somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিয়ানমারে ইসলাম বিদ্বেষি বৌদ্ধ জঙ্গির থাবায় ধর্ষিত - লুন্ঠিত হচ্ছে মানবতা ; ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বিশ্বযুদ্ধের হাতছানি দেয়

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৩:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মিয়ানমারে জাতিগত নিধনে জঙ্গি অভিযান চলছে এ ব্যাপারটি এখন গোটা বিশ্বের বোধগম্য। গোটা বিশ্বের জন্য প্রতারনার আরেক নাম আরসা। ইসলাম বিদ্বেষি বৌদ্ধ জঙ্গি অশিন উইরাথুর নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সেখানে পুতুল সরকার অং সান সু চি অনেকটায় নিরূপায়। তবে প্রথমে জাতিগত নিধনের পরিকল্পনা সূ চির না থাকলেও অভিযান শুরু হওয়ার পর মদদ দিয়েছেন তিনি ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য।

আমার মতে সূ চি গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে শুধু মাত্র ক্ষমাতর লোভ চরিতার্থ করেছেন। মূলত মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক সরকার নাম মাত্র। আসলে দেশটি এখনো পরিচালিত হচ্ছে স্বৈরশাসক দ্বারাই। ২০১২ সালে মিয়ানমার যখন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উত্তরণের পথে তখন সেনাবাহিনীর কন্সটিটিউশন (সংবিধান) এমন ভাবে করেছিল যে পার্লামেন্টে এক চতুর্থাংশ সদস্য তাদের থাকবে। সেটা মেনেই নির্বাচন করেছিল সূ চি। ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি ( এনএলডি) এখন মিয়ানমারের সরকারি দল। তবে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় এবং সীমান্ত সংক্রান্ত মন্ত্রনালয়ের কর্তৃত্ব এখন সেনাবাহিনীর হাতে।

নির্বাচনের আগে সূ চির প্রতিশ্রুতি ছিল তিনি গণতন্ত্রের পাশাপাশি সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠির সাথে শান্তি পক্রিয়া শুরু করবেন। সে প্রতিশ্রুতি যে শুধুই ক্ষমতায় বসার জন্য আইওয়াশ ছিল রাখাইনে আজ যে শান্তির বাতাস বইছে তা প্রমান করে। এ ক্ষেত্রে সু চির দলটির বক্তব্য রাখাইন রাজ্য একচ্ছত্রভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে সেনাবাহিনী। পরিস্থিতী মোকাবেলা করতে চাইছে তাদের মতো করে। সেনাবাহিনীর একটি অংশ মনে করেন নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় বসলেও রাখাইন রাজ্যের কাজ অসমাপ্ত রয়ে গেছে। সেই অসমাপ্ত কাজেরই অংশ রাখাইন রাজ্যের অভিযান। আমার মতে নাকে ক্ষত দিয়ে ক্ষমতায় বসা সূ চির কথা এখানে গুরুত্বহীন। আর যে কোন শর্তেই সূ চি ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায় সেনাবাহিনীর কন্সটিটিউশন মেনে নির্বাচন করাই তা স্পষ্ট করে। আর সু চিকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে চোখ বুজেই এসব সহ্য করে যেতে হবে।

