১৯৯০ সাল। দশ বছর বয়স, পড়ি ঢাকার এক সরকারী স্কুলে ক্লাস ফোরে। যদ্দুর মনে পড়ে বেতন ছিল ৮ বা ১০ টাকা। বুঝতেই পারেন, অনেক খুব সাধারন নিম্নমধ্যবিত্ত পোলাপানের সাথে আমার বড় হওয়া।
যাদের বয়স '৯০ সালে অন্তত ৭-৮ বছরে নিচে, তারা কল্পনাই করতে পারবেন না যে ম্যারাডোনা তখন কি অসম্ভব জনপ্রিয় ছিল! এর পরের বা আজকের কোন স্টার প্লেয়ারের সাথে তার তুলনা করা যায় না। হি ওয়াজ দ্য মাইটি ম্যারাডোনা। ব্লগে বা রিয়েল লাইফে যত ব্রাজিল সাপোর্টার আজকে দেখা যায়, আমার ধারনা তাদের খুব কমই ওই জেনারেশনের যারা '৮৬তে বা '৯০ এ প্রথম বিশ্বকাপ দেখেছে। আমাদের জেনারেশন প্রায় ১০০% আর্জেন্টিনা ফ্যান শুধু ম্যারাডোনার কারনেই।
তো বিশ্বকাপের প্রথম খেলা আর্জেন্টিনা আর ক্যামেরুনের। সবাই ব্যাপক উত্তেজিত। আমরা পোলাপান খেলা আধা বুঝি, আধা বুঝি না। তাও চরম উত্তেজিত। যেদিন রাতে খেলা, সেদিন ক্লাসে শুধু এই খেলার গল্পই। সরকারী স্কুলের টিচাররা তো বুঝতেই পারেন, তারাও পড়া বাদ দিয়ে খেলার গল্প। চার বছর পরে আবার ম্যারাডোনার খেলা দেখবে এই আনন্দে সবাই মশগুল। আর্জেন্টিনা-আর্জেন্টিনা চ্যাঁচামেচিতে সয়লাব।
এর মধ্যে এক ছেলে যার নাম ইকবাল, নিম্নমধ্যবিত্ত ফ্যামিলি, থাকত মতিঝিল এজিবি কলোনীতে। সে আতকা ঘোষনা দিল যে সে ক্যামেরুনের সাপোর্টার। আমরা সবাই হই হই করে উঠলাম। আরে বেকুবে কয় কি!
সে আমাদের নসীহত শুরু করল যে তার আম্মা তাকে বলেছে যে ক্যামেরুন একটা মুশলমান (সে তালব্য শ উচ্চারন করেছিল) দেশ আর আর্জেন্টিনা হচ্ছে একটা খ্রিস্টান দেশ। তাই আামাদের সবার উচিত ক্যামেরুনকে সাপোর্ট করা। নাহলে কেয়ামতের দিন জবাব দিতে হবে।
ওই বয়সে আর ওই বিশ্বকাপের সময়ে আমাদের ঈমানের জোর এত বেশি ছিল না যে কেয়ামতের জবাবের ভয়ে ম্যারাডোনাকে বাদ দিয়ে কাউলাদের সাপোর্ট দেয়া শুরু করব। আমরা সবাই তাকে 'হুহ' বলে ভাগায় দিলাম এবং তুচ্ছতাচ্ছিল্য করলাম।
আর ওই বয়সে আমাদের বোধ-বিবেচনাও এত পরিপক্ক হয় নাই এটা বোঝার জন্য যে ওই বিশেষ মুহুর্তে ইকবাল আর তার আম্মা (আমি উনাকে কোনদিন দেখি নাই) এক অসুস্থ সাম্প্রদায়িক চিন্তাভাবনার সাথে দশ-এগার বছরের কয়েকটা বাচ্চার পরিচয় করায় দিলেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০১০ সকাল ৭:৩৮