somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩): নারী সুরক্ষা বনাম পুরুষ নির্যাতনের হাতিয়ার

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের দেশে নারী ও শিশুদের সুরক্ষার জন্যে বেশ কয়েকটি আইন রয়েছে। এর মাঝে “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ অন্যতম। এই আইনে আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সেটি অজামিনযোগ্য এবং ১৮০ দিনের ভিতরেই এই মামলার নিষ্পত্তি করতে হয়। এই আইনের আওতাধীন বিষয়গুলো হলোঃ
১। অপহরণ ও মুক্তিপণ
২। ধর্ষণ
৩। আত্নহত্যায় প্ররোচণা
৪। কোন দহন পদার্থ কর্তৃক আঘাত
৫। যৌন নিপীড়ন, যৌতুক
৬। ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্য করানোর জন্য অঙ্গহানি
৭। মিডিয়াতে নির্যাতিত নারী ও শিশুর পরিচয় প্রকাশ
এর যেকোন একটি ঘটলে ট্রাইবুনালে মামলা করে প্রতিকার চাওয়া যায়।[১]

কিন্তু আজকাল এই আইনের অপব্যবহারও হচ্ছে হরদম। সম্প্রতি চিত্রনায়িকা হ্যাপির রুবেলের বিরুদ্ধে করা মামলাটি এই আইনেই ছিল। ব্যক্তিগতভাবে আমার আশপাশের কিছু পরিচিত পরিবারে দেখেছি এই চিত্র। বিশেষ করে যখন স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কোন কারণে মনোমালিন্য হচ্ছে, সংসার টিকিয়ে রাখা একেবারেই সম্ভব হচ্ছে না, তখন স্ত্রীটি বাপের বাড়ি গিয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা ঠুকে দিচ্ছেন। অথচ এইখানে শারীরিক নির্যাতন একেবারেই ঘটেনি। আর এটি অজামিনযোগ্য অপরাধ হওয়ায়, এমনকি অনেক সময়ে স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যাও প্রমাণিত হওয়ায়, হয়রানির শিকার হচ্ছেন পুরুষেরা।

এক আইন প্রভাষকের লেখা থেকে একটি ঘটনা উল্লেখ করছি,
আসিফ (ছদ্মনাম) নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা একটি ছেলে। পিতৃহীন আসিফ মায়ের একক প্রচেষ্ঠায় স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গণ্ডি পেরিয়ে বেসরকারি চাকরিতে প্রবেশ করে। কিন্তু বিপত্তি বাধে যখন বিয়ে করে তার সাথে পড়ুয়া রিমিকে (ছদ্মনাম)।
বিয়ের পর কয়েক মাস বেশ ভালই কাটল। বছর খানেকের মাথায় তাদের বোঝাপড়ায় ঘাটতি দেখা দিল। আর কোনভাবেই তাদের বনিবনা হচ্ছে না। তারা দু’জনই আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নিল।

হঠাৎ একদিন আসিফের বাসায় পুলিশ এসে হাজির। তার বিরুদ্ধে রিমি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন ২০০৩ এর ১১ ধারা মোতাবেক থানায় মামলা রুজু করে। বলে রাখা ভালো উক্ত আইনটির সকল অপরাধ অজামিনযোগ্য। যার শাস্তি হচ্ছে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ইত্যাদি (ধারা ১১খ)।

প্রায়ই ছ’মাস জেলে থাকার পর তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় জামিনে মুক্তি পায়। কিন্তু ততদিনে তার চাকরিটি চলে যায়।ফলে অযথা আর্থিক,সামাজিক টানাপোড়নের ভেতরে পড়ে। কিন্তু এ আইনের ১৭ ধারার মিথ্যা মামলা কিংবা অভিযোগ দায়েরের জন্য শাস্তির বিধান আছে। যার কার্যকারিতা শুরু হয় ভূক্তভোগীর লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে। [২]

এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রায় ৯৫ ভাগ অভিযোগ পরে মিথ্যে প্রমাণিত হচ্ছে। তাহলে প্রশ্ন হলো, যখন নারী ও শিশুকে সুরক্ষা দিতে, সমাজের নানা নির্যাতন থেকে অপেক্ষাকৃত দুর্বল শ্রেণীকে রক্ষা করতে যখন আইন প্রণয়ন এবং অজামিনযোগ্য মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে, তখন নারীরা নিজেদের ভাল না বুঝে অতি লোভ বা প্রতিহিংসা থেকে নিজেই অত্যাচারের প্রতীক হয়ে উঠছে। কবিগুরু বলেছেন, দুর্বলের অত্যাচার ভয়াবহ।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট, ব্যারিস্টার অ্যাট ল' রুমিন ফারহানা বলেছেন,
“অনেক সময় দেখা যায় পূর্ব শক্রতার জের ধরে অনেকে এই আইনের অধীনে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। যদি দেখা যায় কোন ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তির ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলা দায়ের কারেছেন তাহলে অভিযোগ দায়েরকরী ব্যক্তি এবং যিনি অভিযোগ দায়ের করিয়েছেন উভয়ই অনধিক সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং সেই সঙ্গে অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।“ [৩]

সূত্রসমূহ:

১। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০,
http://bdlaws.minlaw.gov.bd/bangla_pdf_part.php?id=835
২।মো. সাখাওয়াত হোসেন, প্রভাষক, আইন বিভাগ, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়
http://www.banglanews24.com/fullnews/bn/326953.html
৩। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের আদ্যোপান্ত
http://bangla.bdnews24.com/lifestyle/article899671.bdnews
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৩
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×