করোনায় একটা জিনিস খুব ভালো ভাবে পরিলক্ষিত ও প্রমানিত হয়ছে যে দুনিয়ার আপন জীবন ছাড়া বাকি সকল কিছুই আপেক্ষিক । টাকা পয়সা আপেক্ষিক - একসময় টাকা দিলে বাঘের চোখ পাওয়া গেলেও এখন দুপুর ২ টা বাজলে একটা লজেন্স ও পাবেন না - সুতরাং টাকা পয়সা আপেক্ষিক । এক সময় মনে হত একটা বাইক না থাকলে কিসের তারুন্য - এখন বরং ঘরে বসে থাকায় বিরত্ব , ইতিহাস যেহেতু মানুষে লিখে - কিছুদিন পরেই মৃত্যু ভয়ে ঘর কোনে লুকিয়ে থাকা মানুষ নিজেদের অকুতোভয় বীর হিসেবে আক্ষা দিবে - আর খোদার ভয় ভুলে যাবে সতরাং মানুষের ভয় ও আপেক্ষিক । কাল যে চিউ মিউ সংগীত শুনলে মনে হতো শুধা এখন সেই গান গুলিই অসহ্য লাগতেছে - তার মানে এই শ্রুতি সুন্দরতাও আপেক্ষিক । কালই ব্যাটে বলে যাদের মুক্তি যোদ্ধা বলছিলেন আজ তাদের খোজই রাখছেন না - এখন ডাক্তার রা আপনাদের কাছে মুক্তি যোদ্ধা সুতরাং স্বার্থ অনুযায়ী নায়কেরাও আপেক্ষিক ।
কাল যে আপনি চাইনিজের সিদ্ধ ফুল কপি না খেলে জাতে উঠতে পারছিলেন না , সেই আপনিই এখন এক প্লেট ভাত আর একটা ডিম ভাজি হলেই খুশি । সুতরাং খাদ্য অভ্যাস ও আপেক্ষিক ।
কাল যে আত্মীয়দের এর জন্য আপনার পরান পুড়ত আজকে আপনি ভয়ে তার লাশ এর আশে পাশেও যাচ্ছেন না । সুতরাং এই অভিনয় ওয়ালা সম্পর্ক গুলিও আপেক্ষিক ।
কাল যে কলিগ আপনাকে খুব কেয়ার করে বলেছিল , যে অফিসের বস আপনাতে দেখেছিল আগামীর স্টিভ জবস তাকে ফোন দিয়ে সংযোগ পাচ্ছেন না ? এই অফিস অফিস সম্পর্কটাও অনেক ক্ষেত্রে আপেক্ষিক ।
আমার ভাই তোমার ভাই করে বেড়ানো যে ছেলেটা মিছিলের সবার প্রথম লাইনে থাকত , দেশের তরে জীবন দেব , তোমার জন্য হে জননী , ডেকে দেখুন বলবে ভাই মাথা ব্যাথা জ্বর ও আছে । এসব পদ পদবীর মোহ সেটাও আপেক্ষিক ।
পরমানূ অস্ত্র নিয়ে মহাসাগর দাপিয়ে বেড়ানো ক্ষমতাও আপেক্ষিক , আবার বিশাল নাস্তিক গোষ্টির দম্ভ সেটাও আপেক্ষিক । কান পাতুন তাদের হার্ট টিক টিক করে ইয়া নফসি ইয়া নফসি করছে ।
মরজিনা আপার দেশ প্রেম দেখুন লাল ইটের মধ্যে বন্দী , এই সব চেতনা টেতনাও আপেক্ষিক - নিজের জীবনে ধাক্কা খেলেই চেতনা ঝট করে খুলে যায় ।
এই যে ক্যামেরা প্রেম মানুষের এটাও আপেক্ষিক যেইনা রোগ টা নিজের হবে আর সেলফি তুলতে মন চাইবে না । কেউ তুলতে আসলে বিরক্তি মনে হবে , অথচ দুনিয়াটাই এরা সেলফি ময় করে ফেলেছে ।
মানুষের এই যে বিশাল বিশাল আবিষ্কার কোন একদিন পিপড়ার আক্রমনে ধ্বসে যেতা পারে তবু এই আপেক্ষিকতায় মানুষের বিশাল অহংকার ।
আমার এলাকা , আমার জমি আমার ভিটা এগুলাও আপেক্ষিক আজ রোগ হলে কাল কেউ গ্রাম ছাড়া করতে চাইবে , বাবা বলবে বাগানে ঘুমা বাবা , এলাকা বাসী বলবে বিদায় হও এই যে অস্থায়ী অতিথি হিসবে তোমার যে দম্ভ সেটাও আপেক্ষিক ।
আজকে নিঃশ্বাস নিতে পারতেছেন , আর এরে ওরে গালি দিয়ে জাতি উদ্ধার করতেছেন , এই নিশ্বাস ও আপেক্ষিক , আজ আছে কাল নেই ।
আগেই একবার বলেছিলাম মানুষের প্রিয় বলে কিছু নেই তাও আপেক্ষিক , বিয়ের সময় বউ এর লাল শাড়ি ভাল লাগলেও লাল রক্ত অসহ্য মনে হবে । লাল শাড়ি স্বপ্ন দেখালেও লাল রক্ত দেখায় ভয় । নিজের জন্য হলুদ টিশার্ট হয়ত পছন্দ করলেন আবার গাড়ি কেনার বেলায় এই হলুদ টাই অসহ্য লাগবে , হয়ত এসব ঝামেলার বালায় তে না যেয়ে কালো রঙ বেছে নিবেন - কিন্তু এই রংটায় তার ঘরের দেয়ালে সে কখনো লাগাবে না । মানে এই সব প্রিয় রঙ টং ও আপেক্ষিক ।মানে ভিন্ন ভিন্ন বেলায় আপনার ভিন্ন ভিন্ন পছন্দ হবে ।
