তুষার ঝড়ে প্রান হারানো জগদিশ প্যাটেলের পরিবার
হিন্দি মুভি সহজে দেখতে চাইনা। কারন কাহিনী সেই একই। তার উপর সেই বাচ্চাকাল থেকে শাহরুখ/সালমান/আমির আংকেলদেরকে দেখতে দেখতে টায়ার্ড। চারপাশের সবার ভালো রিভিউ দেখে ভাবলাম ছুটিছাটা চলছে, এই ফাঁকে সময় কাটাই। কিন্তু টিকেট কাটতে যেয়ে দেখি মাথায় হাত। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কোন শো এর টিকেটই নাই। অনেক কষ্টে একেবারে সামনের সারির টিকেট কোন রকমে ম্যানেজ করলাম। আর সাথে দুই পোলাপানকে জোর করে নিয়ে গেলাম। যদিও দু'জনের কেউই হিন্দি বোঝে না। মেয়ে আগেই ঘোষনা দিলো যে ঘাড় বাঁকা করে হিন্দি ছবি দেখার কোন মানে নাই তাই সে আমার ঘাড়েই আড়াই ঘন্টা ঘুমাবে। কিন্তু একটানে আড়াই ঘন্টা আমরা সবাই মুভিটা দেখলাম একটা সিনও মিস না করে। এবং অনেকদিন পর একটা ভালো এবং সমোপযোগী মুভি দেখলাম।
গত বছর জানুয়ারী মাসের ১৯ তারিখ। আমার স্পষ্ট মনে আছে তখন তুষার ঝড় হচ্ছিল। বাইরে প্রায় মাইনাস ৪০ এর কাছাকাছি ঠান্ডা। আমরা দীর্ঘদিন কানাডায় বাস করেও এরকম ঠান্ডায় সহজে বের হই না ঘর থেকে। সেদিন সকালে উঠে খবরের পাতায় চোখ বুলিয়ে আঁতকে উঠলাম, খুব কষ্ট হতে লাগলো খবরটা দেখে। কানাডা আর ইউএস বর্ডারে চারজনের লাশ পাওয়া গেছে। ধারনা করা হচ্ছে তারা ঠান্ডায় জমে মারা গেছে এবং সম্ভবত একই পরিবারের। এর মাঝে ১১ বছর ও ৩ বছরের দু'টি শিশু রয়েছে।
তারপরের খবর আসতে সময় নেয়নি। পরিবারটি ছিল জগদিশ প্যাটেল এর। গুজরাটের স্কুল শিক্ষক জগদিশ এর স্বপ্ন ছিল আমেরিকায় স্থায়ী হবে। তাই কানাডার ভিজিট ভিসায় এসে অবৈধভাবে পাড়ি দিচ্ছিল আমেরিকায়। কিন্তু কানাডার মতো দেশে তুষার ঝড়ে কেমন ঠান্ডা হতে পারে তা নিয়ে বিন্দুমাত্র ধারনা হয়তো ছিল না তার। কিংবা যে দালাল তাদেরকে এ পথে নামিয়েছিল সেই হয়তো কিছু জানতে দেয়নি। এমন বৈরী আবহাওয়ায় অন্ধকারে মাইলের পর মাইল পায়ে হাঁটা প্রায় অসম্ভব একটা কাজ। কানাডিয়ানরাই সাহস করে না সেখানে নতুন আসা এশিয়ানদের জন্য কি ভয়াবহ কঠিন হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।
এক জগদিশ প্যাটেলই নয়, প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ অবৈধ পথে ইউরোপ, আমেরিকা সহ উন্নত দেশে জীবনের তাগিদে আসার চেস্টা করে। আর সে অবৈধ পথ যে কতটা কঠিন তা এক কথায় বলে বোঝানো যাবে না। এ অবৈধ পথকেই ডাংকি রুট বলা হয়। পাহাড়, জঙ্গল, সমুদ্র, হিংস্র পশু, হিংস্র মানুষ, বর্ডার বাহিনী, গুলি, কাঁটা তার, ইলেকট্রিক তার..................... মাইলের পর মাইল হেঁটে, কখনো গাড়ির বাম্পারে, কখনো কার্গোতে, কখনো সাঁতার কেটে, কখনো গভীর সমুদ্রে নৈাকায় পাড়ি দেয় দিনের পর দিন। তার উপর আছে খাবারের অভাব, পানির অভাব, অসুন্থতা...। কতজন মারা যাচ্ছে কেউই তার হিসেব রাখে না। কারন তাদের খবর কেউই জানে না। যারা পৈাছাতে পারে তারা কি সবাই থাকার অনুমতি পায়? না পায় না। সেখানেও আছে নতুন খেলা।
যেহেতু আমি প্রায় মাইগ্রেশান নিয়ে লিখালিখি করি তাই উপলব্ধি করতে পারছি মুভিটি। যাহোক, অনেক কথা বলে ফেললাম। ডাংকি মুভিটা এমনই কিছু নিয়েই নির্মিত। যারা অবৈধ পথে বিদেশ যাবার চিন্তা করছে তাদের জন্য একটা সাবধান বাণী। এরচেয়ে বেশী বলে ছবি দেখার আনন্দটা নষ্ট করতে চাই না। আর হাঁ, শাহরুখ আংকেলকে ভালোই লেগেছে। প্রত্যেকেই তাদের সেরা অভিনয় করেছে বলেই মনে করি। আর রাজকুমার হিরানীর ছবি মানেই বাড়তি আনন্দ।
কিছুটা হলেও সত্যটা জানবেন এ মুভিতে তাই সাবধানতা হিসেবে সবাইকে মুভিটি দেখার আমন্ত্রন রইলো। আর ভালো থাকুন সবাই এ ঠান্ডায়।
সোহানী
ডিসেম্বর ২০২৩
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ৭:৫৭