somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাস্তিক্য কি একটা ফ্যাশন ?

২৮ শে জুন, ২০১১ রাত ৯:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যখন ধর্ম এবং ঈশ্বরে বিশ্বাসী কোনও মানুষ, ধর্ম বা ঈশ্বরে বিশ্বাস নিয়ে অন্য কাউকে প্রশ্ন করেন, এবং উত্তরে যদি শুনতে পান যে উত্তরদাতা নাস্তিক, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রশ্নকর্তার ঠোঁটে একধরণের তাচ্ছিল্যের হাসি খেলা করে। এই হাসি দেয়ার পর অনেকেই যে মন্তব্যটি করেন তা হচ্ছেঃ


"হেহ ! নাস্তিক্য ! এটা তো আজকাল একটা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে।"


এমন নাস্তিক সম্ভবত একজনও পাওয়া যাবে না, যিনি এই কথাটি জীবনে একবারও শোনেননি। প্রয়াত হুমায়ুন আজাদ তার "আমার অবিশ্বাস" বইয়ের "বিশ্বাসের জগৎ" প্রবন্ধে লিখেছেনঃ


"একটা কিছু বিশ্বাস করতে হবে মানুষকে, বিশ্বাস না করা আপত্তিকর। আপনার পাশের লোকটি স্বস্তি বোধ করবে যদি জানতে পারে আপনি বিশ্বাস করেন, তার বিশ্বাসের সাথে আপনার বিশ্বাস মিলে গেলে তো চমৎকার; আর খুবই অস্বস্তি বোধ করবে, কোনো কোনো সমাজ আপনাকে মারাত্মক বিপদে ফেলবে, যদি জানতে পারে আপনি বিশ্বাস করেন না। বিশ্বাস কয়েক হাজার বছর ধ'রে দেখা দিয়েছে মহামারী রূপে; পৃথিবীর দীর্ঘস্থায়ী মহামারীর নাম বিশ্বাস।"



বলাই বাহুল্য, এই বিশ্বাসটি হচ্ছে ধর্ম এবং ঈশ্বরে বিশ্বাস, এবং মহামারীটি হচ্ছে ধর্ম বা ঈশ্বরে বিশ্বাসের রোগ। ভাবটা এমন যে, সবাইকে এই রোগে আক্রান্ত হতেই হবে, সবাইকে একই গোয়ালের গরু হতেই হবে। কেউ যদি এই রোগে আক্রান্ত না হয়, তাহলেই তার আরোগ্য, অর্থাৎ নাস্তিক্য, হয়ে যায় বাকী সবার চোখে ফ্যাশন, বা শো-অফ করার উপায়।


নিচের কার্টুনটা দেখলে বিষয়টা আরও পরিষ্কার হবে। আপনি ধর্মের নামে গাছ-পালা, মূর্তি-পাথর বা গরু-ছাগল কিংবা কালো-সাদা ঘরবাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে শারীরিক কসরৎ করলে সেগুলো অস্বাভাবিক হয়না, আর কেউ যদি সেগুলো না করে, তবেই সে অস্বাভাবিক হয়ে যায়।



কার্টুনঃ "ধর্মকারী" ওয়েবসাইট থেকে নেয়া।


কী কারণে নাস্তিক্যকে শো-অফ বলা হচ্ছে ? বিশ্বাসীরা উত্তর দেনঃ "এটা সবার চেয়ে আলাদা হতে চাওয়ার একটা প্রবণতা। ধর্ম নিয়ে উলটাপালটা কিছু বললেই বিখ্যাত হওয়া যায়, বিতর্কিত হওয়া যায়। আর বিখ্যাত হওয়ার এই সহজ পথ কে ছাড়বে ?"


ধর্ম এবং ঈশ্বর বিশ্বাসীদের বড় সমস্যা হচ্ছে, যে মাপকাঠিতে তারা নাস্তিক্য সম্পর্কে মন্তব্য করেন, সেই একই মাপকাঠিতে তারা নিজেদের একবারও মেপে দেখেন না। যদি দেখতেন, তাহলে হয়তো বিষয়গুলো তাদের কাছে আরও আগে ধরা পড়তো এবং তারা প্রশ্ন তুলতেন না। আসুন এবার তাদের তোলা সেই প্রশ্নের মাপকাঠিতেই তাদের বিচার করা যাক।


নাস্তিক্য তো একটা ফ্যাশন !

