somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুভ্রের বউ

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৯:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুভ্র চশমা পাচ্ছে না। রাতে ঘুম যাওয়ার আগে চোখ থেকে খুলে রেখেছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠে পাচ্ছে না। ঘুমে থাকলে চশমার দরকার হয় নাই, আর বাকীটা সব সময় চশমা লাগেই ওর। বিয়ের পর কক্সবাজার গেছে। সমুদ্রে নেমেছে দুই জন। চোখে চশমাসহ পানিতে নামায় অবাক ইলা।

: আশ্চর্য ব্যাপার তো! তুমি চশমা পড়ে নামলে কেন? সমুদ্রের ঢেউ আসলে চশমা নিয়ে যাবে তো। তাছাড়া চশমার মধ্যে পানি পড়লে তো গ্লাস ঝাপসা হয়ে যাবে। তুমি কিছুই দেখবে না।

এটা শুনে আমতা আমতা করে শুভ্র বলে, আসলে আমি চশমা ছাড়া তো তেমন কিছু দেখি না।

এর মধ্যে বড় এক ঢেউ কূলে আছড়ে পড়ে। ঢেউ থেকে সরে নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে লাফ দেয় শুভ্র। কিন্তু উল্টাফল হয়। আছাড় খেয়ে পড়ে যায়। চশমাটা পানিতে পড়ে যায়।

হাতড়ে খুঁজতে থাকে। কিন্তু এ বড় সমুদ্রে কি তা পাওয়া সম্ভব! তারপরও খুঁজে যায়। ইলা যাতে বুঝতে না পারে সেজন্য চোখে হাত দিয়ে রাখে। লজ্জা লাগে ও।

: ইলা আমার একটু হোটেলে ফিরতে হবে। তুমি থাকো আমি এক্ষুনি আসছি।

: কেন হোটেলে গিয়ে কি করবে।
: এই যাবো আর আসবো।

ইলা ব্যাপারটা বুঝতে পারে। চোখে চশমা নাই। চশমা ছাড়া শুভ্রকে অন্যরকম লাগে। চশমা পড়লে যে বোকা ভাবটা থাকে, চশমা না থাকলে সেটা থাকে না। তারপরও ওকে চশমা পড়াই দেখতে ভাল লাগে।

: ওহ চশমা পড়ে গেছে? তুমি বলবে না! সমস্যা নাই। হোটেলে যেতে হবে না। তুমি আমার হাত ধরো।

হাত বাড়িয়ে দেয় ইলা।
: আরে লজ্জা পাচ্ছো কেন? চশমাতো এভাবে পড়ে যেতেই পারে, তাই না। এটাতে লজ্জার কিছু নাই। আর চশমা হারানোয় ভালয় হয়েছে। আমার চোখ দিয়ে তুমি দেখো। নাহয় চোখের জন্য কিছুক্ষণের জন্য আমরা দুইজন এক মানুষ হয়ে রইলাম। বলে হাসে ইলা।
কথাটা শুনে ঝাপসা পৃথিবীটাও অনেক সুন্দর মনে হয় শুভ্রের কাছে। ইলার মোলায়েম হাতটা ধরে আলতো করে।

: এই আলতো করে ধরছে যে! সামান্য ঢেউ এলেও তো আলাদা হয়ে যাবে। মনে হচ্ছে আমার চোখের প্রতি তোমার আস্থা নেই।

নাহ নাহ বলে শক্ত করে ধরে ইলার হাত। বাচ্চারা যেমন ধরে অনেকটা তেমন। ইলার ভাল লাগে। আগে কক্সবাজার বেশ কয়েক বার এসেছে। কিন্তু এবার কেন যেন অন্যরকম ভাল লাগছে। নতুন নতুন মনে হচ্ছে সব। সমুদ্রের ওপারে পানির সাথে মিশে যাওয়া আকাশটাকে ছুতে ইচ্ছা করছে।

: আচ্ছা এক কাজ করলে কেমন হয়? চলো আমরা সমুদ্রের শেষ সীমানায় গিয়ে ওই আকাশটাকে ছুইয়ে আসি।

শুভ্র বলে, চলো। এখুনি যাই।

একথা বলেই নিজেই সামনের দিকে হাটা শুরু করে।

ইলার মজা লাগে। সত্যি সত্যি বিশ্বাস করে বসেছে ও। এত সরল কেন ছেলেটা! এই দাড়াও। এখন না। এখন একটু দুষ্টামি করবো।

: কি দুষ্টামি?
: ঢেউ যখন আসবে তখন আমি মাথা ঢেউয়ের নিচে ডুবিয়ে দেবো। ঢেউ মাথার ওপর দিয়ে যাবে। ঢেউয়ের নিচে থেকে ঢেউয়ের বেগ অনুভব করার অন্যরকম আনন্দ।

: ঠিক আছে। তাহলে আমি কূলে অপেক্ষা করি।

: আরে গাধারাম! তুমি কূলে অপেক্ষা করবে কেন! তুমি আমার হাত ছেড়ে কোথাও যাবে না। আমরা একসাথে ডুব দিবো। তুমি আমার হাত ধরে থাকবে। কি বলছি মনে নাই, আমরা কিছুক্ষণের জন্য এক মানুষ।

শুভ্রের চোখে মুখে আনন্দ। এই দুষ্টামি সেও উপভোগ করতে চায়। ওর চোখ মুখ সে কথাই বলছে।

: সমুদ্রকে একটা ধন্যবাদ দাও তো। সে তোমার চশমা কেড়ে নিয়ে আমাদের একসাথে করে দিলো। দাও উচ্চস্বরে ধন্যবাদ দাও। বলো, সমুদ্র তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

