somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্ক্র্যাচ কার্ড

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অন্ধকারে যে লোকটি দাঁড়িয়ে আছে তাকে আমি চিনি। জজ, এক সময়ের মারাত্মক এক মদ্যপায়ী ছিল। মদ খেতে খেতে লিভার পচে গিয়ে শেষে মারা যায়। জজ মাঝে মাঝেই আমার কাছে আসে। এই সময়টাতে আমি দোকান বন্ধ করে বাসায় ফেরার জন্য প্রস্তুত হই। আজও সে এসেছে স্ক্র্যাচ কার্ডের জন্য। গতকাল থেকে স্ক্র্যাচ কার্ড সাপ্লাই বন্ধ থাকার কারণে আজকে বিকালের আগেই সব কটি কার্ড বিক্রি হয়ে গেছে। জজের কথা আমার একদম মনে ছিলনা। মনে থাকলে একটি কার্ড অন্তত জজের জন্য রেখে দেয়া যেত। কিন্তু এখন যদি সে কার্ড নিয়ে রিফিল করতে না পারে, তাহলে তাকে আবারও কিছুদিনের জন্য শূন্যতে ফিরে যেতে হবে। শূন্যতে ফিরে গেলে জজের হয়ত সাময়িক সমস্যা দেখা দিবে কিন্তু বিপত্তিতে পড়তে হবে তার মেয়ে আয়েশাকে।

বাবা না থাকলে আয়েশাকে সেই ব্রোথেলের জানালার পাশে গিয়ে নগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। গায়ের রংটা কালো হওয়াতে এই বাজারে তার চাহিদা কম। রোজ রাতে খদ্দের না পেয়ে খালি হাতে তাকে বাড়ি ফিরতে হয়। মাঝে মাঝে দুই একজন যদিওবা জুটে যায় কিন্তু তাদের প্রস্তাবে আয়েশার মন শ্বায় দেয়না। তারপরেও পেটের তাগিদে আর বাবাকে শূন্য থেকে ফিরিয়ে আনার তাগিদে তাকে সেইসব প্রস্তাব মেনে নিতে হয়। কিন্তু এই কাজটা করলে মানসিক ভাবে ভীষণ ভেঙে পড়তে হয়। ব্যথার যন্ত্রণায় প্রচন্ড কষ্ট হয় শরীরের। ভীষণ জ্বর চলে আসে। তখন আবার জ্বর নিয়ে বিছানায় শুয়ে থেকে ভুগতে হয় বেশ কয়েক দিন ধরে। কিন্তু এই কাজে পারিশ্রমিক বেশি পাওয়া যায়। মাঝে মাঝে তার মনে হয় অর্থের কাছে বিক্রি যখন একবার হতে হয়েছেই তখন আর সমস্যা কোথায়। কোনরকম নিজেকে মানিয়ে নিতে পারলেই আর টাকার অভাব হবেনা। তখন তার বাবার জন্যও আর কার্ড কেনা নিয়েও তাকে আর ভাবতে হবেনা।

জজ যে সময়টাতে লেভেল ওয়ানে থাকে তখন আয়েশার জন্য অবশ্য কোন কিছু নিয়ে ভাবার দরকার হয়না। তার বাবাই সংসারের সব খরচ বহন করে। জজ একটা মাইক্রো প্ল্যান্টে কাজ করে। যে বীজগুলো মাত্র অংকুরিত হচ্ছে সেগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে কসমিক রে দেয়া হচ্ছে কিনা; সেটার দেখাশোনা করাই তার কাজ। এই কাজে অবশ্য খুব স্বল্পই মাইনে সে পায়। যা পায় তা দিয়ে বাবা আর মেয়েতে তাদের কোন রকম দিন চলে যায়। সাথে আবার নিজের একটা বাড়তি খরচ রয়েছে স্ক্রেচ কার্ডের। মাঝে মাঝে জজ ভাবে মাইক্রো প্ল্যান্ট থেকে কিছু প্লাজমা চুরি করার কথা। বাজারে এক একটা প্লাজমার যে দাম, তার একটি বিক্রি করতে পারলেই আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবেনা তাদের। বাজারে প্লাজমা সহজলভ্য নয় বলে অনেক দাম এগুলোর। কিন্তু পরক্ষণেই আবার সে তার সততার কাছে হার মেনে নেয়। খুব বেশি কিছুর দরকার জীবনে নেই। বরং প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত বিলাসীতায় ভোগাবে। তখন আবার শুরু হবে নতুন যন্ত্রণা। এমনিতেই জীবনে যন্ত্রণার শেষ নেই। এই যন্ত্রণা লাঘব করতে গিয়ে তাকে একটা সময় মদের উপর নির্ভর করতে হত। কিন্তু পরিণাম ভাল হয়নি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে এখন যেখানে মদই সে আর স্পর্শ করেনা, সেখানে চুরি করা তাকে দিয়ে হবেনা।

