somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজি হতে অর্ধশতবর্ষ পরে?!

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১০ ভোর ৪:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কবিগুরুর "আজি হতে শতবর্ষ পরে " কবিতার মত আমারো মাঝে মাঝে মনে হয় কি হবে আজ থেকে পঞ্চাশ বা একশ বছর পরে আমাদের দেশের অবস্থা। দেশের বর্তমানে যে অবস্থা দাড়িয়েছে তাতে ভয়ই লাগে। তারপরেও আমি দেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি। স্বপ্ন দেখতে আমার ভালো লাগে। আমি ছোটবেলা থেকেই স্বপ্নবাজ মানুষ। আমি যে কত কিছু নিয়ে স্বপ্ন দেখি তার ইয়ত্তা নেই। আমার কল্পনারও আলাদা একটা জগত আছে। তবে আমার কাছে স্বপ্ন আর কল্পনার মধ্যে একটি পার্থক্য আছে। আমার কাছে স্বপ্ন মানে হচ্ছে যা বাস্তবে সম্ভব আর কল্পনা হচ্ছে যা কখনোই সম্ভব না।
নিজের দেশকে নিয়ে আমার চিন্তাভাবনাকে আমি স্বপ্নই বলবো কেননা আমি মনে করি সেগুলো বাস্তবে অবশ্যই সম্ভব, শুধুমাত্র চাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সচেতনতা আর সঠিক পদক্ষেপ।
আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পরে বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোথায় গিয়ে দাড়াবে সেটা নিয়ে আমার স্বপ্ন নিয়েই আজকের লেখা। দেখুনতো আপনার সাথে মিলে যায় কিনা?
প্রথমেই বলতে চাই পানিসম্পদ নিয়ে (পানিসম্পদ প্রকৌশলী হিসেবে এই সেক্টরের প্রতি আমার পক্ষপাত)। আমি মনে করি ৫০ বছর পরে আমরা এই ক্ষেত্রে বেশ ভালোভাবেই নিজেদের স্বকীয়তা আর নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখতে পারবো। এটার পেছনে আমার বেশ ভালো একটা যুক্তি আছে। বাংলাদেশের বিশেষ করে বুয়েটের অনেকেই এই বিষয়ে পড়াশুনা করছে এখন এবং ভবিষ্যতেও করবে। দেশের বাইরেও অনেক ছাত্রছাত্রী এই বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে। তাদের যদি চার ভাগের এক ভাগও দেশে ফিরে এই সেক্টরে কাজ করা শুরু করে তাহলেই দেশের অবস্থা পাল্টে যাবে। আমার নিজেরই দেশে ফেরার ইচ্ছা আছে পুরোদমে। আগামী ৫০ বছরের মধ্যে ভারতের সাথে অনেকগুলো আন্তসীমান্ত নদী নিয়ে চুক্তি হয়ে যাবে। আমরা মৃতপ্রায় নদীগুলোকে ড্রেজিং করে সেগুলোকে তার হারানো নাব্যতা ফিরিয়ে দিবো। বেশিরভাগ কলকারখানা ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহর থেকে সরিয়ে নেয়া হয়ে যাবে, যে প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে । এছাড়া বিভিন্ন কলকারখানায় ইটিপি (Effluent Treatment Plant) তৈরি করার ফলে নদীদূষনও কমে যাবে। দূষন কমে গেলে আর নদীর প্রবাহ যদি ঠিক থাকে তাহলে নদীগুলো পানির কোয়ালিটি আস্তে আস্তে ভালো হয়ে যাবে।
ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের মত আরো কয়েকটি মাস্টার প্ল্যান বড় বড় কয়েকটা শহরে বাস্তবায়িত হয়ে যাবে এর মধ্যে যার ফলে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতিও অনেক কমে যাবে। তাছাড়া শহর রক্ষা বাঁধগুলো বন্যার পানিকে শহরে ঢুকতে বাধা দিবে কেননা আমরা ততদিনে বাঁধগুলোকে যথেষ্ট মজবুতভাবে তৈরি করে ফেলবো। এছাড়া চীন, ভারত আর নেপালের সাথে যৌথ নদীব্যবস্থাপনার কারণে বন্যানিয়ন্ত্রণ করতে পারবো অনেক সফলভাবে।
ভারতের সাথে চুক্তির ফলে বড় বড় নদীগুলোতে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক হবে যার ফলে দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা অনেকাংশে কমে যাবে।
নদীদূষন কমে গেলে আর নদীর পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক হলে ওয়াসা নদীর পানিকে ট্রিটমেন্ট করে প্রয়োজনীয় পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে পারবে, ভূগর্ভস্থ পানির উপরে চাপ কমে যাবে। এর ফলে মাটির নীচের পানির লেভেল আস্তে আস্তে উপরে উঠতে থাকবে।
