somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নীরু, অভি - দুই বিশ্বাসঘাতকের পতনের কাহিনী

২৮ শে জুন, ২০১০ সকাল ৯:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যারা এই ভদ্রলোকেদের নাম কোনদিন শুনেন নাই - আশির দশকের মাঝামাঝির দিকে মুলত তিন কুতুব বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল নিয়ন্ত্রন করত। মাহবুবুল হক বাবলু, সানাউল হক নীরু এবং গোলাম ফারুক অভি। এর মধ্যে নীরু, বাবলু ছিল আপন দুই ভাই এবং ছাত্রদলের দুই মাথা। অভি ঠিক তাদের পিছনে।

'৮৭ এর ব্যর্থ এরশাদবিরোধী আন্দোলনের কিছু আগে বা পড়ে বাবলু মহসিন হলে (এই হলকে এরশাদ আমলে সেকেন্ড ক্যান্টনমেন্ট বলা হত অস্ত্র-বোমার বিশাল মজুদের কারনে) নিজেদের বানানো বোমাবিষ্ফোরনে মারা যান। সেই সময় শোনা গল্পটা ছিল এইরকম, রুমের দরজার পিছনে বোমা রাখা ছিল, বাবলু এসে জোরে দরজা খুললে দরজা বোমায় লেগে বোমা ফেটে উনি মারা যান।

বাবলু মারা যাওয়ার পরে নীরু ছাত্রদলের একমাত্র শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা হন। অভি ছিল মুলত ক্যাডার নেতা। '৯০ এর এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের কয়েক মাস আগে দুইজনই গ্রেফতার হন এবং নভেম্বর মাসে প্রায় একই সময় দুইজন মুক্তিও পান। ছাত্রদলের বাকি নেতাকর্মীরা তাদের মিষ্টি-মালা দিয়ে বরন করেন, পত্রিকায় বিশাল ছবি ছাপা হয়। ছাত্রদলে তাদের অবস্থান আগের মত থাকলেও জেলে থাকার কারনে আন্দোলনের জন্য গঠিত সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যে তাদের পজিশন খুব ভাল ছিল না। ছাত্র ঐক্যের নেতৃত্ব চলে যায় ছাত্রদলের বেশ পিছন দিকের নেতা আমান, খোকনদের কাছে যেহেতু তারা তখন ডাকসুর ভিপি-জিএস ছিলেন।

নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে এরশাদবিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে উঠে। ২৩ অথবা ২৪ তারিখ টিএসসি এলাকা রণক্ষেত্রে পরিনত হয়। পুলিশ বা এরশাদের ছাত্র ক্যাডারদের গুলিতে ডাক্তার মিলন নিহত হন। দেশের পরিস্থিতি এতই খারাপ হয় যে এরশাদ ২৮শে নভেম্বর জরুরী অবস্থা ঘোষনা এবং কারফিউ জারী করেন। এই অবস্থা চলে ৪ঠা ডিসেম্বর মধ্যরাতে এরশাদের পদত্যাগের ঘোষনা দেয়া পর্যন্ত।

টিএসসির ওই গ্যাঞ্জামের সময় যেটা সবাই খুব অবাক বিষ্ময়ে লক্ষ্য করে যে নীরু এবং অভি দুইজনই উপরে উপরে ছাত্রদলের সাথে থাকলেও আসলে জেলে থাকা অবস্থায় এরশাদের হাত মিলিয়েছে এবং ছাত্র আন্দোলন ভন্ডুল করার জন্যই তাদেরকে জেল থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। কারো মতে তারা প্রত্যেকে ৫০ লাখ, কারো মতে এক কোটি টাকা করে পেয়েছেন এই বিশ্বাসঘাতকতার জন্য। আমি অবশ্য মনে করি, টাকার এই পরিমানগুলি নিতান্তই গুজব। আসল অংকটা কারো পক্ষে জানা অসম্ভব। পল্টি খাওয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে খুব সাধারন ঘটনা হলেও এক দলের সাথে থেকে আরেক দলের হয়ে কাজ করার উদাহরন সম্ভবত এটাই একমাত্র। আর সেই সময়টাও ছিল এমন যে সবাই তখন দেশপ্রেমিক হয়ে উঠেছিল। নীরু, অভিকে হাতের কাছে পেলে মনে হয় টুকরা টুকরা করে বুড়িগঙ্গায় ভাসানো হত। জনরোষ এবং গ্রেফতার এড়ানোর জন্য দুইজনই পালিয়ে যান।

