বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের মাঝে আসলেই কোন নীতি নেই। এরা যেই কাজ টা খুব ভাল পারে তাহলো জনগণকে সুন্দর করে মিথ্যাটা বলতে পারে। তারা খুব সহজেই আবেগী কান্নাও দেখাতে পারে। যেমন কাউকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছে; তার পরিবারের কাছে তারা যাবেন, এক লাখ টাকার একটা চেক ( টাকা তো নিজের গাঁট থেকে দেয়া লাগে না) দেবেন আর সেই পরিবারের সদস্যদের বুকে জড়ায় ধরে ফিচ করে কেঁদে দেবেন। আমাদের হাসিনাও কাঁদতে পারেন। উনার কান্নার অভ্যাসটা দিন কে দিন নতুন মাত্রা পাচ্ছে। যেমন দেখা গেলো কোন দিন উনাকে মিঃ বিনের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে; সবাই হাসির জন্যে প্রস্তুতি নিলেও হাসিনা কয়েক টা কথা বলবেন এভাবে, '' মিঃ বিন...(দুই মিনিট চুপ)...যে অভিনয় করেন...(আবার দুই মিনিট চুপ)...স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে...(এবারে আড়াই মিনিট চুপ...সাথে ফিচ ফিচ কান্না )। এভাবে সবাই কাঁদতে খুব ভাল পারেন। এদের কান্নার পানিতে যদি বাংলাদেশের শুকিয়ে যাওয়া নদী নালা ভরে যেত তবেও খুশি হওয়া যেত।
মনমোহন বাংলাদেশ সফর করলেন। সারা ঢাকা শহরে নেড়ি কুকুরও চান্স পেলো না একটু খাবার খোঁজার কারণ মনমোহন আসছেন বলে কথা। নিরাপত্তার চাদর বিছিয়ে আমরা মনমোহন কে দুধ কলা খাওয়ালাম। মনমোহনের লাট বহর যেই রাস্তা দিয়ে যাবে সেই রাস্তার আকাশ দিয়ে কাক উড়াও মানা ছিলো। এভাবে মনমোহন বিশাল খাতির যত্নে যখন আসল কাজে বসলেন তখনই হাসিনা বাহিনীর দৌড় বুঝা গেলো। বহুল আকাঙ্ক্ষার তিস্তা চুক্তি কিন্তু সই হলোনা। আমরা বাংলাদেশীরা খুব সহজেই আতিথেয়তা দিতে পারি এবং খুব সহজেই মনের দুঃখ ভুলে যেতে পারি তাই এই কাঙ্খিত চুক্তির মাঝে কাবারের হাড্ডি হয়ে আসা মমতা ব্যাণার্জির কথা ভুলে গেলাম অবলীলায়। মমতা যে চুক্তিতে সই করবেন না সেটা হাসিনার আগেভাগেই বুঝে নেয়া উচিৎ ছিলো কারন বিশ্বের আর সব দেশের ঝানু রাজনীতিবিদের মতন মমতাও খুব ভাল করেই জানেন আসলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে হাসিনা কাকে চাইছিলেন? হাসিনা এই ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ধরা খাওয়ার মতই ধরা খেলেন। তবে হাসিনার ধরা খাওয়াতে তার ক্ষতি নেই ক্ষতি কিন্তু আমাদের। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের উপরে যা ইচ্ছে তাই চালাবে এমন নীতিতে চলছে তারই উদাহরণ ডিভি লটারী থেকে বাংলাদেশের নাম বাদ দেয়া। শেখ হাসিনার গোঁয়ার্তুমি আর ডক্টর ইউনুসের চেয়ার ছাড়ব না নীতির জন্যে তাদের কোন ক্ষতি না হলেও বাংলাদেশ ভুগছে এবং ভুগবে। যাইহোক আবেগ দিয়ে এখন আর বিশ্ব রাজনীতি চলে না তাই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের সময় বুদ্ধদেব বাবুর কাছে আশ্রয়ে ছিলেন এই জন্য হাসিনা যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনে বুদ্ধদেব বাবুকে সমর্থন দিয়েছিলেন মনেমনে আর তার খেসারত দিতে হচ্ছে মমতার একগুঁয়ে আচরণে। এটাই প্রমাণ করে আসলে আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের রাজনীতি জ্ঞান কতটুকু।