এরপরেই আসে বিদুৎ খাত। ৫০ বছর অনেক সময়। এর মধ্যে বিদুৎ খাতেও আমরা অনেক সক্ষমতা অর্জন করবো। এর মধ্যে অন্তত দুইটা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট হয়ে যাবে যা আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা অনেকাংশে মেটাতে পারবে। এছাড়া বায়ুবিদুৎ, সৌরবিদুৎতো আছেই। কেননা এই সময়ের মধ্যে এসব ক্ষেত্রে কিভাবে কম খরচে বিদুৎ উৎপাদন করা যায় তা আবিষ্কার হয়ে যাবে। ভারত আর নেপালের সাথে চুক্তি করার ফলে নেপালে উৎপাদিত পানিবিদুৎ আমাদের দেশেও আনা সম্ভব হবে। এ বিষয়ে বর্তমানে আলোচনা চলছে মনে হয়।
যোগাযোগ খাত আরেকটা সমস্যাবহুল খাত আমাদের দেশে। বর্তমানে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে এই খাতে। তবে আমি স্বপ্ন দেখি আমরা এঅবস্থা কাটিয়ে উঠবো আগামী পঞ্চাশ বছরে। এখনি এ বিষয়ে মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা তৈরি হচ্ছে। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা কিভাবে এই খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা যায় সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে রাস্তার অপ্রতুলতা, গাড়ির সংখ্যাধিক্য, পুরোনো গাড়ি আর চালকদের শিক্ষার অভাব। এছাড়া সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবও সমানভাবে দায়ী। আমি স্বপ্ন দেখি ৫০ বছরের মধ্যে আমরা বেশিরভাগ পুরোনো গাড়ির হাত থেকে মুক্তি পাবো। অনেকগুলো ফ্লাইওভার তৈরি হয়ে যাবে এতদিনে। গাড়ির সংখ্যাও নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হবে। প্রাইভেট কারের বদলে পাবলিক বাসের সংখ্যা বাড়ানো হবে। বাংলাদেশে পাতাল ট্রেন ইকোনমিক্যালি ফিজিবল না বিধায় মাটির উপরেই স্কাই ট্রেনের মত ট্রেন হবে যেটা বিপুল সংখ্যক যাত্রী পরিবহনে সক্ষম।
সড়ক ব্যবস্থাপনাও ততদিনে অনেক ভালো হয়ে যাবে। মহাসড়কগুলোতে ইতোমধ্যেই ডিভাইডার তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে দুর্ঘটনা কমানোর লক্ষ্যে। শহরের রাস্তাগুলোতেও লেন সিস্টেম সফলভাবে বাস্তবায়িত হবে ফলে যানজট কমে যাবে অনেক। চালকদেরও সঠিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে এবং ট্রাফিক আইন ভাঙার জন্যে কঠিন শাস্তির বিধান করে আইন করা হবে। শুধু আইন করাই না সেটা যাতে কঠোরভাবে মানা হয় সেটাও মনিটর করার ব্যবস্থা করা হবে এসময়ের মধ্যে।
কৃষিখাতেও আগামী ৫০ বছরে অনেক সফলতা অর্জনের স্বপ্ন দেখি আমি। ইতোমধ্যেই আমরা পাটের জিনোম আবিষ্কার করে ফেলেছি যা পাট শিল্পকে পুনর্জীবিত করবে। আমরা আবার বাইরে পাট এবং পাটজাতীয় পণ্য রপ্তানি করতে পারবো। এছাড়াও আমি মনে করি আগামী ৫০ বছরে আরো কয়েকটি শস্যের জিনোম বের করতে পারবো। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ইতোমধ্যেই উচ্চফলনশীল এবং বন্যাসহনশীল ধানের জাত আবিষ্কার করেছে যা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্নতা অর্জনে সাহায্য করবে।
আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি আমার এসব স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা খুবই সম্ভব। তবে যদি এর পুরোটা নাও হয় কাছাকাছি হলেও আমি সন্তুষ্ট থাকবো। মৌসুমি ভৌমিকের স্বপ্ন নিয়ে এই গানটা আমার বেশ পছন্দের, আপনারাও শুনুন আর বেশি করে স্বপ্ন দেখুন। কেননা স্বপ্ন না দেখলে আসলে কিছুই সম্ভব না। অবশ্য শুধু স্বপ্ন দেখলেই হবে না সেটা বাস্তবায়নেও সচেষ্ট হতে হবে তবেই না স্বপ্ন দেখার সার্থকতা।

Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১০ ভোর ৪:১৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×