এক্কেবারে ছোটবেলার কথা । ক্লাস ওয়ান টু এ পড়ি হয়তো। বাবা দুপুরবেলা দোকান থেকে এসেই হুংকার দিতেন -বাপ্পী বিমল কই রে? (বাড়িতে সবাই আমাকে বিমল বলে ডাকে।)
আমরা ছুটতে ছুটতে এসে বাবার চুলের কাছে পজিশন নিতাম। তারপর বাবা মেঝেতে শুয়ে পড়তেই দুভাই মিলে বাবার পাকাচুল তোলা শুরু করতাম । এই চুল তোলাতে আমাদের আগ্রহের কমতি ছিল না । এটা ছিল আমাদের একমাত্র আয়ের উত্স । কারণ চুল তোলা শেষে বাবা দুজনকে দুইটাকা করে দিতেন। সেই টাকা দিয়ে আমরা নারিকেল মালাই অথবা পাইপ আইসক্রীম কিনে খেতাম ।
আমাদের চুল তোলার প্রতিভার কথা তখন সবার মুখে মুখে।
একদিন বাসায় এক আত্মীয় বেড়াতে এলেন। এসেই আমাদের প্রতিভার কথা শুনে আমাদের চাকুরীতে নিয়োগ দিলেন । ঘোষনা দিলেন প্রতিটা পাকা চুলের মূল্য একটাকা । দুভাই মিলে মহাউত্সাহে ডিউটি শুরু করলাম।
কিন্তু কিছুক্ষন হাতাহাতি করে চরম হতাশ হলাম । পাকা চুল যাও দুই একটা আছে একটা তুলতে তুলতে আরেকটা হারিয়ে যায়। কিন্তু আমাদের ইনকাম তো করতে হবে। ঘরের কোনায়, বারান্দায়, খাটের তলে যে যেখান থেকে পেলাম বাবার আগের তুলে দেওয়া চুলগুলো জোগাড় করে পেছনে লুকিয়ে রাখলাম । তারপর কিছুক্ষন পরপর চুলে একটু করে টান দিই আর পেছন থেকে চুল বের করে উনার সামনে রাখি।
ঘন্টাখানেক পরে উনার সামনে এত্তগুলা পাকাচুল দেখে উনি খুশির উত্তেজনায় আমাদেরকে ২০ টাকা দিয়ে দিলেন। সেই টাকা দিয়ে সেবার টানা সাত আটদিন নারিকেল আইসক্রীমের পাশাপাশি কুলফিও খেয়েছিলাম; সঙ্গে চালতার আচার।