somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জামায়াতে ইসলাম থেকে হেফাজতে ইসলাম- একটি ধোকাবাজীর গল্প

২০ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা যদি ১৬ কোটি হয় তাহলে শতকরা ৯৫ ভাগ মুসলমান হিসাবে ১৫ কোটি ২০ লাখ মুসলমানের বসবাস আমাদের এই বাংলাদেশে আর মাত্র ৮০ লক্ষ মানুষ অন্যান্য ধর্মে বিশ্বাসী। এই বিশাল জন গোষ্টির বৃহৎ একটি অংশ গ্রামে বসবাস করে এবং তাদের ধর্মীয় অনুভুতী খুবই প্রবল এক কথায় এই বিশাল জনগোষ্টির অধিকাংশই সহজ সরল ও অসম্ভব রকমের ভাল মনের মানুষ। আমরা যারা শহরের আধুনিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত আমাদের চেয়ে মানবিকতার দিক গুলো প্রত্যন্ত অঞ্চলে যারা বসবাস করেন তাদের একটু বেশী। তারা শহরের লোকদের বা শিক্ষিত লোকদের যথেষ্ট সম্মান করেন। প্রমান পেতে চাইলে একটু গ্রাম থেকে ঘুরে আসুন, দেখবেন আপনার গ্রামের সহজ সরল অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত আত্মিয়টি আপনার খেদমত করার জন্য কিরকম ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আপনি যদি রাত্রি যাপন করেন দেখবেন অতি সযতেœ তুলে রাখা বিছানার চাদরটি যেটি সে শুধু কিনে রেখেছে যদি আপনি আসেন এই ভেবে সেটি আপনাকে বিছিয়ে দেবে, যদি পর্যাপ্ত বালিশ না থাকে হয়ত তাড়া বালিশ ছাড়াই রাত্রি যাপন করবে কিন্তু আপনার একটু অযতœ করবে না।
১৯৮৪ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এই বার বছরে আমি গ্রামের মানুষের অতিথেযতা নিজে উপভোগ করেছি। এরশাদের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন এবং পরবর্তীতে বিএনপির গনতন্ত্রের লেবাসে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে প্রায়ই রাত্রে নিজের বাসায় ঘুমানো হত না, তখন গ্রামে গিয়ে যখন কোন অচেনা বাড়িতে কড়া নেড়ে বলেছি খালা আমি শহর থেকে এসেছি অমুক দল করি, পুলিশ ্মাকে খুজছে তাই আজ রাতের মত আমাকে থাকতে দিন তখন দেখেছি এই মধ্য রাতে তারা মোরগ জবাই করে আমাদের খাবার তৈরী করেছে সারা রাত পাহার দিয়েছে। গ্রামের এই অতি সহজ সরল লোকগুলোকে আমারা রাজনৈতিক নেতারা বারবার ঠকিয়েছি, সবচেয়ে বেশী ঠকিয়েছি ইসলামের নাম ব্যবহার করে তার কিছু চিত্র আমি আমার এই লেখায় তুলে ধরার চেষ্টা করব।
১৯৪১ ইং সালে সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী নামক এক ভন্ড প্রতারক জামায়াতে ইসলামী নামাক একটি দল প্রতিষ্ঠা করে। জামাতের এই প্রতিষ্ঠাতা পবিত্র কোরআন এর অনেক অপব্যাখ্যা করেছেন যার জন্য তৎকালীন আলেম সমাজে তাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। মওদুদী তার সিয়াসি কসমস গ্রন্থের তৃতীয় খন্ড পৃষ্টা নং ১৭৭ এ লিখেছেন “ গণতন্ত্র বিষাক্ত দুধের মাখনের মত”। তিনি তার গ্রন্থ রাসায়েল ও মাসায়েল এর প্রথম সংস্করনের পৃষ্টা নং ৪৫০ এ লিখেছেন “ গণতন্ত্রের মাধ্যমে কোন সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া ইসলাম অনুযায়ী হারাম”। তাছাড়া আবুল আলা মওদুদী তার তরজামানুল কোরআন এ বলেছেন সময়ে সময়ে মিথ্যা বলা শুধু জায়েজই নয় বরং অবশ্য কর্তব্য।