মানুষের বিশ্বাস যদি হয় ফ্যাশন বিচারের মাপকাঠি, তাহলে ইসলাম একটা ফ্যাশন, হিন্দুধর্ম একটা ফ্যাশন এবং পৃথিবীর যাবতীয় বিশ্বাস হচ্ছে ফ্যাশন। সেই অনুযায়ী, আপনি যদি ধর্ম পালন করে ফ্যাশন দেখাতে পারেন, তাহলে আমি ধর্ম পালন না করে ফ্যাশন দেখাতে পারবো না কেন ?

না মানে, বলতে চাইছি এটা বাকী সবার চেয়ে আলাদা হওয়ার একটা চেষ্টা, তাই না ?

নির্দিষ্ট ধর্ম পালনই হচ্ছে আসলে মানুষের চেয়ে আলাদা হওয়ার চেষ্টা। আপনি একটি ধর্ম গ্রহণের সাথে সাথে ওই ধর্মটি বাদে পৃথিবীর বাকী ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠী থেকে আলাদা হয়ে গেলেন, তাই নয় কি ? শুধু তাই নয়, এটা আপনাকে একেবারেই আলাদা করে দেবে। এক ধর্মের বিশ্বাসের সাথে আরেক ধর্মের বিশ্বাসে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। এক ধর্ম অন্য ধর্মকে বাতিল করে দেয় এবং অন্য ধর্মাবলম্বীকে ভালো চোখে দেখে না। তাই আপনাকে অন্যান্য ধর্মাবলম্বী থেকে শত হাত দূরে থাকতে হবে। তার মানে কী দাঁড়াচ্ছে ? ধর্ম পালন হচ্ছে বাকী সবার চেয়ে আলাদা হওয়ার চেষ্টা।

এটা আসলে হুমায়ুন আজাদ বা তসলিমার মত বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা !

তাহলে ইসলাম পালন হচ্ছে জাকির নায়েকের মত বা হিন্দু ধর্ম পালন করা হচ্ছে সাঁই বাবার মত বিখ্যাত হওয়ার প্রচেষ্টা। একজন হুমায়ুন আজাদ বা তসলিমা বাংলাদেশে বিখ্যাত হয়েছেন বটে, কিন্তু ধার্মিক হয়ে তো আরও ব্যাপক লাভ। বিশ্বজুড়ে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্ববিখ্যাত ধার্মিক জাকির নায়েকের মত কোনও বিশ্ববিখ্যাত নাস্তিকের নাম বলুন তো, যাকে সাধারণ মানুষ এক নামে চিনবে ! পারবেন কি ?

তো নাস্তিক্যের হাত ধরে যদি জনপ্রিয়তা না-ই আসে, তাহলে নাস্তিক্য আর জনপ্রিয় হওয়ার হাতিয়ার থাকলো কীভাবে ? আমি তো বরং বলতে পারি, জনপ্রিয় হওয়ার নয়, বরং নাস্তিক্য হচ্ছে ধর্ম-সংবেদনশীল দেশে বেঘোরে নিজের প্রাণটা হারানোর হাতিয়ার। জনপ্রিয় হুমায়ুন আজাদ বা জনপ্রিয় তসলিমার পরিণতি আপনাদের মত ধার্মিকেরাই কী করেছে, তা কি আমরা দেখিনি ? C.T.V.N. চ্যানেলের অনুষ্ঠানে ভারতীয় যুক্তিবাদী প্রবীর ঘোষকে খুনের হুমকি দিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের সেরা ধনী জ্যোতিষী "আচার্য্য সত্যানন্দ"।

কে চায় অযথা জনপ্রিয় হতে গিয়ে নিজের গলা "বিসমিল্লাহ" বা "ওঁ" লেখা ছুরির নিচে পেতে দিতে?

না ঠিক আছে, নাস্তিক তুমি, ভালো কথা। কিন্তু আজকাল তো অনেকে না জেনেই নাস্তিক হয়। কিছুই জানে না, অথচ বলছে আমি নাস্তিক। ফেসবুকে রিলিজিয়াস ভিউ দিয়েছে এথিস্ট। এগুলো আসলে ভাঁওতাবাজী এবং লোক-দেখানো কাজ।

নাস্তিক হওয়ার জন্য যে অনেক কিছু জানতেই হবে, এটা কে বলেছে ? আপনি যখন নিজেকে ধার্মিক হিসেবে পরিচয় দেন, তখন কি কেউ জানতে চায়, যে আপনি আপনার ধর্মের যাবতীয় বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানেন কিনা ? ফেসবুকে যখন আপনি রিলিজিয়াস ভিউ থিস্ট লেখেন, তখন কি কেউ ভ্রু কুঁচকে বলে, আপনি কেন থিস্ট ? যে কোনও বিষয় সম্পর্কেই জানা ভালো, কিন্তু জানা বিষয়টাকে আপনি শর্ত হিসাবে দিতে পারেন না। আপনি যেমন সবকিছু জেনে ধার্মিক হতে বাধ্য নন, আমিও সবকিছু জেনে নাস্তিক হতে বাধ্য নই।

