আপনারা হয়ত অনেকেই গেমটির নাম শুনেছেন। তবে আমি গেমটি দু'দিন আগে প্রথম খেললাম কেননা গেমটা পিসিতে নেই। Fatal Frame III গেমটা PS2 প্লাটফর্মের গেম। তবে এর নতুন ভার্সনটা অর্থাৎ Fatal Frame IV বের হয়েছে শুধুমাত্র Nintendo Wii তে। যে কারনে আমি বর্তমানে খেলতে চাইলেও পারবনা। আমি নতুন ভার্সনটির ট্রেইলার দেখেছি এবং আমার বেশ ভাল লেগেছে। তবে এর তৃতীয় ভার্সনটার কিছু ওয়ালপেপার ছাড়া কোন ট্রেইলার দেখিনি। ওয়ালপেপার দেখেই ইচ্ছা হয়েছিল গেমটা খেলার তবে তখন পারিনি কেননা কনসোলটা আমার কাছে ছিলনা। আমার এক বন্ধু মৃদুল। ওর PS2 আছে। সে যখনই কোন গেম কিনতে যায় আমাকে নিয়ে যায় গেম বেছে দেবার জন্য। বরাবরের মতই এবারও আমাকে সাথে করে নিয়ে গিয়েছিল। আমরা আসলে গিয়েছিলাম MotorStorm Arctic Edge কিনতে। কিন্তু তা পেলাম না। তবে ঘাটাঘাটি করতে করতে আমরা পেয়ে গেলাম Fatal Frame III গেমটা। আমরা কিনলাম এবং মাত্র একটা গেমই কিনে চলে এলাম। আসার পর দেখা গেল যে মৃদুলের টিভি কার্ডটা বাড়িতে রেখে এসেছে তাই আর কি করা বাপ্পির বন্ধু বাবুর টিভি কার্ডটাই দু'দিনের জন্য ধার নিতে হল। বিভিন্ন কিছু চিন্তা করে PS2 আমার মেসে নিয়ে আসা হল। আমি খেলা শুরু করলাম Fatal Frame III ।
গেমটি একটি হরর গেম। গেমটির এনভায়রনমেন্ট খুবই চমৎকার। আপনাদের মধ্যে অনেকেই নিশ্চই সাইলেন্ট হিল গেম সিরিজ খেলেছেন। আশা করি এর নতুন সাইলেন্ট হিল ৫ ও খেলেছেন। ফ্যাটাল ফ্রেম ৩ এ সাইলেন্ট হিলের মতই শীতকালের তুষার ঝরা আবহাওয়া। অন্যান্য গেমের মত না। এখানে অনেকটা নিজেও অনুভব করা যায় ঠান্ডা লাগা। গেমে অস্ত্র বলতে "ক্যামেরা অবসকিউরা" নামের একটি ক্যামেরা। গেমে যতই অগ্রসর হওয়া যায় ততই ক্যামেরার আপডেট পাওয়া যায়। নতুন নতুন লেন্স লাগানো যায়। গেমে এই বিশেষ ধরনের ক্যামেরাটি একজন গবেষকের তৈরী করা ক্যামেরা যা দ্বারা এমন কিছু দেখা যায় যা সাধারন চোখে দেখা যায়না। অর্থাৎ অদেখা ভুবন দেখা যায়। এই ক্যামেরা বর্তমানে আর পাওয়া যায়না তবে কিছু কিছু লোক আছে যারা এখনও গোপনে এই ক্যামেরা ব্যবহার করে এবং বিক্রিও করে। এই ক্যামেরা দিয়েই পাজল সমাধান করতে হবে আবার ভুতদেরকে ঘায়েল করতে হবে। তবে ভুতের সাথে যুদ্ধের সময় টাইমিং এর একটা ব্যাপার আছে। আর কম্বো মারতে হলে অবশ্যই টাইমিং এ পারদর্শী হতে হবে। তবে কিছুক্ষনের জন্য সময়কে স্লো করে নেয়া যায় যদি ক্যামেরার আপডেট থাকে। এই ক্যামেরায় কিছু সেন্সর লাগানো যায় যেমন একটি সেন্সরের কাজ অশরীরিকে ট্রাক করা।
গেমটিতে অন্য হরর গেমের মত অদ্ভুত কোন প্রাণী নেই। সবগুলো ভুতই সাধারন মানুষের মত। তবে গেমটা খুবই ভয়ের গেম। যাদের হৃদপিন্ড দূর্বল তারা এই গেম খেলবেন না। গেমের এনিমেশন খুবই ভাল। আপনি যখন সিড়িতে উঠতে বা নামতে যাবেন তখনই বুঝতে পারবেন যে কতটা দরদ দিয়ে গেমটা বানানো হয়েছে। গেমটিতে সকল ভয়ের মেটারিয়ালই তৈরী করা হয়েছে সাউন্ড ইফেক্ট এবং আলো ছায়া দিয়ে। আলফ্রেড হিচকক এক সময় বলেছেন যে "বিস্ফরণে কোন ভয় নেই, শুধুমাত্র এর বিপরীতেই ভয় আছে।" কথাটা আপনি ভালভাবে বুঝবেন এই গেমটা খেললে। আপনি চিন্তা করেন, আপনার কাছে যদি কোন ডেনজারাস বন্দুক থাকে তবে আপনি কেন ভুতদের ভয় করবেন? যেমন ডুম সিরিজ বা রেসিডেন্ট ইভিল সিরিজ। গেমটা হেডফোন কানে লাগিয়ে রাতে ঘর অন্ধকার করে খেলা অনেক ভয়ের। এমনকি অতি সহজেই একজনের হার্ট এটাক হতে পারে।
