somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গুন্টার গ্রাসের সাক্ষাৎকার

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গুন্টার গ্রাস জার্মানির কথা সাহিত্যিক। বিশ্ব সাহিত্যের পাঠকদের খুবই পরিচিত একটি নাম। তাঁর জন্ম ১৯২৭ সালে। ১৯৫৮ সালে বের হয় তাঁর বেস্ট সেলার উপন্যাস— The tin drum. এছাড়া তাঁর উলে­খযোগ্য অন্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে- ‘ Cat and Mouse, Dog years, From the Diary of a Snail, The Rat। গুন্টার গ্রাস ১৯৯৯ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ১৯৮৬ সালের ডিসেম্বরে একবার ঢাকা এসেছিলেন। তাঁর এই সাক্ষাৎকারটি ১৯৯১ সালে গ্রহণ করেন Elizabeth এবং John Simon. সাক্ষাৎকারটি মোট দুই বৈঠকে শেষ করা হয়।

আপনি লেখক হয়ে উঠলেন কীভাবে?
গুন্টার গ্রাস : আজ আমার মনে হয়, যে আর্থ-সামাজিক অবস্থার মধ্য দিয়ে আমার শৈশব পার করি, বেড়ে উঠি আমি, ওই অবস্থায় কিছু একটা করা তখন সত্যিই অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। আমাদের ছিল নিম্ন-মধ্য আয়ের পরিবার। ছেলেবেলায় ছোট্ট দুই রুমওয়ালা একটা অ্যাপার্টমেন্টে আমরা থাকতাম। আমি ও আমার বোনের জন্য আলাদা কোনো রুম সেখানে বরাদ্দ তো ছিলই না, এমনকি কোনো নির্দিষ্ট জায়গাও ছিল না। শোবার ঘরে দুই জানালার মাঝখানে অল্প একটা কোন ছিল, যেখানে আমার বই-খাতা, জলরঙ ইত্যাদি রাখতাম। পড়াশোনার উপকরণাদি হাতে গোনাই ছিল। তাই প্রায়ই স্বপ্ন পূরণে আমাকে কল্পনার আশ্রয় নিতে হতো। আমার যেসব জিনিসের প্রয়োজন পড়তো তখন, মিছেমিছি জোগাড় করে নিতাম। সেই ছোট্টবেলাতেই হৈ-হুলে­াড়ের মধ্যেও পড়াশোনায় ডুবে যাওয়ার একটা কায়দা আমি রপ্ত করেছিলাম। আমি ওই বয়সেই নানা বিষয়ে লিখতে ও আঁকতে শুরু করি। আজকে পড়াশোনা করার জন্য আমার চারটা রুমের ব্যবস্থা আছে। আজও শৈশবের ওই স্মৃতি—হৈ-হুলোরের মধ্যেও একটা ছোট্ট রুমের এক কোনায় পড়ালেখা করা—মনে ভাসলেই গা শিওরে ওঠে, ভয় হয়।
**
ওই বয়সে ও ওই অবস্থায় খেলাধুলা কিংবা অন্যান্য বিক্ষিপ্তচিত্ত কর্মকাণ্ডের চেয়ে পড়াশোনা ও লেখালেখি আপনাকে তাড়িত করলো , সেটা কীভাবে?
গুন্টার গ্রাস : এইভাবে যে, শিশু হিসেবে আমি ছিলাম পাক্কা মিথ্যাবাদী। আমার সৌভাগ্যই বলতে হয়, মা আমার পাশে ছিলেন, আমার ছেলেবেলার এই বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে বলার প্রবণতাকে আস্কারা দিয়েছিলেন তিনি। এর বিনিময়ে, মাকে দুর্দান্ত সব গল্প উপহার দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। কত আর বয়স তখন, ১০ বছর, মা আমাকে স্নেহভরে ডাকতে শুরু করলেন পীয়ের জিন্ট বলে। মা বললেন, ‘আমরা নেপাল ও অন্যান্য দেশে ভ্রমণে বেরুব, তুমি কিনা ওই ভ্রমণের আগাম বর্ণনা দিচ্ছ। সাবাশ।’ মায়ের এই উস্কানি কাজে দিয়েছে।

ছেলেবেলায় বানিয়ে বানিয়ে যেসব গল্প আমি বলতাম, পরে গল্পগুলোই সিরিয়াসলি লিখতে শুরু করি। অবিরত লিখতে থাকি। আমার সাহিত্য সৃষ্টি চলে বিরামহীন!

অবশ্য এর আগের একটা ঘটনা, আমার ১২ বছর বয়সে, একটা উপন্যাস লেখায় হাত দিই। উপন্যাসটা ছিল ক্যাসুরিয়ানদের উপজীব্য করে। অনেক বছর পর ‘দ্য টিন ড্রাম’— এ যার প্রত্যাবর্তন ঘটাই অস্কারের দাদীমা চরিত্রের মধ্য দিয়ে। অস্কারের দাদী আনা ছিলেন (আমার মতো) ক্যাসুরিয়ান। জীবনের প্রথম উপন্যাস লিখতে গিয়ে আমি মস্ত একটা ভুল করি। উপন্যাসের প্রথম অধ্যায়েই আমার সৃষ্ট সবকটা চরিত্রকে মেরে ফেলি। চরিত্রগুলোর মৃত্যুর পর উপন্যাসটি আর চালিয়ে যাওয়ার পথ থাকে না, এর যপনিকাপাত ঘটে। এই হলো আমার লেখক জীবনের সূচনা পর্ব।

কোন ধরনের মিথ্যা কথা আপনাকে সবচেয়ে বেশি আন্দোলিত করেছে?
গুন্টার গ্রাস : সেইসব মিথ্যা, যেগুলো কাউকে কখনো আহত করে না। কাউকে রক্ষা কিংবা অন্যকে আহত করার জন্য যে মিথ্যা কথা বলা তা থেকে এইগুলো সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। নিজেকে রক্ষা কিংবা অন্যকে আহত করার কাজ আমার নয়। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে কেন, নির্জলা সত্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিরক্ত উদ্রেগ করে, আর এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে তাই মিথ্যার সঙ্গে সত্যের ঘুটমিশেল দিতে হয়। এতে ক্ষতির কিছু নেই। শৈশবে যেসব মিথ্যে গল্প আমি বানিয়ে বানিয়ে বলতাম, সেগুলোর দ্বারা কারো কোনো ক্ষতি হতো না কখনো। যদি কয়েক বছর আগে আমি জার্মানির রাজনৈতিক উন্নতি সম্পর্কে কিছু লিখতাম তা হত আজকের সময়েরই রাজনৈতিক চিত্রের আগাম বার্তা। লোকেরা হয়তো তখন বলতেন, একি মিথ্যাচার!

প্রথম উপন্যাস লিখতে গিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর কী করার উদ্যোগ নিলেন?
গুন্টার গ্রাস : আমার প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ছিল কবিতা ও ড্রয়িংয়ের যুগলবন্দী। কবিতা ও ড্রয়িংকে আমি অবিচ্ছেদ্য মনে করি। এরা একে অন্যের পরিপূরক। আমি কখনো কোনো ইমেজকে ড্রয়িংয়ের মাধ্যমে কখনো বা শব্দের মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছি। আমার ২৫ বছর বয়সে, একটা টাইপরাইটার কিনে আনি। এরপর মাত্র দুই আঙ্গুল দিয়ে টক টক শব্দ তোলে টাইপ করতে থাকি। আমরা ‘দ্য টিন ড্রাম’ উপন্যাসটির প্রথম সংস্করণ ওই টাইপরাইটারের বদৌলতেই বের হয়। এখন বয়স হয়েছে, শুনেছি আমার অনেক লেখক বন্ধু কম্পিউটারে লিখছে, আমি কিনা এখন প্রথম খসড়া করি হাতে লিখে। ‘দ্য শি র‌্যাট’ উপন্যাসের প্রথম সংস্করণ লাইন টানা নেই এমন কাগজে পাই, বিশালাকৃতির এই বইটি আসে আমার প্রিন্টার থেকে। আমার কোনো বই প্রকাশ করার আগে, আমি সবসময়ই একটা ব­াইণ্ড কপি চাই, সঙ্গে সাদা কাগজ—যেগুলো আমার পরবর্তী পাণ্ডুলিপি তৈরিতে কাজে লাগাই। আজকাল করি কী, প্রথম খসড়া করি হাতে লিখি, এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় খসড়া করি টাইপরাইটারে। তিন দফা খসড়া না করে আমার কোনো বই শেষ করি না। মাঝেমধ্যে বহু ঘষামাজা করতে হয়, সেক্ষেতে চতুর্থ দফায় খসড়াও করি। ***

