somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেঘের দেশ সাজেক ভ্রমণ - ২য় পর্ব (লুসাই ঝর্ণা)

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাজেক ভ্যালিতে আমরা উঠেছিলাম "মেঘের ঘর" রিসোর্টে।এটি সাজেকের প্রথম গ্রাম রুইলুই পাড়ার অবস্থিত। কাঠের তৈরি রিসোর্টের সুন্দর রুম এর পাশাপাশি রুমের বারান্দা ও বতায়ন আমাদের মন কেড়ে নিয়েছে। বারান্দা থেকে লুসাই পাহাড় এবং পায়ের নিচে মেঘ দেখে আমাদের মুগ্ধতার রেশ যেন কাটছিলই না। রিসোর্টে ফ্রেশ হয়ে রুইলুই পাড়া থেকে আমরা ছুটলাম লুসাই ঝর্ণার উদ্দেশ্যে। স্থানীয় গাইড লুসাই ঝর্ণা বললেও এটি কমলক ঝর্ণা নামেই বেশি পরিচিত। চান্দের গাড়ি আমাদের ট্যুরের সম্পূর্ণ সময়জুড়ে আমাদের সাথেই থাকবে এমনভাবেই ঠিক করা হয়েছিল। চান্দের গাড়ি আমাদের লুসাই ঝর্না যাওয়ার রাস্তায় নামিয়ে দিল। রুইলুই পাড়ায় লুসাই,ত্রিপুরা ও পাঙখোয়া জনগোষ্ঠীর বসবাস আছে। লুসাই ঝর্ণা যাওয়ার জন্য আমাদের লোকাল গাইড দরকার ছিল। আমরা তিন পিচ্চি বাচ্চা ঠিক করলাম আমাদের গাইড হিসাবে।


প্রায় দেড় ঘণ্টার ট্রেকিং করে লুসাই ঝর্ণা দেখার সাধ মেটাতে হয়। আমরা যাত্রা শুরু করলাম আমাদের তিন গাইডের পিছু পিছু। কিছুদুর সিঁড়ি তারপর শুরু মূল ট্রেকিং। পাহাড়ি উচু নিচু পিচ্ছিল রাস্তা দিয়ে চলছি তো চলছিই। গাইডত্রয় বলছে একটু সামনে ঝর্ণা কিন্তু ঝর্ণার দেখা নেই। কোন কোন জায়গা একদম খাঁড়া আর খুবই দূর্গম সাথে মশার কামড় ও জোঁক তো স্বাগত জানাচ্ছেই। কেউ কেউ আছাড় পরছে আবার উঠে ট্রেকিং শুরু করছে কারন লুসাই ঝর্ণার সৌন্দর্য যে উপভোগ করতেই হবে। সর্বোচ্চ আছাড় খেয়ে রেকর্ড গড়েছে আমাদের সদ্য বিবাহিত সাদাফ ভাই। হাত ধরে রাখায় ভাবীও তার আছাড়সঙ্গী হয়েছেন একবার।


কোথাও ঘন জঙ্গল কোথাও জুম চাষ আবার কোথাও জুম ফল এসব দেখতে দেখতে আমরা ট্রেকিং করে চলেছি। আমরা সাথে লাঠি না নিয়ে আসায় জঙ্গল থেকে বাশ বা অন্যান্য গাছের ডাল ভেঙ্গে লাঠি বানিয়ে নিয়ে সামনে এগিয়ে চলছি। রাস্তা যেন শেষ হয় না। রাস্তার মাঝে পানির বোতল, ছিড়া সেন্ডেল, চিপসের প্যাকেট আমাকে মর্মাহত করেছে। সবার কাছে অনুরোধ যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে পরিবেশ নষ্ট করবেন না প্লিজ। ট্রেকিং এর রাস্তা গুলো কোন কোন জায়গায় খুবই ভয়ঙ্কর একটু আসাবধানতা আপনাকে কয়েকশ ফুট গভীর খাদে ফেলে দিতে পারে। রাস্তাগুলো হালকা ভেজা এবং পিচ্ছিল তাই আমাদের প্রতিটি কদম সাবধানে ফেলতে হচ্ছিল।


অবশেষে আমরা ঝর্ণায় পৌছালাম।ঝর্ণার মুখে গিয়ে সর্বশেষ আছাড় খেল আমাদের জিম ম্যান কাদের। এই ট্যুরে কাদেরের নতুন নামকরন করে করেছে মোরসালিন। ওবাইদুল কাদেরের সংক্ষিপ্ত নাম ওকে।


প্রাণভরে সবাই ঝর্ণার জলে স্নান করলাম। ঝর্ণার পানি খেয়ে পিপাসা নিবারণ করলাম। একগাদা ছবি উঠালাম। এবার ফিরে যাবার পালা। এমনিতে পিচ্ছিল তার উপর এবার আমাদের কাপড় ভেজা আবার আকাশে মেঘ বৃষ্টি নামবে যেকোন সময়। যাত্রা শুরু হলো কিন্তু এযাত্রার যেন শেষ নেই উঠছি তো উঠছিই। আমাদের মধ্যে সবচেয়ে ওজনদার বন্ধু তন্ময় সামনে সামনে চলছে ওকে দেখে অন্যান্য গ্রুপের লোকজন সাহস পাচ্ছে অনেকেই ওর সাথে সেলফি নিচ্ছে। তখনও আমরা জানিনা আমাদের জন্য সামনে কি অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণ পর মেয়েদের অবস্থা খারাপ হওয়া শুরু হলো। আমার বোন শশীর গলা শুকিয়ে আসছে বার বার ততক্ষণ আমাদের পানি শেষ। সুদীপ্তা বৌদি সামনে এগোতে পারছে না, তন্ময় সর্বশক্তি শেষ করে ফেলেছে এখন এগোচ্ছে মনের শক্তি দিয়ে। মনের শক্তি দিয়ে নিজে উঠতে পারলেও উঠাতে পারছে না বউকে।ওদিকে সাদাফ ভাই ও ভাবী পিছনে পিছনে কষ্ট করে করে পাহাড় বেয়ে উঠার চেষ্টা করছে। সেই সময়টা সত্যিই খুবই দুর্বিষহ ছিল। অনেক কষ্টে আমরা উপরে উঠেছিলাম সেই কষ্টের নমুনা লিখে বুঝানো সম্ভব না। এই কষ্টের কোন ছবিও তোলা সম্ভব হয় নি।

ফিরে এসে সবাইকে প্রশ্ন করা হয়েছিল আর কখনো যাবেন লুসাই ঝর্ণায়?? বেশিরভাগের উত্তর সেটাই যেটা আপনি এখন ভাবছেন।
সাজেকের খাওয়া দাওয়া,সাজেকের বৃষ্টি, মেঘ ছোঁয়া, রংধনু, কংলাক পাড়া নিয়ে পরবর্তীতে লিখবো...
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১:২৮
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×