somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঘা এখনও পর্যটন কেন্দ্র হতে পারেন...

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দলের এমপি-মন্ত্রীর শত আশ্বাসের পরও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে রাজশাহীর বাঘা স্বীকৃতি পায়নি। অথচ বাঘা প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শনসমৃদ্ধ অন্যতম দর্শনীয় স্থান। প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো মসজিদ, যা ৫০ টাকার নোটে ও জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত শাহী মসজিদ শোভা পাচ্ছে। সুবিশাল দিঘি, মহিলাদের প্রাচীন আন্দর মহল, পুকুরের ধ্বংসস্তূপ, হজরত আবদুল হামিদ দানিশ মান্দ ও হজরত মুয়াজ্জেম দানিশ মান্দ শাহ্ দৌলাসহ ৫ সঙ্গীর মাজার ঐতিহাসিক ভ্রমণপ্রিয় মানুষের এক আকর্ষণীয় স্থান। পদ্মার তীরঘেঁষে গড়ে ওঠা ঐতিহাসিক স্থাপত্য কীর্তির প্রাচীন নিদর্শনটি দেশের অন্যান্য পর্যটন শিল্পের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পর থেকে রাজনৈতিক দলের প্রধানসহ এমপি-মন্ত্রী বাঘাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিলেও তার কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। পর্যটন শিল্পের অন্যতম আকর্ষণ হতে পারে শাহী মসজিদ। ব্যিখাত ও বহুল প্রচারিত শাহী মসজিদ এককালে এ অঞ্চলে ইসলাম প্রচারে নিবেদিত এক সাধকের প্রতি বাংলার সুলতানি আমলের অন্যতম সুযোগ্য শাসকের স্বীকৃতি ও শ্রদ্ধার নিদর্শন, যা বর্তমানে ৫০ টাকার নোটে ও ১০ টাকার ডাক টিকিটে শোভা পাচ্ছে। রাজশাহী শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার পূর্বে পদ্মা নদীর তীরে প্রায় ২৫৬ বিঘা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত দর্শনীয় শাহী মসজিদ। সুবিশাল দিঘি ও আউলিয়াদের সমাধিস্থল দরগাহ। সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৮-১০ ফুট উঁচু একটি বেদির ওপর মসজিদটি তৈরি করা হয়েছে। এর দু’পাশ দিয়ে দুটি বিশাল গেট রয়েছে। তত্কালীন বরেন্দ্র অঞ্চলের ঐতিহ্যকে টেরাকোটা তথা পোড়ামাটির কারুকাজের দেশজ নিদর্শন দিয়ে শাপলা ও লতাপাতাসহ পার্শিয়ান খোদাই শিল্পে ব্যবহৃত হাজার রকম কারুকাজ। মসজিদটিতে রয়েছে ৫টি দরজা, ১০টি গম্বুজ, ৪টি ষৌচালা গম্বুজ, ভেতরে ৬টি স্তম্ভ, ৪টি অপূর্ব কারুকাজ খচিত মেহেরাব। দৈর্ঘ্য ৭৫, প্রস্থ ৪২ ও উচ্চতা ২৪৬ দেয়াল চওড়া ৮ গম্বুজের ব্যাস ২৪ উচ্চতা ১২। মাঝখানের দরজায় ফারসি ভাষায় লেখা একটি শিলালিপি রয়েছে। প্রতিষ্ঠাকাল ১৫২৩-২৪ খ্রিস্টাব্দ। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে স্থানীয় অন্যান্য ঐতিহাসিক ইমারতের সঙ্গে শাহী মসজিদটিরও ক্ষতি হয়। পরে ১৯৭৬-৭৭ সালে তা পুনর্নির্মাণ করা হয়। মসজিদ প্রাঙ্গণের উত্তর পাশেই রয়েছে হজরত শাহ্ দৌলা ও তার ৫ সঙ্গীর মাজার। ১৯৭২ সালে এখানে তৈরি হয়েছে শাহ্ দৌলার নামে বাঘা শাহ্ দৌলা ডিগ্রি কলেজ। সুরমা মসজিদ দর্শন ও মাজার জিয়ারত করতে আসে দূর-দূরান্তের লোক। শরিক হয় শুক্রবারের জামায়াতে। লোক সমাগম বেশি হওয়ায় ভেতরে আর জায়গা ধরে না। এজন্য ৯০/৪০ ফুট একটি বাইপাস চত্বর বেঁধে দেয়া হয়েছে মসজিদের বাইরে। এছাড়া প্রতি ঈদুল ফিতরে এখানে লক্ষাধিক লোকের আগমন ঘটে। এ উপলক্ষে ঈদে বিশাল জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়। অনেকেই বলে থাকেন, শোলাকিয়ার পরই বাঘা ঈদগাহের স্থান। এ উপলক্ষে যুগ যুগ ধরে এখানে আযোজিত হয়ে আসছে বিরাট ঈদমেলা। ৫০০ বছরের অন্যতম এ স্থাপত্য কীর্তির সংস্কার ও সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৮ সালের আগস্ট মাসে ফুর্তি এফএম রেডিও গ্রামীণফোনের মাধ্যমে দেশের ২১টি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা থেকে ৭টিকে এসএমএসের মাধ্যমে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় নির্বাচনের জন্য দেশবাসীকে আহ্বান জানালে বাঘা শাহী মসজিদ প্রথম স্থান অধিকার করে। আরও আছে জহরখাকী পীরের মাজার। মূল মাজারের উত্তর পাশেই এটি অবস্থিত। কথিত আছে হজরত জহরশাহ (রহ.) ১৪ তোলা বিষ খেয়েও দীর্ঘদিন জীবিত ছিলেন। তার কবরের পাশেই রয়েছে ৩ গম্বুজবিশিষ্ট একটি ছোট মসজিদ। একই ধরনের ইট, চুন সুরকিতে গাথা সুদর্শন এ মসজিদটির দৈর্ঘ্য ২০ ফুট, প্রস্থ ১৩ ফুট।
জানা গেছে, রইস পরিবার ও বাইরের পর্দানশিন মহিলাদের জন্য তৈরি হয়েছিল মসজিদ। সম্প্রতি মাজারঘেঁষে আরও একটি মোজাইক করা নতুন মসজিদ নির্মিত হয়েছে অপরূপ কারুকাজে। এর দৈর্ঘ্য ৫০ ফুট, প্রস্থ ৫৫ ফুট, উচ্চতা ১৩ ফুট। আরেকটি অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে সুবিশাল দিঘি। বাংলার স্বাধীন সুলতান আলাউদ্দীন হুসাইন শাহ্র ছেলে নাসির উদ্দীন নুসরত শাহ্ মসজিদের সঙ্গেই জনকল্যাণে খনন করেন এ দিঘি। শাহী মসজিদ ও মাজার সংলগ্ন দিঘিটি ৫২ বিঘা জমির ওপর রয়েছে। প্রতি শীত মৌসুমে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে দিঘিতে আগমন ঘটে অসংখ্য অতিথি পাখি, যা ভ্রমণপিয়াসী মানুষের নজর কাড়ে। এখানে রয়েছে পিকনিক কর্নার। প্রতি শীত মৌসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসে বাঘায়। ১৯৯৪ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের মাধ্যমে এটি পুনর্খনন করানো হয়। নতুন করে বাঁধানো এর চার পাড়ে লাগানো হয়েছে সারি সারি নারিকেল গাছ। এতে বৃক্ষরাজি পরিবেষ্টিত দিঘি ও মসজিদের সৌন্দর্য বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভ্রমণপিয়াসী মানুষের মন কাড়তে এ স্থানের জুড়ি নেই।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×