১৯৪১ সালের ২৬ আগষ্ট লাহোরে ভারতবর্ষের কম্যুনিস্ট বিরোধী শক্তি হিসাবে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের মদদে জামায়াতে ইসলামী হিন্দ নামে এই দলটির আত্মপ্রকাশ হয়। জন্মের পর থেকেই তারা পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরোধীতা করতে থাকে। মওদুদী ফতোয়া দেন যে যাহারা পাকিস্তান প্রতিষ্টার আন্দোলন করেনে এরা কেহই খাটি মুসলমান নয়। মওদুদী তার তরজামানুল কোরআন নামক ম্যাগাজিনে পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরোধীতা করে ১৯৪৩ সালে লিখেন “ পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হলে সেটা হবে আহম্মকদের বেহশত এবং মুসলমানদের কাফেরানা রাষ্ট্র।”
১৯৪২ সালে লাহোর থেকে এই দলটির হেডকোয়ার্টার স্থানান্তরিত হয় ভারতের পাঠানকোটে কিন্তু ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সাথে সাথে তারা পুনরায় পাকিস্তানের লাহোরে তাদের প্রধান কার্যালয় স্থানান্তর করে। অথচ তারা পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরোধীতা করে আসছিল। পাকিস্তানে যাওয়ার পর তারা কাশ্মীরের জন্য আন্দোলন করাকে হারাম বলে আখ্যায়িত করেন।নির্বাচনে প্রার্থী হওয়াকে হারাম বললেও এই দলটি ১৯৫১ সালে পাঞ্জাবের প্রাদেশিক নির্বাচনে অংশগ্রহন করে চরমভাবে ভরাডুবি হয়। ১৯৫২ সালে গোলাম আজম ভাষা আন্দোলনে অংশ গ্রহন করলেও ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের শুক্কুর শহরে এক সংবর্ধনা সভায় তিনি উর্দু কে পাক-ভারত উপমহাদেশের মানুষের সাধারন ভাষা বলে অবিহিত করেন এবং ৫২’র ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহনের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন তথ্য সূত্র ঃ দৈনিক আজাদ ২০ জুন ১৯৭০, সাপ্তাহিক গণশক্তি ২১ জুন ১৯৭০, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস- ডঃ মোহাম্মদ হান্নান, পৃষ্টা ৩৯৯।
১৯৫৪ সালে গোলাম আজম জামায়াতে ইসলামে যোগদান করে। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে এই দলটি বেশ কয়েকবার তাদের নাম পরিবর্তন করে তাদের অপকর্ম চালাতে চেষ্টা করে। জামায়াতে তালেবর নামক তাদের সংগঠনটি ১৯৫৫-৫৬ সালে তাদের নাম পরিবর্তন করে ইসলামী ছাত্র সংঘ নামে তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করতে থাকে। তাদের অনৈসলামিক কার্যকলাপের দায়ে ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান জামায়াতে ইসলামীর কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষনা করেন যাহা ১৯৬২ সাল পর্যন্ত বলবৎ ছিল। ১৯৬২ সালে মুসলিম পারিবারিক আইনের বিরোধিতা করে শিক্ষা আন্দোলনের বিপক্ষে তারা অবস্থান গ্রহন করে। এবং ১৯৬৩ সালে মুসলিম পারিবারিক আইন নিয়ে বিভ্রান্তির মাধ্যেমে সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে। ১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারী জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে তাদের সকল কর্মকান্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয় এবং মওদুদী, গোলাম আজম সহ জামায়াতের ৬০ জন নেতাকে গ্রেফতার করে তবে গোপন আঁতাতের মাধ্যমে অক্টোবরেই সে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ দফার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে এটাকে দেশদ্রোহীতা হিসাবে আখ্যা দেয় এবং ১৯৬৭ সালে বাঙ্গালীর প্রানের দাবী ৬ দফার আন্দোলন যখন প্রবল তখন জামাত ৫ দফার আন্দোলন নামে আরেকটি আন্দোলন শুরু করে ৬ দফার আন্দোলনকে ব্যাহত করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়। ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধুর বিরেুদ্ধে আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্থানে প্রবল গন আন্দোলন শুরু হলে গোলাম আজম গং আইয়ুব খানের আস্থা অর্জন করে নেয় এবং ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানের সময় জামায়াত রহস্যজনক অবস্থান গ্রহন করে এবং গোলাম আজম পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের আমির হন।
