্ডেলা ২০০৪ সালে ঘোষণা দেন, পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের সঙ্গে একান্ত জীবন যাপন করবেন। এড়িয়ে চলবেন জনসমাবেশ। এর আট মাস পর তাঁর বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। ম্যান্ডেলা জানান, এইডসে আক্রান্ত হয়ে তাঁর ছেলের মৃত্যু হয়েছে। সচেতনতা বৃদ্ধিতে এইডস সম্পর্কে সবাইকে খোলামেলা কথা বলার জন্যও আহ্বান জানান তিনি।
ম্যান্ডেলার আর কোনো ছেলে বেঁচে নেই। তবে তাঁর তিন মেয়ে আছেন। তাঁরা হলেন: মাকি, জিন্দজি ও জেনানি।
২০০৯ সালে জাতিসংঘ তাঁর জš§দিনকে নেলসন ম্যান্ডেলা আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়। কোনো ব্যক্তির জন্য এমন সম্মানজনক দিবস ঘোষণার আর নজির নেই।
ম্যান্ডেলার ঐকান্তিক চেষ্টায় ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজন করা হয়। আফ্রিকায় এই প্রথম বসে বিশ্বের ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর। ফাইনালের দিন মাঠে উপস্থিত হয়ে হাজারো দর্শককে চমকে দেন ম্যান্ডেলা। এএফপি।







সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১৩ রাত ১২:৩৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×