[“বাবরি মসজিদ প্রশ্নে কোর্টের রায় এবং কলকাতার একজন ব্লগার বন্ধুর ভাবনা”য় (Click This Link)উল্লেখিত ব্লগারটি এই অধম। পোস্ট দুটো ছিল লোটাকম্বল (http://www.lotakambal.com) নামক একটি গ্রুপ ব্লগে। সৈয়দ ইবনে রহমত কে ধন্যবাদ তিনি এই প্ল্যাটফর্মে লেখটিকে পৌছে দিয়েছেন। আপনাদের অনেকের মতামত জানতে পেরেছি, আরও ভাল লাগল। দুঃখের বিষয় যে কমেন্ট করতে পারছি না রেজিস্টার করা সত্বেও, স্প্যাম পৃভেনসনের কিছু ব্যাপার হয়তো। অতএব এই আপনাদের কিছু মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে এই লেখা।]
ত্রিভুজ বলেছেন: আফগানিস্থানে তালেবানদের মূর্তি ভাঙা পুরো বিশ্বে যতটা কভারেজ পেয়েছে (বিশেষত পশ্চিমা মিডিয়াতে) বাবরি মসজিদ ভাঙা কিন্তু তার সিকি ভাগও পায়নি। তথাকথিত মানবতাবাদী ও অসাম্প্রদায়িক গোষ্ঠির চোখে এটা কোন ঘটনাই না। আমাদের সো কল্ড ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের চোখেও... কয়েকদিন আগের মামলার রায় নিয়ে সরকার এখন পর্যন্ত কোন বিবৃতি দেয় নাই। এই ঘটনা কোন হিন্দু মন্দিরের বেলায় ঘটলে আমরা উলটো প্রতিক্রিয়া দেখতে পেতাম।
@ত্রিভুজ: অফটপিক হয়নি ভাই। তবে সরকারী বিবৃতির ব্যাপারে প্রলাপ হয়তো বেঠিক বলেননি।
এডভোকেট বলেছেন: এটার সমাধান খুব জরুরী ছিল কন্তু আপীল করলে সমস্যার সমাধান আর হলো কোথায়?
@ এডভোকেট: আপীল করার সুযোগ টা স্থায়ী সমাধানের ক্ষেত্রে ভীষণ জরুরী, এ ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। তবে সবচেয়ে বড় ব্যাপার কী জানেন, এত বড় একটা হাইকোর্টের ফয়সলা; কেউ খুশি/ অনেকে অখুশী, কিন্তু কেউই উসকানি মূলক কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি, কোনও গন্ডগোল দান বাঁধতে পারেনি। ভারতবর্ষের গণতন্ত্র কিন্তু জিতেছে বন্ধরা। ধর্মে এ দেশ আর আটকে নেই, এ বিশ্বাস করতে পারেন। রাজনীতি যে কথাই বলুক, মানুষ আটকে নেই।
অ্যামাটার বলেছেন: সমস্যা হল এর মত করে তো আর সবাই ভাবে না। অ্যাভারেজ ভারতীয়র দৃষ্টিভঙ্গী দেখছি ধর্মীয় সঙ্কীর্ণতায় ভরা।
সাঈফ শেরিফ বলেছেন: এভাবে বললে অনেক কিছুই বলা যায়। আমেরিকার সভ্যতা বেশি পুরনো না এমনি কি ব্রিটিশরাও উপনিবেশিকতার সুবাদে পৃথিবী ব্যাপী গির্জা গড়েছে । ধর্ম ও পুরাকালের ঐতিহ্য দু'ভাবেই সেগুলোর সংরক্ষণ চলছে। এই ধরুন না ইজরায়েলের কথা। হাজার হাজার বছর আগে তাদের ওখানে বসতি ছিল বলে ফিলিস্তিনীদের খেদিয়ে দিল।
কিন্তু বাবরি নিয়ে বাড়াবাড়ির মূল কথা হল,
অযোধ্যার ওই জায়গায় রামের জন্ম বলে বাবরি মসজিদের এক টুকরো জমির নিচেই রামের নাড়ি পুতা আছে, এমনভাবেই কথা চলছে।
অথবা রামের জন্মস্থানের ত্রি সীমানায় কোন যবন মুসলিমের উপাসনালয় সহ্য করা হবেনা।