এই গেমে তিনটা ক্যারেক্টার আছে Rei Kurosawa, Miku Hinasaki এবং Kei Amakura । Rei Kurosawa একজন ফটোগ্রাফার। যে কিছুদিন আগে তার বাকদত্তাকে রোড একসিডেন্টে হারিয়েছে। সে নিজেকে এর জন্য দায়ী মনে করে। এরপর এক এক্সিবিশনে সে তার বাকদত্তার আত্তাকে দেখতে পায়। এবং এরপর থেকেই সে প্রতি রাতে স্বপ্ন দেখে এবং তার শরীরে এক ধরনের টাটু দেখতে পায়। দিনের পর দিন এই টাটু ছড়িয়ে পরতে থাকে। সে স্বপ্নে একটা জায়গা দেখে যেখানে বরফ পরে এবং তার বাকদত্তা সেখানে কোথায় যেন চলে যেতে চায়। সে পিছু করে। কিন্তু সে জানে যে যেই কোন মৃত ব্যাক্তিকে অনুসরন করবে সে আর ফিরে আসতে পারবেনা। সেখানে সে একজন মা আর তার ছোট মেয়ের আত্তা দেখে যারা জাপানিজ কিমানো পরে ছিল। তারা তাকে আক্রমন করে। মা তাকে বলে যে সে কেন তার মেয়েকে ছিনিয়ে নিয়েছে। আর মেয়ে বলে যে সে কেন বাবাকে মেরে ফেলেছে। এভাবে আস্তে আস্তে তার বাস্তব দুনিয়াতেও মা আর মেয়ে চলে আসে। এই জায়গা নিয়ে পরে বাকী দু'জন ক্যারেক্টারও স্বপ্ন দেখে। সকলেরই একটা জিনিসে মিল আছে আর তা হল তারা সবাই কোন কাছের মানুষকে হারিয়েছে।
গেমে Miku Hinasaki হল Fatal Frame এর প্রথম ভার্সনে ছিল। আর Kei Amakura হল Mio Amakura এবং Mayu Amakura -র আংকেল। যারা Fatal Frame II এর দু'টি প্রধান ক্যারেক্টার। গেমটা আগের ভার্সন থেকে অনেক কঠিন করেছে। এবং আপডেট করার জন্য পয়েন্ট সংগ্রহ করতে হয় তা অতি কষ্ট এবং গেমে এত পয়েন্ট পাওয়ার মত জায়গাও নাই। আপনি ক্যারেক্টার পছন্দ করে গেম খেলতে পারবেননা। আপনাকে একেক সময় এক এক ক্যারেক্টার দেয়া হবে। এমনকি আপনার পয়েন্টকে জোর করে বিভিন্ন ক্যারেক্টারের মাঝে ভাগ করে দেবে। এটা হয়ত খারাপ লাগতে পারে। গেমে বেশির ভাগ সময়ই কোন ক্লু থাকেনা কোন দিকে যেতে হবে এ সময় আপনাকে যে দিকে আগালে ভুতের সন্ধান পাবেন সেদিকে আগাতে হবে। আপনি স্বপ্ন থেকে জেগে উঠতে পারেন আপনার পছন্দমত কিন্তু এক একটি নাইট শেষ হলে নিজ থেকেই স্বপ্ন ভেঙ্গে যাবে। এবং দিনে কিছু কাজ করতে হবে। যেমন ক্যামেরাতে স্বপ্নে যে ছবি তুলা হয়েছে তা বাস্তবে ক্যামেরাতে পাওয়া যাবে এবং তা ওয়াস করতে হবে।
আমি এই পোস্ট লিখতে লিখতে Fatal Frame সিরিজের সবগুলোর ট্রেইলার নামিয়ে দেখলাম। আমার সবচেয়ে পছন্দ হল Fatal Frame II গেমটা। কি সুন্দর পুতুলের মত দু'টা মেয়ে ভুতের কবলে পরেছে। আপনি তখনই ভয় পাবেন যখন বুঝবেন আপনি দুর্বল এবং সামনে যা আসছে তা আপনি রোধ করতে পাবেননা। আপনার পালানোরও কোন পথ নেই। গেমটা অতি চমৎকার। আপনারা চাইলে একবার খেলে দেখতে পারেন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