শেখ হাসিনার মন্ত্রীসভার মন্ত্রীগুলা হাসিনার মানসিকতার হবেন এটাই স্বাভাবিক। আমাদের রাজনীতিবিদেরা ক্ষমতায় যাবার লোভে পা ধরতেও দ্বিধা করেন না। একটা চুক্তি করার আগে তা কতটা দেশের উপকারে আসবে এটা নিয়ে রীতিমত গভেষনা হয়। আর বাংলাদেশে এটা ডাল ভাত। ব্যাপারটা যেন এমন; মনমোহন হাসিনাকে ফোন করে বলল, 'দিদি, আমার দেশের এয়ারফোর্সের সদস্যরা বলছে তারা একটু ভিন্ন দেশের আকাশে উড়তে চায় তা আপনি আমাদের এই অনুমতি দেন আর আমি আপনার দেশে দুই মগ পানি দিচ্ছি'। পরের দিনই দেখবেন বাংলাদেশের আকাশে ভারতীয় বিমান বাহিনীর বিমান পতপত করে উড়ে বেড়াচ্ছে...কিন্তু দুই মগ পানি কই? এটা পাবেন পরের দিন পত্রিকায়; বাংলাদেশের কাছে মনমোহনের দুঃখ প্রকাশ- ''প্রভাতে মনমোহনের প্রাকৃতিক কর্মের পরে অতিরিক্ত দুই মগ পানি বেশি প্রয়োজন পরায় আপাততো পানি পাচ্ছে না বাংলাদেশ''
ভারত কে খুশি করতে আস্ত তিতাসের বুকের উপরে মাটি ফেলে আ্মাদের হাসিনা পার করে দিলেন ভারতের কনভয়। এই পার করাতে সব নিয়ম নীতি ভঙ্গ করে জ্বালানীতে ভারতকে ভর্তুকি পর্যন্ত দিয়েছেন হাসিনা যা বিশ্বের কোন দেশে ঘটেনি। ভারত তার শত চাকার ট্রাক দেশের সড়কের সর্বনাশ করে পার করেছে তাদের দেশে; হাসিনা সেটাও দিয়েছে নির্বিঘ্নে। হাসিনা কোন রকম টোল ছাড়াই পার করতে দিয়েছেন ভারতের কনভয় কিন্তু এত দেয়ার বদৌলতে আমরা কি পেয়েছি? কিছুই না। ফারাক্কার কয়েকটা স্লুইসগেট ভেঙ্গে পানি ঢুকছে দেশে সেই জন্যে মমতা গো ধরে আছেন আর মনমোহন আমাদের তিস্তা চুক্তি সই করবেন বলে আশার মুলা নাকের সামনে ধরে রেখেছেন আসলে যার বাস্তবায়ন হবার কোন সম্ভাবনাই নেই। মমতা নামেই মমতা যার মমতার ছোঁয়া পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া আর কারো পক্ষেই পাওয়া সম্ভব না। মমতা একটা জামদানী শাড়ির লোভে রাজনীতি করেনা অথচ ইচ্ছা করলেই রাজ রানীর বেশে থাকতে পারে। এইসব মানুষকে ইলিশ মাছ, খিলি পান আর জামদানী শাড়ি দিয়ে মন ভোলানো যায়না। এদের কে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে আটকাতে হয়। মনমোহন এখন দুঃখী দুঃখী চেহারা করে কয়েকদিন পরেই ক্ষমা চাইবে বাংলাদেশের কাছে কারণ এটাও তাদের রাজনৈতিক খেলারই একটা অংশ। মনমোহনের আসল ফায়দা হাসিল হয়ে গেছে এখন আর এইসব চুক্তিকে পরোয়া না করলেও চলে। আমরা পারনি এইসব কুটচাল ধরতে। আসলে পারবই বা কিভাবে? দীপু মণি কোন চুক্তির আগেই সোনার ডিম্ব দেখে ফেলেন, মাল সাহেব দেশকে সিঙ্গাপুর বানায় ফেলেন আর আশরাফ সাহেব তো বিশাল ব্যাস্ত মানুষ তার এসব দেখার সময় নেই।
আমরা সীমান্তে মানুষ হত্যা আটকাতে পারিনি কারণ আমাদের মেরুদণ্ডহীন কিছু মানুষের জন্যে। এরা প্রতিবাদ কি জিনিষ তাতো জানেইনা উলটা কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে একটা তকমা পরিয়ে দেয়। হাসিনার অকারণ বকবকানির থেকে আসলে মমতার কাছ থেকে শেখা উচিৎ কিভাবে নিজ দেশের ফায়দা হাসিল করতে হয়। হাসিনার আরো শেখা উচিৎ কিভাবে চুক্তি না করেও শুধুমাত্র হাসি খেলার ছলে ফায়দা লুটে নিতে হয়। বাংলাদেশ ভৌগলিকভাবেই ভারতের কাছে খুব গুরুত্বপুর্ণ তাই একটু মাথা খাটালেই ভারতকে বাধ্য করা যায় দেশের জন্যে প্রয়োজনীয় চুক্তিগুলো আদায় করে নিতে; এর জন্যে পা চাটার কোন দরকার নেই। অবশ্য তেমন মাথাওয়ালা মানুষও চাই আমাদের; যে কিনা মমতার মত খোঁড়া যুক্তি দেখাবে কিন্তু কারো সাধ্য নাই তার যুক্তিকে অগ্রাহ্য করার।