এক গাধা আর এক শেয়াল একসঙ্গে শিকারে বেরিয়েছে। কিছুদুর যাবার পর তাদের সামনে একটা সিংহ দেখতে পেয়ে বিপদ বুঝে শেয়ালটা আত্নরক্ষার জন্য সিংহের কাছে এগিয়ে গিয়ে চুপিচুপি বলল, "মহারাজ, আপনি যদি কথা দেন যে আমাকে ছেড়ে দেবেন তাহলে ঐ গাধাটাকে আপনার একেবারে হাতের মুঠায় এনে দিতে পারি।" সিংহ বললো- বেশ তাই হবে, আমি কথা দিচ্ছি । সিংহের এই কথায় শিয়াল গাধাটাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে একটা ফাদের মধ্যে ফেলল। আর এদিকে সিংহ দেখলো গাধার আর পালাবার উপায় নাই তখন প্রথমে শেয়ালটাকেই শেষ করলো, এরপর ধীরে সুস্থে গেল গাধাটার কাছে।
এই গল্পের সারকথা হলো বন্ধুর সর্বনাশের চেষ্টা করতে গেলে নিজের সর্বনাশই আগে হয়।
বন্ধুত্ব হচ্ছে দুই অথবা তার অধিক কিছু মানুষের মধ্যে একটি সম্পর্ক যাদের একে অপরের প্রতি পারষ্পারিক স্নেহ রয়েছে ।
বন্ধুত্ব আসলে এই গল্পের মত নয়।
প্রাচীন গ্রিকে " বন্ধু " এবং "প্রেমিক" - একই শব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাদের মতে বন্ধুত্বকে ব্যক্তিগত সম্পর্কের খুব কাছের একটি অংশ ধরা হয়।
অ্যারিস্টটল লিখেছিলেন, "একজন ব্যক্তি তার বন্ধুর সাথে একইভাবে সম্পর্কিত যেভাবে সে নিজে নিজের সাথে সম্পর্কিত। যেহেতু একজন বন্ধু একজন ব্যক্তি তাই তার নিজের একটা চিন্তাধারা আছে সুতরাং বন্ধু হচ্ছে ওই একই চিন্তাধারায় বিশ্বাসী ব্যক্তি।"
তবে আমার মনে হয় বন্ধুত্বের যোগ্যতা যাচাইয়ে নিচের বিষয়গুলি আবশ্যক-
1. অন্যের ভাল কিভাবে হবে এই বাসনা থাকা।
2. সহানুভূতি থাকা ।
3. কঠিন সত্যের স্বীকার করে হলেও নিজের সততার প্রমান দেওয়া।
4. পারস্পরিক চিন্তাভাবনা ও মূল্যবোধের গুরুত্ব দেওয়া, কম্প্রোমাইজ করার ক্ষমতা থাকা, মানসিক সমর্থন দেওয়া।
5. একে অপরের সঙ্গ উপভোগ করা।
6. পারস্পরিক বিশ্বাস।
7. প্রয়োজনে সবার জন্য ইতিবাচক, গভীর কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করা।
8. তুমি কি করতেছ এটা নিয়ে বন্ধুদের মধ্যে কোন সংশয় না থাকা।
একটি গল্প দিয়ে শেষ করি-
একদিন ভেড়ার পাল চরিয়ে বাড়ি ফিরছিল এক মেষপালক। যেতে যেতে পথে হঠাৎ সে দেখল কয়েকটি বুনো ভেড়া পালের মধ্যে ঢুকে তাদের সঙ্গে এগিয়ে চলছে। সন্ধ্যাবেলা বাড়ি ফিরে মেষপালক ভেড়ার পালের সঙ্গে নবাগত বুনো ভেড়াগুলোকেও খোঁয়াড়ের মধ্যে ঢুকিয়ে দিল।
পরের দিন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় মেষপালক ভেড়াগুলোকে চরাতে না নিয়ে বাড়িতেই তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করল। প্রতিদিনের যা বরাদ্দ খাবার, তাতে ভেড়ার দল বেশ তৃপ্তি নিয়েই খেত।কিন্তু সেদিন তাদের খাবারের বরাদ্দে টান পড়ল। বেশির ভাগ খাবার গিয়ে জড়ো হয়েছে নবাগত ভেড়ার দলের সামনে। মেষপালক মনে মনে খুব খুশি। কারণ নবাগত ভেড়ার দল খাবারের লোভে আকৃষ্ট হয়ে তার পালিত ভেড়ার পালের মধ্যেই থেকে যাবে। আর এতে তার ভেড়ার সংখ্যাও বাড়বে।
পরদিন মেষপালক বুনো ভেড়াসহ তার ভেড়ার পালকে চরাতে নিয়ে গেল। যেতে যেতে তারা যখন পাহাড়ের কাছে এসে হাজির হয়েছে, তখন বুনো ভেড়ার দল পাল থেকে বেরিয়ে নিজেদের পথে এগোতে লাগল। ব্যাপার দেখে খেপে গেল মেষপালক। অভিযোগের সুরে বুনো ভেড়াদের বলল, "আমার পালিত ভেড়ার চেয়ে তোদের বেশি যত্ন করেছিলাম। এই তার প্রতিদান দিচ্ছিস? যত সব অকৃতজ্ঞের দল!"
মেষপালকের কথা শুনে বুনো ভেড়ার দলের সবচেয়ে বুড়ো ভেড়া বলল, "মশাই, তোমার সঙ্গে আমরা সঠিক ব্যবহারই করেছি। যারা তোমার সঙ্গে এত দিন ধরে আছে, তাদের ছেড়ে তুমি আমাদের প্রতি বেশি সদয় ব্যবহার করেছ। তোমার এ ব্যবহারই আমাদের শিক্ষা দিয়েছে আবার যখন নতুন কেউ আসবে তখন অবধারিতভাবেই তুমি আমাদের সঙ্গে পুরনো ভেড়ার পালের মতো আচরণ করবে। আর তাদের খুশি করার জন্য আজ আমাদের সঙ্গে যে ব্যবহার করছ তাই করবে।"
ঠিকই বুঝেছেন যে লোক নতুন বন্ধুর আগমনে পুরনো বন্ধুর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে, তার বন্ধুত্ব সম্পর্কে সতর্ক থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ ।
(তথ্য সহায়তা : wikipedia)