somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেহেস্ত চাই না, মাকে চাই...

০৮ ই এপ্রিল, ২০১০ বিকাল ৩:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা দুই ভাই। ছোটভাই আর আমার বয়সের পার্থক্য খুব কম। আমরা প্রায় সব কিছুই একসাথে করতাম। স্কুলে যাওয়া, টিভিতে কার্টুন দেখা, দুপুরে হুজুরের কাছে আরবী শেখা, বিকালে খেলতে যাওয়া, রাতে পড়তে বসা, ঘুমানো সব কিছুই। আর সব কিছুতে মা সারাক্ষন আমাদের দেখে রাখতো।স্কুলে নিয়ে যেতেন মা, আনতেন মা। বিকালে খেলতে গেলে সুন্দর জামা কাপড়, জুতা পরিয়ে তৈরী করে দিতেন মা, পুরো বিকেল বারান্দায় বসে আমাদের দেখে রাখতেন মা। রাতে আমাদের পড়াতেন মা, ভাত খাইয়ে দিতেন মা, ঘুমাতে গেলে দুইভাইকে গল্প শুনাতেন মা।
ছোটবেলায় বাসায় এক মৌলভি আমাকে আর আমার ছোটভাইকে পড়াতেন। তিনি অনেক ভাল ভাল উপদেশ দিতেন। শুধু ধর্মীয় জ্ঞানই নয়, অনেক সামাজিক/নৈতিক মূল্যবোধ সম্পর্কেও তিনি বলতেন। কৃতজ্ঞ বোধ করি উনার কাছে।
এক দুপুরে হুজুর পড়াচ্ছেন। আমাদের বেহেস্তের গল্প বলছিলেন। তিনি বলছিলেন, বেহেস্তে আমরা সবাই অনেক ভাল থাকবো। সবাই সব কিছু পাবো। যা ইচ্ছা হবে তাই পাবো। সব, সব কিছু। আমি হুজুরকে জিজ্ঞেস করলাম, আমি যদি না যেতে পারি, তাহলে কি আমার সাথে আমার ভাইয়ের দেখা হবে কিনা। হুজুর আমাকে বললেন, পরিবারের একজন গেলেই সে বাকীদের নিয়ে যেতে পারবে। শুনে খুশি হয়েছিলাম। এরপর জানতে চাইলাম, তাহলে আমার সাথে আমার বাবা মা সবার সাথে দেখা হবে কিনা। হুজুর বললেন, বেহেস্তে যাবার পর কেউ কাউকে চিনতে পারবেনা। সেখানে সবাই চির তরুন থাকবে। আমি আমার ছেলে মেয়েকে চিনবোনা, আমার মাকেও চিনবোনা, আমার মাও আমাকে চিনবেন না। হুজুরের সামনে অবাক হয়ে বসে সব শুনলাম।
হুজুর চলে গেলেন, পড়ানো শেষ করে। পড়া শেষ হলে মায়ের আদেশে দুই ভাই ঘুমাতে গেলাম।
দুইভাই বিছানায় শুয়ে গল্প করছিলাম। একসময় আমার ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম, “তুমি বেহেস্তে যাবা? “
ও বললো, “ হ্যা যাবো।”
আমি বললাম ,” তাহলে তো আম্মুকে চিনবানা, আম্মুকে ছাড়া থাকতে হবে।”
এত্ত কঠিন কথা ওর সহ্য হলোনা, ও কাঁদতে শুরু করলো।
কাঁদতে কাঁদতে আমাকে বললো, “ আমি মরবোনা ভাইয়া। বেহেস্তে যাবোনা। তুমি পারবা থাকতে আম্মুকে ছাড়া?”
মাকে ছাড়া থাকবো কিভাবে, এইটা ভেবে আমারো বুকের মধ্যে বিশাল চাপ পড়লো। ভয়ে কান্না পেয়ে গেলো।
আমি বললাম,”আমিও মরবোনা, পৃথিবীতেই থাকবো।”
দুইভাই শুয়ে শুয়ে উপুর হয়ে কাঁদছি, এমন সময়ে মা এলেন ডাকতে বাইরে খেলতে যাবার জন্যে। দুইভাইকে টেনে তুলে দেখেন, দুইজনের চোখে পানি ভর্তি। বালিশ ভিজে গেছে। তাড়াতাড়ি দুইজনকে জড়িয়ে ধরলেন। জিজ্ঞেস করলেন, কি হয়েছে? কেউ বকেছে কিনা?
আমার ছোটভাই ফুঁপাতে ফুঁপাতে বললো, “বেহেস্তে গেলে আমাদেরকে চিনবানা না, আম্মু?”
এইটা শুনে মার চোখেও পানি চলে এসেছে। মা কিছু না বুঝে দুইজনকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললেন, “আমি যেখানে যাবো সেইখানে আমার ছেলেমেয়েরা থাকবে।”
আমি বললাম, “তাহলে হুজুর বললো যে?”
মা কঠিন স্বরে বললেন, “আমি আমার ছেলেমেয়ের সাথে থাকবো। হুজুর কি জানে?”
মনে আছে, সেদিন দুইভাই আর বাইরে খেলতে যাইনি। মায়ের সাথে বারান্দায় বসে ছিলাম।
এখনো জানিনা, বেহেস্তে গেলে মাকে পাবো কিনা।
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, মাকে ছাড়া যাতে থাকতে না হয়।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১০ বিকাল ৫:০৯
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×