somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোচিং বাণিজ্য বন্ধ ও করণীয়

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ৯:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড”- কথাটি সর্বজন স্বীকৃত হলেও তা আজ পাঠ্যপুস্তকের পাতায় সীমাবদ্ধ। অতীতের প্রবাদ ‘যেখানে লক্ষী থাকে সেখানে স্বরস্বতী থাকেনা” বর্তমানে ‘লড়্গী ছাড়া স্বরস্বতী এক পাও হাটে না’ সর্বত্র প্রতিষ্ঠিত। আজকের দিনে যার টাকা আছে সেই মেধাবী, বিদ্যার দেবী তারই ঘড়ে আশ্রয় নিয়েছে। বতর্মান সরকার নাকি এসব মিথ্যা প্রমাণিত করে শিক্ষাকে আলো-বাাসের মত সবার জন্য অবারিত করতে শসব্যস্ত হয়ে উঠেছে। কিন্তু দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এবং শিক্ষা সংক্রন্ত রাষ্ট্রীয় মনভাব দেখে ‘মোল্লার দৌড়’ যে ‘মসজিদ পর্যন্ত’ তাই লড়্গ্য করা যায়।

দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেতন ফি হু হু করে বাড়ছে। আর দেশেরে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে বসে সরকারের আমলারা প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছেন ‘উন্নয়ন ফি মাত্র (!) ৫০০০ টাকা এটা কিছু না। এভাবে উচ্চশিক্ষার ব্যয় বৃদ্ধি করে সাবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা অপলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে সেশনজট, হল দখল, হত্যা সন্ত্রাস, কুপমন্ডুকতার চর্চা ইত্যাদি তো আছেই। এসবই আজ প্রকাশ্য। কারণ এখানে যারা অবস্থান করেন তারা মানুষ হবার শেষ প্রান্তে, চিৎকার করে বলতে পারেন। মিডিয়ার চোখও তাদের দিকে। কিন্তু এরই নিচের স্তরে যারা অবস্থান করেন অর্থাৎ যারা কলেজ বিশেষ করে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তরে অবস্থান করে, তাদের আর্তনাদ শোনার কেউ নেই। কারণ তারা তো আর নিজে কিছু বলতে পারে না! তারা অবলা।

সারা দেশে অপেক্ষাকৃত বেশী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকায় গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলোতে শিক্ষকেরা তাদের সাধ্যমত ক্লাশ নেওয়ার চেষ্টা করেন। তারা এতদিন নিরামিষ ভোজী ছিলেন বলে সকলের জানা। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে ‘প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা’ তাদের কেরিয়ারে নতুন যৌবনের সৃষ্টি করেছে। আগে যারা কোন রকমে নাম লিখতে শিখে পঞ্চম শ্রেণী পাশ করে নিরু মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হত এখন তাদের মাথাতেও পাশ করা বা ভাল ফলাফলের চিনত্মা ভর করেছে। আর এতেই শিক্ষকদের মাথায় পুরাতন চিনত্মা নতুন করে সঞ্জীবিত হবার অবকাশ পেয়েছে, তা হল ‘কোচিং বানিজ্য’। কথাটি আজ বহুল প্রচলিত। এতে অভিভাবকদের পকেটে টান পড়ছে আর শিশু কিশোরদের চিত্তবিনোদন বলে আর কিছু নেই। সেই সাকালে চোখ মুছতে মুছতে স্কুলে কোচিং তারপর ক্লাশ তারপর আবার কোচিং তারপর বাড়ি তারপর…………..।

নিরু মাধ্যমিক-মাধ্যমিক স্কুল গুলোতেও একই অবস্থা। আবার সেই SSC-JSC-এর ভূত আর শিক্ষকদের প্রাইভেট কোচিং-এর জমজমাট ব্যবসা। সরকার নাকি এসবরে বিররুদ্ধে খড়গ হস্ত হচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু কেন এসব হচ্ছে তার তল না হাতালে সব প্রচেষ্টা অতলেই হারিয়ে যাবে। এর জন্য আজ বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার স্কুলগুলোর চিত্র তুলে ধরলেই মনে হয় সারা দেশের সাধারণ চিত্র অনুমান করা যাবে।

