মর্ত্যের শশী
শশীর অভিনয় জীবনের ধারাপাতটি খুব বেশি দিনের নয়। তবে এ স্বল্প সময়ের ক্যারিয়ারেই তিনি ভার্সেটাইল অভিনেত্রীর বৈশিষ্ট্য নিজের ভেতর ধারণ করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রতিভাবান এ অভিনেত্রীর গল্প তুলে ধরা হলো।
গ্রামের এবড়ো-থেবড়ো পথ ধরে মেয়েটি হেঁটে যাচ্ছে। সাদা ফিতা দিয়ে আঁট করে বেণী করা গ্রাম্য বালিকার পরনে স্কুল ড্রেস। হন্তদন্ত হয়ে ছুটে চলা এ স্কুল যাত্রীর পথ হঠাৎ করেই যেন থমকে যায়। মেঠোপথ দিয়ে উদাস পথে হেঁটে যাওয়া গরুর গাড়ি পথ আগলালে, ঠায় দাঁড়িয়ে পড়ে সে। গরুর গাড়িতে বসা গাড়িয়ালের চোখে চোখ পড়তেই হৃদয়ের কোণে অজানা এক সুর বেজে ওঠে।
কিন্তু মনের গভীরে সৃষ্টি হওয়া তরঙ্গকে ধামা-চাপা দিতেই দুষ্টুমি খেলে যায় তার সমস্ত অবয়বে। ঠিক ঐ মুহূর্তেই ওকে কাট, ওয়েল ডান শব্দগুলো শুনতে পান শশী। স্কুল পড়ুয়া গ্রাম্য মেয়ে থেকে ক্ষণিকের জন্য সম্ভিত ফিরে তার। চরিত্রের গভীরে আচ্ছাদিত হওয়া অভিনেত্রীর বলয় থেকে বের হয়ে আবারো ডুব দেবার পরিকল্পনা আঁটেন। এভাবেই চরিত্রের ভাঁজে ভাঁজে নিজেকে ফুটিয়ে তোলার নিয়ত লড়াইয়ে এখন ব্যস্ত শশী।
গল্পের নাম হাজার বছর ধরে
২০০৩ সালের ঘটনা। লাক্স ফটোসুন্দরী প্রতিযোগিতায় অনেকটা শখ করেই ছবি পাঠান শশী। এ শখই তাকে ঠেলে দেয় প্রাপ্তি সংযোজনের তালিকায়। রাজশাহী বিভাগে প্রথম ও লাক্সের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় শীর্ষ দশ এ পৌঁছানোর সুযোগ ঘটে তার। এ সুবাদে পত্রিকার পাতা জুড়ে স্থান পায় মায়াবী শশীর মুখ।
কোন এক পত্রিকায় শশীর ছবি দেখেই বাসায় ফোন করেন চিত্র নায়িকা সুচন্দা। জহির রায়হানের গল্প অবলম্বনে নির্মিতব্য হাজার বছর ধরে ছবির জন্য শশীকে প্রাথমিকভাবে পছন্দ করেন। তবে এখানেই শেষ নয় এ ছবিতে টুনি চরিত্রে অভিনয় করার জন্য রীতিমত পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয় তাকে। পরীক্ষায় পাশ করার পরই শশীর অভিষেক ঘটে চলচ্চিত্রে।
শশীর সখ্যতা
অভিষেক যদিও বড় পর্দা দিয়ে কিন্তু নাটকের সঙ্গেও শশীর সখ্যতা গড়ে ওঠে ধীরে ধীরে। আশরাফী মিঠুর এমন একটি দিন, আব্দুল্লাহ রানার চৌকিদার, আনিসুল হকের দৈনিক তোলপাড়, গোলাম সোহরাব দোদুলের শান্তকুটির, সালাহউদ্দিন লাভলুর ঘর কুটুম, বিক্রম খানের রূপালী ইলিশ, রাশেদ অপুর লেফটরাইটসহ বেশ কিছু নাটকে নিজের অভিনয়শৈলী তুলে ধররেছেন তিনি। ডেইলিসোপ দহন -এ শহুরে মেয়ের ভূমিকায় যেমন প্রাণবন্ত উপস্থিতিতে দর্শক মাতিয়েছেন তেমনি ঘরকুটুম-এ গ্রাম্য মেয়ের চরিত্রটিতেও তিনি সরব।
অভিনয়ের মঞ্চ থেকে
অভিনয়ের বাসিন্দা শশীর বর্তমান ব্যস্ততার ঝুলি কানায় কানায় পূর্ণ অভিনয় নিয়েই। ডেইলিসোপ গুলশান এভিনিউ ও ধারাবাহিক নাটক ঘটক এবং আমরা নিয়ে দারুণ ব্যস্ত এখন তিনি। কারণ দুটি নাটকেই অঢেল সময় দিতে হচ্ছে তাকে। বিশেষ করে গুলশান এভিনিউতে এমন একটি চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি যা শশীর বাস্তব চরিত্রের চেয়ে সম্পূর্ণই আলাদা।
