somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতলান্তিক পাড়ে ১- স্যামনের মুড়ো

১৩ ই জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১০:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হ্যালিফ্যাক্স নামটার মধ্যেই কেমন একটা বন্দর ভাব আছে; সমুদ্রের পাড়, লাইট হাউস, পূর্বদ্বারের পতাকা হাতে যেন দাঁড়িয়ে আছে বিপুলা কানাডার শুরুতে । তো এখানে আসতে হয়েছে কাজের তাগিদে। পাঠক, কানাডা শুনে অমনি ভেবে নেবেন না বিশাল কামাচ্ছি। সত্যি, কোনক্রমে পেটেভাতে একটা পিএইচডির বন্দোবস্ত।

যাচ্ছি ভেবে মুখটা বাংলার পাঁচ করে ছিলাম, বন্ধুলোক বিপু ভাই সান্ত্বনা দিলেন 'দিদি যাও, ভারী সস্তা স্যামন মাছের কেজি'। খাবার ব্যাপারে আমার দুর্বলতার কথা জানাছিল কিনা তাঁর। গর্বভরে আরও যোগ করলেন (কানাডাবাসীর জবানে) 'আমাদের ইলিশ নেই সত্যি কিন্তু আমাদের স্যামন আছে' (কানাডিয়ানদের ইলিশের তূলনা দিতে ভারী বয়ে গেছে)। স্যামন এর কথা পাঠক মনে আছে নিশ্চয়ই। 'Luncheon' বলা ছিল, লেখক যৌবনে প্রথম ধাক্কাটা খেয়েছিলেন জনৈকা রমণীর চাটুবাক্যে আর সুস্বাদু স্যামনের লেজের বাড়িতে।

বলাবাহুল্য বিপুভাইয়ের দৌড় সাতক্ষীরা থেকে খুলনা অবধি। বারদুয়েক রাজধানীতে পা রেখেছেন, চাকরির ইন্টারভিউ দিতে আর ভার্সিটির আ্যডমিসন টেস্টে। অবশ্য আর একবার মায়ের কোলে চেপে এসেছিলেন- লঞ্চে করে ছোটফুপার বোনের ননদের বিয়েতে এবং সেবার তিনি এমনকি বিমানবন্দরের বেশ কাছে থেকে ঘুরেও গেছিলেন। প্রথম দুটোতে শিকে ছেঁড়েনি (চাকরি এবং ভর্তিতালিকা) তবে তৃতীয়টি বেশ টিকে গেছে (সেই দম্পতি হাফ ডজন ছেলেপুলের পর নাতির মুখও দেখে ফেলেছেন)। কাজেই সেই গৌরবযাত্রার স্মৃতি তাকে প্রায়ই আবেগী করে তোলে, বিমানবন্দরের (কে জানে তখন জিয়া আন্তর্জাতিকের জন্ম হয়েছে কিনা) খুব কাছে থেকে বেড়াতে যাবার সুবাদে মাতৃক্রোড়স্থ বিপুভাইয়ের মধ্যে বেশ একটা গভীর প্রভাব পড়ে যায়, ভূগোল বিষয়ে তার অপরিসীম উৎসাহ এবং অগাধ জ্ঞানের কারণ মূলত ওটাই।


সে যাই হোক চোখভরা স্যামনের সর্ষে, স্যামন ভাজার চাখতে চাখতে তো প্লেনে চাপলাম। পিছনে 'ভুল না আমায় ' রুমাল হাতে ধরিয়ে চোখের জলে বিদায় দিলেন সদ্যপরিণীত পতিদেব (পাঠক আবার ভুল বুঝবেন না, মানে বিয়েটা ওনার আমার সাথেই হয়েছে)। উনি তো আর স্যামন খেতে পাচ্ছেন না তাই কান্নাটা ওতরফেই বেশি।

