জাস্ট গত বছর টেক্সাসের স্যুটিং এর ঘটনায় লিখাটা লিখেছিলাম। বছর পার হতেই অনেক কষ্ট নিয়ে আবারো একই লিখা লিখতে বসলাম।
আজ দুপুরে চেকস্লাভিয়ার প্রাগে ঘটে গেছে ভয়াবহ স্যুটিং। যতটুকু জানা যায় চার্লস ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন একজন ছাত্র ডেভিড কলা ভবনের তিনতালা থেকে গুলি করে মেরে ফেরে ১৪ জনকে। আরো ২৫ জন গুরুতর আহত। বলা হয় প্রাগের ইতিহাসে এমন রক্তক্ষয়ী ঘটনা আর ঘটেনি। ২৪ বছরের ডেভিড ছিল সেই ইউনিভার্সিটির ওর্য়াল্ড হিস্ট্রির প্রাক্তন ছাত্র। এ ঘটনা ঘটানোর আগে ঘরেই তার বাবাকে প্রথমে গুলি করে। তারপর ইউনিভার্সিটিতে গুলি চালায় এবং শেষে নিজেকেই হত্যা করে।
আমেরিকায় এ ধরনের গোলাগুলি এখন প্রায় সাধারন বিষয়। কিছুদিন পরপরই এমন কিছু শুনতে পাই। এখন তাে দেখি পুরো বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়ছে। এখন প্রশ্ন, কেন এমন ঘটনা ঘটছে? কেন প্রায় এ ধরনের ভয়াবহ খবর শুনতে হয়? আমেরিকা/চেক এর মতো দেশের মানুষগুলো আমাদের চেয়ে ভালো আছে। খাওয়া পরার চিন্তা নেই, চাইলেই চাকরীও জোটে, সরকারী বেসরকারী প্রচুর সাহায্য আছে। তারপর তারা কেন মানসিক সমস্যায় ভোগে?? আসল সমস্যা কোথায়????
সবাই আঙ্গুল তুলছে অস্ত্র বিক্রির দিকে কিন্তু আসল সত্য কথা কাউকে বলতে শুনিনি। হাঁ, অস্রের সহজলভ্যতা এরকম ঘটনার জন্য অবশ্যই বড় একটি কারন। কিন্তু প্রশ্ন? অস্ত্র এমন টগবগে যুবক নির্বিচারে রক্তের হলি খেলছে?
উত্তরটা আমি নিজেই খোঁজার চেস্টা করেছি। হয়তো কেউ মানবেন কেউ মানবেন না। কিন্তু যে যাই বলুক সময় থাকতে আমাদেরকে যে এর সমাধান বের করতেই হবে!!
আমার মতে প্রধান কারন, পরিবারহীনতা। এখানকার সমাজ, কালচার, পরিবার সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি বুঝেছি এখানকার শিশুদের বড় একটা অংশ নিরাপত্তাহীনতা, ভালোবাসাহীন জীবন, ট্রমাটিক শৈশব কাটায়। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ যেমন একটা কমন বিষয় তেমনি নতুন সংসার গড়াটাও তাদের জন্য স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু এর সবচেয়ে বড় ভিক্টিম হলো শিশুরা। কারন এরা একদিন হঠাৎ করে দেখে তার চেনা পৃথিবী সম্পূর্ণ অচেনা। কেউ হয়তো বাবার কাছে কেউবা মায়ের কাছে থাকে। কিন্তু নতুন পরিবেশে দেখা যায় সে অবহেলার স্বীকার হচ্ছে প্রতি পদে পদে। যে আদরে হয়তো বেড়ে উঠেছিল এতোদিন তা থেকে ছিটকে পড়েছে সে। কেউ মেনে নেয় আবার কেউ পারে না। কিন্তু তাদের ছোট্ট সে মনের ক্ষোভের মেঘ বাড়তে থাকে দিনের পর দিন।
দ্বিতীয় কারনটিও আমি বাবা-মার দিকেই আঙ্গুল তুলবো। জীবনের ব্যাস্ততা এখানে চরম পর্যায়ে। দু'পাশে বাবা-মা দু'জনেই ব্যাস্ত থাকে বাস্তবতায়। ছোট্ট শিশুটিকে নিজের সময় দেবার পরিবর্তে তার হাতে তুলে দেয় মোবাইল বা ট্যাব। আমি এমন কোন শিশু এখানে পাইনি যার হাতে কোন গ্যাজেট দেখিনি। পাশাপাশি বাবা-মা নিজেরাও ব্যাস্ত থাকে স্যোসাল মিডিয়ায়। সেলফি লাইক কমেন্টেস এর নেশায় আর কিছুর দিকে তাকানোর সময় নেই তাদের। এভাবে ধীরে ধীরে শিশুটি চারপাশের ভালোবাসা খুঁজে বেড়ায় গেমের মাঝে। সত্যিকারের ভালোবাসাই ঠিকভাবে বোঝে না। বাবা-মায়ের ভালোবাসা ট্রান্সফার হয় নতুন নতুন গ্যাজটে, খেলনা বা গেইমের মাঝে।
তৃতীয় কারনটি নিয়ে আমি বরাবরেই সোচ্চার। আর তা হলো গেইমের নেশা। শিশুদেরকে ব্যাস্ত রাখতে যে গেইমের পথ বাবা-মা দেখিয়ে দেয় তা থেকে সহজে ফিরতে পারে না তারা। নেশা নেশা নেশা........ গোলাগুলি, রক্তারক্তি, খুনোখুনি খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে যায় তাদের কাছে। মানবিকতা, ভালোবাসা, আদর-স্নেহ..... সব কিছুই ম্লান হয়ে যায় ধীরে ধীরে। সবাইকে শত্রু মনে করে, সব কিছুর সমাধান মৃত্যু মাঝেই আছে তা ভেবে নেয়, তাই সবাইকে মারার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। আর গেইমগুলোও এমনভাবে তৈরী তা থেকে বেরিয়ে আসা খুব কঠিন হয়ে পড়ে।
আমেরিকা কানাডার মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে মারাত্বক সোচ্চার। তারপরও কেন কোন সমাধান হচ্ছে না? অবশ্যই কিছু হচ্ছে। যার কারনে হয়তো আরো অনেক ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পা্চ্ছি। তবে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সোচ্চারের পাশাপাশি দরকার শিশুদেরকে একটা সুন্দর শৈশব দেয়া, পরিবার দেয়া, নিরাপত্তা দেয়া, স্নেহ-ভালোবাসা দেয়া। সেটা কি খুব কঠিন? মোটেও কঠিন নয় কিন্তু। আমি আপনি চাইলে তা দিতে পারি।
সবাই ভালো থাকুন আর অনুরোধ, পরিবারের ছোট/বড় সদস্যদেরকে দয়া করে ভায়োলেন্স গেইম খেলতে দিবেন না। ওদেরকে মানুষ হত্যা শেখা থেকে বিরত রাখুন। ভালোবাসতে শেখান তবেই ভালোবাসা পাবেন। আর হত্যা শেখালে ঘৃনাই পাবেন।
সোহানী
ডিসেম্বর ২০২৩
ছবি সূত্র গুগুল: আজকের হত্যাকারী ডেভিড
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:০৫