আজকে এক ব্লগারের জবাই সম্পর্কে কিছু একটা লেখা পড়ছিলাম। ব্লগারকে সবসময়েই দেখা যায়, কোন এক পাপীর কথা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করেন। আশ্চর্য্যের কথা, কোরআনের রেফারেন্স কিন্তু আবার পরিস্কার করে দেখান না বা যা দেখান তাও যথেষ্ট পরিমাণ অপ্রতুল। মনে হলো, উনি কোরআন নিজে কোন সময়ই পড়েননি বা কোন আন্দাজ নেই। তাই, অন্যের বলা আবজাব কথা আউড়াচ্ছেন। আমার মতো সাধারণ মানুষদের জন্য তাই এই পোস্ট। আলাদা করে দেবার ইচ্ছে ছিলোনা। কিন্তু, উনি আবার মডারেটেড ব্লগিং এর নামে সবার নয় বরং পছন্দের মন্তব্যগুলিই প্রকাশ করেন। উনার পয়েন্টের সাথে সাথেই আমার কথাগুলো তুলে ধরেছি।
১. সর্বোচ্চ পর্যায়ের ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করতে হবে
অত্যন্ত ধারালো অস্ত্র দিয়ে দ্রুততার সাথে পশুটি জবাই করতে হবে যেন ওটা ব্যাথা কম পায়।
- এটা সঠিক নয়। ব্যাথা সবসময়ই ব্যাথা। দ্রুততার জন্য ব্যাথা কম লাগা থিউরি বলে কিছু নেই। ইসলামি জবাইয়ের পূর্ব শর্ত হালাল ভাবে জবেহ করা। মানে, আড়াই পোজে (উপর ও নিচেসহ সর্বমোট উভয়দিকে পাঁচ টান) জবেহ সম্পাদন করার জন্য মানে হালাল উপায়ে জবেহ করার জন্য অবশ্যই অত্যন্ত ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করতে হয়।
২. গলনালী, শ্বাশ নালী ও রক্তবাহী ঘাড়ের রগ কেটে ফেলতে হবে
‘যাবীহাহ্’ একটি আরবী শব্দ যার মানে ‘জবাই করা হয়েছে’। যবাই করতে হবে গলা, শ্বাসনালী ও ঘাড়ের রক্তবাহী রগগুলো কেটে। মেরুদন্ডের তন্ত্রী (স্পাইনাল কড) কাটা যাবে না।
- বোল্ড করা পয়েন্ট টুকু একটু মনে রাখবেন।
৩. শরীরের রক্ত প্রবাহিত হয়ে বেরিয়ে যেতে হবে।
দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করার আগে দেহের সমস্ত রক্ত বের করে দিতে হবে। অধিকাংশ রক্ত বের করে দিতে হবে এই জন্য যে, তা ব্যাকটেরিয়া ও জীবানু ইত্যাদির নিরাপদ নিবাস ও বংশ বিস্তারের ক্ষেত্র কাজেই মেরুদন্ডের তন্ত্রী কিছুতেই কাটা যাবে না। কেননা হৃদযন্ত্রের দিকে যেসব স্নায়ু তন্তু রয়েছে সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে এসময়। যা হৃদপিন্ডের স্পন্দন থামিয়ে দেবার কারণ হবে। ফলে রক্ত নালীসমূহে রক্ত আটকা পড়ে যাবে।
- এখানে জবাইয়ের পরবর্তী কাল্পনিক কথা বার্তা করা হয়েছে।
খ. রক্ত, রোগ-জীবানু ও ব্যাকটেরিয়ার সহজ বাহন
জৈব-বিষ ব্যাকটেরিয়া ও রোগ-জীবানু ইত্যাদির সর্বোত্তম বাহক রক্ত। সুতরাং ইসলামী জবাই পদ্ধতি সাস্থ্যবিধি সম্মত। কেননা রক্ত, যার মধ্যে জৈব-বিষ, রোগ-জীবানু ও ব্যাকটেরিয়া বাসা বেধে থাকে। যা অসংখ্য রোগ ব্যাধির কারণ হয়।
