প্রত্যেক দেশের জন্য সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো নিজ দেশের জমি। খনিজ সম্পদ আহরণ, শিল্প-কারখানা স্থাপন এবং বসতি নিমার্ণ ইত্যাদির জন্য প্রয়োজন এই জমি যা কখনো বৃদ্ধি পাবে না বা করা যাবে না । সুষ্টু ব্যবস্থাপনা ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে জমিই এনে দিতে পারে কোনো দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি ও সমৃদ্ধি। আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলোতে রয়েছে প্রচুর অব্যবহৃত জমি, ফলে বিশ্বের বড় বড় কোম্পানীগুলো এখন ছুটছে ঐসব দেশে বিনিয়োগ করতে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট এক্ষেত্রে ভিন্ন। প্রতিনিয়ত পাহাড়-টিলা এবং ফসলি জমিগুলো হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন কারখানা ও বসতঘর নিমার্ণের জন্য। গ্রামে গেলেই দেখা যায় বিস্তীর্ণ ফসলি জমির বিভিন্ন জায়গায় এখন ঘরবাড়ি নিমার্ণ করা হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত এই কাজ বেড়েই চলছে।
ঠিক এমন সময়ই সরকারের কোনো প্রকার আলাপ-আলোচনা ছাড়াই ভারতের সাহারা গ্রুপের সাথে চুক্তি করল স্যাটেলাইট শহর নিমার্ণের জন্য। দেশের মানুষকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে দেশের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ নিয়ে এই চুক্তি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এক্ষেত্রে টিআইবির উদ্বেগ অবশ্যই যুক্তিসংগত। কারণ সরকার এক্ষেত্রে কোনো প্রকার দরপত্র আহবান করেনি এবং কোনো প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই এককভাবে একটি বিশেষ কোম্পানীকে নির্বাচন করেছে। বিশেষ বলছি একারণে যে সাহারা গ্রুপের চেয়ারম্যান নিজেই বলেছেন যে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিম তাদেরকে এদেশে বিনিয়োগ করতে বলেছেন এবং এদেশে সাহারার প্রধান করা হয়েছে শেখ সেলিমের পুত্র শেখ ফাহিমকে।
সাহারা গ্রুপের চেয়ারম্যানের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সম্ভবত তার মুখ। আবেগ প্রবণ বাংলাদেশিদেরকে তিনি আবেগ দিয়েই ঘায়েল করতে চাচ্ছেন যা তার কথামালা দেখলেই বুঝা যাবে-
"আমার পূর্ব পুরুষ এই বাংলার। আমার মায়ের বাড়ি বিক্রমপুরে। আমার মায়ের বর্তমান বয়স ৯৯ বছর। আমি তাকে নিয়ে আসতে পারিনি। বলে এসেছি, এখানে আসছি। তিনি শুনে খুশি হয়েছেন। আমার এক মামা বলেছেন, বিক্রমপুর গিয়ে একটি গাছের পাতা নিয়ে যেতে।"
"এই মাটির সঙ্গে রয়েছে আমার এবং আমার পরিবারের আবেগের সম্পর্ক। ভারতের বাইরে একমাত্র আমার নাড়ির টান বাংলাদেশের জন্য। আমি পূর্ব পুরুষের ভূমির সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে চাই।"
"এখানে এতো আদর, আপ্যায়ন, আন্তরিকতা, সম্মান, শ্রদ্ধা- সবকিছু আমাকে দারুন অভিভূত করেছে। এমন গ্রহণ করার অভ্যাস আমাদের ভারতীয়দের মধ্যে নেই। আমি আমার সঙ্গীদের বলেছি, এইসব ভদ্রতাবোধ শিখতে আমাদের বাংলাদেশে আসতে হবে।"
"আমরা কেবল ব্যবসা করার জন্য আসিনি। আবেগের টানে এসেছি। ব্যবসাতো হবেই।"
"আমরা মানুষের আবেগের কথা আবেগ দিয়ে ভাবি। আবেগ দিয়ে উন্নয়নের কথা ভাবি।"
সাহারা গ্রুপের চেয়ারম্যান সুব্রত রায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এক লাখ একর জমি চেয়েছেন এবং তিনি বলছেন যে তাদের গ্রুপ সেখানে একটি সম্পূর্ণ জীবনধারা সৃষ্টি করবেন। দেশের মানুষের মতামত ছাড়াই সরকার তাদের যদি জমি দেয়ার চেষ্টা করে তবে অদূর ভবিষ্যতে হয়ত আমরা আরেকটি আড়িয়াল বিল প্রতিবাদ দেখব। কারণ প্রথম আলোর একটি রিপোর্টে এসেছে, কেরাণীগঞ্জের মানুষ প্রতিবাদ সমাবেশ করে জানিয়েছে যে কেরাণীগঞ্জের এক ইঞ্চি জমিও তারা সাহারা গ্রুপকে দেবে না।
বাংলাদেশে রিহ্যাবের সদস্যসংখ্যা ১০৮২ । এতগুলো প্রতিষ্ঠান থাকার পরেও কোনো দেশি প্রতিষ্ঠানকে সরকার নির্বাচন করেনি কেন? তাহলে কি আমরা ধরে নিতে পারি যে, এখানে সরকারের সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান নেই? তারা কি সরকারের সুনজরে নেই? মন্ত্রী সাহেব তো সারাক্ষণই বলতেন যে ভূমিদস্যুদের তিনি নিয়ন্ত্রণ করবেন। কিন্তু তিনি কি সাহারা গ্রুপের দুর্নীতির কথা জানেন?
এই সময়ের বাংলাদেশে প্রত্যেকটি বড় বড় প্রকল্পে সরকারের সংশ্লিষ্ট সুবিধাভোগীরা জড়িত। মূলত সরকারই তাদের পরিবার-পরিজন এবং দলের লোকদেরকে সব বড় বড় প্রকল্পগুলো দিয়েছে কোনো প্রকার দরপত্র আহবান ছাড়াই। শুধুমাত্র সামিট গ্রুপকেই প্রায় ২৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নির্বাচিত করেছে। প্রসঙ্গতঃ সামিট গ্রুপ হলো মন্ত্রী ফারুক খানের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান।
কবির ভাষায়- জাতির পতাকা আজ খামছে ধরেছে সেই পুরোনো শকুনেরা। এদেরকে চিনে রাখুন।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১১