somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘৃণার বিস্ফোরণ (উৎসর্গঃ মুরুব্বিকে)

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকে আমাদের এই কর্পোরেট স্বাধীনতার আড়ালে ভাষা, সংস্কৃতি, স্বাধীনতা থেকে শুরু করে সব কিছুই হাস্যকর ভাবে দূষিত হয়ে যায়, তখন দীর্ঘদিনের পুরোনো ঘৃণাটাকেই সযতনে পুষে রাখি। বছর বছর ধরে পুষে রাখি, রাখবো। এই নীরব ঘৃণার চাষাবাদ হয়তো আমার সন্তানের হৃদয়েও করে যাব।

যে গণস্রোতটা আমরা তৈরী করতে ব্যর্থ হয়েছি, হয়তো পরের প্রজন্ম সেই স্রোতটাকে বাঁধন ছাড়া করতে পারবে। এটা আমাদের বিশ্বাস, আর আমাদের বিশ্বাস কোন ঠুনকো ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত নয়। তাই আমাদের এই বিশ্বাসকে যখন কেউ অমূলক ঘোষণা করে, তখন রাগে-দুঃখে-অভিমানে অনেক সময়ই সে আমাদের ক্ষোভের আগুনের মাঝখানে এসে পড়ে।

আমরা অবশ্যই জানি, একজন অপরাধীর অপরাধের জন্য তার পরিবারের সদস্যদের ঘৃণা করা যায় না। কিন্তু আসামী যখন একটা রাষ্ট্র হয়, তখন আমরা সেই রাষ্ট্রের অপরাধের জন্য তার প্রতিটি নাগরিককে ঘৃণা করি, যখনই সে রাষ্ট্রের মোড়কে আবৃত হয়। আমরা ঘৃণা করি আবালবৃদ্ধবণিতা সহ সেই রাষ্ট্রের নবজাতককেও। আপাত দৃষ্টিতে গণহারে ঘৃণাকে অন্যায় মনে হলেও এই ঘৃণার একটা উদ্দেশ্য অবশ্যই আছে।

আচ্ছা এমন হলে কেমন হতো? যদি ১৬ই ডিসেম্বরে প্রতিটি বাংলাদেশি রাস্তায় নেমে আসত ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে, যেগুলোতে লেখা থাকতঃ

"হে পাকিস্তানী সকল; তোমরা জেনে রাখো, ৩০ লক্ষ লোককে অন্যায় ভাবে হত্যা করার জন্য আমরা তোমাদের ঘৃণা করি। লক্ষ লক্ষ লোককে গৃহহারা, পরিবারহারা করার জন্য আমরা তোমাদের ঘৃণা করি। আমাদের দুই লক্ষ নারীকে নির্মম ভাবে ধর্ষণ করার জন্য আমরা তোমাদের ঘৃণা করি। শুকরখানায় ঘোঁৎঘোৎ করতে থাকা দুর্গন্ধময় শুকরকে দেখলে যতোটা ঘৃণা উৎপাদন হয়; হে পাকিস্তানী সকল, তোমাদের জন্য ঠিক ততোটুকোই ঘৃণা"

পৃথিবীর সমস্ত দেশের টেলিভিশনে নিশ্চয়ই এই ঘটনা প্রতি বছর দেখানো হতো। পৃথিবীর সকল দৈনিকে নিশ্চয়ই এই ঘৃণার বার্তা পৌঁছে যেত।

তখন হয়তো কোন পাকিস্তানী কিশোর তার মায়ের কাছে এই ঘৃণার কারণ জানতে চাইত আর সেই পাকিস্তানী নারী তার সন্তানকে শোনাতো তার পূর্ব পুরুষের কথা। কীভাবে নীরিহ মানুষগুলোকে পাশবিক উন্মাদনায় হত্যা করেছিল তাদের পূর্ব পুরুষেরা, কিভাবে ধর্ষণ করেছিলো কারো আদরের বোনটিকে, কারো স্ত্রীকে।

সেই কিশোরটি নিশ্চয়ই লজ্জা পাবে। তাদের পূর্ব পুরুষের কৃতকর্মের লজ্জায়, গ্লানীতে মাটিতে মিশে যাবে। নিশ্চয়ই লক্ষ কোটি পাকিস্তানী তখন একসাথে বলে উঠবে আমরা আর এই ঘৃণার বোঝা টানতে পারছি না। যারা এই ঘৃণার কারণ, সেই সব হায়েনাদের বিচার চাই আমরা।

সারা বিশ্ব হয়তো থুতু ছিটাতো পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের নামে।

তখন আমাদের আর বিচার চাইতে হতো না। সমগ্র পৃথিবীর ঘৃণার দায়মুক্ত করতে তারা নিজেরাই বাধ্য হতো সেই হায়েনাপনার বিচার করতে।

এতদিন আমরা ঘৃণা পুষে রেখেছি। এবার একটা সুযোগ এসেছে পৃথিবীর যাবতীয় মানুষের মাঝখানে ঘৃণার বিস্ফোরণ ঘটানোর। বিশ্বকাপ। পৃথিবীর যাবতীয় মিডিয়া এবার বাংলাদেশে আসছে। এবার স্টেডিয়ামে যারা খেলা দেখতে যাবে, তাদের বেশির ভাগই বাংলাদেশি।

এমন হলে কেমন হয় ? "প্লিজ আফ্রিদি, ম্যারি মি" এর বদলে এবার সকলে মিলে বিশাল বিশাল কাগজ, প্ল্যকার্ড, ব্যানারে লিখে নিয়ে যাবো "পাকিস্তান, উই হেট ইউ, স্টিল উই হেট ইউ পাকিস্তান ফর ১৯৭১।" এইসব প্ল্যকার্ড, ব্যানার নিশ্চয়ই ক্যামেরার চোখে পড়বে। ক্যামেরার চোখ মানে পাকিস্তানের লাখ লাখ চোখ, বিশ্বের কোটি কোটি চোখ। এই সুযোগ হাতছাড়া করা যায় না। ঘৃণার বিস্ফোরণ ঘটানোর এটাই সময়।

ব্লগারদের মধ্যে যারা খেলা দেখার টিকিট পেয়েছেন, আমার একান্ত অনুরোধ, আপনারা কাজটা করুন। প্লিজ করুন। এই সুযোগ একবার পাওয়া গেছে, এটার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করতে হবে। একটি ছক্কা, একটি চারের আনন্দ- উল্লাসের আড়ালে যেন ঢাকা পড়ে না যায় আমাদের স্টেডিয়াম পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া মুক্তিযোদ্ধা রিকশাওয়ালাটির ক্ষুধার কান্না।
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×