somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বধূ ও বুলবুলি

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রূপবতী বধূটি দেশান্তরী হয়েছে।ফিরবে না আর কোনো দিন শেকড়ের কাছে।স্নান করবে না ভোরের নদীতে। প্রেম দিতে চেয়েছিল, কিন্তু পায় নি বলে অনুযোগ করবে না আর। এদেশের জল-হাওয়া মাটি আর মাখবে না গায়ে।এমন কঠিন পণ করে গেছে। তার চলে যাওয়ার কয়েক দিন পর বুলবুলিগুলোও নিরুদ্দেশ হয়। বধূটির ফেলে যাওয়া ভিটেতে আর আসে না। আমি তার ভিটে পাহারা দিই আর বনের এই পাখিগুলোর আসার পথের দিকে তাকিয়ে থাকি।
২৬টি বুলবুলির একটা দল, হঠাৎ উধাও। অথচ নদীর কিনারের এই বাড়ি শান্ত, নিরিবিলি। বাসিন্দা বলতে আমি একা। পাখিগুলোকে উপদ্রব করার মতো কেউ নেই।একটা বিড়াল পর্যন্ত না।আমি বরং ওদের সঙ্গে ভাব জমানোর চেষ্টা করছিলাম।এরপরও চলে গেল, কেন?
আমাদের ছোট শহর। তাতেও দুটি রেলস্টেশন। ছোট স্টেশন থেকে দক্ষিণে মুখ করে সোজা থানার কাছের বেইলি সেতু পার হয়ে ডানে মোড় নিয়ে, ১২ থেকে ১৫ মিনিট হাঁটলেই বারইপাড়া। পিচের রাস্তা যেখানে শেষ হয়েছে, সেখানে নদীপাড়ের শেষ বাড়িটিতেই থাকত মায়া, রূপবতী বধূটি। সাত বাই চৌদ্দ হাতের একটা টিনের বসতঘর, দক্ষিণ দুয়ারি।সামনে এক টুকরো উঠোন। দক্ষিণে আরেকটা চালাঘর, বাঁশের বেড়ার, সেখানে বধূটি রান্না করত।উঠোনের কোথাও দুর্বা নেই।বধূটি ঝাড়ু দিয়ে আয়নার মতো ঝকঝকে করে রাখত।এখন এ ভার আমার কাঁধে পড়েছে। রান্নাঘরের পুব চান্দরে দাঁড়িয়ে থাকা গাছ থেকে ঝরছে শিউলি ফুল। উঠুনের মাঝখানে গাছে ঝুলছে রাঙা জাম্বুরা। রান্নাঘরের পেছনে খোলা জায়গা।সেখানে মাচায় কাঁকরোল দোল খায়।দুই ঘরের এই বাড়ির পশ্চিমে কাজিমরা সাপের মতো শুয়ে আছে মগড়া।কিনারে ডুমুর, আম-কাঁঠাল-সুপারির গাছ।বাড়ির পুবের সীমানা ধরে পৌরসভার পিচের রাস্তা। বাড়ির প্রাচীর বলতে গন্ধরাজ আর সুপারি গাছের সারি।মাঝে মাঝে ফাঁকফোকর ঢাকতে সুপারির ডাউগ্যা গুঁজে দেওয়া হয়েছে।
ছোট্ট জেলা শহরের এই দিকটায় এক সময় পানের বরজ ছিল। এখানে ছিল বাস বারইদের।বারইপাড়া নাম এই সাক্ষ্য দেয়।এখনো সন্ধ্যেবেলা এ পাড়ার অধিকাংশ বাড়ি থেকে উলু্ধ্বনি শোনা যায়। তুলসীতলায় জ্বালানো হয় প্রদীপ। পাঁচালি পড়া হয়। ধূপের ধোঁয়া ছড়ায় বাতাসে।