সকাল বেলা। সমুদ্রে তেমন বেশি লোকজন নাই। তাছাড়া একটু ঢেউ আসছে। সে শব্দে কে কি বলছে তা অন্যদের শোনার কথা নয়। তারপরও লজ্জা লাগে শুভ্রের উচু গলায় সমুদ্রকে ধন্যবাদ দিতে। বিড় বিড় করে ও বলে, সমুদ্র তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। বলার ক্ষেত্রে শব্দের আওয়াজ কম থাকলেও মনের ভেতরে এ বলাটা অনেক শক্তিশালী ছিল।

মনেরটা দেখতে পেলো না ইলা। বিড়বিড় করাটাই দেখলো। আরে তোমার কি ভাল লাগছে না? আচ্ছা ভালো না লাগলে চলো হোটেলে ফিরে যাই।

শুভ্র বাচ্চা ছেলেদের মত চিল্লিয়ে বললো, সমুদ্র তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। সত্যিই তুমি অনেক ভাল।

এটা শুনে অভিমান করে ইলা।
: সমুদ্র ভাল। আমি ভাল না?

: তুমি তো সমুদ্রের চেয়েও ভাল।

: নাহ সমুদ্রের চেয়ে ভাল হওয়ার কাজ নেই আমার। সমুদ্র সমুদ্রের মত ভাল, আমি আমার মত। বলে হাসতে থাকে ইলা।

হাসলে ইলার মুখে টোল পড়ে। ঝকঝকে ফর্সা দাঁতগুলো দেখা যায়।

হাসিটা অনেক প্রিয় শুভ্রের। কিন্তু চশমা না থাকায় সেটি দেখতে পারছে না।

: চলো ঢেউয়ের মাঝে হারিয়ে যায়। কি প্রস্তুত তো।

শুভ্র মাথা নাড়ে। তার বেশ আনন্দ হচ্ছে।

বড় একটা ঢেউ আসে। সে ঢেউয়ের মাঝে দুইজনই লাফিয়ে পড়ে। ঢেউ যেমন তাদের দিকে ছুটে আসছিল ঠিক তেমনি তারা ঢেউয়ের মধ্যে ছুটে যায়। একজনের হাত আরেকজনের হাতে। দুইজন পাশাপাশি। ঢেউ তাদের শরীরের ওপর দিয়ে চলে যায়।

অন্যরকম মজা হয়েছিল সেবার।

শুভ্র ডাক দেয়, ইলা, একটু আসবে?

ইলা বারান্দায় ফুলের টবগুলোতে পানি দিচ্ছিলো। বারান্দাটা দুই রুম পড়ে। বিশাল বারান্দা। সেখানে সারি করে বিভিন্ন ফুলের টব রাখা হয়েছে। প্রতিটিদিন কোন না কোন গাছে ফুল থাকে। ইলা একটা গোলাপ ছিড়ে হাতে নেয়।
আবার ডাক দেয়, ইলা!
অসহায় গলা। ছুটে আসে ইলা।

: কি হলো?

: আমার চশমাটা পাচ্ছি না। একটু দেখবে?
: কই রেখেছিলে?

খাটের পাশে টেবিলটাতে রেখেছিলাম মনে হয়। কিন্তু এখন দেখছি নাই। ভুলে হয়ত অন্য কোথাও রেখেছি। অপরাধী ভঙ্গিতে বলে যায় শুভ্র।

কিছুক্ষণ এদিক ওদিক খুঁজাখুঁজি করে ওয়ার্ড ড্রবের ওপর থেকে চশমাটা এনে দেয় ইলা। চশমা পেয়ে একটা হাসি দেয় শুভ্র।

ইলা দেখেই থাকে। কি নির্মল হাসি, ভোরের প্রকৃতির মত নির্মল। ঘুম থেকে উঠে এ হাসিটা প্রতিদিন দেখতে ইচ্ছা করে ইলার। এজন্য মাঝে মাঝে নিজেই চশমাটা লুকিয়ে রাখে। হাসিটা দেখার লোভে ওর প্রতিদিনই চশমাটা লুকিয়ে রাখতে ইচ্ছা করে। কিন্তু বুঝে যাবে বলে তা করা হয় না। আজকের চশমাটা ও-ই সরিয়ে রেখেছিলো। মাঝে মাঝে রাখে।

চশমা দিতে দিতে বলে, আজ একটু তাড়াতাড়ি ফিরবে?

: কেন! আজ যে একটা মিটিং হওয়ার কথা। জার্মানি থেকে ওরেস্ট কোম্পানির লোক এসেছে। তাদের সাথে আমাদের কোম্পানির একটা আলোচনা হবে।

: ঠিক আছে আসতে হবে না।

আরে বাবা, আমি সেটা বলেছি নাকি। আমি অবশ্যই আসবো। কই যাবে?

ইলার ভাল লাগে। ভাবতে ভাল লাগে ওর ইচ্ছা পূরণ করতে গিয়ে এভাবে অন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু বাদ দেওয়া। বিষয়টা বেশ উপভোগ করে। জানে এতে বেশ লোকসান হবে। তারপরও ভাল লাগে।

আর এত টাকা দিয়ে কি হবে! যে টাকা আছে তা দিয়েই আরো কয়েক প্রজন্ম চলতে পারবে। আর তাদের নিজেদের প্রজন্মই এখনও আসে নি।

কথাটা ভাবতে লজ্জা লাগে ইলার। সাথে একটা ভাল লাগার অনুভূতিও। ব্যাপারটা বলতে হবে শুভ্রকে। ও ঠিক করে, রাতেই বোকা শুভ্রটাকে ব্যাপারটা বলবে।
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×