সময় বলেও আসলে কিছু নেই। সূর্য উঠেও না। নামেও না। আমরাই চারদিকে ঘুরি। সময় চলতেই থাকবে... অন্য ভাবে চিন্তা করলে পৃথিবী সৃষ্টির আগেও সময় ছিল। একে ঘড়ি দিয়ে হিসেব করে ফায়দা নেই। ঘড়ি ইতিহাস কিছুই এটাকে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারবে না। ... সময় চলতে থাকবে অমীমাংসিত কোন রহস্যে। পৃথিবী ধ্বংসের পরেও সময় চলবে। কেয়ামতের পরেও চলবে। মানে পুরো সময় ব্যাপার টাও আপেক্ষিক ।
বিষয়টা সহজ মনে করলে সহজ। জটিল মনে করলে জটিল।
এই এত আপেক্ষিকতার ভীড়ে কিছু জিনিস অনাপেক্ষিক আছে বৈকি , প্রকৃতি তার নিজের গতি চলবে , আপনি বদলালে সেও আপনাকে বদলে দেবে ।
মায়ের ভালোবাসা অনাপেক্ষিক , একজন মা কখনোই তার সন্তান কে রেখে একা সুখী থাকতে চান এটা আমি বিশ্বাস করিনা , তাই মায়ের ভালবাসা অনাপেক্ষিক । অবস্থার ভীড়ে মায়েরা কত কিছু করে , সেই কর্মকান্ড গুলি আপেক্ষিক হতে পারে । বাবারা আপেক্ষিক হতে পারে , মায়েরা আপেক্ষিক হতে পারেনা । ব্যাপার টা মানলে সহজ , না মানলে আরো সহজ ।
বাকি সকল সম্পর্ক আমাদের জন্মের পর সৃষ্টি হয় , জন্মের পর পৃথিবীর কেউই প্রিয় এবং অপ্রিয় থাকে না। আমরাই কোন কাউকে প্রিয় এবং কাউকে অপ্রিয় বানিয়ে ফেলি। অনেক সময় প্রিয় মানুষ গুলির জন্য মানুষ জীবন ও দিয়ে দেয় , কিন্তু এই মায়া , মহাব্বত , দায়িত্ব , কর্তব্য , সবই আপেক্ষিক ।
সৃষ্টিকর্তা অনাপেক্ষিক , তিনি এক ও অসীম তার ইশারাতেি সব কিছু ঘটে । মানলে মানবেন না মানলে মানবেন না , তবে এটা নিয়ে বেশি তাইরে নাইরে করলে কিছু একটা আজাব পোহাবেন এটা আপনি যত বেশি শিক্ষিতই হন না কেন । এই শাস্তি আর স্বস্থির মালিক ও অনাপেক্ষিক ।
আবার এই স্রষ্ঠার সৃষ্টি নিজেরাই সৃষ্টিকর্তা আমার সৃষ্টিকর্তা আমার বলে যে ঝগড়া আর ব্যবসা করে তাও আপেক্ষিক । মানে ব্যপারটা বাড়ির বড় ছেলে ইঞ্জিনিয়ার সে বলে আমার মা , ছোট ছেলে মুটে সে বলে আমার মা । এখন ভাইয়ে ভাইয়ে গন্ডগোল আর কি । এখন তাহলে ধর্মীয় ভাবে আলাদা আলাদা ব্যপারটা কিভাবে ঠিক করবেন ? মানে ধরেন বাবা মা বলেছেন ছেলে মেয়ে গুলি ইঞ্জিনিয়ার(আমার বেলায় আমি বিশ্বাস করি মুসলিম) হোক , এখন কেউ হতে পেরেছে কেউ নীজ দোসে হয় হয়নাই , আপনি ভাই হিসবে বোঝাতে পারেন তাই বলে আরেক জন হয়নি বলে মারা মারি কাটা কাটি করবেন তা ঠিক নয় । যাই হোক ধর্মের ব্যাপারে আপনার বিশ্বাস আপেক্ষিক হতে পারে তবে ধর্মের অস্তিত্ব অনাপেক্ষিক ।
যাই হোক এই ধরাতে আমরা যে অধিকারী না , পর্যটক মাত্র এটা বুঝার জন্য যথেষ্ট আলামত ইতিমধ্যে প্রদর্শিত হয়েছে , আমি একান্তই প্রার্থনা করছি আল্লাহ সমস্ত মানবকুল কে মুক্ত করে দিন । এটা ঠিক মানুষ আজ ঠিক হলে এক সপ্তাহ পর থেকেই আবার অহংকার করবে । তবু আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করে দিন ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১১:৫৭