স্বভাবে অনেকটাই উচ্ছল ও চটপটে শশীকে এখানে নম্র-ভদ্র, সাত চড়েও রা নেই এমন একজন নববধূর চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যতক্ষণ শশী ক্যামেরার সামনে থাকেন ততক্ষণই লক্ষ্মী বউ হয়ে থাকতে পছন্দ করেন। ক্যামেরার পেছনে যাওয়া মাত্রই চঞ্চলা হরিণীর মত ছুটতে শুরু করেন।
বাস্তবের শশীর খোলস ছেড়ে অভিনেত্রী শশী হয়ে ওঠার প্রক্রিয়ার কথা বলতে গিয়ে শশী বলেন, আসলে আমি কখনোই টাইপড চরিত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চাই না। নিজেকে এমনভাবে প্রস্তুত করতে চেষ্টা করছি যাতে যে কোন চরিত্রেই সাবলীল অভিনয় করতে পারি। আমি মনে করি চেষ্টা আর ইচ্ছা শক্তি থাকলে সব সম্ভব। সেই সম্ভবের দিকেই নিজেকে ধীরে ধীরে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
প্রসঙ্গ চলচ্চিত্র
মোর্শেদুল ইসলামের বৃষ্টির দিন চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে যাচ্ছেন শশী। হাজার বছর ধরে ও অস্তিত্বে আমার দেশ এরপর এ ছবিতে অভিনয় করছেন তিনি। এখানে শশীর বিপরীতে অভিনয় করবেন অপূর্ব। খুব শীঘ্রই এর শুটিং শুরু হবে। চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় প্রসঙ্গে শশীর ভাষ্য হচ্ছে, বৃষ্টির দিন গল্পটি আমি আগেই পড়েছি। একই কলোনীতে বসবাসকারী দুজন মানুষকে নিয়ে এগিয়ে গেছে কাহিনী। গল্প বেশ পছন্দ হয়েছে।
আর সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে মোর্শেদুল ইসলামের মত বড় মাপের নির্মাতার ছবিতে কাজ করারও প্রবল ইচ্ছা ছিল আমার। ফলে চলচ্চিত্রে আবারো অভিনয় করতে দেখা যাবে আমাকে। অভিনয় নিয়ে স্বপ্নে বিভোর শশীর এ মাধ্যমটির প্রতি রয়েছে আমোঘ আকর্ষণ। সেই আকর্ষণের ফসল স্বরূপই অফট্র্যাকের কাজগুলোকে তালিকাভুক্ত করেছেন।
ব্যক্তি শশী
অভিনয়ের খাতিরে কখনো শান্ত, কখনো চঞ্চল কখনোবা রাশ-ভারি চরিত্রে উপস্থাপিত হন। কিন্তু ব্যক্তি শশী নাটকের চরিত্রের থেকে একেবারেই আলাদা। কাজের মেঘ গলে অবসরের সূর্য উঁকি দিলেই শশী হয়ে ওঠেন স্বাধীনচেতা। বন্ধুদের সঙ্গে জম্পেশ আড্ডা আর নস্টালজিয়ার নদীতে ডুব দিতে পছন্দ করেন। অভিনয়ের সঙ্গে পথ চলতে অভ্যস্ত শশী ভবিষ্যতে নিজেকে আইনজীবীর ভূমিকায় দেখতে চান।
তবে অভিনয়ের মঞ্চে নয় শশীর এ স্বপ্ন সাধ বাস্তবের আঙিনায়। যুক্তির পিঠে যুক্তি সাজানোর এ বাসনায় ইতোমধ্যে এলএলবিতে পড়াশোনাও করছেন। এক ঘন্ড অবসরে ধনু রাশির জাতিকা শশী আপন-আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, সৃষ্টিকর্তা আমাকে সব ঠিকঠাক মতোই দিয়েছেন। এখন ঠিকমত পড়াশোনা আর ভাল কাজ দিয়ে সামনের দিকে দিকে এগিয়ে যেতে হবে আমাকে।
আলোচিত ব্লগ
ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)
ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন
মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল
হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন
'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'
নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ
আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন
ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা
গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন