somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লালনের একটি গান

০৭ ই অক্টোবর, ২০০৮ দুপুর ১২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গানটি এই-

পাখি কখন জানি উড়ে যায়
একটা বদ্ হাওয়া লেগে খাঁচায়

ভেবে অন্ত নাহি দেখি
কার বা খাঁচায় কে-বা পাখি।
আমার এই আঙ্গিনায় বসে
আমারে মজাতে চায়।

খাঁচার আড়া প'ল খসে
পাখি আর দাঁড়াবে কী সে?
আমি এই ভাবনা ভাবছি মিছে-
আমার চমকজ্বরা বইছে গায়।

আগে যদি যেত জানা
জংলা কভূ পোষ মানে না।
তা হলে হয় প্রেম করতাম না
লালন ফকির কেঁদে কয় ...

সাঁইজীর এই গানটি অনেকেরই শোনা।
আমি কয়েকটি বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষন করতে চাই।
পাঠ করুন-

খাঁচার আড়া পল ধ্বসে
পাখি আর দাঁড়াবে কী সে?
আমি এই ভাবনা ভাবছি মিছে-
আমার চমকজ্বরা বইছে গায়

আমি এই ভাবনা ভাবছি মিছে-
এই তৃতীয় চরণটি কি প্রশ্ন না বিবৃতি?
প্রশ্ন হলে তো এভাবে লিখতে হবে-

আমি এই ভাবনা ভাবছি মিছে?

আর বিবৃতি হলে এভাবে-

আমি এই ভাবনা ভাবছি মিছে। মানে একটা দাঁড়ি দিয়ে শেষ করতে হবে।

আবারও বলি-তৃতীয় চরণটি কি প্রশ্ন না বিবৃতি?
তা হলে এবার প্রথম চরণে যাই। খাঁচার আড়া প'ল ধ্বসে ...কী এর মানে? খাঁচা কি শরীর? তা হলে খাঁচাসম শরীরটি কোনওদিন শুকিয়ে মরে গেলে শরীরের ভিতরে যে প্রাণপাখি রয়েছে সেটির কি হবে? এই লালনের বিপন্ন বিস্ময়।
আরও বহৎ প্রেক্ষাপটে বিষয়টি ভেবে দেখা যায়।
যদি জগৎটাই তৈরি না হত? তো? তা হলে প্রাণগুলির কি হত?
এই লালনের বিপন্ন বিস্ময়। এবং আমাদেরও।
এক গূঢ়তম বিপন্ন বিস্ময়ে আক্রান্ত হয়ে লালন গাইলেন-

খাঁচার আড়া প'ল ধ্বসে
পাখি আর দাঁড়াবে কী সে?

আমার সমস্ত কৌতূহল পরের চরণটি নিয়ে-

আমি এই ভাবনা ভাবছি মিছে-

তা হলে আবারও বলি-এই তৃতীয় চরণটি কি প্রশ্ন না বিবৃতি?
যদি প্রশ্ন হয় তো?
লালন সমমনাদের কাছে প্রশ্ন রাখছেন, আমরা যেমন প্রায়শ রাখি,আমি এই ভাবনা ভাবছি মিছে,যে,খাঁচাকে শরীর সাব্যস্ত করেই বলি- খাঁচাসম শরীরটি কোনওদিন শুকিয়ে মরে গেলে শরীরের ভিতরে যে প্রাণপাখি রয়েছে সেটির কি হবে?
কে দেবে এই প্রশ্নের উত্তর। যে প্রশ্নের উত্তরের জন্য ছেঁউরিয়ার সাঁইজী জীবনভর উতলা হয়ে রইলেন আর আমরাও তাঁরই বংশধর বলেই তাঁর ভাবনার সঙ্গে আজও একাত্ম হতে চাইছি।
আর যদি ওই ৩য় চরণটি বিবৃতি হয় তো?
আমি এই ভাবনা ভাবছি মিছে। তা হলে তো সব কথাই ফুরোলো। আর কোনও কথা থাকে না। আমি এই ভাবনা ভাবছি মিছে যে-যদি জগৎটাই তৈরি না হত? তো? তা হলে প্রাণগুলির কি হত? এসব আর ভেবে কি হবে? এসব ভেবে ভেবে তো -

আমার চমকজ্বরা বইছে গায়

এবার গানটির শুরুতে যাই।

পাখি কখন জানি উড়ে যায়
একটা বদ্ হাওয়া লেগে খাঁচায় ...

পাখি মানে তো জীবন? যা নিয়ে আমাদের অপার বিস্ময়। যে কোনও সময়ই জীবনপ্রদীপ নিভে যেতে পারে। তবু্ও এই জীবনপাখি নিয়ে আমাদের কৌতূহল কম নয়। শরীর ও মন আমাদের ভাবায়। লালন বলছেন-

ভেবে অন্ত নাহি দেখি
কার বা খাঁচায় কে-বা পাখি।
আমার এই আঙ্গিনায় বসে
আমারে মজাতে চায়।

অতুলনীয় কাব্যদশর্নের আর উৎকৃস্ট নমুনা এর চে বেশি আর কি হতে পারে বলুন?
কখনও কখনও মনে হয় যে আমরা সব পেয়ে গেছি। প্রজ্ঞা। নদীয়ার লালন। বাংলার ভাব।
কিন্তু, পাখি কেন লালনের উঠানে বসে লালনেরে মজায়? এর জবাব কে জানে? হয়তো কোনিয়ার জালালউদ্দীন রুমী জানেন?
পাখি যে উঠানের ডালিম গাছের ডালে বসে কবিকে মজায়, সে সাক্ষ্য লালন দিচ্ছেন। তা হলে টেলিওলজি মেনে নিতে হচ্ছে কি? মানে যা দেখি তার সবেরই একটা মানে আছে। পাটকল বন্ধ হয়ে গেলে শিশুরা না খেয়ে মরে যায় ... কিংবা ...তা হলে তারও অর্থ আছে? হেগেল কি বলেন? উনিশ শতকে হেগেলও বিষয়টি নিয়ে ভেবেছিলেন জানি। এখন আমরা ভাবছি। ‌'কদ্দুর এগোল মানুষ?'

ভেবে অন্ত নাহি দেখি
কার বা খাঁচায় কে-বা পাখি ...

অসম্ভব রহস্যময় দুটি চরণ। লকলকে আগুনে শিক পুড়িয়ে নগ্নবুকে লিখে এ নগরটা থেকে বেরিয়ে গিয়ে বাউল হয়ে যেতে ইচ্ছে হয়।
'দেখি' ও 'পাখি' - এই দুটো শব্দকে ভগবান শুধু এই গানটির জন্যই তুলে রেখেছিলেন বলে সন্দেহ হয়।
এই উদাসী চরণদ্বয় ডাকে, দিগন্ত থেকে ডাকে, যেখানে রেললাইন অদৃশ্য হয়ে গেছে ...
ভাবনায় ভাবনায় ক্ষতবিক্ষত লালন ফকিরের আর্তি-

আগে যদি যেত জানা
জংলা কভূ পোষ মানে না।
তা হলে হয় প্রেম করতাম না
লালন ফকির কেঁদে কয় ...

এবং এই কান্নাটা আমাদের ... এ কালেও ...


সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:৪৪
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×