আপনার প্রত্যেকটা সংস্করণ কি আলফা থেকে শুরু করে ওমেগায় গিয়ে শেষ হয়?
গুন্টার গ্রাস : না। আমি কোনো গ্রন্েথর প্রথম খসড়াটা করি খুব ক্ষিপ্র গতিতে। এতে ফাঁকফোকর থাকে তো থাক। দ্বিতীয় খসড়ায় ওই ফাঁকফোকর ঠিকঠাক করি। সে কারণে দ্বিতীয় খসড়া হয় অনেকটা সম্পূর্ণ ও বিস্তৃত; দীর্ঘসূত্রী। এই পর্যায়ে খুব একটা ফাঁক থাকে না, এই পর্ব খানিকটা শুকনো। তৃতীয় খসড়ায় করি কী, প্রথম খসড়ার স্বতঃস্ফূর্ততা ধরে রাখার চেষ্টা চালাই, এরপর দ্বিতীয় খসড়ার জরুরি বিষয়গুলোও তুলে আনি। এটা খুব শক্ত কাজ।

আপনি যখন কোনো সাহিত্যকর্ম করেন, তখন প্রতি দিনের কর্মসূচিটা কেমন হয়?
গুন্টার গ্রাস : আমি যখন প্রথম খসড়ার কাজ করি, প্রত্যেকদিন ৫ থেকে ৭ পাতা লিখি। তৃতীয় খসড়ার সময় প্রতিদিন লিখি মাত্র ৩ পাতা। এ পর্যায়ে গতি মন্থর হয়।

কখন লেখেন সকালে, বিকেলে না রাতে?
গুন্টার গ্রাস : আমি কখনোই রাতে লিখি না। আমি রাতে লেখার পক্ষপাতী নই। এর কারণ রাতের বেলা লেখা গড়গড় করে চলে, খুব সহজেই হয়। কিন্তু পরের দিন সকালে যখন তা পড়ি, দেখি কী, ভালো হয় নি। তাই কোনো লেখা শুরু করতে আমার চাই দিনের আলো। আমি সকাল ৯ টা থেকে ১০টার মধ্যে পড়তে পড়তে ও গান শুনতে শুনতে দীর্ঘসময় ধরে নাশতা করি। এরপর লিখতে বসি, বিকেলে কফি বিরতি, আবার শুরু করি এবং তা সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চালিয়ে যাই।**

একটা বই লেখার কাজ শেষ হয়েছে, কী করে বোঝেন?

গুন্টার গ্রাস : আমি যখন কোনো মহাকাব্য ধরনের বিশালাকৃতির (অ্যাপিক লেংথের ) গ্রন্থ রচনা শুরু করি, তা চালিয়ে যাই ধীর গতিতে। লেখার প্রক্রিয়া হয় দীর্ঘসূত্রী। খসড়া-টসড়াসহ ৪ থেকে ৫ বছর সময় নিয়ে ওই গ্রন্েথর কাজ শেষ করি। গ্রন্থ রচনা সম্পূর্ণ হয়েছে, এটা তখনই আমি বুঝতে পারি, যখন দেখি, ওই গ্রন্েথর উপজীব্য বিষয়ে আমার বলার আর বিশেষ কিছুই বাকি নেই। আমি একেবারে খালি হয়ে যাই।

ব্রেখট সব সময়ই তাঁর সাহিত্যকর্ম পুনর্লিখনের কাজ করতেন। এমন কী বই আকারে প্রকাশ পাওয়ার পরও পরিমার্জন করতেন। তিনি কখনোই তাঁর কোনো সাহিত্যকর্মকে সম্পূর্ণ হয়েছে বলে মনে করতেন না।
গুন্টার গ্রাস : আমি মনে করি না, তাঁর মতো ওইরকম করতে পারতাম। আমি আমার জীবনের বিশেষ একটা পর্বে ‘দ্য টিন ড্রাম’ কিংবা ‘ফ্রম দ্য ডায়েরি অব অ্যা স্নেইল’ লিখতে পেরেছি। আমার জীবনের ওই পর্বে আমি কীভাবে চিন্তা করতাম, অনুভব করতাম, এরই ছাপ পাওয়া যাবে এই বইগুলোতে।

আপনার সাহিত্যকর্মের কোনটা ফিকশন ও কোনটা ননফিকশন এ পার্থক্য কীভাবে করেন?
গুন্টার গ্রাস : ফিকশন বনাম ননফিকশন হিসেবে গ্রন্েথর শ্রেণিবিন্যাস করা একটা কাণ্ডজ্ঞানহীন ব্যাপার। হতেও পারে, এইরকম শ্রেণীবিন্যাস, বইবিক্রেতাদের জন্য জরুরি। কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে তা পছন্দ করি না। আমি সবসময় কল্পনা করেছি, বইবিক্রেতাদের নানা কমিটি সমানে মিটিং করছে, তাঁদের মিটিংয়ের বিষয় কোন বইগুলোকে ফিকশন বলবেন আর কোনগুলোকে ননফিকশন। তাই আমি বলি, বইবিক্রেতারা এই কর্মকাণ্ডই হল ফিকশন।

তা না হয় ঠিক আছে, কিন্তু আপনি যখন কোনো প্রবন্ধ কিংবা বক্তৃতা লেখেন, এর পদ্ধতি ও কৌশল গল্প কিংবা উপন্যাস লেখার চেয়ে আলাদা, এটা তো ঠিক, তাই নয় কি?
গুন্টার গ্রাস : তা ঠিক, ভিন্নতা আছে। কারণ এ ক্ষেত্রে এমন সব ঘটনার মুখোমুখি হই যা আমি পাল্টাতে সক্ষম নই। আমি খুব একটা দিনলিপি রাখি না, কিন্তু ‘ফ্রম দ্য ডায়েরি অব অ্যা স্নেইল’ বইটি রচনার সময় নিয়মিত ডায়েরি লিখতাম। তখন আমার মধ্যে একটা অনুভূতি কাজ করছিল যে, ১৯৬৯ তাৎপর্যপূর্ণ বছর। আমার মনে হয়েছিল নতুন সরকারের যাত্রা শুরু হওয়ার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে প্রকৃতই একটা পালাবদল হবে। ১৯৬৯ সালের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমি রাস্তায় রাস্তায় প্রচারণা চালিয়েছি। ওই সময়ের ঘটনাবলি আমি ডায়েরিতে টুকে রেখেছিলাম। কলকাতা ভ্রমণের সময়ও আমি দিনলিপি লিখি। এরপর ওই ডায়েরিকে ‘শো ইয়োর টাঙ’—এ রূপান্তর করি।

আপনার চিত্রকর্ম ও সাহিত্যকর্মের সঙ্গে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সমন্বয় করেন কি করে? কীভাবে এই ম্যাজিক দেখান?
গুন্টার গ্রাস : লেখকেরা শুধু অন্তর্মুখী, বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের সঙ্গেই ওতোপ্রোতভাবে জড়িত এমন নয়, বরং তাঁরা প্রাত্যহিক জীবন প্রক্রিয়ার সঙ্গেও যুক্ত। আমার জন্য লেখালেখি, ড্রয়িং ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকা তিনটি ভিন্ন ভিন্ন কাজ। এর প্রত্যেকটির রয়েছে নিজস্ব প্রগাঢ়তা। যে সমাজে আমার বাস এর সঙ্গে আমার নিবিড় যোগ আছে। এই সমাজের ঐকতানের সঙ্গে আমার নিজের সুরও মিশে আছে। আমি চাই বা না চাই, আমার লেখা ও আঁকাআঁকির সঙ্গে রাজনীতির গাঁটছড়া বেঁধে আছে। যখন কোনোকিছু লিখতে থাকি, সত্যি কথা বলতে কী, তখন ওই লেখায় রাজনীতি মিশিয়ে দেওয়ার কোনো মতলব আমার থাকে না। ***

ইতিহাসে অবহেলিত কোনো বিষয় আবিষ্কার করার পর, তৃতীয় কী চতুর্থ দফায় ওই বিষয়টি আমার লেখায় তুলে আনি। টের পাই রাজনীতিকে অস্বীকার করার কোনো কারণই নাই। অথচ, খুব সাদামাটাভাবে কিংবা বিশেষভাবে কোনো রাজনৈতিক বাস্তবতাকে উপজীব্য করে আমি হয়তো কোনো গল্প লিখতামই না। আমাদের জীবনের ওপর রাজনীতির সুনির্দিষ্ট ও ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। জীবনের অন্ধি-সন্ধিতে নানা বিচিত্র অর্থে এর ক্ষরণ অনিবার্য।

