somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রজাপতির রূপান্তরের প্রকৃতি / শরিফ খোকন

১৩ ই অক্টোবর, ২০০৯ দুপুর ১২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এহসান হাবীবের কবিতাবই শাদা প্রজাপতি

সম্পদের সুষম বণ্টন বৈপ্লবিক কর্মপন্থা ছাড়া অসম্ভব। কারণ সুবিধাভোগীরা বিপ্লবীদের চেয়ে বেশি সতর্ক ও সচেতন। কাজেই কাজটা অনেক কঠিন। উত্তীর্ণ তরুণরা শক্তি-বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার সাহায্যে তা করতে পারে। অতি তরুণরা পারে বিদ্রোহ করতে। কারণ বিদ্রোহই তারুণ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
একটি শাদা ক্যানভাস যত রঙ ধারণ করতে পারে অন্য রঙে তা অসম্ভব। তাই বলা যায়, শাদা একটি সম্ভাবনাময় রঙ। শাদা একটা ঘুড়িও অনেক উঁচুতে উঠলে কালো দেখা যায়। কিন্তু কালো ঘুড়িকে সাদা দেখা ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষণে অসম্ভব। একমাত্র অতীন্দ্রিয়ে সম্ভব। বহুবর্ণে রঙিন একটা প্রজাপতিকে শাদা রঙে দেখানো একাধারে বিদ্রোহ এবং অতীন্দ্রিয় অনুভূতির প্রতীক। আর শাদা চোখে তো শান্তি, সম্ভাবনা ইত্যাদি নানা অর্থ আরোপ করা যাবেই।
তরুণ কবি এহসান হাবীব এর প্রথম কবিতার বই শাদা প্রজাপতি। রেখার সাহায্যে বর্ণ বৈষম্য সৃষ্টি করে প্রচ্ছদও করা হয়েছে। প্রথম ফ্ল্যাপে নামকরণ সম্পর্কে একটু ধারণা দেয়া হয়েছে। লেখকের দাবি অলংকারের জৌলুসে, রঙের বাহুল্যে শুধু বাঙলা কবিতা কেন সমগ্র কবিতাই আজ হাঁপিয়ে উঠেছে। এ সময় কবিতার বন থেকে এহসান হাবীব একটি আশ্চর্য শাদা প্রজাপতি আমাদের জন্য হাজির করেছেন।
বইয়ের নামে কোনও কবিতা নেই বলে ফ্ল্যাপের লেখাটুকু পাঠকের পক্ষে উপকারি। বইতে একচল্লিশটি কবিতা আছে। তিনটি ‘পূর্বপাঠ’ শিরোনামের ভূমিকাধর্মী কবিতা দিয়ে বইয়ের কবিতাগুলো তিনটি পর্বে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম কবিতার নাম ‘প্রদর্শনী’। রেজরে দাড়ি কাটতে কাটতে বয়স লুকানো। দৃশ্যত দাড়ি কেটে কেটে খসে পড়লেও বোধের রাজ্যে আরও কিছু হারায়। তার বর্ণনা দুটি স্তবকে। কিন্তু মানুষ আয়নায় নিজের ঝকঝকে মুখটাই দেখে শুধু। আর অন্যের বেলায় দেখে মহিমার অভাব।
‘অন্ধকার’ কবিতায় দেখা যায় প্রকৃত কথার মতো মৌলিক অন্ধকারে মানুষ নিজেকে লুকাতে পারে। তবে সে অন্ধকার এমনই যে কবি দেশলাই, চুরুট, প্রিয় নাম, প্রিয়জনের মুখ এমনকি শিশ্নের অগ্রভাগও খুঁজে পান না। এই গভীর এবং মৌলিক অন্ধকার ইতিবাদী নাকি নেতিবাদী ধারণা দেয় সে প্রশ্ন ওঠে। কিন্তু কবি যখন বলেন, `অন্ধকার ভালবেসে সাধু বসে আছি/হাতড়ালে আমি ছুঁতে পারি পৃথিবীর মুখ’, তখন বোঝা যায় বিষয়টা ইন্দ্রিয়ে নেতিবাদী হলেও অতীন্দ্রিয় এক ধরনের সাধনার পদ্ধতি হয়ে ওঠে।