নব্বই দশকের মাঝামাঝি যখন মানুষের মধ্যে এরশাদবিরোধী জোশ এবং দেশপ্রেম বেশ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে, অভি আবার আলোচনায় ফিরে আসে এবং অফিসিয়ালি জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে '৯৬ এর নির্বাচনে বরিশাল থেকে মনোনয়ন পায় এবং জয়ী হয়। এর কয়েক বছর পরে মডেল তিন্নি হত্যা মামলায় ফেঁসে আবার ফেরার হন। এই সময়ই এমপি হোস্টেলে এক এয়ারহোস্টেসের সাথে তার একটা হিডেনক্যাম ভিডিও বেশ আলোড়ন তুলে। এর পর তার আর কোন খবর পাওয়া যায় নাই। ক্যানাডার বাঙ্গালি সমাজে প্রচলিত ধারনা যে অভি অনেক বছর ধরে টরেন্টোতে আছে। দশ বছর থাকার পরেও তাকে দেখা তো দুরের কথা, আমি এখনো কাউকে পাই নাই যে অভিকে দেখেছে। কিন্তু লোকে বিশ্বাস করে যে সে এই শহরে আছে কোথাও।

এরশাদের পতনের সাথে সাথে নীরু সেই যে দৃশ্যপট থেকে উধাও হয়, আমি অন্তত ২০০৬ পর্যন্ত তার সম্পর্কে একটা কথাও শুনি নাই, তার কোন সাক্ষাতকার কোথাও দেখি নাই, সে রাজনীতিতে ফিরে আসার চেষ্টা করছে এরকম কোন খবরও কানে আসে নাই। যেন একটা জ্বলজ্যান্ত অতি বিখ্যাত (বা কুখ্যাত, যাই বলেন) ব্যক্তি হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গেল। ছাত্রদলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নীরুর অনেক জুনিয়র নেতা আমানুল্লাহ আমান এমপি, মন্ত্রী, কোটিপতি দুর্নীতি মামলার আসামী সবকিছু হয়ে গেল। এই বেচারার ফেরার হয়েই থাকতে হল অনেক বছর।

২০০৬ সালে বদরুদ্দোজা বিকল্পধারা নামে যে সাইনবোর্ডসর্বস্ব এবং এক ব্যক্তি এক নেতাটাইপ দল গঠন করে, তাতে নীরুও যোগদান করে। কিন্তু অনেক বছর রাজনীতিতে না থাকার কারনে তার পলিটিক্যাল ভ্যালু বলতে কিছুই তখন ছিল না। অন্য অনেকের সাথে ছোট করে পত্রিকায় তার নাম ছাপা হয়। অল্প কিছুদিনের মধ্যে এই দলেরও সলিল সমাধি ঘটে এবং সাথে নীরুর আবার রাজনীতিতে ফিরে আসার সুযোগও। এর পরে এখন পর্যন্ত আর তার সম্পর্কে কিছু শুনি নাই।

বিঃদ্রঃ আমার জন্ম্ ১৯৮০ সালে। বুঝতেই পারছেন, উপরের ঘটনাগুলির সময় আমার বয়স কত ছিল! পুরা পোস্টটাই সম্পূর্নভাবে সেই সময়কার স্মৃতি থেকে লিখা। তাই এর মধ্যে কিছু তথ্যবিভ্রাট, তারিখের গন্ডগোল থাকবেই। তবে মুল ঘটনা মোটামুটি এইরকমই। ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে কারেকশন করে দিলে বাধিত থাকব। ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১০ সকাল ১০:১৮
৭৭টি মন্তব্য ৬৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×