আপনি আপনার সাহিত্যকর্মে বহু বিচিত্র বিষয় একীভূত করেন— ইতিহাস, গীতিকাব্য...
গুন্টার গ্রাস : ... আর ড্রয়িং, কবিতা, সংলাপ, উদ্ধৃতি, ভাষণ, পত্রাবলী! দেখুন, মহাকাব্যিকধর্মী কোনো কাজ করতে গিয়ে ভাষার সচরাচর যে সব রূপ আছে ও ভাষাতাত্ত্বিক যোগাযোগের যে বিচিত্র গঠন রয়েছে এর সবকটার ব্যবহার আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। যদিও স্মরণ করা যায় যে, আমার এমন কিছু বই আছে ফর্মের দিক থেকে যেগুলো একেবারে সহি—এই যেমন ‘ Cat and Mouse’এবং `The Meeting at Telgle’

আপনার শব্দবন্ধ ও ড্রয়িং স্বতন্ত্র।
গুন্টার গ্রাস : ড্রয়িং ও লেখালেখি আমার কাজের প্রাথমিক উপাদান, তবে একমাত্র না। এর বাইরে সময় পেলে আমি ভাস্কর্য গড়ি। আমার কাছে আর্ট ও লেখালেখির মধ্যে সম্পর্কটা একেবারে স্বচ্ছ—গিভ অ্যান্ড টেক। এই সম্পর্ক কখনো খুব জোরালো কখনো দুর্বলতর। গেল কয়েক বছর ধরে এই দুইয়ের বন্ধন ছিল খুব দৃঢ়। উদাহরণ হিসেবে ‘শো ইয়োর টাঙ’—এর কথা বলা যায়। বইটা কলকাতাকে উপজীব্য করে লেখা। ড্রয়িং না করলে বইটা কখনোই আলোর মুখ দেখত না। কলকাতার বর্ণনাতীত দারিদ্র্য পর্যটকদের ক্রমাগত এমন সব অবস্থার মুখোমুখি করে, যা ব্যক্ত করতে শব্দাবলি অপারগ, ভাষা এখানে ব্যর্থ। কিন্তু আমি যখন কলকাতা ঘুরে দেখছিলাম, ড্রয়িং করছিলাম। এই ড্রয়িং আমাকে যুৎসই শব্দ খঁুজে পেতে সহায়তা দিয়েছিল।

বইটিতে কবিতার যে প্রিন্টটেক্সট আমারা পাই তাতে যোগ হয়েছে ড্রয়িং, আপনার হাতের লেখাও। এই যে হাতে লেখা অক্ষরগুলো পাওয়া যায় এগুলোকে কি গ্রাফিক্স উপাদান হিসেবে গণ্য করা যায়?
গুন্টার গ্রাস : ড্রয়িংয়ের মধ্য দিয়ে কোনো কোনো কবিতার অবয়ব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আর যখন শব্দেরা এলো, ড্রয়িংয়ের ওপরের দিকে এদের লিখে রাখলাম—টেক্সট ও ড্রয়িং একসঙ্গে উপস্থাপিত হলো। ড্রয়িংয়ের মাধ্যমে আপনি যদি শব্দকে প্রকাশ করতে সমর্থ হন তো ভালো। ড্রয়িং প্রাথমিক খসড়া তৈরিতে কাজে লাগে, টাইপরাইটার নিয়ে বসার আগে আমি প্রথমেই তাই ড্রয়িং করি, হাতে লিখি। ঠিক কী কারণে ওই বইটা লেখার কাজ ছিল বেশ শক্ত, আজও আমি নিশ্চিত হতে পারি নি। কলকাতাকে উপজীব্য করে বইটা রচিত। এই বই লিখে শেষ করার আগে আমি দুবার কলকাতা ঘুরে এসেছি। ‘শো ইয়োর টাঙ’—বই লেখা আরম্ভ করার ১১ বছর আগে প্রথমবারের মতো কলকাতা যাই। এটাই ছিল আমার প্রথম ভারত ভ্রমণ। সেসময় কলকাতায় ছিলাম মাত্র কয়েকদিন। তাতেই আহত বোধ করেছিলাম। কলকাতায় পৌঁছার পর সেখানে আরও দীর্ঘদিন থাকবার ইচ্ছা, আরও আরও দেখবার বাসনা সবকিছুই ছিল লিখে ফেলবার মতো। আমি ইতিমধ্যেই বহুদেশ ঘুরেছি—দেখেছি এশিয়া, আফ্রিকা কিন্তু আমি যখন হংকং, ম্যানিলা কিংবা জাকার্তার বস্তিগুলো দেখি, আমার কেবলই কলকাতায় কাটানো দিনগুলোর কথা মনে পড়ে। আমার জানা মতে, আর কোনো জায়গা নেই যেখানে দিনের আলোয় এতো প্রকাশ্যভাবে প্রথম ও তৃতীয় বিশ্বের বহু বিচিত্র সমস্যা একাকার হয়ে গেছে। এ জন্য দ্বিতীয় দফায় কলকাতা ভ্রমণে গেলাম। এবার আমার ভাষা ব্যবহারের ক্ষমতা হারিয়ে ফেললাম। আমার কলম থেকে একটা শব্দও বেরুল না। কাজেই ড্রয়িং জরুরি হয়ে উঠল। ড্রয়িংই হয়ে পড়ল কলকাতার বাস্তবতাকে ধরে রাখবার বিকল্প পথ। সে সময়ে করা ড্রয়িংগুলোর সহযোগিতায়ই আমি ফের গদ্যে হাত দিলাম—বইটার প্রথম অধ্যায়ে লিখলাম এক ধরনের প্রবন্ধ। এরপর লিখি তৃতীয় অধ্যায়। এই অধ্যায়ে কলকাতা সম্পর্কে একটি দীর্ঘ নাগরিক কবিতা লিখি। কবিতাটি ছিল বারো প্যারার। আপনি যদি ড্রয়িং, গদ্য ও কবিতাকে একসঙ্গে লক্ষ করেন, টের পাবেন কলকাতাকে তুলে ধরতে এদের মধ্যে আন্তযোগ রয়েছে। যদিও তিনটিরই প্রকাশভঙ্গি ভিন্ন। ড্রয়িং, গদ্য ও কবিতার টেক্সট তিনরকম। তা সত্ত্বেও এই তিনের মধ্যে যোগসাজস রয়েছে, এদের মধ্যে আন্ত:সংলাপ চলে।

গদ্য, কবিতা ও ড্রয়িং এই তিনের কোনো একটাকে কী অন্য দুইটার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন?
গুন্টার গ্রাস : এরও উত্তর আছে। তবে তা কেবলই আমার নিজের জন্য। আমার বিবেচনায়, কবিতা হল সবচেয়ে উৎকৃষ্ট। কোনো উপন্যাসের জন্মযাত্রা শুরু হয় একটা কবিতা দিয়ে। চূড়ান্ত বিচারে কবিতাকে অধিক গুরুত্ববহ হয়তো বলবো না, কিন্তু এটাই সত্যি যে, কবিতা ছাড়া আমার চলে না। কবিতাকে আমি একটা যাত্রাবিন্দু গণ্য করি।

কবিতা তাহলে অন্যান্য আর্টফরমের চেয়ে বেশি গৌরবান্বিতা?
গুন্টার গ্রাস : না, না, না! আমার কাজে কবিতা, গদ্য ও ড্রয়িং একটা গণতান্ত্রিক উপায়েই পরস্পরের পাশাপাশি দাঁড়ায়।

ড্রয়িং কী তাহলে মূর্তিমতী হয়ে অনুভূতির প্রকাশ করে, যা লেখালেখির অন্যবিদ প্রক্রিয়ায় থাকে গরহাজির?
গুন্টার গ্রাস : লেখালেখি বিমূর্ত, প্রকৃত অর্থেই এটা কঠোর পরিশ্রমের কাজ। লেখালেখিতে যখন ফান করা হয়, তা ড্রয়িংয়ের চেয়েও একেবারে ভিন্ন ধাঁচের আনন্দ দেয়। ড্রয়িংয়ে আমি কী করি, একটা কাগজে কোনো কিছু সৃষ্টি করতে পুরোমাত্রায় সচেতন থাকি। কাজটা ইন্দ্রিয় পরবশ, লেখালেখির কাজে একই কথা খাটে না। বস্ত্তত লেখালেখির ক্লান্তি দূর করতে আমি ড্রয়িং করি।