১৯৭০ সালে পাকিস্তানের ইতিহাসে সর্বপ্রথম সাধারন নির্বাচনে ১৫১ আসনে প্রার্থি দিয়ে মাত্র ৪ টি আসনে জয়লাভ করে। এর পর ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তাদের অপকর্মের কথা লিখে শেষ করা যাবে না তবু তাদের অপকর্মের কিছু তথ্য প্রদান করা হল এতে আমি অনলাইনে মুক্তি যুদ্ধের স্বপক্ষে লিখা বিভিন্ন ব্লগারে লেখা থেকে তথ্য উপাত্ত গ্রহন করেছি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ রইলাম।
১০ এপ্রিল পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষায় ঢাকায় শান্তি কমিটি গঠন করা হয় । এই কমিটির ১ নম্বর সদস্য হচ্ছেন গোলাম আজম । ৩০ জুন লাহোরে গোলাম আজম বলেন তার দল দুস্কৃতকারীদের (মুক্তিযোদ্ধাদের) দমন করার জন্য সর্বাতœক চেষ্টা চালাচ্ছে । দলের নেতৃত্বে গঠন করা হয় আলবদর রাজাকার । সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে আবদুল মালেকের নেতৃত্বে প্রাদেশিক সরকার গঠন করা হয় । জামাতের সাবেক আমীর আব্বাস আলী খান এই সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন । ১৯৭১ সালে সংঘঠিত ইতিহাসের বৃহত্তম গণহত্যার জন্য দলটা কোনো ক্ষমা চায়নি । বরং গোলাম আজম দম্ভের সাথে জানিয়ে দেন একাত্তরের জন্য তারা অনুতপ্ত নয় । বরং তারা যা করেছে ঠিক করেছে ।
১৯৭২- গোলাম আজমের উদ্যোগে পাকিস্তানে পালিত হয় “পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার সপ্তাহ” এরপর লন্ডন গিয়ে সেখানে “পূর্ব পাকিস্তান উদ্ধার কমিটি ” নামে একটা কমিটি গঠন করেন। এই কমিটি বাংলাদেশকে উদ্ধার করে আবার পূর্ব পাকিস্তান করার সর্বাতœক চেষ্টা চালায়। ডিসেম্বরে সৌদি আরবে আন্তর্জাতিক যুব সম্মেলনে অংশ নিয়ে সকল মুসলিম রাষ্ট্রকে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দিতে, এবং যুদ্ধ বিদ্ধস্ত মানুষের সহায়তায় কোনো প্রকার আর্থিক সাহায্য না দিতে আহবান জানান।
১৯৭৩- সরকারী এক আদেশে ৩৮ জনের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয় । এর একজন গোলাম আজম । গোলাম আজম মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো সফর শুরু করেন। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দিতে এবং পূর্ব পাকিস্তান উদ্ধারে সহায়তা চান। ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত ফেডারেশন অব স্টুডেন্টস ইসলামিক সোসাইটির সম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তান উদ্ধারের বিষয়ে বক্তৃতা দেন।
১৯৭৪- মাহমুদ আলী সহ কয়েকজন পাকিস্তানিকে নিয়ে লন্ডনে পূর্ব পাকিস্তান উদ্ধার কমিটির বৈঠক হয় । মক্কায় অনুষ্ঠিত রাবেতায়ে ইসলামীর সম্মেলনে বাংলাদেশ উদ্ধার নিয়ে বক্তৃতা দেন।
১৯৭৫- একাত্তর সালের পর আতœগোপনে চলে যাওয়া জামাত নেতারা আস্তে আস্তে দেশে ফিরতে শুরু করে । কুখ্যাত যুদ্ধপরাধী শাহ আজিজুর রহমান দেশে ফিরেন । পরে তিনি বিএনপির প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন।