- তাই কি? জবাইকৃত প্রাণীর রক্ত বের করে দিয়ে কোন ভাবেই অল্প বা বিস্তারিতভাবে আসলে কোনভাবেই মাংসের জীবানুমুক্তকরণ সম্ভব নয়। তাই যদি হতো, আমাদের দেশে বার্ড ফ্লু জাতীয় সমস্যা সমাধানে ইসলামিক জবাইয়ের কথা বলা হতো, মাংস এক বিশেষ তাপমাত্রায় নিরাপদ সময় পর্ষন্ত উত্তপ্ত করে সিদ্ধ করার কথা বলো হতো না।
গ. গোস্ত বেশি দিন ভাল থাকে
পৃথিবীতে প্রচলিত খাদ্যের জন্য পশু হত্যার মধ্যে ইসলামী পদ্ধতীতে জবাই করা পশুর মাংস বেশিদিন ভালো থাকে। কেননা তাতে রক্তের পরিমাণ থাকে নাম মাত্র।
- হাস্যকর। মাংস জাতীয় যেকোন খাবার সবচেয়ে বেশি দ্রত পচনশীল। ঘরের ফ্রিজে রেখে এই ধরণের হাস্যকার কথার মাজেজা বুঝি না।
ঘ. পশু ব্যাথা অনুভব করে না
ক্ষীপ্রতার সাথে গলনালীগুলো কেটে ফেললে মস্তিষ্কের স্নায়ুতে রক্ত প্রবাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যে রক্ত প্রবাহ ব্যাথা বোধের কারণ। একারণে পশু ব্যাথা বোধ করে উঠতে পারে না। মৃত্যুর সময় ওটা যে ছট্ ফট্ করে তা ব্যাথার জন্য নয় বরং রক্তের ঘাটতি পড়ে যাওয়ায় মাংসপেশির শৈথিল্য ও সংকোচনের জন্য এবং দ্রুত গতিতে দেহের বাইরে যাবার কারণে।
- হালাল উপায়ে জবাই মানে প্রাণীর স্পাইনাল কর্ড পুরোপুরি অক্ষত রাখা। লেখকের উপরের বোল্ড করা অংশটি দেখুন। রক্ত অনুভূতি আদান প্রদান করেনা। এজন্য একজম মানুষ যখন রক্তদান করে, সে রক্তদানের জন্য ব্যথা পায় না, পায় চামড়া ছিদ্র করে সুই ঢোকানোর জন্য। প্রাণী শরীরে অনুভূতি আদান প্রদানে যে স্নায়ুগুলো ব্যবহার হয়, সেগুলো মেরুদন্দের মধ্যে দিয়েই মাথায় যায় ও আসে। মস্তিষ্কে সরাসরি যখন কোন অপরেশন করা হয়, তখন রোগী কোন ব্যাথা পাননা। কারণ, ব্যাথা আদান প্রদানকারী স্নায়ু মস্তিষ্কে থাকে না। কিন্তু, ব্যাথা পেলে কি করতে হবে মস্তিষ্ক তা বলে দেয়। আশ্চর্য্য হলেও সত্য, মস্তিষ্ক নিজে কখনই ব্যাথা পায়না।
গলার আওয়াজের বদলে ঘড়ঘড় করে একটি অবলা প্রাণী তার হৃদপিন্ডের সমস্ত রক্তকণিকা উগড়ে বের করে দিচ্ছে। পা বাধাঁ। নড়াচড়া করার সুযোগ নেই। কেমন এই পদ্ধতি। প্রাণী হত্যাকে কেউ দেয় দেবতার উদ্দেশ্য আর কেউ করে আল্লাহর উদ্দেশ্যে। পার্থক্যটা কোথায়। ফুড চেইনের সবার উপরে মানুষ। মানুষ তাই অন্যান্য প্রজাতীদের হত্যা করবেই, খাবেই। তার শিকারকে কেন ধর্মের লেভাস দেওয়া হয়। ক্ষুধা মেটানোর এই জৈবিক প্রক্রিয়াটি তখনই অসভ্য হয়, যখন একে কোন মহৎ কাজের অংশ হিসেবে প্রতিষ্টিত করার হয়। এই ধরণের হীন মানসিকতা আর যাই হোক, মানুষের হওয়া উচিত নয়।
মানবিকতার পরাজয় ঠিক এইখানেই।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ২:৫৩