লেখালেখি কি তাহলে এত আনন্দহীন ও বেদনাদায়ক?
গুন্টার গ্রাস : খানিকটা তাই, ভাস্কর্য গড়ার মতো। কোনো ভাস্কর্য তৈরিতে আপনাকে ওই ভাস্কর্যের প্রতিটি পাশেই কাজ করতে হবে। এদিকে একটু বদল আনলেন তো অন্যদিকেও পাল্টাতে হবে। হঠাৎ কোনো একটা পরিকল্পনা বদলে ফেললেন...ভাস্বকর্যেরও সুরৎ পাল্টে যায়! ভাস্কর্যের মধ্যে সংগীত থাকে। এক টুকরা লেখার ক্ষেত্রেও একই সত্য। প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় খসড়া করতে এমন কী, একটা দীর্ঘ বাক্য লিখতে দিনের পর দিন আমাকে কাজ করতে হতে পারে। আপনি হয়তো জানেন, আমি একটি নির্দিষ্ট সময়ে কাজ করতে পছন্দ করি। আমি কাজ করি আর কাজ করি। কাজের মধ্যেই সব আছে, তবে এই কাজে কঠিনতম কিছু থাকে। আমি করি কী, যে বিষয়গুলো আমার কাছে আর গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না, সেগুলোর পরিবর্তন আনি। তাতে কাজে দেয়। আনন্দময়তা কেমন হবে বলতে আমি যা বুঝি এটা তাই, সুখের মতো কিছু একটা। আর তা মাত্র ২ থেকে ৩ সেকেন্ড স্থায়ী হয়। তখন পরবর্তী সময়সীমার দিকে যাত্রা শুরু করি। আগের সময়সীমা ততক্ষণে শেষ হয়ে গেছে।

ক্ষণিকের জন্য আবার কবিতায় ফিরে আসা যাক। উপন্যাসের অংশ হিসেবে আপনি যে কবিতাগুলো লিখেন সেগুলোর চেয়ে আপনার লেখা স্বতন্ত্র কবিতাগুলো কী ভিন্নরকম হয়?
গুন্টার গ্রাস : কবিতা লেখার ক্ষেত্রে আমি পুরনো ফ্যাশনে বিশ্বাসী। এক গাদা কবিতা লেখা পর আপনার উচিত কাজটি হবে, একজন প্রকাশকের খঁুজে বের হওয়া। এ ক্ষেত্রে আমি একেবারে স্বতন্ত্র। আমি কেবল কবিতাপ্রেমীদের জন্য কবিতার সংকলন করি। ‘ফ্রম দ্য ডায়েরি অব অ্যা স্নেইল’ বইটা লিখবার শুরু থেকে গদ্য ও কবিতার যুগলবন্দি করি। এ কবিতাগুলোর সুর অবশ্য একটু আলাদা। আমি ব্যক্তিগতভাবে কবিতাকে গদ্য থেকে আলাদা করার কোনো কারণ খুঁজে পাই না। বিশেষ করে, জার্মান সাহিত্যের ঐতিহ্য হল, গদ্য ও কবিতার অপূর্ব সমন্বয় সাধন করা। উপন্যাসের অধ্যায়ের শুরুতে কবিতা রাখার ব্যাপারে আমার আগ্রহ দিনে দিনে বাড়তে থাকে। এ কবিতাগুলো অধ্যায়ের মধ্যে সীমা নির্দেশ করে ও পরবর্তী অধ্যায় সম্পর্কে আভাস দেয়। অপরদিকে একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়। যে গল্প-পাঠকেরা ‘কবিতা আমার কাছে দুরূহ’ এরকম ভাবেন তাঁরা দেখতে পারেন কবিতাগুলো কত প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা, কখনোবা গদ্যের চেয়েও সহজবোধ্য।

ইংরেজি ভাষাভাষী পাঠকেরা আপনার কোনো বইয়ের ইংরেজি সংস্করণ পড়তে গিয়ে কতটা ক্ষতির সম্মুখীন হন বলে আপনার ধারণা?
গুন্টার গ্রাস : এ প্রশ্নের জবাব দেওয়া আমার জন্য একটু কঠিন হবে, কারণ আমি নিজে একজন ইংরেজ পাঠক নই। তবে অনুবাদকর্মে আমি আমার অনুবাদকদের বরাবরই সহযোগিতা করি। ‘দ্য ফ্লাউন্ডার’ বইয়ের পাণ্ডুলিপি শেষ করার পর আমার জার্মান প্রকাশককে নতুন একটা চুক্তির প্রস্তাব দিই। তাঁকে শর্তারোপ করি, যখন কোনো পাণ্ডুলিপি লেখার কাজ শেষ করব, তখনই তা অনুবাদকেরা পড়ে দেখবেন, এরপর আমার প্রকাশক আমাদের সবার অংশগ্রহণে একটা বৈঠকের ব্যবস্থা করবেন। লেখক, প্রকাশক ও অনুবাদকের বৈঠকের এই কাজটা প্রথমবারের মতো করি ‘দ্য ফ্লাউণ্ডার’ লেখার পর। এরপর ‘দ্য মিটিং অ্যাট টেলগটে’ ও ‘দ্য র‌্যাট’ লেখার পরও তা অনুসরণ করি। আমার মনে হয় এ ধরনের বৈঠক করে অনুবাদকদের একটা বিরাট সহযোগিতা দেওয়া যায়। কারণ, অনুবাদকেরা ইতিমধ্যে আমার বই পড়ে ফেলেছেন। বইটির সবকিছ ু তাঁরা জেনে গেছেন, এই পর্যায়ে লক্ষ্য করেছি, তাঁরা অদ্ভূত সব প্রশ্ন উত্থাপন করেন। তাঁরা আমার লেখা বইকে, এমন কী আমার চেয়েও বেশি বোঝেন। এর ফলে মাঝে-মধ্যে আমি খানিকটা অস্বস্তি বোধ করি। কারণ, এই অনুবাদকেরা আমার বইটির গতিপ্রকৃতি ধরে ফেলেছেন এবং আমাকে তাঁরা সেটা আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েও দিয়েছেন। ফরাসি, ইতালীয় ও স্পেনিস অনুবাদকেরা, মিটিং চলাকালে নোট নেন, প্রশ্ন করেন, তাতে বইটিকে নিজ নিজ ভাষায় অনুবাদ করতে গিয়ে স্বচ্ছন্দবোধ করেন তাঁরা। কোনো সাহিত্যকর্ম অনুবাদের ক্ষেত্রে আমার পছন্দ হলো, এমন অনুবাদ করা, যা পড়তে গিয়ে মনেই আসবে না যে আমি অনুবাদ পড়ছি। আমরা খুব সৌভাগ্যবান যে, জার্মান ভাষায় রুশ সাহিত্যের অপূর্ব সব অনুবাদকর্ম রয়েছে। শেক্সপিয়র কিংবা অন্যান্য রোমান্টিক লেখকের সাহিত্য অনুবাদ ভুলে ঠাসা, তবে বলতেই হয় কাজগুলো দুর্দান্ত। সাহিত্যের বই হোক তা কাব্যগ্রন্থ কিংবা উপন্যাস, অনুবাদ করতে এমন মানুষের প্রয়োজন যিনি তাঁর মাতৃভাষায় ওই বইয়ের পুনর্জন্ম দিতে সক্ষম। ঠিক এরকমটি করার জন্য আমার বইয়ের অনুবাদকদের আমি অনুপ্রাণিত করি।

আপনার কি মনে হয় না আপনার ‘ডাই র‌্যাটিন’ গ্রন্েথর ইংরেজি অনুবাদে কিছুটা সমস্যা হয়েছে, কারণ বইটার নাম দেওয়া উচিত ছিল ‘দ্য র‌্যাট’ এতেও সমস্যা হত, পরিষ্কার হত না ইঁদুরটি স্ত্রীজাতীয়? ‘দ্য শি র‌্যাট’ আমেরিকানদের কানে বেখাপ্পা ঠেকতো ‘র‌্যাট্টেসা’র তো প্রশ্নই ওঠে না। একটি স্ত্রীবাচক ইঁদুরের ওই যে নির্দেশনা, খুব আকর্ষণীয় লাগে, ইংরেজি ভাষার সীমাবদ্ধতা লক্ষ করে দেখুন, ‘র‌্যাট ’ স্ত্রীবাচক কিংবা পুরুষবাচক বলে কিছু নাই। এখানে র‌্যাট বলতে সেইসব কুৎসিত প্রাণীদের কথাই আসে যেগুলো নিত্যদিন পাতালপথে উপদ্রব করে বেড়ায়।
গুন্টার গ্রাস : জার্মান ভাষাতেও কিন্তু শব্দটা আমরা পাই নি। এটা আমি সৃষ্টি করেছি। আমার অনুবাদকদের আমি উদ্ভাবন করার অনুপ্রেরণা জোগাই। তাঁদের বলি, নতুন শব্দ সৃষ্টি করেন। বলতে কী, আমার কাছে ‘ She-Rat’শব্দটা সত্যিই অপূর্ব লাগে।