১৯৭৬- সরকার এক প্রেসনোটে নাগরিকত্ব ফেরত পাওয়ার জন্য ইচ্ছুক ব্যাক্তিদের আবেদন জানাতে বলেন। গোলাম আজম সাথে সাথে আবেদন করেন এবং প্রত্যাখাত হয়।
১৯৭৭- গোলাম আজম আবারো নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার জন্য আবেদন করেন এবং প্রত্যাখ্যাত হয় ।
১৯৭৮- গোলাম আজম পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে কোনো ভিসা ছাড়াই ১১ জুলাই ঢাকা আসেন । মায়ের অসুস্থতার জন্য মানবিক কারনে তাকে ৩ মাসের অনুমতি দেওয়া হয় । এরপর ৭৮ থেকে ৯৪ সাল পর্যন্ত অবৈধভাবে বাংলাদেশে বসবাস করেন ।
১৯৭৯- ঢাকায় একটা কনভেনশনের মাধ্যমে “জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ” গঠিত হয়। গোপনে গোলাম আজমকে আমীর করে আব্বাস আলী খানকে ভারপ্রাপ্ত আমীরের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
১৯৮০- প্রথমবারের মত বায়তুল মোকারমের সামনে জামাতের সভা হয়। প্রকাশ্যে এটাই তাদের প্রথম সম্মেলন।
১৯৮১- জামাতের ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্বাস আলী খান এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন “একাত্তরে আমরা যা করেছি ঠিকই করেছি। একাত্তরে বাংলাদেশ কনসেপ্ট ঠিক ছিলোনা”
১৯৮২- রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ যায়গা গুলোতে জামাত দ্রুত প্রবেশ করতে থাকে। কাদের মোল্লা ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়।
১৯৮৪- জামাতের সাবেক আমির মাওলানা আবদুর রহিম জামাত ছেড়ে ইসলামী ঐক্য (জোট) নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন।
১৯৮৫- এরশাদ সরকারের সাথে দলটার সখ্যতা গড়ে উঠে। কাদের মোল্লা ঢাকা মহানগর আমির নির্বাচিত হয়।
১৯৮৬- এরশাদ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অংশগ্রহন করে ১০ টা আসন পায়।
১৯৮৮- অনেকদিন নিষ্ক্রিয় থাকার পর জামাতের ছাত্র সংঘঠন শিবির নিজেদের শক্তি প্রদর্শনে মরিয়া হয়ে উঠে। চট্টগ্রাম রাজশাহী সহ বিভিন্ন জেলায় তাদের ট্রেডমার্ক রগ কাটার রাজনীতি শুরু করে।
১৯৯০- এরশাদ সরকারের পতন ঘটে। টিভিতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নেতৃরা বক্তৃতা বিবৃতি দেন । জামাতের নেতারাও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা হিসেবে টিভিতে আসেন! সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠে।
১৯৯১- নির্বাচনে রেকর্ড ১৮ টি আসনে জিতে নেয় ! কুলুষিত হয় মহান জাতীয় সংসদ । বিএনপি সরকারের সাথে আপোষে এত আসন পায়। নাগরিকত্বহীন গোলাম আজমকে আনুষ্ঠানিক ভাবে জামাত আমির ঘোষনা করে।
১৯৯২- বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনা জামাতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করে। বিজেপি বিরোধী আন্দোলন করে গণহারে রাস্তায় নেমে আসে। সাধারণ মানুষের কাছে পৌছাতে চেষ্টা করে। একই বছর জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি গঠিত হয়। গোলাম আজমকে মৃত্যুদন্ডযোগ্য ঘোষনা করা হয়।
১৯৯৩- গণাদালতের কারনে কিছুটা কোনঠাসা হয়ে পড়ে দলটি। নিজামী কাদেরমোল্লা সাইদী কামরুজ্জামান আব্দুল আলীম সহ আট জনকে মৃত্যুদন্ডযোগ্য ঘোষনা করে।
১৯৯৪- সালে উচ্চ আদালতের এক রায়ে গোলাম আজম জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব ফিরে পান ।
১৯৯৫- ঢিলেঢালা ভাবে পালিত হলেও এবছর জামাত প্রথমবারের মত একদিন হরতাল দেয়।

