somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রেস জোকস-২ =p~

১১ ই জুন, ২০০৯ বিকাল ৪:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গণমাধ্যমে প্রায়ই মজার মজার কিছু সত্যি ঘটনা ঘটে। এ সব কখনো কখনো প্রচলিত হাস্য কৌতুককে হার মানিয়ে দেয়। আবার এসব প্রেস জোকসের নেপথ্যে থাকে কষ্টকর সাংবাদিকতা পেশাটির অনেক অব্যক্ত কথা। এমনই কিছু বাস্তব ঘটনা নিয়ে এই 'প্রেস জোকস' পর্ব।

আবারো রাজু ভাই বৃত্তান্ত
--------------------
দৈনিক সংবাদের স্টার রিপোর্টার, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মহিদুল ইসলাম রাজু ভাই (এখন এটিএন বাংলায়) একদিন হুট করে সংবাদ ছেড়ে দিলেন। যোগ দিলেন 'মাতৃভূমি' নামে একটি নতুন দৈনিকে চিফ রিপোর্টার হিসেবে। ২০০০-২০০১ সালের ঘটনা। সংবাদের মতো এটি প্রাচীন দৈনিকে চাকরি ছেড়ে স্বল্প পুঁজির কাগজে যোগ দেয়ার ঘটনায় আমরা ক্ষুদে সাংবাদিকরা বেশ অবাক হই।

তো একদিন রাজু ভাইকে আমি রিপোর্টার্স ইউনিটির অফিসে ধরে বসি, আপনি হুট করে সংবাদ ছেড়ে দিলেন কেনো? সেখানে তো আপনি বেশ ভালো অবস্থানেই ছিলেন!

রাজু ভাই দাঁত খিঁচিয়ে বললেন, শোন বিপ্লব, আহমেদুল কবির একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। সিলেটে তার খুব সুন্দর চা বাগান আছে। সেখানে আরো সুন্দর একটি বাংলো আছে। সেই বাংলোতে একটি অ্যালসেশিয়ান কুত্তা আছে। আবার আহমেদুল কবিরের সংবাদ নামে একটি পত্রিকাও আছে। সেখানেও তার আরেকটি অ্যালসেশিয়ান কুত্তা আছে। সেটি হচ্ছে চিফ রিপোর্টার অমুক। এই কুত্তার সঙ্গে আর যা-ই হোক সাংবাদিকতা করা যায় না; বড় জোর ঘেউ ঘেউ করা যায়!!

মতি চৌ কাণ্ড
-----------
১৯৯৩-৯৪ সালের কথা সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরী দৈনিক বাংলা বাজারের সম্পাদক হলেন ( এখন দৈনিক মানবজমিনের সম্পাদক)। তখন সংবাদপত্রে বানানরীতি নিয়ে নানা পরীক্ষা-নীরিক্ষা চলছে। একেক বাংলা দৈনিক একেক ধরণের বানানরীতি দিয়ে নিজেদের স্বকীয়তা ঘোষণা করতে চাইছে। এইসব নিয়ে চলছে, যাচ্ছে-তাই কাণ্ড।

মতি চৌধুরী ভাই একদিন বার্তা বিভাগে ঘোষণা দিলেন, এখন থেকে দৈনিক বাংলাবাজারে কোনো দীঘ-ঈ (ী) চলবে না। সব বানান হ্রস্ব-ই (ি) দিয়ে লিখতে হবে। এটিই নাকী আধুনিক বানানরীতি।

তো সাংবাদিকরা ওইদিন বিদ্যাসাগর-রবীন্দ্রনাথ/সংসদ-বাংলা একাডেমী ভুলে যেতে বাধ্য হলেন। সবাই দীর্ঘদিনের অভ্যাস দীর্ঘ-ঈ বাদ দিয়ে সব বানানে হ্রস্ব-ই দিতে থাকলেন। এমনকী সেদিন প্রিন্টার্স লাইনে সম্পাদকের নাম মতিউর রহমান 'চৌধুরী'র বদলে ছাপা হলো মতিউর রহমান 'চৌধুরি'!!

পরদিন সকালে মতি চৌধুরী ভাই কাগজ দেখে ছুটে এলেন অফিসে। জরুরী বৈঠক ডাকলেন সব বিভাগকে সঙ্গে নিয়ে। সেখানে বললেন, ইয়ে মানে, আমার মনে হয়, প্রচলিত বাংলা বানানরীতি এখনই বদলানো ঠিক হবে না। এ নিয়ে আমাদের আরো ভাবনার অবকাশ আছে--ইত্যাদি।...