এই টিনের ঘর আর বাড়ির জায়গার মালিকানা এক দুপুরে বদল হয়। এখানে ছিল বাস এক ভাওয়াল পরিবারের। তিনজনের সংসার। শান্তি রানী ভাওয়াল, গৃহকর্তৃ, বিধবা। বয়স পঞ্চাশের বেশি। তাঁর ছেলে আর ছেলের সেই রূপবতী স্ত্রী মায়া রানী ভাওয়াল।
শান্তির ভাদাইম্যা ছেলেটি, নারীতে নয়, সুধা খুঁজে পেয়েছিল গাঁজা আর জুয়ায়। হারিয়েছিল স্বাস্থ্য ও যৌবন। রোজিরুটির জন্য কিছুই করত না প্রায়।বাপ পরলোক গমনের পর গ্রামের বাড়ির জমিজমা বিক্রির টাকায় চলেছে সংসার।বউ-শাশুড়ি বাড়িতেই কাঁঠাল, আম, জাম্বুরা ও সুপারি বিক্রি করত। আশপাশের লোকজন কিনে নিত।যখন হাতের পাঁচ এই বাড়ির দিকে চোখ পড়ে মগড়াটির, কী করেন শান্তি? বহু চিন্তাভাবনা করে শরীরের পচা অঙ্গ কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত পাকা হয়।থাক শূন্য গোহাল, চাই না এমন দুষ্টু গরু। এই রায়। আর বাপ-মা মরা বৌমাটিকে সাক্ষাৎ সরস্বতী গণ্য করে বুকের কাছে রাখবেন, এই পণ। বিসর্জন দেবেন না কোনো মতোই।পুজো শেষে ভক্ত কৃষক যেভাবে মরিচখেতে বসিয়ে রাখে সরস্বতী প্রতিমা, তেমতি রাখবেন।
শান্তিরা ইন্ডিয়া চলে যাবে। আব্বার এক বন্ধু, নীলু কাকা, খবরটা দিয়েছিলেন।আব্বার পেনশনের টাকার একটা অংশ দিয়ে চাইলে এই বাড়িটা কিনে নিতে পারেন।পেশ হয় প্রস্তাব। তখন আমি সবে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছি। এই শহরের প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে গ্রামের বাড়ি থেকে কলেজে যাওয়া-আসা করি। আমার ভাই আর বোন স্কুলে যায়। শহরে থেকে পড়াশোনা করতে সুবিধা, এসব ভেবে আব্বা এক কথায় রাজি।
শান্তির সঙ্গে নীলু কাকার সদ্ভাব ছিল। দরদামে তাই আটকায় নি। চুপিসারেই টাকা হস্তান্তর হয়। দুর্গা বিসর্জনের আগের দিন দলিলে সই দিয়ে আঁচলে চোখ মুছেন শান্তি।বাড়ির মালিকানা বদল হয়। ক্রয়সূত্রে বাড়িটির মালিকের নাম লেখা হয় মুহাম্মদ মতিয়র রহমান খান পাঠান। আমি তাঁর বড় ছেলে। দুপুরের দিকে আব্বা আর আমি নতুন বাড়িতে আসি।শান্তিদের ফেলে যাওয়া চৌকির ওপর বিছানা পাতি।এরপর ঘুরে ঘুরে দেখি।
না শহর না গ্রাম, নাগড়া বারইপাড়ায় ধীরে আশ্বিনের সন্ধ্যা নামে। আজান ও উলুধ্বনি মিলেমিশে বাতাসে ভেসে বেড়ায়।এমন সন্ধ্যায় শান্তি রানির বাড়িতে আজ উলুধ্বনি দেওয়া হয় নি। তুলসীতলায় প্রদীপ জ্বলে নি।রান্নাঘরের চুলায় হাড়ি চড়ে নি।
পশ্চিমের আকাশ থেকে লালিমা ক্রমে মুছে যায়। আঁধার নামে। শান্তিদের সেই বসতঘরটিতে হারিকেন ধরিয়েছি।উঠোনে পৌর বিজলিবাতির আলো এসে খেলা করে।ঘরের বারান্দায় মুছলা পেতে আব্বা জোরে জোরে সুরা পাঠ করে নামাজ আদায় করেন।
এরও কিছুক্ষণ পর, শান্তি আর তাঁর সেই পুত্রবধূ আসে।ভিটের মায়া তাদের টেনে আনে, শেষবারের মতো। মায়া টিঙটিঙে, ইছা মাছের সুরের মতো টিকালো নাক তার।এক জোড়া বাতা মাছের ঠোঁট, তাম্বুলে রাঙানো। ছলছল আয়ত অাঁখি।মায়ার গায়ের রঙ দুধে আলতা।এক মাথা চুলের খোঁপায় আলগোছে পড়ে আছে শাড়ির আঁচল।পায়ে রাবারের চপ্পল।মায়াবনের চিত্রল হরিণী যেন বা।
শান্তিরা নিজের বাড়ি বেচে দিয়েছে, চুপিসারে। প্রতিবেশীদের কেউ তা জানে না।জানে শুধু দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়। রাতে রাতে শহরের অন্য মাথার ওই বাড়িতেই সরানো হয়েছে এ বাড়ির কাসার থালাবাসন, পিতলের গামলা, রাধা-কৃষ্ণের যুগল মূর্তি, পুরোনো হাঁড়িপাতিল আর আর সব মাল-সামানা।
মায়াকে নিয়ে সীমানা পাড়ি দিয়ে শান্তি যাবেন পাশের দেশে।জনমের মতো। মনে মনে রাধামাধবকে বলেছেন, চিতায় উঠি তো ওপারের শ্মশানে। থাকতে জীবন যেন আর এ মুখো হতে না হয় ঠাকুর।পেছনে পড়ে থাক, ভিটে মাটি। এ ঘরে বাসর হয়েছিল তাঁর। পোলাটাকেও পেট থেকে এখানেই খসিয়েছিলেন।সাত বাই চৌদ্দ এই টিনের ঘরেই রূপবতী বধূটি ভালোবাসা উজার করে দিতে চেয়েছিল। আম-দুধের ভরা বাটি এগিয়ে দিয়ে খেয়েছে সে সাপের ছোবল। বিষে জরজর তার অঙ্গ। দাঁত কামড়ে তবু পড়ে থেকেছে। ফিরে যাওয়ার পথ তার ছিল না।
যাবার আগে, এই সন্ধ্যায় যখন সারা শহর সেজে রয়েছে শারদীয় উৎসবের সাজে, শান্তির নেশাখোর ছেলেটা এসে নিঃশব্দে উঠোনে দাঁড়িয়েছে। ৩৫-৩৬ বছরের মানুষটার উচ্চতা পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চির মতো হবে। তবে খাটো লাগছে। সামনের দিকে কুঁজো। গায়ের রঙের মতোই পরনে ময়লা জামা ও কোমরঢিলা প্যান্ট, বেল্ট দিয়ে আটকানো।আমার কেন যেন মনে হচ্ছিল, যে কোনো মুহূর্তে ঝুপ করে খুলে পড়ে যেতে পারে। ভেবে পাই না, বদখত চেহারার একজন মানুষের বউ এত রূপবতী হয় কী করে!আর বাঁধা হলোই যদি বিয়ের বাঁধনে, একি একটা বেল্টের চেয়েও কম জোর!