এই বইয়ের ইঁদুরটি স্ত্রী ইঁদুর কেন? এটা কি স্থুলতা করার জন্য না কি নারীবাদী অথবা রাজনৈতিক কারণে?
গুন্টার গ্রাস : ‘দ্য ফ্লাউণ্ডার’ উপন্যাসের ইঁদুরটি পুরুষ। কিন্তু আমার বয়স বাড়ার সাথে সাথে দেখলাম যে, আমি আমাকে নারীদের কাছে নিবেদন করে ফেলেছি। এর আর ব্যত্যয় ঘটাবো না। হোক সে মনুষ্য প্রজাতি কিংবা একটা ইঁদুর—একটা শি-র‌্যাট—এটা কোনো ব্যাপারই না। আমি বহুধারণা পাই, আপনারা লক্ষ করেছেন? আমার মধ্যে যে ভাবের উদয় হয় তাতে লাফিয়ে উঠি, নাচি আর তারপর আসে শব্দরাশি আর গল্পেরা। আমি মিথ্যা বলা শুরু করি। এখানে মিথ্যা বলা খুবই জরুরি। কোনো পুরুষের সঙ্গে মিথ্যা বলা আমার কাছে কাজের কাজ মনে হয় না। একটা পুরুষের সঙ্গে বসলাম, একসঙ্গে একগাদা মিথ্যা বললাম—এ হয় না, কিন্তু নারীর সঙ্গে গল্প করছি সেখানে মিথ্যা বলা চলে।

‘দ্য র‌্যাট’ ‘দ্য ফ্লাউন্ডার’ ‘ফ্রম দ্য ডায়েরি অব অ্যা স্নেইল’ কিংবা ‘ডগ ইয়ারস’র মতো বহু বইয়ের কেন্দ্রীয় চরিত্রে রয়েছে পশুরা। এর কি বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য আছে?

গুন্টার গ্রাস : থাকতে পারে। আমি সবসময় চিন্তা করেছি, আমরা মনুষ্য প্রজাতি সম্পর্কে খুব বেশি বলাবলি করি। আমাদের পৃথিবীটা যেমন গিজগিজ করছে মানুষে তেমনি এতে রয়েছে অসংখ্য পশু, পাখি, মাছ আর অগণিত পোকামাকড়। পৃথিবীতে মানুষ আসার আগে থেকেই এরা ছিল এবং মানুষেরা বিলুপ্ত হওয়ার পরও এরা পৃথিবীতে রয়ে যাবে। এখানেই ওদের সঙ্গে আমাদের একটা পার্থক্য। কয়েক লাখ বছর আগে পৃথিবীতে রাজত্ব করতো এমনসব অতিকায় ডাইনোসরের হাড়গোড় আমরা জাদুঘরে আমাদের পাই। ডাইনোসরেরা কিন্তু পরিচ্ছন্ন পথে মারা গেল। কোনো বিষ নেই, একদম না। ওদের হাড়গুলো সব পরিষ্কার। হাড়গুলো আমরা দেখতে পারি, কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে একই কাজ সম্ভব নয়। আমরা যখন মারা যাই, বিষাক্ত জিনিসের ছড়াছড়ি হয়, যেখানে নিঃশ্বাস নেওয়াও নিরাপদ নয়। আমাদের নিশ্চয়ই উপলব্দি করতে হবে যে, এই পৃথিবীতে শুধু মানুষই বসবাস করে না। অবশ্য বাইবেল আমাদের একটা কুশিক্ষা দিয়েছে। বাইবেলে বলা হয়েছে, মানুষ আধিপত্য বিস্তার করেছে মাছ, পশুপাখিসহ সব প্রাণীর ওপর। পৃথিবী জয় করতে আমরা চেষ্টা চালিয়েছি। তবে এর ফলাফল খুবই খারাপ হয়েছে।

সমালোচনা থেকে কখনো কিছু শিখেছেন কী?
গুন্টার গ্রাস : আমি নিজেকে একজন সুবোধছাত্র হিসেবে ভাবতেই পছন্দ করি। তারপরও না বলে পারি না যে, সমালোচকেরা সাধারণত খুব ভালো শিক্ষক নন। একটা সময় ছিল যখন সমালোচকদের কাছ থেকেও আমি অনেক কিছু শিখেছি। ওই সময়টাকে এখন মিস করি। সময়টা ছিল ‘গ্রুপ ৪৭’র। তখন করতাম কী, পাণ্ডুলিপি নিয়ে আমরা জোরে জোরে পড়তাম, পরে আলোচনায় মেতে উঠতাম। ওখানেই শিখলাম—কী করে কোনো ‘টেক্সটে’র আলোচনা করতে হয়। কীভাবে সমালোচনা নেমে আসে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। লেখকেরা আলোচনা করেন একটা বই কী করে লেখা যায়, বইটির শিল্পকৌশলসহ নানা বিষয়। সমালোচকেরা করেন কী, লেখতেরা কী করে লিখবে এ ব্যাপারে তাঁদের প্রত্যাশার কথা পাড়েন। সমালোচক ও লেখকদের এই যে মিশ্রণ, এটা আমার জন্য একটা অভিজ্ঞতা বটে, একটা পাঠও। প্রকৃতপক্ষে এই কালপর্বটা ছিল যুদ্ধোত্তর জার্মান সাহিত্যের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা সময়। যুদ্ধের পর এত বেশি দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছিল, বিশেষ করে লেখকচক্রে, এর কারণ যুদ্ধের সময় যে প্রজন্ম—সেটা ছিল হয় অশিক্ষিত, নয় ভুল শিক্ষায় শিক্ষিত। জার্মান ভাষার গায়ে সে সময় কলঙ্কের দাগ লেগেছিল। এ ভাষার খ্যাতিমান লেখকেরা দেশান্তরী হয়েছিল। জার্মান সাহিত্যের কাছে তখন কারো আর কোনো প্রত্যাশা ছিল না। ‘গ্রুপ ৪৭’র বার্ষিকসভায়, জার্মান সাহিত্য কীভাবে পুনরায় স্বরূপে আবির্ভূত হতে পারে এ বিষয়ে আমাদের একটি নির্দেশিকা দেওয়া হয় । ‘গ্রুপ ৪৭’—এ আমার প্রজন্মের অনেক লেখকই অন্তর্ভূক্ত ছিলেন, যদিও অনেকে এর বাইরেও রয়ে গিয়েছিলেন।

পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন কিংবা বইয়ে যেসব সমালোচনা প্রকাশিত হয়েছিল, এগুলো সম্পর্কে আপনার মতামত কী? আপনার মধ্যে ওইগুলোর কোনো প্রভাব পড়েছিল কী?
গুন্টার গ্রাস : না। কিন্তু আমি অন্য লেখকদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছিলাম। আমার ওপর আলফ্রেড ডাবি­ন—এর প্রভাব এমন প্রবল ছিল যে ‘অন মাই টিচার ডাবি­ন’ শিরোনামে তখন তাঁর ওপর একটা প্রবন্ধ লিখে ফেলি। ‘ডাবি­নে’র কাছ থেকে যে কেউ শিক্ষা লাভ করতে পারেন। এক্ষেত্রে তাঁকে নকল করার ঝঁুকিও নাই। আমার কাছে তিনি ছিলেন ‘টমাস মান’র চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ একজন লেখক। ডাবি­নের উপন্যাসগুলো ফরমের দিক থেকে টমাস মানের উপন্যাসের মতো বিভিন্ন অংশের সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, কিংবা ধ্রুপদী ঢংয়েরও নয়, কিন্তু ডাবি­ন সাহিত্যকর্মে যে ঝঁুকি নিয়েছিলেন তা তুলনারহিত। তাঁর বইগুলো সমৃদ্ধ মুক্তচিন্তায় ভরপুর। আমার দুঃখ হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও খোদ জার্মানিতে ‘বার্লিন আলেকজাণ্ডার প­াৎজ’—এর জন্যই তিনি বিশেষভাবে পরিচিত। আমি এখনো শিখছি, আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন এমন অন্য অনেক লেখক রয়েছেন।

মার্কিন লেখকদের সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
গুন্টার গ্রাস : মেলভিলে সবসময়ই আমার প্রিয় লেখক। এ ছাড়া উইলিয়াম ফকনার, টমাস উলফ ও জন দোস প্যাসোস—তাঁদের লেখা আমি দারুণ উপভোগ করেছি। লেখালেখিতে অপূর্ব সব বার্তা দেওয়ার কাজে দোস প্যাসোস যতটা সিদ্ধহস্ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখন যাঁরা লেখালেখি করছেন তাঁর সঙ্গে তুলনা চলে এমন কেউ নেই।