শেরপুর উপজেলায় ৪৪টি বেসরকারী মাধ্যমিক স্কুল আছে। এদের মধ্যে পল্লী উন্নয়ন ল্যবঃ স্কুল এ্যন্ড কলেজ, দি সামিট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এবং শেরউড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এ্যন্ড কলেজ-এসব জায়গায় গরীব তো বটেই মধ্যত্তিদেরও প্রবেশ নিষিদ্ধ। এর বাইরে প্রধান স্কুল গুলো হচ্ছে শেরপুর ডি.জে হাই স্কুল, টাউন কলোনী এ.জে উচ্চ বিদ্যালয়, মজিবর রহমান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সীমাবাড়ি এস.আর উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম বিশেষভাবে উলেস্নখযোগ্য। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর তুলনায় অবকাঠামো নেই বললেই চলে। প্রতি ক্লাশে যে পরিমাণে শিক্ষার্থী ভর্তি কারানো হয় তার দুই তৃতীয়াংশ উপসি’ত হলেই আর ধারন ক্ষমতা নেই। এখন দেখা যাক ক্লাশের অবস্থা কি। এক কথায় ধরা যাক শিক্ষক মন্ডলী মনেপ্রাণে ক্লাশ নিতে ইচ্ছুক। তারপরেও কি বছরে ১০০ দিন ক্লাশ করা সম্ভব? কারণ সাপ্তাহিক ছুটি ৫২ দিন, সরকারি ছুটি ৮৫ দিন, তিনটি সাময়িকী পরীক্ষার ৬০ দিন, জেএসসি মডেল টেস্ট পরীক্ষার ১৫ দিন, এসএসসি টেস্ট পরীক্ষার ২০ দিন, এসএসসি পরীক্ষার ৪০ দিন ক্লাশ বন্ধ থাকে। অনেক স্কুলে আবার মাসে দুই দিন বেতন আদায়ে বছরে ২৪ দিন ক্লাশ হয় না। এছাড়াও বৃহস্পতিবারে হাফ ছুটি, ঝড়, বৃষ্টি ইত্যাদি তো আছেই। তাহলে ক্লাশ হয় কয়দিন? তাহলে কিভাবে প্রাইভেট কোচিং-এর বাইরে সিলেবাস শেষ করা সম্ভব? শিক্ষকদের প্রাইভেট কোচিং বন্ধ করলেই কি সমস্যার সমাধান হবে? না কি সারা বছর ক্লাসের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে? যদি শিক্ষকদের কোচিং নিষিদ্ধ হয় তাহলে শেরপুর ডি.জে হাই স্কুলের শিক্ষকমন্ডলী হয় তো “স্টার কোচিং সেন্টার” বা “সৃষ্টি ক্যডেট কোচিং সেন্টার” বন্ধ করে দিবেন অথবা বে-নামে চালাবেন, তাতে করে কিন্তু শিক্ষার্থীদের কোচিং করা বন্ধ হবে না বা শিক্ষকদের বিররুদ্ধে ভিতরে-বাহিরে যে অভিযোগ তাও বন্ধ হবে না। বেনামী শিক্ষক বা অশিক্ষকদের ব্যবসা চলবেই।

তাই শুধুমাত্র কোচিং ব্যাবসা বন্ধ করার ঘোষণা দিলেই এ ব্যবসা বন্ধ হবে না বা শিক্ষার মান উন্নত হবে না। রোগের চিকিৎসা দরকার তার চেয়েও দরকার রোগের কারণ নির্ণয় করে তার প্রতিকতার করা। আজকে সারা দেশে কোচিং-প্রাইভেট বিসত্মারের কারণ শিক্ষার বাজারমূখী চিনত্মা, ফলে মেধার সুস’ বিকাশের পরিবর্তে ভাল ফলাফলের অসুস’ প্রতিযোগীতা, কারণ এখন টাকাওয়ালারাই মানুষ বলে পরিচিত। ফলে স্কুল-কলেজ-বিশ্ব বিদ্যালয়গুলো ব্যস্ত টাকার মেশিন বানাতে। আর এর জন্য শিক্ষাদানের কোন প্রয়োজন নেই, তারা শুধু পস্নাসমার্কা সার্টিফিকেট বিতরন করবে আর তা গ্রহন করার জন্য ধনী-গরীব সাধ্যমত ছুটবে। আর এর ফলাফল প্রায় পূর্ব নির্ধারিত। সরকার সত্যিই যদি শিক্ষা বিসত্মারের কথা ভাবে তবে নিম্নের করণীয় সমূহ নিশ্চিত করা খুবই জররুরী-
• সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সারা বছর ক্লাস নিশ্চিত করা
• পরীক্ষার জন্য প্রতিটি উপজেলায় আলাদা পরীক্ষার হল নির্মাণ করা ও এর জন্য অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ করা
• শিক্ষা শেষে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজের নিশ্চয়তা প্রদান করা
• যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ করা ও তাদের সর্বোচ্চ বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা
• শিক্ষা ব্যবস্থাকে সরকারী করণ
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পশ্চিমা ইসলামবিদ্বেষ থেকে বাংলাদেশের ইসলামপন্থি রাজনীতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৬


আমি যখন কানাডায় বসে পাশ্চাত্যের সংবাদগুলো দেখি, আর তার পরপরই বাংলাদেশের খবর পড়ি, তখন মনে হয় - পশ্চিমা রাজনীতির চলমান দৃশ্যগুলো বহু পথ পেরিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে আলো-ছায়ায় প্রতীয়মান... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×