মায়া গেল শেষবারের মতো স্বামীর পা ছুঁয়ে আশীবার্দ নিতে।আহা, পতিব্রতা সে। পাষাণে দিলে না সুযোগ। ছেঁড়া স্যান্ডেলসহ সরে গেল ধূলিমাখা পা জোড়া।কথাও হলো না কোনো।
অসহ্য নীরবতা। হলুদ কাঁঠাল পাতা ঝরার শব্দ। ঝরে আশ্বিনের শিশির, শিউলি। সময় গড়িয়ে যায়। বাদাইম্যাটি, এক মৃত মানুষপ্রায়, পিচের রাস্তায় ওঠে।হারিয়ে যায়। আমি ভাবি, রূপবতী স্ত্রী যার ঘরে, সে কী করে এমন রুগ্ন আর প্রাণহীন হয়। কী চাই মানুষের? একটা ঘর, ভাত-কাপড়।ঘরের ভেতর কামরাঙার মতো রসেভরা ফল। প্রাণের স্ফুরণ।
শান্তি ও তাঁর পুত্রবঁধূ গেল ঘরে। আমি উঠোনে দাঁড়িয়ে থাকি। আব্বা ও নীলু কাকার সঙ্গে শান্তিদের নিচু স্বরে কথাবার্তা চলে। আলাঝালা শুনতে পাই, কাকা বলছেন, সবই মায়ার খেলা।
এরও কিছুক্ষণ পর শান্তি আর তার পুত্রবধূ ঘর থেকে বের হয়। শাশুড়ি-বউকে তখন উদ্ভ্রান্তের মতো লাগে। ভিটেমাটি ছেড়ে যাওয়ার আগে মানুষের কেমন অনুভূতি হয়, আমি উপলব্ধি করার ক্ষমতা রাখি না। ওরা উঠোনে যায়, নদীর কিনারে, রান্নাঘরে, চান্দরে, গাছগাছালির কাছে, দক্ষিণে, পুবে, উত্তরে।যেন আগুন লেগেছে শাড়ির অাঁচলে, ওরা দিশা হারিয়ে, ছুটছে, আর দাউ দাউ জিভ বের করে তাঁদের ধাওয়া দিচ্ছে আগুনের লেলিহান শিখা।
বধূটি ঘাটের দিকে চোখ বুলায়। স্নান সেরে, নদীর পাড়েই ভেজা শাড়ি ছাড়ত সে।এক দিন চৈতের এক দুপুরে শাড়ি পাল্টানোর সময়, আচমকা বাউলুরি এসে, উড়িয়ে নিয়েছিল। লজ্জায় সে মরে যেতে বসেছিল তখন। এ কথা মনে পড়ে। বিকেলের দিকে ভাত কিংবা আটার টোপ দেয়ে বঁড়শিতে মাছ ধরত।মনে কি পড়ে না? গন্ধরাজের পাতায় হাত বুলায় মায়া।প্রতিবর্ষায় ফুল ফুটিয়ে দেখাত গাছগুলো। আর এই শরতের শিউলি, পায়ের কাছে লুটাত কত। শাশুড়ি-বউয়ের চোখের জল গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ে, অবিরাম।
সাদা শাড়ি পরা শাশুড়িটি আমার হাত ধরে মিনতি করে, বাবা গাছ কাইটটো না। দেখশোনা করবা। খুব ভালো জাতের কাঁঠালগাছ। সারা বছর ফল দেয়।আয়েমে আম আর জাম্বুরাও খুব হয়।খাইবা কত। বাজারে বেইচ্যা কুল পাইবা না। এরপর বধূঁটি কাছে আসে, তবে হাতের পরশ দেয় না সে। বলে দাদা, ফুলগাছগুলো তোমার। ভগবানের দোহাই, তোমার এই দিদিটার কথা ভেবে কাইটটো না। আর সকালে আসবে বুলবুলি।ওদের কয়টা ভাত দিও।হেলা দিও না, ওরা কিন্তু প্রেমজানা পাখি। মানুষের মনের ভাষা বোঝে। কথা এইটুকুই। এরপর শান্তি ও মায়া বাড়ির প্রধান ফটক, একটা মরচে ধরা, সব সময় হা খোলা টিনের দরোজা পার হয়ে পৌরসভার পিচের রাস্তায় ওঠে।হারিয়ে যায়। রাস্তায় তখন পুজামন্ডপের দিকে যেতে থাকা মানুষের ঢল। এর একটার মধ্যে হারিয়ে যায়, বউ-শাশুড়ি।
সে রাতে খুব একটা ঘুম হয় না আমার।আজান শুনে, ভোরে ঘুম ভাঙে।আব্বা উঠোনে হাঁটছেন আর গুনগুন করে গাইছেন, ‘বাজল কিরে ভোরেরও সানাই নিদ মহলার আঁধার পুরে।’ নজরুলের এই গানটা আব্বার খুব পছন্দের।
এরপর এক সাধুর গলা শোনা গেল। নামকীর্তন করছেন তিনি ‘প্রভাত সময়কালে শচীর আঙিনা মাঝে, সোনার গৌর নাচিয়া বেড়ায় রে।’ শান্তির বাড়ি মনে করেই হয়তো ভেতরে ঢুকেছেন, পূজার জন্য ফুল নেবেন।উঠোনে লুঙ্গি আর পাঞ্জাবি পরা আব্বাকে দেখে থতমত খেয়েছেন।বিরিবিত্তান্ত জেনে সাধুটি ফুল না নিয়েই চলে যেতে চান। আব্বা বলেন, আপনি ফুল নিয়ে যান।আগের মতোই আসবেন, কোনো সমস্যা নাই।
সকালে ঘরে তালা দিয়ে আব্বা আর আমি বাইরে যাই। তেরিবাজারের একটা হোটেলে সবজি-পরোটা খাই। এরপর রং চা। আব্বা গ্রামের বাড়ির দিকে যাত্রা করেন।আমি ফিরে আসি বারইপাড়া, আমাদের নতুন বাড়ি।রান্নাঘরের পশ্চিম চান্দরে বুলবুলিগুলোর সঙ্গে এই প্রথম দেখা।দৃষ্টি বিনিময় সুবিধার হয়নি, পাখি ফুড়ুৎ।নদীপাড়ের বাঁশঝাড়ে গিয়ে বসে।আমার দিকে সন্দেহের চোখে তাকায়। হয়তো বলে, তুমি কে হে, উটকো লোক! শুধায়, মায়াবতী বধূটি এখন কোথায়?