রাত তখন প্রায় দশটা বাজে। ব্রোথেলের সামনে একটা ভি থার্টি সিক্স ট্যাংলেট এসে থামল। ট্যাংলেট হল এক ধরনের উড়ন্ত গাড়ি। গাড়ির জানালা খুলে ভেতর থেকে একটি হাত ইশারা করতেই আয়েশা ছুটে এসে মিষ্টি করে হাসি দিল। কিন্তু আয়েশার মুখ সেই প্রস্তাবে ফ্যাকাশে রূপ ধারণ করল। মাত্রই সে জ্বর থেকে উঠেছে আবার সেই যন্ত্রণা তাকে পোহাতে হবে। তবু বাবার কথা ভেবে গাড়িতে উঠে বসতে হল। স্কাইস্ক্র্যাপারসগুলোর মধ্যে দিয়ে ট্যাংলেট ধীর গতিতে এগিয়ে চলেছে। বাইরের আকাশে অন্ধকার। আজকেও চাঁদের দেখা মিলছেনা। এইসময়ে বৃষ্টি হলে ভীষণ ভাল লাগত। গাড়ির ভেতরে নিতম্বে একটা হাত স্পর্শ করতেই আয়েশার বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল।

দেখতে দেখতে ট্যাংলেটটা এসে থামল মাইক্রো প্ল্যান্টের ভেতর। এখানেইতো তার বাবা কাজ করে। কিন্তু এখানে কেন তাকে নিয়ে আসা হল! আশ্চর্য হয় আয়েশা। প্ল্যান্টের মালিককে সে চিনতে পারে। রবিন এই প্ল্যান্টের মালিক। রবিন হল একজন রবোটিকস প্রোগ্রামে বেঁচে থাকা মানুষ। যে রুমের ভেতর তাকে নিয়ে রবিন বসায় সেটা তার ব্যাক্তিগত চ্যাম্বার। টেবিলের উপর রাখা কিছু প্লাজমার দিকে চোখ পড়তেই নিজেকে আর সামলে নিতে পারেনা সে। এই সুযোগ। কিছুতেই হাতছাড়া করতে দেয়া যাবেনা। রবিনের সাথে প্রেমের অভিনয় করতে করতে টেবিল থেকে এক ফাঁকে কিছু প্লাজমা ব্যাগের ভেতর ভরে ফেলে। রবিন এখন আর নিজের জগতে নেই। আয়েশার ভেতর পুরোপুরি ডুবে গেছে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। রুমের ভেতর প্রচন্ড হীম শীতল ঠাণ্ডার মাঝেও আয়েশার কপালে ঘাম জমেছে। হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করছে কখন তার বাবার কাছে সে ফিরে যাবে।

আজকে দোকান বন্ধ করতে করতে বেশ সময় লেগে গেল। নতুন কিছু স্ক্র্যাচ কার্ড উঠাতে হল। পুনরায় সাপ্লাই চালু হয়েছে। কিছুক্ষণ আগেই কোম্পানি থেকে এসে দিয়ে গেল। সবগুলো বুঝে রাখতে রাখতেই আসলে অনেক দেরী হয়ে গেল। আমার সামনে কিছু প্লাজমা রেখে আয়েশা বলল চাচা এগুলো বিক্রি করে দিয়েন। বিক্রি করে যা টাকা পাবেন তার উপর সম্পূর্ণ অধিকার থাকবে শুধু আপনার। আমাকে আপাতত শুধু একটা স্ক্র্যাচ কার্ড দিন আগামী দুইশ বছরের জন্য। আমাকে শীঘ্রই বাবার কাছে যেতে হবে। আমি কিছুই বলতে পারলাম না। শুধু আয়েশার হাতে দুইশ বছর বেঁচে থাকার একটা স্ক্র্যাচ কার্ড দিয়ে দিলাম। কার্ডটা হাতে নিয়েই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দৌড়ে চলে গেল মেয়েটা।



সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৮
১৭টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×