লাউয়াছড়ার নাম শুনেছি, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, আদিবাসিদের আবাস (প্রধানত খাসিয়া) এবং প্রকৃত পশুপাখি অর্থাৎ যেগুলো সত্যিকার অর্থেই এই বনের বাসিন্দা সেই পশুগুলোকে এখানে প্রাকৃতিক ভাবে রাখা হয়েছে। তাছাড়া বোনাস হিসাবে সিলেটের চা বাগান তো আছেই। আমার শ্যালিকা বুয়েটের উচু ক্লাসে পড়ে, ও ই ফোন করে জানলো। গিন্নিকে রাজি করিয়ে ভোর ৬:০০ এর মধ্যেই হাজির হলাম বুয়েটের শহীদ মিনারে। কথাছিলো বাস ছাড়বে ৬:৩০ টায়। আমরা বুয়েটে পৌছে একটু হকচকিয়ে গেলাম বিরাট জন সমাবেশ একটা বাস ব্যানার-ট্যানার লাগিয়ে দাড়িয়ে আছে, সিট বাম্পার, ছাদ, ইঞ্জিন কভার সব মিলিয়ে এত লোকের জায়গা হবে না।
সত্যি একটা কথা বলি, আমি ঠিক পিকনিক করার জন্য গিন্নিকে পটিয়ে পাটিয়ে লাউয়াছড়া রওনা হয়েছি এইটা সত্যি না। বিয়ের পর অনেক চেষ্টা করেও ছবি তুলতে কোথাও যেতে পারিনি, কত ঝগড়া, অভিমান, রাগারাগি...... কিন্তু বাস্তবতা হলো শুক্রবারগুলো আসলেই সংসারের নানান ফেলে রাখা কাজ করার একমাত্র উপায়। বউ অবশ্য মাঝে মাঝে বলে, তুমি ছবি তোলা একেবারেই ছেড়ে দিলে, তোমার এত নেশা ছিলো......। আমি আসলে এই শুক্রবার টা চান্স নিয়ে নিলাম। শালির গেষ্ট হয়ে যাবো তাই বউ এমনিতেই সাইজ (খিকঃ খিকঃ খিকঃ খিকঃ)।
এখন যদি ৪/৫ ঘন্টা দাড়িয়ে-ঝুলে যাওয়া লাগে তাহলেই হইছে। মুখ শুকনা করে দাড়িয়ে আছি, সাড়ে সাতটার মত বাজে, হঠাৎ একজনকে দেখলাম একটা হ্যান্ড-মাইক নিয়ে সবাইকে এক যায়গায় আসতে বলছে। অবাক বিষ্ময়ে দেখলাম পুরো শহীদ মিনার মাথায় ভর্তি হয়ে গেল। গোনা হল মোট ১৭০ জন, ৩০ জন মেয়ে। আয়োজকরা সম্ভবত এত উপস্থিতি ধারনা করেনি, শেষ মুহুর্তে বাস জোগাড় করতে হয়েছে তাই রওনা হতে একটু দেরী হবে। আমি ধরেই নিলাম ১০-১১ টার আগে রওনা হতে পারবো না। চুড়ান্ত বিরক্তি নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম বলেই বোধহয় খেয়াল করিনি, আরো দুটো বাস এসে দাড়িয়েছে আর সোয়া সাতটা নাগাদ যখন হ্যান্ডমাইক থেকে বলা হচ্ছিল কে কোন বাসে উঠবে তখন সত্যিই অবাক হলাম। যারা বুয়েটিয়ান তারা বোধহয় অবাক হচ্ছেন না। আমি সারা জীবন নানান স্কুলে কলেজে আর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি কম করে হলেও শ’খানেক পিকনিক করেছি এমন কান্ড দেখি নাই। ছাত্রগুলো নির্দেশ মেনে নির্ধারিত বাসে উঠে গেল মেয়েদের কে একটা বাসে উঠতে বলা হল। আমাদের সময় দেখেছি মেয়েদের বাসগুলোতে ব্যাপক ভিড় হয়, এখানে দেখলাম উল্টা। একটা কথা না বললে শান্তি পাচ্ছিনা, চারদিকে ১৬৯ টা “বাড়ির সবচেয়ে শান্ত শিষ্ট পড়ুয়া আর নিরীহ” টাইপ ছেলে মেয়ের সাথে আমি কখনও কোথাও যাইনি। এইটা একটা ইউনিক অভিজ্ঞতা। এতগুলা পোলাপাইন, কোন গ্যাঞ্জাম হইচই নাই, সবাই খুব সিরিয়াস ভাবে হ্যান্ডমাইকের নির্দেশ ফলো করছে। বাস চলতে শুরু করার পর আমার পাশে শুধু একজনকে পেলাম একটু আলাদা। সারা রাস্তা আশেপাশের সবাইকে তার নানান ধরনের কৃতিত্বের কথা বলে বিরক্ত করে ছাড়ছে। পরে শুনেছি, সে অতি সম্প্রতি অতি ভাল রেজাল্ট করে বুয়েটের শিক্ষক হতে যাচ্ছে। জুনিয়র একটা মেয়ের সাথে তার “ক্যাম্পাস বিখ্যাত” প্রেম। প্রেমিকাকে নিয়ে সে পিকনিকে যেতে রাজি হয়েছে, সেই অস্বস্তি বোধহয় তাকে সারাটা রাস্তা ছাড়েনি। যাই হোক, পিকনিকের বাকি সময় ভালোই কেটেছে, ব্যাবস্থাপনা ছিলো ভাল। আমি অনেকদিন পর বেশ কিছু ছবি তুলেছি, কিছু শেয়ার করলাম। মন্তব্য করলে কৃতজ্ঞ থাকবো।
এই রাস্তা দিয়েই যেতে হবে লাউয়াছড়া।
প্রবেশ পথের পাশেই খুব সুন্দর ভাবে রাখা হয়েছে ম্যাপ।
একগাদা অতি ভাল ছাত্র/ছাত্রী।
টিলার উপর স্যুভেনি শপ। আমরা অবশ্য কোল্ড ড্রিংকস ছাড়া আর কিছু পাইনি।
বনের একপ্রান্ত দিয়ে গেছে এই রেল লাইন। এরপর থেকে শুরু হয়েছে ঘন জংগল।
বেত পাতা।
বুনো ফুল।
এরকম অনেক ছড়া বা পানির প্রবাহ দেখতে পাবেন এখানে।
বনের গহীনে।
খাসিয়া পল্লির পথে।
পাহাড় জুড়ে লেবু বাগান। ঢাকার ট্রাফিক সিগনালে যে লেবু পাওয়া যায় সেগুলো এখানে জন্মায়
।
কমলা বাগান।
বুনো মাকড়শা, এগুলা অনেক বড় বড় জাল বানায়। আমি ২/৩ ফুট জাল ও দেখেছি। ছবিতে অবশ্য বোঝা যাচ্ছে না।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০০৯ রাত ১১:৫৩