somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেয়ারবাজারে গ্রামীণফোন

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১০ বিকাল ৪:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আবু আহমেদ
অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
-------------------------------------------
অবশেষে অনেক বাধা এবং সন্দেহ নিরসন করে অর্থনীতির বৃহত্তম কোম্পানি গ্রামীণফোন সফলভাবে তার আইপিও বা গণ-অফার জনগণের কাছে বিক্রি করতে পারল। গ্রামীণফোন শেয়ারবাজারে আসুক, আমরা তা এ জন্যই চেয়েছিলাম যে, এই আসার একটা প্রতীকী অর্থ আছে। এর মাধ্যমে জনগণ অর্থনীতির বৃহত্তম কোম্পানির মালিক হবে।
এখন থেকে পাঁচ বছর আগে অনেকেই গ্রামীণফোন কেন শেয়ারবাজারে আসছে না, সেই কথাটি অতি জোরের সঙ্গে তুলে ধরেছিলেন। আমি সেই দিন অবাক-বিস্ময়ে দেখছিলাম, কীভাবে আমাদের অর্থনীতিতে মোবাইল টেলিফোন কোম্পানিগুলো একটা মনোপলি ধাঁচের বাজার তৈরি করে মিনিটে সাত টাকা করে কলচার্জ ধার্য করে জনগণকে শোষণ করছিল। তাদের ওই অর্থনৈতিক এবং বেআইনি বাজার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ টেলিকম রেগুলেটরি কমিশন ব্যর্থ ছিল। মনে হচ্ছিল, নিয়ন্ত্রক সংস্থা অর্থনীতি এবং বাজারের প্রাথমিক ধারণাটুকু জানে না। বরং উল্টো নিয়ন্ত্রক সংস্থার লোকজন ওদের দাওয়াতে অতিথি সেজে এমন বক্তব্য দিত যেন আমাদের অর্থনীতিতে মোবাইল টেলিফোন কোম্পানিগুলো অনেক উপকার করে চলেছে।
এই সেই দিন অর্থ মন্ত্রণালয় সিমকার্ডের ওপর সামান্য ট্যাক্স আরোপ করল। এটা নিয়েও হইচই হলো। ওই হইচইয়ে শামিল হলো আমাদের ব্যবসায়ী সমাজের অনেক চেনা মুখও। কিন্তু তারা ঘুণাক্ষরেও এটা বলল না যে কেন এই গরিব অর্থনীতিতে এত বেশি কলচার্জ নেওয়া হচ্ছিল।
আমি যখন টেলিফোন কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে আসার পক্ষে বলতাম, তখন অনেকে বলতেন, ‘আরে ভাই, এটা তো ওদেরকে দেওয়া লাইসেন্সে নেই।’ আমি ভাবলাম, আমাদের রেগুলেটররা জনস্বার্থ সম্বন্ধে কত উদাসীন হলে জনগণের কাছে শেয়ার বেচতে হবে, এমন কোনো শর্ত ছাড়াই এত বড় বিদেশি কোম্পানিকে এই বাজারে ব্যবসা করার অনুমতি দিল। গ্রামীণ টেলিফোন টেলিনর নামে পাকিস্তানেও ব্যবসা করেছ। স্বেচ্ছায় এই কোম্পানি শেয়ারবাজারে আছে এবং অনেক মূল্য দিয়ে লাইসেন্স কিনেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, এখানে লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে তেমন কিছু ঘটেনি।
এক বড় ব্যাংকার আমাকে বাজেট-পরবর্তী কোনো একদিন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এক আলোচনায় নিয়ে গেলেন। সেখানে করপোরেট ট্যাক্স এবং সিমকার্ডের ওপর ট্যাক্স বসানো নিয়ে আলাপ হচ্ছিল। আমি তখনকার গ্রামীণফোনের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বললাম, ‘গ্রামীণফোন কেন শেয়ারবাজারে আসছে না?’

তিনি প্রশ্ন শুনে কিছুটা রাগই করলেন। বললেন, ‘শেয়ারবাজারে আসতে হবে কেন? আমাদের শেয়ারবাজার গ্রামীণফোনকে কেনার জন্য উপযুক্ত নয়।’ তাঁর ওই কথা শুনে যত না হতাশ হয়েছি, তার চেয়ে বেশি রাগ হচ্ছিল আমাদের রেগুলেটরের ওপর। লাইসেন্স শর্তে যদি আইপিও ব্যাপারটা থাকত, তাহলে জিপির এমডি এ প্রসঙ্গে এমন কথা বলতে পারতেন না।
তার পরও আমার মতো কিছু লোক এই ইস্যুটাকে বারবার সামনে এনেছিল। সরকারও তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য করহার কমিয়ে দিলেন। এভাবে চাপ তৈরির বিষয়টি শেষ পর্যন্ত কাজে আসে। গ্রামীণফোন দেখল, শেয়ারবাজারে এলে তাদের তিন ক্ষেত্রে লাভ। প্রথমত, জনগণ ভাববে, এটা তাদের কোম্পানি। দ্বিতীয়ত, আইপিও থেকে প্রাপ্য অর্থ দিয়ে উঁচু সুদের ঋণ শোধ করা হবে। তৃতীয়ত, বিরাট অঙ্কের কর ছাড়ের সুযোগ গ্রহণ করা যাবে।
আজকে গ্রামীণফোনের ৪৮৬ কোটি টাকার গণ-প্রস্তাবে চার গুণ বেশি চাঁদা জমা পড়েছে বলে শুনেছি। এর দ্বারা এও প্রমাণ হলো, যাঁরা এত দিন বলে আসছিলেন যে আমাদের শেয়ারবাজার কোনো বড় ইস্যুকে হজম করতে পারবে না, তাঁরাও ভুল । আমি শুধু এই কথাই বলব, গ্রামীণফোনের সফল আইপিও অন্যদের জন্য চোখ খুলে দিয়েছে। আমাদের বিনিয়োগকারীরা সম্পূর্ণভাবে তৈরি বড় বা কথিত মেগা আইপিও কিনে নিতে।
এখন সরকার এবং ব্যক্তি খাতের অন্য বড় কোম্পানিগুলোর দায়িত্ব হলো, এই বাজার ব্যবহার করে তাদের প্রকল্পগুলোর অর্থায়নের উদ্যোগ নেওয়া। গ্রামীণফোন মাত্র ১০ শতাংশ ইক্যুইটি জনগণের কেনার জন্য অফার দিয়েছে। (গ্রামীণ ব্যাংকের ৩.৮ শতাংশ মালিকানা আছে) তাদের মেজরিটি শেয়ার ৫২ শতাংশ হাতে রাখতে হয়েছে। তাতে আমাদের আপত্তি নেই বরং আমরা খুশি। আমরা চাইছি, বিদেশি কোম্পানিগুলো তাদের মূলধনের সামান্য অংশ এই দেশের জনগণের কাছে বেচে তাদেরকে তাদের ব্যবসায়ের খুদে অংশীদার হওয়ার সুযোগ দিক।
------------

সুত্র: প্রথম আলো।
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জেনারেল রাও ফরমান আলী ছিল ইন্ডিয়ান 'র'-এর এজেন্ট

লিখেছেন ধূসর সন্ধ্যা, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২২



জেনারেল রাও ফরমান আলী ছিল ইন্ডিয়ান 'র'-এর একজন এজেন্ট। এই তথ্য কেউ জানতো না। তার ফ্যামিলিও জানতো না। ১৯৪১ সালে বর্ডার ক্রস করে সে ঢুকেছিল পাকিস্তান। তারপর আস্তে আস্তে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×