ধর্মকারী ওয়েবসাইটের পরিচালক একজন ধর্মপচারকের মতেঃ

যদি গুটিকয়েক বালক-বালিকা নিজেদের পরিচয় দেয় নাস্তিক হিসেবে "জাস্ট ফ্যাশন" বলে, তাতেও তো ক্ষতিকর কিছু নেই। ফ্যাশন মানেই খারাপ, তা তো নয়! বরং ধার্মিক হবার ফ্যাশন, এটাই সত্যিকারের ফ্যাশন। কারণ, অধিকাংশ পাবলিক কিছু না জেনে ধর্মবিশ্বাস নামের গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসায়।

যারা পারিবারিক সূত্রে কোনও একটা ধর্ম পেয়েছে এবং লালন করে চলেছে, তারা কিন্তু না জেনেই ধার্মিক। বেশির ভাগ ধার্মিকই না জেনে ধার্মিক। একটা শিশুর জন্মের সাথে সাথেই সে পরিবারের ধর্মটা পেয়ে যায়। তখন কিন্তু কেউ প্রশ্ন করে না যে, এই শিশু জেনে ধার্মিক, নাকি না জেনে ধার্মিক।

তাই, না জেনে ধার্মিক, আর না জেনে নাস্তিক সমান কথা। এটা একজন মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতার ওপরে নির্ভর করে যে সে কী মানবে বা মানবে না। সে যদি না জেনেই কিছু মানে, তাহলে যদি ভ্রু কোঁচকানোর কিছু না থাকে, তাহলে যদি কেউ না জেনেই কিছু না মানে, তাহলেও ভ্রু কোঁচকানো যাবে না।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই ভ্রু কোঁচকানোর কারণটা কী ?

মানুষ সব সময়ই চায় দলে ভারী হতে। যেমনঃ আপনার পাশের লোকটি আপনার কোনও কথার সাথে একমত হলে আপনি তাকে স্বাভাবিকভাবেই নিজের মত একজন লোক বলে মনে করেন, এবং নিজের পায়ের তলায় মাটি খুঁজে পান, একটা সমর্থন বা সাপোর্ট পান। মানুষের সাইকোলজিকাল ক্যারেক্টারই এরকম। যে কেউ নিজের মতের পক্ষে সমর্থন পেলে সুখী বোধ করে।

তা ধার্মিকেরা সুখী বোধ করুন, সমস্যা নেই। তাদের মতের সমর্থন দেয়ার জন্য পৃথিবীতে মানুষের অভাব পড়ে যায়নি। তবে নাস্তিকদের সেই সমর্থনটা দরকার হয় না। কেউ সমর্থন করবে না জেনেই নাস্তিকেরা নাস্তিক হয়। পরিবারের সমর্থন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই থাকে না, থাকে না বন্ধু-বান্ধবদের সমর্থন।

শুধু নাস্তিক্যের কারণেই যে পরিমাণ বিরূপ মন্তব্য শুনতে হয়, তাতে নাস্তিকদের কেমন লাগে ? ভালো নিশ্চয়ই লাগে না ! অ্যাকটিভ নাস্তিকদের সম্পর্ক নষ্ট হতে থাকে ধার্মিক প্রিয় মানুষগুলোর সাথে। কিন্তু এটা কি হওয়া উচিত ? নাস্তিক্যকে ফ্যাশন বা একধরনের অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে ধার্মিকেরা যে ক্রমাগত নাস্তিকানুভুতিতে আঘাত দিয়ে যাচ্ছেন, সেটা কি মেনে নেয়া যায় ?

অথচ, এই নাস্তিকেরাই যখন ধর্মের সমালোচনা করেন, তখন ধার্মিকেরা চিৎকার করতে থাকেন, "অন্য মতের ওপর শ্রদ্ধা থাকা উচিত।" এই শ্রদ্ধাটা ধার্মিকরা নাস্তিকদের মতের ওপর দেখাচ্ছেন না কেন ?

বিচার কি সবার জন্য একই মাপকাঠিতে হওয়া উচিত নয় ?
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১১ রাত ৯:১৪
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×