আমাদের তাজ ভাই
---------------
দুর্ধর্ষ ক্রাইম রিপোর্টার আমিনুর রহমান তাজ ভাইকে চেনেন না, এমন সাংবাদিক বুঝি কমই আছেন। চাকরী জীবনের শুরুতে ক্ষুদে ক্রাইম রিপের্টার হিসেবে দৈনিক আজকের কাগজে তাজ ভাইয়ের কাছে রিপোর্টিং শেখার সুযোগ হয়েছিলো (তাজ ভাই এখন দৈনিক আমাদের সময়ে)। তাজ ভাইয়ের মজার মজার অনেক ঘটনা নিয়ে অনেকদিন আগে একবার সচলে লিখেছিলাম। যারা সেটি পড়েননি, তাদের জন্য চুম্বক-অংশটি আবারো বয়ান করছি।

১৯৯৪-৯৫ সালের কথা। বিএনপি সরকারের সময় আওয়ামী লীগ প্রায় ২৪/৪৮/৭২ ঘন্টার, এমন কী লাগাতার হরতাল ডাকতো। আর হরতাল হলেই আমরা যারা ক্রাইম-রিপোর্টার তাদের তথ্য সংগ্রহের জন্য বাস্ততা বাড়তো। এই হয়তো খবর পেলাম, অমুকখানে বোমা ফেটেছে, কী অমুক জায়গায় গাড়ি পোড়ানো হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা তাজা খবর সংগ্রহ করার জন্য 'সংবাদপত্র' ব্যানার লাগানো বেবী ট্যাক্সি নিয়ে ছুটতাম সেখানে। আর বরাবরই তাজ ভাইয়ের সঙ্গে হরতালের ডিউটি আমার খুব পছন্দ ছিলো। এর কারণ হচ্ছে: তার সঙ্গে থাকলে হাতে-কলমে কাজ শেখা যাবে; তাছাড়া তাজ ভাইয়ের সান্নিধ্যে থাকলে চা-সিগারেট, এমন কী দুপুরের খাবার, বিকালের নাস্তা --ইত্যাদি ছিলো ফ্রি। সিনিয়র হওয়ার সুবাদে সব খরচ উনি একাই বহন করতেন।

তো এক হরতালের ভোরে অফিসের বেবী ট্যাক্সি নিয়ে তাজ ভাইয়ের বাসায় গিয়াছি। ওনাকে বাসা থেকে তুলে এক সঙ্গে ডিউটিতে বের হবো।

একতলার বাসার নীচে এসে অনেকক্ষণ কলিং বেল বাজালাম, ‘তাজ ভাই, তাজ ভাই’ বলে ডাকাডাকি করলাম; কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ নাই।

খেয়াল করে দেখি, সদর দরজা সামান্য খোলা। উঁকি মেরেই সরে আসি, খাটের ওপর ভাবী খোলা পিঠে পেছন ফিরে শুয়ে আছেন, পরনে শুধু পেটিকোট।

এদিকে ডিউডিতে যাওয়ার দেরি হচ্ছে দেখে কিছুক্ষণ পরে আবার হাঁকডাক শুরু করলাম। এইবার চোখ ডলতে ডলতে তাজ ভাই নিজেই বের হলেন। খালি গা, পরনে পেটিকোট!

--তাজ ভাই, এ কী অবস্থা?
-- আর বলিস না। কাল অফিস থেকে অনেক রাতে বাসায় ফিরেছি। বৌ - বাচ্চা সবাই গভীর ঘুমে দেখে কাউকে আর ডাকিনি। কিন্তু কিছুতেই লুঙ্গি খুঁজে পেলাম না। শেষে তোর ভাবীর একটা পেটিকোট পরে শুয়ে পড়েছি!...

রাশান কৌতুকভ
-------------
এবার একটি রুশ দেশীয় প্রেস জোকস। সোভিয়েত বিপ্লবের পর 'প্রাভদা' রাতারাতি বিশ্বের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিকগুলোর মধ্যে একটি হয়ে দাঁড়ালো। স্ট্যালিন শাসনের অবসান হওয়ার পর ক্রশ্চেভের শাসন চলছে। তো ক্রশ্চেভ একদিন একটি শুয়োরের খামার পরিদর্শন করলেন।

ওইদিন রাতে প্রাভদার বার্তা সম্পাদক এ বিষয়ক একটি লিড ছবির ক্যাপশন নিয়ে পড়লেন বিপাকে। একেকবার একটি ক্যাপশন দিচ্ছেন, কোনোটিই মন মতো হচ্ছে না। কেউ একজন ক্যাপশন প্রস্তাব করলেন, শুয়োরের খামারে কমরেড ক্রশ্চেভ। নাহ ...হলো না। এটি বাদ পড়লো। আরেকজন প্রস্তাব করলেন, শুয়োরদের সঙ্গে হাস্যজ্জল কমরেড ক্রশ্চেভ। নাহ্...এটিও বাদ গেলো।

যা-ই হোক। অনেক গবেষণার পর বার্তা সম্পাদক ওই ছবির একটি যুতসই ক্যাপশন দিয়ে পত্রিকা প্রকাশ করলেন। আর সেই ক্যাপশনটি ছিলো:

কমরেড ক্রশ্চেভ, বাম দিক থেকে তৃতীয় (ক্রস চিহ্নিত)।।

---
প্রেস জোকস-১ Click This Link

(চলবে)
১৮টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×