‘বাংলাদেশ’ সিরিজের তিনটি কবিতা ‘আমার জন্য’, ‘রঙ’, `সাতটি হোঁচট,' দুপুর ১ ও ২, `এইসব মিথ্যে নয়' এসব কবিতা অন্যগুলোর চেয়ে ভাষা, বক্তব্য কিংবা উপস্থাপনার ভঙ্গি যে কোনও কারণেই হোক উজ্জ্বল। আবার ‘আমি ভালোবাসি আশ্চর্য পৃথিবী’ কবিতায় লক্ষ্য করা যায় বোদলেয়ারীয় অনুভূতি। এ লক্ষণের পক্ষে ‘কনফেশন’ কবিতা সাক্ষ্য দেয়। সেখানে দাবি করেছেন দ্বিতীয়বারও তিনি বোদলেয়ার। এ কবিতায় দ্বিতীয় জীবনের ভুলগুলো স্বীকার করেছেন। প্রথম জীবন থেকে দ্বিতীয় জীবনে পার্থক্য ঘটেনি, মুক্তি আসেনি। এবং তার ধারণা তৃতীয়বারও তিনি এমনটিই করবেন। তাহলে ফলাফল? শূন্য। এটিই এ কাব্যের শেষ কবিতা। আর এ কবিতার এবং কাব্যের শেষ পঙক্তিতে তিনি তুলাদণ্ডে নিহত হওয়ার বাসনা প্রকাশ করেছেন।
‘ক্যারম জীবন’ অল্পেতুষ্টির বা সংযত অভিলাষের কবিতা। ‘আমাদের ক্যাসিনো নেই ক্যারমই জীবন’ একথা কবিতায় দু’বার লিখেছেন। কাব্যের প্রথম দিকের কবিতায় যে দ্রোহ ছিল শেষের দিকে তা নেই বরং আপসের বা পরাজয়ের কথা আছে। এ বৈপরীত্বের কারণও আছে। ‘ক্যারম জীবন’ কবিতাটিতে আবু হাসান শাহরিয়ার এর কবিতার প্রভাব আছে বলেই মনে হয়। ‘লাগে না পদক খ্যাতি যদি থাকে লেখার শ্রাবণ’ এমন অনেক পঙ্ক্তি আবু হাসান শাহরিয়ার রচনা করেছেন।
‘আমার জন্য’ কবিতায় স্পষ্টই জানিয়েছেন, ‘নিজেকে খুশি করা ছাড়া আমার আর কোন কাজ নেই।’ এখানে কবির প্রিয়তমার গোয়ার্তুমিকে মেনে নিয়ে অকাল বৈধব্য বা উন্মুখ মানুষের মুখে থুতু ছিটিয়ে তারই পায়ের কাছে বসে থাকার আপসমূলক কাজ ছাড়া আর কিছু মনে হয় না। এসবও শুধু নিজেকে খুশি করার জন্য। কবিকে ছেড়ে যাওয়া শাদা প্রজাপতিটির জন্য মাতম করতেও অনুমতি দিয়েছেন তিনি। যদি সে খুশি হয়। এ কবিতায় শাদা প্রজাপতির অর্থ বদলে গেছে।
‘ঝিম ধরানো গান কবিতায়ও আত্মপ্রবঞ্চনা আর আত্মক্ষয়ের কারণে আপসের কথা বলেছেন। নিজেকে শিকার ভেবে নিপুণ লক্ষ্যভেদ করতে হচ্ছে, কিন্তু প্রথম পঙ্ক্তিতেই জানিয়েছেন এটি একটি গোপন অসুখ।
প্রথম কবিতার বইয়ে নিজের জয়ের ইচ্ছা, ক্ষয়ের গতি, ইচ্ছা ও অনুভূতি, পরাজয় কিংবা আপসের সময়োপযোগী কাব্যভাষা নির্মাণ করতে পেরেছেন এহসান হাবীব। শুরুটা তার ভালো, চলাটাই দেখার বিষয়। থেমে যাওয়ার কথা ভাবাই যায় না।

শাদা প্রজাপতি - এহসান হাবীব। প্রকাশক-পাঁচিল, প্রকাশকাল ফেব্র“য়ারি ২০০৯ প্রচ্ছদ শিল্পী তৌহিন হাসান। পৃষ্ঠা ৫৬, মূল্য ৭০ টাকা।

এই লেখাটি দৈনিক যুগান্তর গত ০৯ অক্টোবর ২০০৯ ইং তারিখে প্রকাশিত হয়। ব্লগের পাঠকদের জন্য এটি বুক রিভিউ পুনমুদ্রণ করেছে।



সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:২০
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×