‘দ্য টিন ড্রাম’—কে চলচ্চিত্রে রূপ দেওয়া সম্পর্কে আপনার মতামত কী?
গুন্টার গ্রাস : স্কোন্ডার্ফ ( Schlondarf) একটা ভালো চলচ্চিত্র বানিয়েছেন। যদিও উপন্যাসটির সাহিত্যিক গঠনের দিক অনুসরণ করেন নি তিনি। হবে হয়তো, এমনটি করাই দরকার ছিল। কারণ অস্কারের দৃষ্টিকোণ থেকে একটা সময় থেকে অনবরত লাফ দিয়ে গিয়ে যে গল্প বলা—তা হয়তো অনেকটা জটিল হয়ে উঠতো। স্কোন্ডার্ফ খুব সরল করে ফেলেছেন। একটা সরলরেখা ধরে গল্পটা বলেছেন তিনি। এছাড়াও উপন্যাসের কিছু অধ্যায় তিনি চলচ্চিত্রে বাদ দিয়েছেন। আমি ওই অধ্যায়গুলোকে মিস করি। চলচ্চিত্রে আবার অনেক প্রত্যাশার ব্যাপার আনা হয়েছে। যা আমার খুব একটা মনপুত হয় নি। ক্যাথলিক গির্জার স্বল্পদৈর্ঘে্যর যে দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে তাতেও কাজের কাজ কিছুই হয় নি। কারণ, ক্যাথলিসিজম সম্পর্কে স্কোন্ডার্ফ আদতে কিছুই বুঝতে পারেন নি। তিনি সত্যিই একজন জার্মান প্রোটেস্টান্ট। ফলে, চলচ্চিত্রে দেখানো ক্যাথলিক গির্জাটিকে মনে হয়েছে প্রোটেস্টান্টদের গির্জা। বিশেষ করে গির্জার ওই নির্দিষ্ট স্থানটি, যেখানে বসে পুরোহিতেরা পাপকর্মের স্বীকারোক্তি শোনেন, চলচ্চিত্রটিতে এর উপস্থাপন এই ধারণাকে আরও বদ্ধমূল করে তোলে। কিন্তু এটা হল একটা ছোট্ট ডিটেল দৃশ্যের উদাহরণ। অস্কার চরিত্রে যে তরুণ অভিনয় করেছে, সে খুব ভালো করেছে। সব মিলিয়ে চলচ্চিত্রটি ভালোই হয়েছে, বলা যায়।

জার্মানির পুনঃএকত্রীকরণের ফলে জার্মান সংস্কৃতিতে কীরকম প্রভাব পড়েছে?
গুন্টার গ্রাস : দুই জার্মানিকে পুনরায় একত্রীকরণের বিপক্ষে বলা শিল্পী সাহিত্যিকদের কথা কেউই শোনে নি। দুর্ভাগ্য বলতে হয়, বুদ্ধিজীবীদের বিরাট একটা অংশ এ বিতর্কে জড়ায় নি। তাঁরা আলস্য হেতু না কি সমবেদনার অভাবে এমন ভূমিকা পালন করেছেন, বুঝতে পারি না। গোড়ার দিকে দেশটির সাবেক চ্যান্সেলর উইলি ব্রান্ড ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, ঐক্যবদ্ধ জার্মানির যে ট্রেনটি আজ স্টেশন ছাড়ল, এটা আর কেউই থামাতে পারবে না। একটি অচিন্তাশীল অতি উৎসাহের পালাবদল ঘটেছে। এই ধরনের নির্বোধ রূপককে সেদিন সত্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল। আর এতে নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায়, পূর্ব জার্মানির সংস্কৃতি ধ্বংস করতে এটা কী বাজে প্রভাব ফেলবে, এ সম্পর্কে কেউই তেমন ভাবেনি। তাঁদের অর্থনৈতিক অবস্থার কী হবে তা না বলাই শ্রেয়। না, আমি এমন কোনো ট্রেনে চড়তে চাই না, যেটির দিক নির্দেশনা দেওয়া সম্ভব নয়। উদ্ভট সেই ট্রেনটা কোনো সিগন্যাল মানবে না। অথচ আমি এখনো স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছি।

পুনঃএকত্রীকরণ সম্পর্কে আপনার এ দৃষ্টিভঙ্গির জন্য জার্মানির পত্র-পত্রিকায় যে ধরনের সমালোচনা করা হয়েছে এর প্রতিক্রিয়া কীভাবে ব্যক্ত করবেন?
গুন্টার গ্রাস : ওহ্‌, আমি বেশ সমালোচিত হয়েছি। তবে আমার নীতিগত অবস্থানে এ সব সমালোচনার কোনো প্রভাব পড়ে নি। দুই জার্মানির একত্রীকরণের ঘটনাটি এমনভাবে ঘটানো হয়েছে যে, তা আমাদের মৌলিক আইন লঙ্ঘন করেছে। বিভক্ত দুই জার্মানির ফের একত্রিত হওয়ার আগে একটা নতুন সংবিধানের খসড়া করা উচিত ছিল—যা ঐক্যবদ্ধ জার্মানির সমস্যা যথাযথভাবে মোকাবিলা করত। কিন্তু বাস্তবতা হল, আমরা নতুন কোনো সংবিধান পাই নি।

দুই জার্মানির একত্রীকরণ একটি ঐতিহকসিক ঘটনা যা আপনার একাধিক বইয়ে অনায়াসে ঠাঁই পেয়েছে। আপনি যখন এ ধরনের ঐতিহাসিক কোনো মুহূর্তের কথা লেখেন তখন কি সত্যি ইতিহাসের বর্ণনা দেওয়ার চেষ্টা করেন? ফিকশনে আমরা যে ইতিহাসকে পাই, আপনার বইগুলোতে যেমন আছে, অন্যদিকে ইতিহাসের পাঠ্যপুস্তক কিংবা খবরের কাগজে যে ইতিহাস তুলে ধরা হয়, এরা কি পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে?
গুন্টার গ্রাস : ইতিহাস সংবাদ মাত্র নয়। এরচেয়েও বেশি কিছু। ‘ The Meeting at Telgli’ ও ‘দ্য ফ্লাউণ্ডার’ বই দুটিতে ঐতিহাসিক ঘটনার বর্ণনা আমি সচেতনভাবে করেছি। মানুষের পুষ্টিসাধনের ঐতিহাসিক পর্যায় বর্ণনা করা হয়েছে ‘দ্য ফ্লাউণ্ডার’—এ। এখানে যুদ্ধ, শান্তি, রাজনৈতিক নিপীড়ন অথবা পার্টি পলিটিক্সের মতো বিষয় মুখ্য নয়। সেই বিবেচনায় ইতিহাসের মালমশলা এখানে অপর্যাপ্তই বলা চলে। পুষ্টিসাধন প্রক্রিয়া ও মানুষের পুষ্টি বিষয়ক প্রশ্নটাই এখানে কেন্দ্রে রাখা হয়েছে, এই সময়ের জন্য প্রসঙ্গটা জরুরি। কারণ, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল­া দিয়ে বাড়ছে খাদ্যাভাবজনিত দুঃখ-কষ্ট, এমনকী মৃত্যুর ঘটনা। যাইহোক, এই যে ইতিহাস, এর দলিল আমাকে আবিষ্কার করতে হল। আমি তখন রূপকের আশ্রয় গ্রহণ করি। রূপকথার গল্পের দ্বারস্থ হই। কারণ রূপকথার গল্পেরা সাধারণত সত্য কথা বলে। এই পৃথিবীতে আমরা ক্রমশঃ ফুরিয়ে যাচ্ছি, আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন ও অভিজ্ঞতা ক্রমে লোপ পাচ্ছে এই বেদনাবোধের নির্যাসই আমি রূপকথায় উপস্থাপন করি । এ দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে, দেখা যাবে গল্পগুলো কখনোবা সত্যের চেয়ে বেশি সত্য।

আপনার সৃষ্ট চরিত্রদের সম্পর্কে কী বলবেন?
গুন্টার গ্রাস : সাহিত্যে চরিত্রগুলো বিশেষ করে, কোনো কোনো বইয়ের কেন্দ্রীয় চরিত্র, যেটিকে উপজীব্য করে গোটা উপন্যাসটি লেখা হয়, তা নানা লোকের বিচিত্রসব ভাবের ও অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে গড়া। একজন গল্প লিখিয়ে হিসেবে আপনাকে বহু চরিত্র সৃষ্টি করতে হয়। আবিষ্কার করতে হয়—যার কোনোটা আপনার পছন্দের আর কোনোটাবা অপছন্দের। চরিত্র সৃষ্টি কিংবা আবিষ্কারের কাজটা আপনি তখনই সফলভাবে করতে সক্ষম হবেন, যখন চরিত্রগুলোর রন্ধ্রে রন্ধ্রে আপনি প্রবেশ করতে পারবেন। যদি আমি আমার সৃষ্ট চরিত্রগুলোকে ভিতর থেকে অনুধাবন করতে না পারি, তাহলে এরা কাগুজে চরিত্র বৈ আর কিছু হবে না।

