somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে মেয়েটা রোজ রাতে, বদলায় হাতে হাতে......

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা সময় নিয়মিত ফার্মগেটে যেতাম কোচিং করতে। সেজান পয়েন্টের আরেকটু সামনে গেলেই একটা গাছ আছে। সেই গাছের নীচে দেখতাম একজন ক্যানভাসার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরণের ওষুধ এবং তেল বিক্রি করছেন। এই ধরণের তেল সম্পর্কে আরো জানতে হলে এই লেখাটা পড়তে পারেন।

এই তেলের ব্যাপারটা থেকে একটা অনুসিদ্ধান্তে আসা যায়। ছেলেরা মেয়েদের শারীরিক প্রশান্তি দেয়ার ব্যাপারে বেশ টেনশনে থাকে। মেয়েদের তেমন টেনশন নিতে দেখা যায় না এসব ব্যাপারে। কেন ? কারণ, ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের শারীরিক চাহিদা বেশি। একজন নারীর অ্যাট এ টাইম অনেক পুরুষকে তৃপ্ত করার ক্ষমতা আছে।

এটা সম্পূর্ণ একটা প্রাকৃতিক ব্যাপার। একটা মেয়েকে তৃপ্ত করতে গেলে একটার চেয়ে বেশি ছেলের দরকার পড়তেই পারে। এটাই স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক।

উন্নত বিশ্বে এই প্রবণতা কমে গেছে। কিন্তু এখনও আমাদের কলেজ, ইউনিভার্সিটিগুলোতে একটা মেয়ে যদি তার স্বাভাবিক শারীরিক চাহিদা পূরণ করতে বিভিন্ন ছেলের সাথে বিছানায় যায়, তাহলে অন্যেরা কানে কানে তাকে 'মাগী' বলে গালি দেয়।

আমার বয়সের কয়েকজন মেয়ের সাথে কথা বলে দেখলাম। তাদের ক্লাসের একটা মেয়ের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ছেলের সাথে শুয়েছে। "আরে ও তো একটা মাগী"-তাদের মন্তব্য। মাগী কি জিনিস ? যারা শরীর দেয়ার বিনিময়ে পয়সা নেয়। তো, যে শরীর দেয়ার বিনিময়ে পয়সা নেয়, তাদের নামটি গালি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

এই বিষয়টার বিরোধিতা করি আমি।

প্রথম কথা, নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কেউ যদি কাউকে যৌন প্রশান্তি দেয়, তবে তাকে ছোট বা খারাপ নজরে দেখার কী কারণ ? একজন চাকরিজীবীর চাকরি করতে শরীরের দরকার হয়, একজন রিকশাওয়ালার রিকশা চালাতেও শরীরের দরকার হয়। আমাদের শরীরটাই হচ্ছে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করার উপকরণ। তো এটা যদি কেউ ব্যবহার করে, এবং তার বিনিময়ে পারিশ্রমিক নেয়, তাহলে তাকে ছোট নজরে দেখতে হবে কেন ?

দ্বিতীয়ত, অবিবাহিত বা বিবাহে অসন্তুষ্ট পুরুষের শারীরিক চাহিদা মেটানোর জন্য নারীশরীর প্রয়োজন। একজন পুরুষ নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের বিনিময়ে একজন নারীর সাথে বিছানায় গেল। সেটা ভাল হবে ? নাকি সেই পুরুষ যদি আপনার আমার মা-বোনকে ধর্ষণ করে সেটা ভাল হবে ? আমি প্রথমটির পক্ষে।

আমরা কি কল্পনাও করতে পারি, যে মেয়েটা রোজ রাতে বদলায় হাতে হাতে, তার জীবন বলতে যে আসলে কিছু নেই ? তার সামাজিক কোনও মর্যাদা নেই, একবার জেনে ফেললে তাকে কেউ থাকার ঘরটা পর্যন্ত ভাড়া দিতে চায় না। তার অপরাধ, সে শরীর বিক্রি করে। একবার গর্ভধারণ মানে দেশে একজন এতিমের সংখ্যা বাড়া, আর কিছু না। মা ডাক শোনার সৌভাগ্য তাদের কোনওদিন হয়না। স্বামীর ঘর তারা কোনওদিন করতে পারে না।

সংসদ ভবনের সামনে সন্ধ্যার পরে যেসব মেয়ে ঘোরাফেরা করে, তাদের নিজেদের পেশাটি ধরে রাখার জন্য পুলিশের সাথে রাত কাটাতে হয়, জানেন ? তাদের আয়ের বেশির ভাগই নিয়ে যায় অন্য কেউ, জানেন ? আমাদের দেশে কী অসম্ভব অসহায় অবস্থানে পড়লে একটা মেয়ে শরীরটা টাকার কাছে বিক্রি করে, কল্পনা করতে পারেন ? একবার মাগী হওয়া মানে সারা জীবনের জন্য তারা মাগী হয়ে যায়, জানেন ?

না, এটা কল্পনা করা সম্ভব না। কী যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে, কভু আশীবিষে দংশেনি যারে ?

তাদের যে সামাজিক অবস্থান, আমাদের যা মানসিকতা, তাতে করে কেউই নিজের মা-বোনকে এই পেশায় পাঠাবে না। নাই বা পাঠালো, তাতে কী এই পেশার মর্যাদা কমে গেলো ?

তাই বলি, কলেজ ইউনিভার্সিটির যে মেয়ে নিজের শরীরের জ্বালা মেটাতে ভাইয়া নামক প্রেমিকদের কাছে "নোট নিতে" যায়, আর যে মেয়েটা অসহায় পরিবারের মুখে কিছু তুলে দেয়ার জন্য রাস্তায় যায়, তারা সমান না। তারা যা করছে, তাকে আমি অপরাধ মনে করি না, কিন্তু মাগী নামের উপযুক্ত মনে হয় তারা নয়।

কারণ, তারা অত মহান নয়। কোনওদিন হতে পারবে না।

শ্রদ্ধা সেই সব বোনদের, যারা নিজের শরীর দিয়ে আমার মা-বোনকে রক্ষা করছে। শ্রদ্ধা সেই সব নারীদের, যারা পুরুষের সামান্য সময়ের আনন্দের জন্য নিজেদের "জীবন" নামক বস্তুটি বিসর্জন দিয়েছেন। একে জীবন বলা যায় না। এই মূহুর্তে তাদের যে অবস্থা, তাতে এই জীবনকে "জীবন" বলা যায় না।

আমি আল্লাহ-ভগবানে বিশ্বাস রাখি না, কাবার সামনে, দেবীর মূর্তির সামনে মাথা নত করি না। কিন্তু একমুঠো ভাতের খোঁজে সংসদের সামনে আমার যে বোন হেঁটে বেড়ায়, জোয়ান পুরুষ দেখলে পেছন থেকে ঘাড়ে হাত রেখে বলে, "লাগবে?"- সেই বোনের সামনে আমার মাথাটা নত করতে খুব ইচ্ছা হয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ২:০১
৩৪টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×