১৯৯৬- সালে জামাত এবং আওয়ামীলীগ তত্ববধাক সরকারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। একসাথে আন্দোলন করেছেন, তবে রাজনৈতিক জোট হিসেবে নয়।
১৯৯৭- রাজনীতিতে জামাত শিকড় গেড়ে ফেলেছে। শিবির বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দখল, সাইদী ব্যাপক ভাবে ওয়াজ নসিহত শুরু করেন।
১৯৯৮- বিএনপির সাথে মতৈক্যে আসে দলটি।
১৯৯৯- বিএনপির সাথে ৪ দলীয় জোট গঠন করে । পায়ের নিচে শক্ত মাটি পায়।
২০০০- জামায়াত রাজনৈতিক হাইওয়েতে উঠে যাওয়ায় নিশ্চিন্তে রাজনীতি থেকে অবসর নেন গোলাম আজম। দলের নতুন আমীর হন মতিউর রহমান নিজামী।
২০০১- নির্বাচনে ১৮ টি আসন লাভ করে। এরপর ঘটে জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কজনক ঘটনা। দলের শীর্ষ দুই নেতা নিজামী এবং মুজাহীদ মন্ত্রিত্ব লাভ করে! গাড়িতে উড়ায় জাতীয় পতাকা !!
২০০২- শিকড় বাকড় ছড়াতে থাকে একেবারে ক্ষমতায় থেকে। নেতারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও বক্তৃতা বিবৃতি দেন !!
২০০৪- শুরু করে জঙ্গী তৎপরতা। জঙ্গী দলগুলোর সাথে গড়ে তোলে সুসম্পর্ক । জামাতের আমন্ত্রনে পাকিস্তান জামাতে ইসলামীর শীর্যস্থানীয় নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশে আসেন। তারা শিরিরের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে অংশ নেন।
২০০৫- নির্বাচনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে থাকে। শুধুমাত্র ভারতীয় কোম্পানী বলে টাটার ২.৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী নিজামী (উইকিলিকস)
২০০৬- জামাতের তান্ডবময় একটা বছর।
২০০৭- নতুন প্রজন্ম জমাতের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে থাকে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার জামাতকে নির্বাচন করতে দেওয়ার বিপক্ষে ছিলেন। ২৫ অক্টোবর মিডিয়ায় কাদের মোল্লা বলেন মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধে গিয়েছেন নারী এবং সম্পত্তির লোভে ! দেশ ক্ষোভে ফেটে পড়ে।
২০০৮- নির্বাচনে জামতের লেজেগোবরে অবস্থা। শুধুমাত্র যুদ্ধপরাধীদের বিচার হবে এজন্য তরুন প্রজন্মের ভোটে আওয়ামীলীগের বিপুল ব্যাবধানে জয়লাভ।
২০০৯- মহান জাতীয় সংসদে একজন সংসদ সদস্য যুদ্ধপরাধীদের বিচারের প্রস্তাব পেশ করলে তা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
২০১০- আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল গঠিত হয়। গ্রেপ্তার হতে থাকে অভিযুক্ত ব্যাক্তিরা। জনগন আশাবাদী হয়।
২০১১- দেশ বিদেশে ট্রাইবুনালের নামে অপপ্রচার চালাতে থাকে। একই সাথে প্রচুর টাকা পয়সা খরচ করে চলতে থাকে আন্তর্জাতিক লবিং।
২০১২- দেশপ্রেমকে পুঁজি করে সীমিত সামর্থ নিয়ে চলতে থাকে বিচার কার্যক্রম। চলতে থাকে দুই পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ।
২০১৩- যুদ্ধাপরাধীদের একেরপর এক ফাঁসির আদেশ দেওয়ার বছর। এই লেখা তৈরি করা পর্যন্ত (মার্চ ২০১৩) তিনটি রায় হয়েছে। তার মধ্যে দুই জনের ফাঁসি এবং এক জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে দীর্ঘ ৪২ বছর যাবত রাজনৈতিক দল ও আদর্শহীন নেতাদের দূর্বলতার সুযোগে ফুলে ফেপে উঠা এই সংঘঠনটি তাদের শক্তি প্রদর্শনে লিপ্ত হয় চোরা গুপ্তা হামলা অগ্নি সংযোগ গুপ্ত হত্যার মধ্য দিয়ে।