আপনার লেখক জীবনে রচনাশৈলীর বাঁকবদল করেছেন বহুবার, স্টাইল পাল্টেছেন, উপজীব্য বিষয়ও। এটা কী করে সম্ভব হল?
গুন্টার গ্রাস : আমার প্রথম তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বই—‘দ্য টিন ড্রাম’ ‘ডগ ইয়ারস’ ও উপন্যাসিকা ‘ক্যাট অ্যান্ড মাউস’—একটা সময় প্রতিনিধিত্ব করে। ষাট দশকের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির অভিজ্ঞতাকে উপজীব্য করে বই তিনটি রচিত। ওই সময়টায় নাৎসি জার্মানি নিয়ে লেখার বিশেষ তাগিদ অনুভব করেছিলাম। এর বছর কয়েক পরে ‘ফ্রম দ্য ডায়েরি অব অ্যা স্নেইল’ বইটি লিখলাম। এখানেও যুদ্ধ বিগ্রহের কথা আছে। তবে কিনা ইতিমধ্যে আমর গদ্যের স্টাইল ও ধরন উল্টে-পাল্টে গেছে। তিনটি কালপর্বে বইটি উপস্থাপন করলাম— অতীত (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ), বর্তমান (১৯৬৯’র জার্মানি, যখন বইটি লিখতে শুরু করি), ভবিষ্যৎ (আমার সন্তানদের প্রতিনিধিত্বকারী)। আমার মাথায় আর বইটিতেও ওই তিনটি কালপর্ব তখন জটলা পাকিয়েছিল। আমি এই প্রথমবারের মতো আবিষ্কার করেছিলাম, স্কুলে গ্রামার ক্লাশে শেখা ক্রিয়ার কাল—অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ—বাস্তব জীবনে মোটেও সহজ ব্যাপার নয়। আমি সবসময়ই ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তাভাবনা করি। অতীতের লব্দ জ্ঞান এবং বর্তমান সেখানে হাজির, যাকে আমরা ভবিষ্যৎ বলে উলে­খ করছি, এরা এখানে প্রভাব ফেলছে। আর গতকাল উচ্চারণ করা বাক্যগুলো হয়তো সত্যই অতীতকালের নয়—হবে হয়তো— ভবিষ্যৎ কালের। আবার দেখেন, ধারাক্রম বজায় রাখতে মানসিকভাবে আমরা সংরক্ষিত নই—একইসাথে আমরা ভিন্ন ভিন্ন সময়ের সম্পর্কে সজাগ। একজন লিখিয়ে হিসেবে সময়ের এই যে একের ওপর অন্যের গড়িয়ে পড়ার স্বভাব তা আমাকে হৃদয়ঙ্গম করতে হয়েছে। আবার তা উপস্থাপনের দায়ও আমার কাঁধেই বর্তায়। অস্থায়ী এই থিমগুলোই আমার সাহিত্য সৃষ্টিতে ক্রমান্বয়ে গুরুত্ব লাভ করেছে। ‘হেডবার্থস’ কিংবা ‘দ্য জার্মানস আর ডায়িং আউট’ সত্যিই নব আবিÓকৃত। এককালে বর্ণনা করেছি যেটাকে আমি Vergegenkunfi বলি। জার্মান ভাষায় নতুন শব্দ তৈরি করতে কয়েকটি শব্দের মিশেল দিতে পারেন। Ver— এসেছে Vergangenheit থেকে, যার অর্থ অতীত; gegen এসেছে gegenwart থেকে যার মানে বর্তমান আর Kunft এসেছে Zukunft থেকে যার অর্থ ভবিষ্যৎ। সময়ের এই যে মিশ্রণ নতুন ধরনের, ‘দ্য ফ্লাউণ্ডার’— এ কিন্তু এর উপস্থিতি রয়েছে। ****

‘ফ্রম দ্য ডায়েরি অব অ্যা স্নেইল’ গ্রন্েথ আপনি সমকালীন রাজনীতির সঙ্গে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মিশেল দিয়েছেন। ‘দেনজিগ’ এলাকার ইহুদীদের করুণ পরিণতির কথা ফিকশন আকারে তুলে ধরেছেন। ১৯৬৯ সালে উইলি ব্রাণ্ডের পক্ষে আপনি নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন, ভাষণ লিখেছেন, তখন কি ভেবেছিলেন ওই কর্মকাণ্ডগুলোই পরবর্তীতে একটি গ্রন্থ রচনার কাঁচামাল জোগান দেবে?
গুন্টার গ্রাস : না গ্রন্থ, না অন্যকিছু। তখন নির্বাচনী প্রচারণায় নামা ছাড়া আমার অন্যকোনো পছন্দ ছিল না। আমার জন্ম ১৯২৭ সালে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হল। আমার বয়স তখন ১২ বৎসর।

ইতিহাসের ওই অংশটা আমার কাছে জগদ্দল পাথরের মতো ঠেকে। আমি একা নই, এই ভাবনা আরো অনেক লেখকের। আমি যদি সুইডেন কিংবা সুইজারল্যান্ডের লেখক হতাম, কয়েকটা জোক্স বলে খালাস পেতাম। তাতেই বিরাট ভূমিকা রাখা হতো। আর কী চাই! কিন্তু আমি যে ব্যাকরাউণ্ড থেকে এসেছি, তাতে এইরকম আচরণ করা আমার পক্ষে মোটেও সম্ভব নয়; অতএব আমার জন্য অন্যকোনো পথ খোলা ছিল না। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে আডেনাউয়ের সময়ে রাজনীতিকেরা অতীত ইতিহাস নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করতেন না। এ বিষয়ে কদাচ মুখ খুললেও আমাদের ইতিহাসের একটা অধ্যায়কে তাঁরা সামনে আনতেনই না। যে সময়টায় অসহায় জার্মানদের বিরুদ্ধে শয়তানেরা অবস্থান নিয়েছিল। রাজনীতিকেরা ভয়াবহরকমের মিথ্যাচার করেছেন। অথচ, নতুন প্রজন্মের কাছে ওই সময়কে সত্যভাবে তুলে ধরা অত্যন্ত জরুরি। তরুণরা জানুক, সে সময় দিনের আলোয় ধীরে-সুস্থে, গাণিতিকভাবে কী ঘটানো হয়েছিল। সেই সময় যে কেউ দেখতে পারতো প্রকাশ্য দিবালোকে কী ঘটছে। ‘ফেডারেল রিপাবলিক’র ৪০ বছর পর আর দশটা ভালো দিকের একটি আমরা পেয়েছি যে, এখন ওই নাৎসী জমানার কথা বলা প্রকাশ্যে বলা যায়। আমাদের যুদ্ধোত্তর সাহিত্য এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।

‘দ্য ডায়েরি অব অ্যা স্নেইল’ শুরু হয়েছে ‘প্রিয় সন্তানেরা’ বলে। আর এ আবেদন গোটা প্রজন্মের প্রতি, যা যুদ্ধোত্তর যুগে বেড়ে উঠেছে, কিন্তু এখানে আপনি আপনার নিজের সন্তানদেরও পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।

গুন্টার গ্রাস : গণহত্যা তখন বীভৎস আকার ধারণ করেছিল। এ ব্যাপারে আমি একটা ব্যাখ্যা দিতে চেয়েছিলাম। যুদ্ধের পর জন্ম নেওয়া আমার সন্তানদের এমন একজন বাবা আছেন, যিনি কোনো এক সোমবার সকালে নির্বাচনী প্রচারণায় বের হয়ে পথে পথে বক্তৃতা দিয়ে শনিবার বাড়ি ফিরে আসেন। তখন সন্তানেরা জিজ্ঞেস করে, ‘তুমি এতদিন এক নাগাড়ে বাড়ির বাইরে ছিলে, কিন্তু কেন? তাদের এ প্রশ্নের জবাব আমি মুখে দিয়েই ক্ষান্ত হই নি, বরং আমার লেখাতেও তা তুলে ধরি। ওই সময়ের চ্যান্সেলরের পক্ষে প্রচারণায় নেমেছিলাম শুধু তাই না, এর মধ্য দিয়ে আমি নাৎসীদের অতীত ইতিহাসের বিরুদ্ধে আমার অবস্থান ঘোষণা করি, লড়ি। আমার গ্রন্েথ কোনো বিমূর্ত সংখ্যা দিয়ে নয় বরং উলে­খ করি এত এত ইহুদীকে তখন হত্যা করা হয়েছিল। ৬০ লাখ সংখ্যাটি ধারণাতীত। আমি চেয়েছিলাম একটু বেশি বাস্তব করে তুলতে। এই লক্ষ্যে ‘দেনজিং’ শহরের ইতিহাস তুলে ধরি। ইহুদী অধ্যুষিত শহরটির ইতিহাস বহু পুরনো কয়েক’শ বছর তো বটেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান নাৎসীরা শহরটি ধ্বংস করে। ওই সময়ের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর একটা সত্যিকারের প্রামাণ্যচিত্র আঁকতে চেয়েছিলাম। গ্রন্থটির চূড়ান্ত দৃশ্যে এই অতীতকে বর্তমানের সঙ্গে সম্পর্কিত করতে চেষ্টা করি। ‘আল ব্রেখট ডারি’র তিন শতম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে এক বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আমার প্রস্ত্ততির কথা লিখি। এ অধ্যায়টি মূলত ‘আল ব্রেখট’র ‘ Melecholia g’—এর প্রতিবিম্ব। যা মানব ইতিহাসে বেদনাময় ও মর্মস্পর্শী আবেদন রাখে।

