মাআহে রমজানের প্রায় এক তৃতীয়াংশ শেষ হতে চলল। এ সময়ে ব্লগ লেখার জন্য এরকম একটি টপিক নির্বাচন করা হয়তো কিছুটা অযৌক্তিক, তারপরেও সময়ের প্রয়োজনে তা করতে হল। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণে সিয়াম পালন করা ফরজ, তাই কেউ এর কোন ক্ষতিকারক দিক দেখেন না - কেবল উপকার খুঁজে বেড়ান। রোজা রাখার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবেনা। ওজন কমায়, ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখে, শরীরের ক্ষতিকারক রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণে রাখে - এগুলো শুনে আমাদের মুখস্ত হয়ে যাবার যোগাড়। কিন্তু আসলেই কি রোজা রাখার কোন ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া নেই?
১। দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকাঃ সুস্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার জন্য পুষ্টিবিদেরা আমাদেরকে অল্প করে বারবার খাবার তাগিদ দেন। কিন্তু রোজায় আমরা করি উল্টোটা। রাতে দুই বা তিনবার খাই - এর মধ্যে সেহরী এবং ইফতারে সব ঢেলে দেই। আমাদের শরীর কি এই অযাচিত চাপ নিতে সক্ষম সব সময়? তাকি এর কোন ক্ষতিকর দিক আছে?
২। দীর্ঘক্ষণ পানি পান না করাঃ শরীরের সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সুস্থভাবে কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করা আবশ্যক। কিন্তু রোজা রাখলে আমরা ১৩/২৪ ঘন্টা শরীরে কোন পানি সাপ্লাই দেইনা, উপরন্তু এসময় মূত্রত্যাগ এবং ঘামের কারণে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়, যা সাথে সাথে পূরণ করার কোন উপায় থাকেনা। এতে কি শরীরের ক্ষতি হয়না?
৩। ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষতিঃ রমজান মাস এসে আমাদের দেশে ওয়ার্কিং আওয়ার ২/৩ ঘন্টা কমে যায় - উৎপাদনও তার ফলে হ্রাস পায়, কিন্তু কর্মীদের বেতন মজুরী কিন্তু কমানো হয়না। উপরন্তু ঈদকে সামনে রেখে উৎসব ভাতা দেবার একটা চাপ মালিকপক্ষের উপর পরে, যা অযাচিত।
৪। হোটেল রেস্তোরার ব্যবসায়ে লসঃ হোটেল রেস্তোরাগুলো তাদের আয়ের সিংহভাগ করে থাকে সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবারে - রমজানে যে ট্রেন্ডে ব্যাপক ধ্বস নামে। এই লস পূরণ করার জন্য তারা ইফতারের নামে ২ টাকার জিনিস ১০ টাকায় বিক্রি করে নয়তো খাদ্যে ব্যাপক ভেজাল দেয়। এভাবে অনৈতিক কর্মকান্ডে এক রকম অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়।
৫। কালোবাজারীঃ হোটেল রেস্তোরা এবং অফিসের ক্যান্টিন বন্ধ থাকায় বাড়তি চাপ পড়ে ঘরের বাজারে যে কারণে ভোগ্য পণ্যের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। এই পরিস্থতি সামাল দিতে পাইকারদেরকে অনেকটা বাধ্য হয়েই দাম বাড়াতে হয় অথবা কালোবাজারীর আশ্রয় নিতে হয়।
৬। যানজটঃ সবাই বাসায় গিয়ে ইফতার করা এত জরুরী মনে করে যে একসাথে সবাই অফিস ত্যাগ করতে গিয়ে রাস্তায় বিশাল যানজটের সৃষ্টি হয় - এতে মানুষের মূল্যবান কর্মঘন্টা নষ্ট হয়।
৭। পরিবহণ খাতে বিশৃঙ্খলাঃ রমজানের শেষ সপ্তাহে ঢাকার বাইরে সপরিবারে যাবার কারণে পরিবহণ খাতের উপর বিশাল প্রেশার পড়ে। এই সুযোগে পরিবহণ মালিকেরা যাত্রীদেরকে ইচ্ছামত হয়রানি করে।
এগুলো কি আসলে রমজান মাসের অপকারিতা নয়? আপনাদের সুবিবেচনা প্রসূত মতামত আশা করছি।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১:৪৮