ভারতীয় হিন্দুদের আক্ষেপটা বুঝি, উনারা এখনো বিশ্বাস করেন রক্তপাত আর তরবারি দিয়ে ভারতের নিম্নবর্ণের কোটি কোটি হিন্দুকে মুসলিম ধর্মে দীক্ষিত করা হয়েছে। সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের দাবি না মানলে দেশে আবার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগতে বাধ্য, এ বিষয়টিও মনে হয় আদালতের মাথায় ছিল।
আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন: আইনজ্ঞদের মতে, রাম ঐতিহাসিক চরিত্র নয়, শুধু ধর্মীয় একটা বিশ্বাসমাত্র
সাম্প্রদায়িক ভারত থেকে এর বেশি আশা করাই বোকামী।
@অ্যামাটার, সাঈফ শেরিফ, আশরাফুল ইসলাম দূর্জয়:
বন্ধু, আমার মত করে কী না জানি না, তবে এটা বিশ্বাস করতে ভাল লাগে যে বেশির ভাগ ভারতীয়ই ধর্মের বাইরে এসে ভাবতে চায়। নয়তো এই দুই দিনেই বেঁধে যেতে দাঙ্গা-হাঙ্গামা রক্ত-ক্ষয়! তা হয়নি, হয়নি রাজনীতি সত্বেও, অশুভ সুড়সুড়ি সত্বেও। এই রায় নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বহু হিন্দু, সংযত থাকতে অনুরোধ করেছেন বহু মুসলমান। রাজনীতির বুলি সব দেশেই বিকট, বিকৃত!
ভারতবর্ষ কোথায় সুরক্ষিত জানেন? এখনো এ দেশে সিস্টেম নামক বস্তুটি বেঁচে আছে, বহু-বিধ উসকানি সত্বেও। এখনো আদালত’এর সম্মান নষ্ট হয়নি, সেনাবাহিনী কখনোই দেশ-শাসনের ভার হাতে তুলে নেই নি। গণতন্ত্র টিকে আছে, বহাল তবিয়তে!
বন্ধু, রাজনীতির কোথায় ভুলবেন না, সংকীর্ণতা শুধু ভারতীয়দের মধ্যে নেই, নেই শুধু বাংলাদেশীদের মধ্যেও । এসব হিংস্র বুলি আমাদের শেখায় শুধুই রাজনীতি। পরিসংখ্যান কী সংকীর্ণ হয়? দেশভাগের সময় ভারতের মুসলমানরা ছিলেন শতকরা 10.36 শতাংশ, সংখ্যাটা 2001 এ ছিল 13.4 %, বাংলাদেশ’এর হিন্দুরা স্বাধীনতার সময় ছিলেন 37%, এখন 11%। এর মানে কী বাংলাদেশ সংকীর্ণ? নয়, পরিসংখ্যানই সব নয়। শুধু আমার বক্তব্য হল যে রাজনৈতিক উসকানি তে ভুলবেন না, একটা ঘটনা কে কেন্দ্র করে কোনও দেশ কে কী গালিগালাজ করা যায়? যায় না। এবং, ভুলবেন না, ভারতের সুপ্রীম কোর্ট এখনো এ নিয়ে কথা কয়নি, কাজেই বিষয়টি এখনো বিচারাধীন।
আর হ্যাঁ, বাবরি ভাঙ্গতে যারা চেষ্টা করেছিলেন, তাদের এ দেশ’এর ইতিহাস ক্ষমা করেনি স্যার! কৃমিনাল কেস এখনো জ্যান্ত রয়েছে এবং এই রায়’এর কোনও প্রভাব তাতে নেই।
আজমল কাসাব নামক যে দুষ্কৃতী দিন দুপুরে মুম্বাই তে বহু মানুষ খুন করে বেরিয়েছেন, তিনি আজও বিচারাধীন। কসাবের সুষ্ঠু বিচার হওয়াটাই প্রমাণ করে যে এ দেশে গণতন্ত্র এবং আদালত এখনো টিকে আছে, এবং থাকবেও! আবার বলছি, রাজনীতির ভাষা সব দেশেই গণ্ডগোলে, রাজনীতির ভাষায় দেশ বিচার ভুল; এবং অন্যায়।
আর যাই হোক, সাম্প্রদায়িক ট্যাগ হয়তো ভারতের একদমই প্রাপ্য নয়।