অজোপাড়াগায়ে খেঁটে খাওয়া সাধারণ একটা ছেলের টক অফ দ্যা টাউনে পরিনত হয়ে উঠার গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে দেশা দ্যা লিডার মুভিটি।
পুরোদেশে সাড়াজাগানো জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো "Who will be Our Next Leader" যার এংকার সৃষ্টি (মাহিয়া মাহী) আর মিডিয়া পার্টনার চ্যানেল নাইনটি নাইন।
খুন, ধর্ষন, অগ্নিসংযোগে রাজনীতির উত্তপ্ত মাঠে একজন যোগ্য নেতাকে খুঁজে বের করাই এই রিয়েলিটি শো এর উদ্দেশ্য ।
অনেকগুলো ধাপ পার হয়ে সর্বশেষে দর্শকদের SMS এর মাধ্যমে বিপুল ব্যাবধানে যোগ্য নেতা হিসেবে বিজয়ী হন হাসান হায়দার (তারিক আনাম) যার উজ্জল সম্ভবনা তৈরি হয় দেশের পরবর্তী প্রাইমমিনিস্টার হবার।
এসএমএস করা দর্শকদের মধ্যে লটারীতে প্রাপ্ত ভাগ্যবান একজন দর্শকের বাসায় দুইদিন একরাত কাটানোর শর্ত দেয়া হয় বিজয়ী নেতাকে। সেই লটারীতে নাম আসে আয়নাপুর গ্রামের একটা সহজ সরল গ্রাম্যযুবক সেলিমের (শিপন)।
পরদিন নেতা এবং মিডিয়াকর্মীরা চলে যান সেই আয়নাপুর গ্রামে যে গ্রামের মানুষ কখনো এম্বুলেন্স দেখে নি, যে গ্রামে কোন হাসপাতাল নেই , স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তার নেই । হাসান হায়দারের যোগ্য নেতৃত্বে দুইদিনেই গ্রামের সমস্ত অসংগতিগুলো সংশোধনের জন্য কাজ শুরু হয়।
সেই গ্রামে অবস্থানকালেই নোংরা রাজনীতির শিকার হয়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন হাসান হায়দার । এতে নিহত হয় আয়নাপুর গ্রামের ৪২১ জন মানুষসহ একজন মিডিয়াকর্মী । কিন্তু নিজের জীবন বাজি রেখে নিজের পরিবারের বিনিময়ে দেশের পরবর্তী প্রাইমমিনিস্টারের জীবন রক্ষা করে সেই কুইজবিজয়ী সেলিম।
মিডিয়ার লাইভ টেলিকাস্ট এবং পাবলিসিটিতে একদিনেই দেশের হিরো হয়ে যায় সেলিম । সেলিমকে দেয়া হয় 'দেশা' উপাধী। রাজনীতির মূলগল্প শুরু হয় এখান থেকেই । অনেক ঘটনা এবং দূর্ঘটনা এবং রাজনীতির চালের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলে দেশা দ্যা লিডারের কাহিনী ।
কিছু নেগেটিভ পজেটিভ অবজার্ভেশন-
১। সিনেমাটির কাহিনী কনসেপ্ট মূলত তেলেগু মুভি 'কো দ্যা লিডার' এবং 'ক্যামেরাম্যান গঙ্গা রামবাবু' থেকে নেওয়া হলেও বেশ কিছু নিজস্ব মৌলিক চিন্তাভাবনা এবং দেশের কৃষ্টি কালচার এবং রাজনীতিকে ব্যবহার করায় সিনেমাটিকে সরাসরি নকল বলার স্কোপ নেই।
২। মুভিটিতে দেখানো হয়েছে রাজনীতির ছলাকলা আর মিডিয়ার বিচিত্র ব্যবহারকে । এই মিডিয়াই তাদের TRP বাড়ানোর জন্য কত নিচে নামতে পারে আবার মিডিয়াই কাউকে ফোকাস করে কত উপরে তুলে দিতে পারে।
৩। খুবই গতিশীল চিত্রনাট্য । বানিজ্যিক মুভিতে গতিশীলতার কোন বিকল্প নেই । তবে গল্পের মাঝখানে গতিশীলতায় একটু টান পড়েছে বলে মনে হয়েছে।
৪। নায়ক শিপনের অভিনয় মাঝে মাঝে একটু আনাড়ী মনে হলেও প্রথম সিনেমা হিসেবে খুবই ভাল করেছে । সবচেয়ে আশার কথা শিপনের মধ্যে একটা ম্যানলি লুক আছে।
৫। তারিক আনাম যে জাত অভিনেতা সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। অসাধারণ অভিনয়।
৬। মাহিয়া মাহী পোশাক আশাক, চেহারা, অভিনয়ে সুন্দর, স্মার্ট কিন্তু মাঝে মাঝে ওভারস্মার্ট লাগে ।
৭। গান একটু কম । মাত্র চারটি । কিন্তু প্রতিটি গানই সুন্দর । এফডিসির পার্ককে ঠিকমত ডেকারেশন করলেও যে সুন্দর একটা ব্যাকগ্রাউন্ড করা যায় সেটা সৈকত নাসির এবং শফিক তুহিন খুব ভালভাবেই দেখিয়েছে 'হাতছানি' গানের মাধ্যমে ।
৮। যখন লটারীতে বিজয়ী হবার পর সেলিমকে ফোন দেয়া হয় তখন বিজয়ী নেতার নাম বলার আগেই সেলিম বলে, "আমার বাসায় হাসান হায়দার আসবে ?" সেলিমের বিজয়ী নেতার নাম জানার কথা না কারন সে তখন হাডুডু খেলছিল ।
৯। কাহিনীর মাঝখানে এক সিআইডি অফিসারকে দেখানো হয় । মনে হচ্ছিল পরবর্তীতে তার ভাল কোন ভূমিকা আছে হয়তো । কিন্তু পরে আর তাকে দেখানোই হয়নি । ওই সিআইডির অভিনয় বেশ ভাল লেগেছে।
১০। ক্যামেরার লগশট, এঙ্গেল, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক সবকিছুই আমার কাছে বেস্ট মনে হয়েছে । এই মুভির মাধ্যমে জাজ নিজেই নিজেকে ছাড়িয়ে গেছে ।
আমার রেটিং- ৪/৫