আমি ব্যক্তিগতভাবে একজন শৌখিন সাংবাদিক।যদিও আমার লেখার বিষয় রাজনীতি বা পুলিশ নয়। বাংলায় লিখতে কষ্ট হয়, তাই লেখিওনা খুব বেশী।লিখলে বাংলাও ভুল হয় অনেক।কিন্তু আমার একটি সাংবাদিক আইঠি কার্ড আছে।নেওয়ার সময় ভেবেছিলাম অনেক সুবিধা পাব।কিন্তু আজ পর্যন্ত তেমন কোন সুবিধা করতে পারি নেই।আর আমি সাংবাদিক সুলভ জারীও দিতে পারিনা।তাই এটি ব্যবহারও করা হয়না।এমন কি আমার নিজের ব্যবহার করা গাড়ীতেও সাংবাদিক বা প্রেস ব্যবহার করিনা।এ পর্যন্ত আমার গাড়ী কেইস খেয়েছি অসংখ্যবার।কখনো ঠিক মতো পার্ক না করার অপরাধে আর কখনও বা ওভার স্পিডিং এর মতো নিরিহ কারনে।অন্য কারনে কেইস খাই নেই কারন আমার গাড়ীর কাগজ ১০০% আপটুডেট।কিন্তু পুলিশ ধরলেই কেইস একটা দিবেই।সাংবাদিক পরিচয় কয়েকবার দিয়ে হিতে বিপরীত হয়।তাই পরিচয় না দিয়ে ঘুষ দিয়ে ম্যানেজের চেষ্টা করি।কাজও হয়।কেইস দিলে টাকা বেশী না।কিন্তু সমস্যা হলো আমার ড্রাইভারের একদিন পুরো যায় কেইসের টাকা জমা দিতে।আপনারা নিশ্চয়ই ভাবছেন, ঘুষ দিয়ে খুব অন্যায় করছি?আমারও আগে এমনই ধারনা ছিল।তাই আমার বউয়ের পাসপোর্ট করার সময় ঘুষ দেই নেই।তারপর আর পুলিশ রিপোর্ট পাইনা। পরে কালের কন্ঠের ডিপুটি এডিটর ফোন করলো, ইত্তেফাক থেকে ফোন করলো, সমকাল থেকে ফোন করল, আমাদের সময় থেকে ফোন করল, যুগান্তর থেকে ইত্যাদি পত্রিকা থেকে আমার বন্ধুরা ফোন করে রিকোষ্ট করলো।আমার কাছে আরো অপ্রয়োজনীয় কাগজ চাইল।তাও দিলাম।কিন্তু পাসপোর্ট এর হয়না।শেষে আমার আরেক বন্ধু একটা দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক গিয়ে নিজের হাতে ঘুষ ২০০০ টাকা দিল(যেখানে প্রথমে ৫০০টাকা দিলেই হতো)।পরের দিন দেখি আরেকজন কে পাঠানো হলো ভেরীফিকেশনের জন্য।সে আরো ১৫০০টাকা নিয়ে তারপর রিপোর্ট দিল।আমার যেই ক্ষতিটা হলো, পুরো ৩০০০টাকা বেশী দিলাম এবং ৬ মাস সময় নষ্ট করলাম।আমার বেশী দিতে হলো কারণ আমি আবার একটা রিপোর্টও করিয়েছিলাম ওই এস.আই এর বিরুদ্ধে।আরো কতো যন্ত্রনা সেগুলো নাই বা বললাম।এরপর থেকে শিক্ষা পেয়েছি, পুলিশ দেখলেই গুষ দিয়ে দেই।
যাই হোক এবার মূল ঘটনা বলি।সেদিন আমার অনেক পুরোনো এক বন্ধুর সাথে দেখা।তাও প্রায় ১৪ বছর পর।ও পুলিশে চাকরী করে।প্রথম যখন চাকরীতে ঢুকেছে ওনেষ্ট ছিল।এবার বেশ তৃপ্তির সাথে বলল সে এই চাকরী দিয়ে কি কি করেছে।যাই হোক দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ইত্যাদির পর আসলো গুম ও ক্রসফায়ার প্রসঙ্গে।বলল ক্রসফায়ার অনেক সমস্যা।এরচেয়ে গুম সহজ।মাত্র ৩ লাখ টাকা দিলেই যে কাউকে গুম করে ফেলা যায়।পুলিশে তুলে নিয়ে মেরে পাথর বেধে নদীতে ফেলে দিবে!এর চেয়ে ভয়ঙ্কর আর কি হতে পারে।আমার সাথে করো জগড়া হলো,মাত্র ৩ লাখ টাকা দিয়ে সে আমাকে গুম করে দিতে পারে!এই কথা শুনার পর আর এই দেশেই থাকার ইচ্ছ চলে গেল।অনেক দেশে সিটিজেশীপ দিচ্ছে, কিছু টাকা এনভেষ্ট করলেই।তাই আমি এখন ব্যস্ত কোন দেশে যাওয়া যায় সেই চিন্তায়।আর ভয়ে থাকি না যেন কখন আবার গুম হয়ে যাই।কিন্তু সবাই চাইলেই তো আর দেশ ছাড়তে পারবে না।তাছাড়া সরকার যে এতো টাকা টেক্স নিচ্ছে, সেটা কি আমাকে গুম করার জন্য।কেমন টেক্স নিচ্ছে তার একটা উদাহরণ দেই।শুধু ২৫০০সিসি গাড়ী ব্যবহারের ব্যক্তিগত টেক্স ৩৫০০০টাকা!আর ব্যক্তিগত ইনকাম টেক্স তো আছেই।আছে বাড়ীর টেক্স, কোথায়ও কিছু খেলে বা কিনলে টেক্স, বিদেশে যাওয়ার টেক্স ইত্যাদি।এতো দিকে একজন নাগরিক কেন টেক্স দেয়?এই পুলিশ বাহীনি পুষার জন্য যারা টাকার বিনিময়ে মানুষ গুম করবে?সরকার যদি বলে বেশীভাগ মানুষ টেক্স দিচ্ছেনা।তাহলেও ১০০% মিথ্যা সেটা।কেননা, প্রতিটা কেনা কাটায় আমরা টেক্স দেই।
আমরা ইলিয়াস আলী গুম হলে ক্ষোব প্রকাশ করি, সাংবাদিক পেটা খেলে ক্ষোব প্রকাশ করি।কিন্তু নিজেরা যে এতো বিপদে আছি তা বুঝিনা।প্রতিটা মানুষ ব্যক্তিগত ভাবে কখন না কখনো পুলিশের খারাপ ব্যবহারের মুখোমুখি হয়েছি।কিন্তু নিজেদের ব্যাপারে আমরা কতোটা উদাশীন।এখনই যদি ঠোলা বাহিনী(পুলিশকে) নিয়ন্ত্রনে আনা না যায়, সবাই আমার মতো বিদেশে পালানোর প্ল্যান করতে হবে।তাই আমাদের মনেহয় এখন সচেতন হওয়ার সময় হয়েছে।