আপনি পরিবেশ ইস্যু থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ইস্যুর একজন সক্রিয় কর্মী; আপনার এই কর্মকাণ্ডগুলো আবার আপনরার লেখালেখিরও অংশ।
গুন্টার গ্রাস : আমি গত কয়েকবছর জার্মানির আনাচে কানাচে তো বটেই পৃথিবীরও বহু দেশ ঘুরে দেখেছি। বিষে জর্জরিত, মৃত্যুমুখী পৃথিবীর রূপ আমার চোখে ধরা পড়েছে, যার ছবি আমি এঁকেছি। মরণোন্মুখ এই পৃথিবীর বাস্তবচিত্র তুলে ধরতে ‘ডেথ অব উড’ নামে একটি বই প্রকাশ করি। এটি একটি চিত্রকর্মের বই। যেখানে ফেডারেল রিপাবলিক অব জার্মানি এবং এই তো সেদিন পর্যন্ত যেটা ছিল জার্মান ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক—এর সীমান্তর্বী এলাকার বিশাল বনভূমি উজার হয়ে যাওয়ার কথা আছে। দুই জার্মানির পুনঃএকত্রীকরণ ঘটেছে রাজনৈতিক দিক থেকে। এদিকে বনভূমি ধ্বংস করা হয়েছে, এ ধারা হয়তো অব্যাহতই থাকবে। পশ্চিম জার্মানি ও চেকোশে­াভাকিয়ার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি অঞ্চলের বনভূমির পরিণতি একই হয়েছে। দেখে মনে হয় জায়গাটা একটা কসাইখানায় পরিণত হয়েছে। সেখানে যা দেখেছি, ছবি এঁকে তা তুলে এনেছি। ছবিগুলো নিঃসন্দেহে সার কথাই বলবে, আর ছবিগুলোর শিরোনামও দিয়েছি বর্ণনার দিকে মনযোগ না দিয়ে। বরং তা মন্তব্যধর্মীই বলা যায়। তীক্ষ্ণ, তীব্র সব মন্তব্য। এমন একটা বিষয়কে ছবি এঁকে, মন্তব্য লিখে এই যে উপস্থাপনার চেষ্টা এর ওজন লেখালেখির সমান তো বটেই, কখনোবা আরও বেশি।

সাহিত্য একটা যুগের রাজনৈতিক বাস্তবতা উদ্ভাসিত করার উলে­খযোগ্য ক্ষমতা রাখে বলে আপনি মনে করেন কি? একজন নাগরিক হিসেবে যা দরকার বলে মনে করেন অথচ লেখালেখিতে ঠিক ততটা করে দেখাতে পারেন না বলেই কি আপনি রাজনীতিতে জড়ালেন?

গুন্টার গ্রাস : রাজনীতির দায়ভার কোনো বিশেষ পার্টির ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি না। বরং আমি বলব, এই পার্টি নির্ভরতাই বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। ‘সাহিত্য কি পৃথিবী বদলে দিতে পারে!’ এই শিরোনামে বহু সভা, সম্মেলন করা হয়। আমি মনে করি, পরিবর্তন আনতে সাহিত্যের কার্যকরী একটা ক্ষমতা সত্যি আছে। চিত্রকলার ক্ষেত্রেও এটা সত্য। আধুনিক চিত্রকলা আমাদের দেখার দৃষ্টিভঙ্গিই পাল্টে দিয়েছে, সন্ধান দিয়েছে বহু মত ও পথের। ‘কিউবিজম’র মতো আন্দোলন আমাদের অন্তর্দৃষ্টি খুলে দিয়েছে। যোগান দিয়েছে নব শক্তির। জেমস জয়েসের ইউলিসিস—এ স্বগোক্তির সূচনা করা হয়েছে যে অংশে তা পরবর্তীতে অস্তিত্ব সম্পর্কে আমাদের বোঝবার জটিলতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে, এ ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব ফেলেছে। আর এই যে প্রভাব, যা সাহিত্যের দুর্দশাগ্রস্ত নয়। একজন পাঠক আর একটা গ্রন্েথর যে মৈথুন চলে তা শান্তিময়, সৌহার্দ্যপূর্ণ। বই মানুষকে কতটা বদলে দিতে পারে? এ ব্যাপারে আমাদের জানাজানি খুব বেশি নয়। একটা মাত্র জবাব আমার জানা আছে যে, বই আমার সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই ছোট বয়সে তখন যুদ্ধ গেছে থেমে, একগাদা গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের মধ্যে ‘কাম্যু’র লেখা ছোট্ট একটা ভল্যুম ‘দ্য মিথ অব সিসিফাস’ আমার কাছে প্রিয়তর হয়ে ওঠে। বিখ্যাত কিংবদন্তীর নায়ক যাকে শাস্তি দেওয়া হয়, পাহাড়ের পাদদেশ থেকে একটা বিশাল পাথরকে ঠেলে শীর্ষে তোলার — কী মর্মান্তিক! নায়ক পাথর ঠেলে ওপরের দিকে, বোবা পাথর গড়িয়ে নামতে থাকে নিচে—এই আখ্যানভাগ আমার কাছে একেবারে নতুন মনে হয়। যখন কাম্যু দেখাচ্ছেন যে সেই নায়ক তাঁর ভাগ্য মেনে নিয়েছেন, তিনি খুশি। ক্রমাগত পাথরটিকে ঠেলছেন, পাথরও গড়িয়ে পড়ছে নিচে, ঘটনাটি মূলত বেচারা নায়কের অস্তিত্বের লড়াই বটে। যে কাজ করে তিনি তৃপ্তি অনুভব করেন। কেউ যদি তখন ওই পাথরটিকে সরিয়ে নিতো, নায়ক অসুখী হতেন। এই জায়গায় আমি প্রভাবিত হয়ে পড়ি, ভয়াবহ রকমে। পরিসমাপ্তি আছে এমন কোনো লক্ষ্য আমি পছন্দ করি না। আমি কখনোই ভাবি না পাথরটি পাহাড় চূড়ায় স্থির থাকবে, এবং তা চিরকাল ধরে। আজকের মানুষের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এই মিথটিকে ইতিবাচক হিসেবে আমরা গ্রহণ করতে পারি। যদিও এর অবস্থান যে কোনো আদর্শবাদীতার বিপরীত মেরুতে। জার্মান আদর্শবাদীতাসহ যে কোনো আদর্শবাদীতার জন্য তা সত্য। পশ্চিমের যে কোনো আদর্শবাদীতার সুনির্দিষ্ট একটা লক্ষ্য থাকে—একটা সুখি-সমৃদ্ধ নিদেনপক্ষে শান্তিময় সমাজ। এতে আমার আস্থা নেই। আমরা হলাম গিয়ে ফ্লাস্কে রাখা কোনো বস্ত্ত। হতে পারে যে পাথরটা সবসময়ই আমাদের হাতের নাগালের বাইরে যাওয়ার জন্য গড়িয়ে ওপরে ওঠানো হবে। আবার তা গড়াবে, কিন্তু আমরাও থেমে থাকব না। কারণ, আমাদের কিছু একটা তো করতেই হবে, পাথরটা আমাদের কাছে রয়েছে।

মানুষের ভবিষ্যৎ আপনি মনে মনে কীভাবে আঁকেন?
গুন্টার গ্রাস : আমাদের যতক্ষণ প্রয়োজন থাকবে, সেইরকম ভবিষ্যৎ। এক শব্দে এ ব্যাপারে আপনাকে বিশেষ কিছু বলা সম্ভব নয়। একটা মাত্র শব্দে এই প্রশ্নের জবাব আমি দিতে চাই না। একটা বই আমি লিখেছি ‘দ্য র‌্যাট’—‘দ্য শি র‌্যাট’— এর বেশি কি চান আপনি? আপনার প্রশ্নের বিশাল উত্তর হলো এই বইটা!
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×