বাসি ভাত সকালে বাঁশঝাড়ের কাছে ছিটিয়ে রাখি। আটটার দিকে বুলবুলির ঝাঁক আসে। বাঁশঝাড়ে বসে। অগ্রবর্তী দল হিসেবে এক জোড়া বুলবুলি প্রথমে মাটিতে নামে। দানায় ঠোকর দিয়ে ঘাড় কাত করে বাঁশঝাড়ের দিকে তাকায়। পাখির ভাষা আমি বুঝি না। অনুমান করি, সবুজ সঙ্কেত পেয়ে একে একে সবকটা পাখি মাটিতে নেমে খুঁটে খুঁটে একটা একটা করে ভাত খায়।কয়েক দফায় উড়াল দিয়ে আবার বাঁশের কঞ্চিতে বসে। লাফায়। কাঁঠালগাছে যায়। এরও কিছুক্ষণ পর শুরু হয়, প্রেম করার পালা। ভাবি, পাখিজীবন কত প্রেমময়।দানা খুটে খায়। এরা প্রণয়িনীকে সোহাগ করে।ডানা খুঁটে। মনের সুখে গান গায়। একটু দূরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের এসব কায়কারবার দেখি।এক ধরনের সুখানুভূতির জন্ম হয় আমার মনে। শান্তি ও মায়া চলে যাওয়ার পর যে ব্যথাবোধ জেগেছিল, কিছুটা লাঘব হয়, ভুলে থাকি।
বুলবুলিগুলো প্রতিদিন একই নিয়ম মেনে আটটার দিকে আসত এবং নয়টার দিকে ফুড়ুৎ। ওদের সময়ের হিসাব ছিল নিখুঁত। এক দিন সকালে ভাত ছিটিয়ে রাখি, সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়, বিকেল যায়, সন্ধ্যা আসে কিন্তু বুলবুলিগুলো আর আসে না।এক যুগ হলো। তবু প্রতীক্ষা করি। এত দিন পরও রূপবতী মায়ার কথা মনে পড়ে।বুলবুলিগুলো বিষয়ে তার কথাগুলোও কানে বাজে। কিন্তু বধূটির মুখ কিছুতেই মনে পড়ে না।
বছর ঘুরে আসে শারদীয় উৎসবের সময়। আমার শহর সাজে খুব। নবমীর রাতে পূণ্যার্থীরা মণ্ডপে মণ্ডপে যায়, বাহারি শাড়ি পরা, খুশবো ছিটানো গায়, নারীদের ভিড়ে আমি খুঁজি সেই মুখ। না বুলবুলি, না ওই দুধে আলতা বধূটি চোখে পড়ে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭



ছবি সৌজন্য-https://www.tbsnews.net/bangla




ছবি- মঞ্চে তখন গান চলছে, মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা.......... চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান।

প্রতি বছরের মত এবার অনুষ্ঠিত হল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪। গত ২৪/০৪/২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

×