আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের বক্তৃতায় শোনা একটা ব্রিটিশ আমলের গল্প। এক তরুণ আই.সি.এস অফিসার,বয়স বাইশ-তেইশ , ইংল্যান্ড থেকে সবে এসেছেন এদেশে চাকরি করতে । তখন এদেশে চাকরি করতে হলে অফিসারদের বাংলা শিখতে হত। না হলে বিচার বা প্রশাসন চালাবেন কেমন করে ? তাে , সেই আই.সি.এস অফিসারও কিছুটা বাংলা শিখেছেন । কিন্তু এখনও ঠিকমতাে শেখা হয় নি । অনেক বাংলা শব্দই বুঝতে পারেন না । তাে উনি একদিন অফিসে বসে কাজ করছেন , এমন সময় তার চাপরাশি দৌড়াতে দৌড়াতে ঘরে ঢুকে বলল : স্যার , মিস্টার নাজির ইজ ইটিং ঘুষ । উনি বাংলা শিখেছেন কিন্তু ঘুষ ’ শব্দটার অর্থ তখনও শেখা হয় নি । তবে নাজির সাহেব সেটা খাচ্ছেন শুনে ধরে নিলেন ঘুষ জিনিশটা খাবার জাতেরই কিছু হবে । বললেন , হােয়ার ইজ ঘুষ ? চাপরাশি বলল , কাম স্যার । বলে নাজিরের ঘরে তাঁকে নিয়ে গেল । সেখানে গিয়ে তিনি দেখলেন , নাজির সাহেব বসে আছেন , পাশে সদ্যপ্রাপ্ত ঘুষ — এককাঁদি পাকা কলা। সাহেব বললেন , হােয়্যার ইজ ঘুষ ? চাপরাশি কলার কাঁদি দেখিয়ে বলল , দিস ইজ ঘুষ স্যার । সাহেব এর মধ্যে বেশ ক'বার কলা খেয়েছেন । ভালাে লেগেছে । ফলটার পুষ্টিগুণও তিনি জানেন । ফলে নাজিরের পাশে কলা দেখে তিনি আনন্দে নেচে উঠলেন । বললেন , ইজ দিস ঘুষ ? দেন এভরিবডি মাস্ট ইট ঘুষ । ঘুষ ইজ ভেরি গুড ফর হেলথ ।
নাজিরের ঘরে যখন সাহেব কথাগুলাে বলছিলেন , তখন আমার ধারণা ,কোটি কোটি বাঙালি ঐ ঘরটার ভেতর দাড়িয়ে কথাগুলাে শুনেছিল । না হলে এমন দরজা-জানালা ছাড়া ঘুষ বাঙালি শিখল কী করে ? আর ওই যে বিদ্যাটা একবার বাঙালি শিখেছে , আর কখনাে ভােলার চেষ্টা করে নি।