অগত্যা তেরাত্তি পার করে বিমানবালকবালিকাদের সেবাযত্ন, সুমধুর 'ম্যাম' সম্বোধন প্রভৃতিতে স্ফীত হয়ে তো এলাম, সারাপথ মনে হল কে যেন থালা সাজিয়ে স্যামনমুড়োর ঘন্ট রেঁধে বসে আছে। তো বিমানবন্দরে এলেন গুরু ও গুরুপত্নি, প্রথম রাতটা তাদের অতিথি হয়েই কাটাব। ডিনারের টেবিলে কোথায় স্যামন! এ দেখি বাঙ্গালীর অতিপরিচিত পাবদা; আমার গুরুপত্নি গদগদ হয়ে নবাগত অতিথির সম্মানে টরেন্টো হতে আনিয়েছেন। আমার কানে তখন ডুবো তেলে ছ্যাঁক ছ্যাঁক করে স্যামন ভাজার শব্দ, মনে ভাবলাম রাতটা পেরোক, কাল নিজের অ্যাপার্টমেন্টে উঠে গন্ধে হবুরুমমেটকে বাড়িছাড়া করব (বিড়াল প্রথম রাতে না মারলে এই তেল হলুদের অত্যাচার ও পরে আর সইতে পারবে না)। লেখিকাকে দজ্জাল গোছের কিছু ভেবে নিলেন নাতো, ও বেচারার ভালোর জন্যই বলেছি। চেকিং এর সময় প্রমাদ গুণেছি, ব্যাটারা কুকুর দিয়ে সবার লাগেজ শুঁকিয়েছে ফ্লু-আতঙ্কে। এই গুণবান প্রাণিটির সাথে আমার আবার স্মৃতি বড় সুখের না (এটা কুকুরের মিসটেক, এ ব্যাপারে আমি শতভাগ নিশ্চিত)। কিন্তু কি করে যেন এ যাত্রায় বেঁচে গেলাম। এদিকে লাগেজের ভাঁজে ভাঁজে, কাপড়ের ফাঁকে ফাঁকে, ছেঁড়াফাটার ভয় ভুলে, বিস্ফোরক-আইনের চোখরাঙ্গানি উপেক্ষা করে; সোনা নয়, রুপো নয়, এমনকি 'নতুন বিয়ের' পাটভাঙ্গা শাড়ি ও নয়; জুতোর বক্স থেকে মায় জুয়েলারি 'box' এ শুধুই 'বাংলার লাল' থেকে 'রাধুনীর' ঝাল (এই বিজ্ঞাপনের বিনিময়ে তাদের তো আমাকে 'ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর' করা উচিত )। একটুও বাড়িয়ে বলছি না পাঠক, মসলা অন্তপ্রাণ আমার। ইতপূর্বে শিক্ষাসূত্রে 'বাড়ির কাছের বিদেশে' (থাইল্যান্ড; যখন স্বদেশী সহপাঠীরা সীফুড আর 'তমিয়্যামে' মাতোয়ারা) থাকার সময়ও আমার রান্না অভিযানের কোন ঘাটতি ছিল না । জিয়া আন্তর্জাতিক এর 'সৎ ও নিষ্ঠাবান' সর্বভূক কাস্টম 'অফিসারকুল' (আর্দালী, করণিক, পরিদর্শক গণ) 'খাদ্যাভাবে' এবং যাত্রীবিশেষের বিরস ব্যবহারে কুপিত হয়ে প্রায়ই মসলা পরিবহণের উদ্দেশ্য বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করতেন। বলাবাহুল্য অভিযানের এই অংশে আমি তাদের বঞ্চিত না করে বলতে বাধ্য হতাম ' পড়ালেখার পাশাপাশি পার্টটাইম মসলার বিজনেস করি'। (সমঝদার পাঠক আর বেশি না বলি, ধারণা করি এ অভিজ্ঞতা অধমের একার না )।

যা হোক ভয়ে ভয়ে খাবার টেবিলে যোগ করলাম 'কানাডায় নাকি স্যামন খুব সুলভ'। গুরুপত্নি সম্মতি দিলেন। এখানেই তো ফিশারম্যান ভিলেজ। সারি সারি বোট দেখা যায় 'Peggys Cove' এর পথে যেতে(হ্যালিফ্যাক্সের অন্যতম টুরিস্ট আকর্ষণ)। (আহা ঠিক যেন 'পদ্মানদীর মাঝি'। ঝাঁকে ঝাঁকে স্যামনের চমকে রূপসী হ্যালিফ্যাক্স )। "আর মাছ বুঝি খুব সস্তা " সাগ্রহে জানতে চাই। মোটেই না। এখান থেকে যে সব সাগরপথে চলে যায় নর্থ আমেরিকার বিভিন্ন প্রান্তে। স্থানীয় বাজারে কিছুই আসেনা।

তবে যে শুনলাম হ্যালিফ্যাক্সে জলের দরে স্যামন পাওয়া যায়, আমাদের এক সিনিয়র বললেন। "ঠিকই বলেছেন ভদ্রলোক" এতক্ষণে মুখ খুললেন গুরুদেব-" তবে ওটা সত্তর বছর আগে তথ্য, যখন রেফ্রিজারেটর এর জন্ম হয়নি''।


স্যামনের মুড়ো না বিপুভাইয়ের মাথাটাই চিবিয়ে খেতে ইচ্ছে
করছে।

হ্যালিফ্যাক্স শুনলেই কেমন বিচ্ছিরি একটা আঁশটে গন্ধ নাকে এসে লাগে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০০৯ ভোর ৪:৫৫
৩০টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×