যোগাযোগ ব্যবস্থার অতি উন্নতি কিন্তু মঙ্গলকর হতে পারেনি। কারন অতি সহজ লভ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা আমাদের আন্তরিকতাকেও সহজললভ্য করে তুলেছে। ২৫ বছর আগের (ইন্টারনেট আগের যুগের) সিরি ফরহাদ, লাইলি মজনু, রোমিও জুলিয়েট , রোজ ও জ্যাক ইত্যাদি এখনো ভালোবাসার কাহিনি হিসেবে প্রচলিত রয়েছে এবং থাকবে অনন্ত কাল - সেখানে জাকারবার্গ এর প্রেম কাহিনি হয়ত আগামি ১০০ বছরেও স্থান পাবে কিনা সন্দেহ আছে। ২০ বছরের যোগাযোগ জামানার চেয়ে পূর্ববর্তি হাজারো বছরের যোগযোগহীন জামানাই অধিকতর ভালো সম্পর্ক বয়ে এসেছে বলে আমি মনে করি।
এই যে এত এত ডিজিটাল যোগাযোগ মাধ্যম তা একই সাথে সময় আর অনুভুতি দুই কেই ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের থেকে। মানুষের অনুভুতি গুলো এখন কত গুলা এস এম এস বা কত মিনিট কথা বলা হলো তার উপর ভিত্তি করে একটা মেজারমেন্ট সিস্টেম গড়ে উঠেছে, এছাড়া লাইক, শেয়ার, ইন্সটাগ্রাম লাভ, ইমো লাইক আরো কত বাহারী এপ্স এ ভরে গেছে। মানুষ অথিতিকে চা এর পরিবর্তে ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড দেয়া শুরু করেছে নগরী গুলোতে। নেটওয়ার্ক ফ্রিকুয়েন্সি আমাদের সম্পর্ক গুলোকে একটা ৮ ইঞ্চির পর্দায় বন্দী করে ফেলেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই এর ছাপ রেখে যাচ্ছে ।
আমরা যারা গ্রামে বড় হয়েছি, আমরা জানি স্বল্প যোগাযোগ কত উন্নত সম্পর্কের আর আথিতিয়তার আর মায়ার জন্ম দেই। এখনকার নগরী ভিত্তিক সমাজে যেখানে হাত বাড়ালেই মগ বাজারে নানির বাসা পাওয়া যায়, কিংবা ভিডিও কলে যেখানে নানি, নানা, খালা খালু দেখা যায়, কিংবা নিউজফিড যখন বেডের খবর প্রকাশ করে ফেলে তখন মামার বাড়ির আম কুড়ানোর সুখ শুধু কিতাবেই সোভা পাবে এটাই স্বাভাবিক।
প্রতিনিয়ত যেকোন কিছুর অতি ব্যবহার তাকে আপনার কাছে সাধারন করে তুলবে এটাও একটা শ্বাসত নিয়ম। প্রযুক্তির অতি আধুনিকায়ন যে আমাদের কোথায় নিয়ে ফেলবে তা যারা আবিস্কার করছে তারা জানলেও আমরা জানিনা। এর পরে বাংলাদেশিদের বেলায় আরো ঝামেলা যেখানে চাইনা উইচ্যাট নির্ভর যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা করেছে আমরাও তাদের অনুকরন করে উইচ্যাট ইন্সটল করেছি, ইন্ডিয়া হোয়্যাটস এপ এবং ফেসবুক ভিত্তিক আমরা তাও গ্রহন করেছি, তাইওয়ান কম্বোডিয়া লাইন ভিত্তিক আমরা লাইন ও গ্রহন করেছি, ইউ এস এ কে বাদ দিলে হবে? আমরা ভাইবার ও গ্রহন করেছি এ ছাড়া আছে ইমো, রিং আইডি আরো কত কি। ব্যাপার টা অনেকটা নিজেকে বেদুইন করে রাখার মত এই হোয়াটস এপ এ আছি তো এই ভাইবার এ আছি, এই ইমো তে তো এই ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার এ। আসলে প্রযুক্তির অতি আধুনিকায়ন হলেও দিন যে ২৪ ঘন্টাতেই হয় এটা বোঝবার মত শক্তি আমাদের হয়ে উঠেনি।
কেন জানি মনে হয় পুরানো ধাচের যোগাযোগ কিংবা টেলিগ্রাম টাই ভালোছিল। বন্ধুদের সাথে দেখা হলে বন্ধু অনেক দিন পর দেখা কি খবর বলো এগুলা বলতে পারার আনন্দটায় হয়ত আসল ছিলো। এখনো জিজ্ঞাসা করা হয় বন্ধু কি খবর বলো কিন্ত বন্ধু বলার কয়েক ঘন্টা আগেই জানে ইন রিলেশন শিপ উইথ ওমক ৩ ঘন্টা আগে, ইন ব্রেক আপ উইথ অমক ৪ ঘন্টা আগে, বেগুনি খেয়েছে ৪ ঘন্টা আগে সব। আসলে আলোচনার কিংবা ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যম হয়ে উঠেছে ইমোটকিন গুলা ।
আমার কেন জানি মনে এই সামাজিক যোগাযোগ এর থেকে ব্যবসায়িক এবং মেইল ভিত্তিক যোগাযোগটাই ভালো। তবে পুরানো চিঠির যুগটা বেস্ট। হয়ত চিঠির অনুভুতি গুলো কেমন হয় জানিনা তবে এখনো ৬ ইঞ্চি তে আমরা রবিন্দ্রনাথ কিংবা নজরুল এর অপ্রকাশিত কোন চিঠি পড়ে বলি ওয়াও কি অপুর্ব সৃষ্টি।
ব্যক্তিগত অতি যোগাযোগ সমীহতা কমিয়ে দেই।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৫:৪৩