২০১৩ ইং সালের ৫ ই ফেব্র“য়ারী শাহাবাগে ঘটে এক অভুত গণজাগরন। দেশের তরুন প্রজন্ম কাদের মোল্যার রায়েরে বিরুদ্ধে ফুসে উঠে। সারা দেশ থেকে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী উঠতে থাকে যা আজ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। শাহাবাগের অহিংস আন্দোলনের বিপরীতে জামায়াত হিংসাত্মক পথ বেছে নেয় আর এতে আকুন্ঠ সমর্থন জানায় জোটের শরিক বিএনপি। ইতিমধ্যে জামাত তাদের পুরানো খেলা শুরু করে দেয়। মিথ্যা রটনায় ট্রেনিং প্রাপ্ত তাদের কর্মী বাহিনী অপপ্রচার চালাতে থাকে এবং জামাত নিষিদ্ধ হলে তাদের পরবর্তী রাজনৈতিক প্লাটফর্ম হিসাবে তৈরী করে হেফাজত ইসলাম নামে আরেকটি সংগঠন। যারা ইতিমধ্যে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমকে কলুষিত করেছে, মসজিদের কার্পেটে আগুন দিয়েছে, জায়নামাজ পুড়িয়েছে।
সর্বশেষ বলতে চাই জামায়াতের এই সব ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের জন্য তারা বেছে নিয়েছে এদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসরত ধর্মপ্রান মুসলমানদের সরলতাকে। তাদের এই অপপ্রচারকে রুখতে হলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারন মানুষের কাছে তাদের মুখোষ উম্মোচিত করতে হবে আর দায়িত্ব নিতে হবে ধর্মপ্রান আলেম সমাজকে। এদেশের সাধারন ধর্মপ্রান মুসলমানদের প্রতি রইল আমার আকুন্ঠ ভালবাসা। জেগেছে শাহাবাগ জেগেছে বাঙ্গালী জেগেছে বাংলাদেশ- রাজাকারদের রুখবোই। জয় বাংলা, জয় জনতা।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মায়ের নতুন বাড়ি

লিখেছেন সাদা মনের মানুষ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২২

নতুন বাড়িতে উঠেছি অল্প ক'দিন হলো। কিছু ইন্টরিয়রের কাজ করায় বাড়ির কাজ আর শেষই হচ্ছিল না। টাকার ঘাটতি থাকলে যা হয় আরকি। বউয়ের পিড়াপিড়িতে কিছু কাজ অসমাপ্ত থাকার পরও পুরান... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৮










চিত্রকলার কোন প্রথাগত শিক্ষা ছিলনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। ছোট বেলায় যেটুকু শিখেছিলেন গৃ্হশিক্ষকের কাছে আর পাঁচজন শিশু যেমন শেখে। সে ভাবে আঁকতেও চাননি কোন দিন। চাননি নিজে আর্টিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতা বনাম ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত বিবিধ দোষ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৪



জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতার বিবেচনায় মুমিন ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত দোষারোপ আমলে নেয় না। আমার ইসলাম সংক্রান্ত পোষ্ট সমূহে অমুসলিমগণ ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে বিবিধ দোষের কথা উপস্থাপন করে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শ্রান্ত নিথর দেহে প্রশান্তির আখ্যান..... (উৎসর্গঃ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্লগারদের)

লিখেছেন স্বপ্নবাজ সৌরভ, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৪২



কদিন আমিও হাঁপাতে হাঁপাতে
কুকুরের মত জিহবা বের করে বসবো
শুকনো পুকুর ধারের পাতাঝরা জামগাছের নিচে
সুশীতলতা আর পানির আশায়।

একদিন অদ্ভুত নিয়মের ফাঁদে নেতিয়ে পড়বে
আমার শ্রান্ত শরীর , ধীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×