এবার আসি রাখাইনের মুসলিমদের এবং “হারাকাহ আল ইয়াকিন ” রূপান্তরে “আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশ আর্মি ” (আরসা)’র কথায়। বছরের পর বছর ধরে মিয়ানমারে পদ্ধতিগত ভাবে চলছে মানবাধিকার লঙ্ঘন ,নোহিঙ্গাদের নাগরিত্ব স্বীকৃতি না দেয়া,আইনগত সুরক্ষা নেই,সরকারি পদে কাজ পাওয়ার অধিকার না দেয়া,খাদ্য এবং চিকিৎসা অধিকার সংকুচিত করা। সেখানে বিদ্রহ দেখা দেবে এটাই স্বাভাবিক। সেই স্বাভাবিক বিদ্রোহের জোড়ালো কোন অভিযোগ নেই রোহিঙগাদের বিরুদ্ধে। সরকার বিরোধি কোন নেতৃত্বের অস্তিত্যও নেই সেখানে। তাই বলা যায় মিয়ানমারের সংখ্যা গরিষ্ট বৌদ্ধদের ধর্মীয় উন্মাদনা থেকে মুসলিম নিধনের কাজটি করছে সেনাবাহিনী। সম্প্রতি মিয়ানমারে বৌদ্ধ ভিক্ষু অশিন উইরাথু আরাকানের মংডুতে সফর করেছেন। সেখানে রাখাইনের বৌদ্ধদের সাথে কয়েকদফা বৈঠক করেন। সংবাদ মাধ্যম সূত্রে সেখানে সেনাবাহিনীর অভিযানকে আরো জোরদার করতে বৌদ্ধদের সহযোগীতা করতে আহবান করেন। রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদি হয়ে ওঠার পরামর্শ দেন এই বৌদ্ধ ভিক্ষু।
মুসুলম বিদ্ধেষি এই বৌদ্ধ ভিক্ষুর উত্থান ২০০১ সালে। মিয়ানমারেই মুসলিম বিদ্বেষি তৎপড়তার কারনে ২৫ বছর জেল খাটেন। বিশ্বখ্যাত সাময়িকী টাইমস অশিনকে নিয়ে এক প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ছাপেন এই ভিক্ষুকে নিয়ে। যার শিরোনাম ছিল “দ্যা বুদ্বিস্ট টেরর”। রাজনৈতিক পর্যালোচনাই বলে দেয় এই বুদ্বিস্ট টেরর প্রতিশোধের আগুনে পুড়ছে রোহিঙ্গা গোষ্ঠি। তার প্রতিশোধের থাবায় ধর্ষিত আর লুন্ঠিত হচ্ছে মানবতা।

মিয়ানমারের এই জঙ্গি তৎপড়তা যখন বিশ্ববাসিকে অবাক আর উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। ঠিক তখনই আরসা’র কথা বলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করেছে মিয়ানমার সরকার। অবাক করা কথা বিশ্বের ১১তম শক্তিশালি বাহিনী মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ছে আরসা। যার কোন অস্তিত্বই নেই। চাপাতি আর দেশিয় অস্ত্র নিয়ে পুলিশের চৌকিতে হামলা করে আরসা । আর এরই প্রতিবাদে রোহিঙ্গাদের ওপর এ সেনা অভিযান। যখন মানবতা চরম বিপর্যয়ে বর্বরের মতো শিশু হত্যা ,ধর্ষণ আর নির্মম হত্যাযজ্ঞ চলছে তখন আরসা তামশা দেখেছে। মিয়ানমার সরকার আর সেনাবাহিনী যখন বিশ্বচাপে তখন আবার আরশা তার বার্তা পাঠায় শান্তিচুক্তির। অদ্ভুদ সাজানো নাটক ছাড়া আর কিছুই না। আরসা ইসলামি স্টেট গঠন করতে চাচ্ছে রাখাইনরাজ্যে। সেজন্য তারা সন্ত্রাস বিরোধী সেনা অভিযান চালাচ্ছে। অবাক কান্ড সেই অভিযানে সন্ত্রাসীদের কোন পাত্তা নেই হাজারো শিশু জন্মের পর বা আগেই পৃথিবীর নিষ্ঠুর অত্যাচারে ইহকাল ত্যাগ করছে, রোহিঙ্গা গোষ্ঠির লাখ লাখ জন সাধারণ জাতিগত ক্রোধের শিকার হয়ে নির্বিচারে নির্মম হত্যার শিকার হচ্ছে,মাতৃভূমি ছাড়া হচ্ছে লাখ লাখ জনতা। আমি বলবো বর্বর ধর্মীয় জঙ্গিদের গণহত্যার অপবাদ ঢাকতেই আরসা তাদের নিজেদেরই সৃষ্টি অস্ত্র।

বিশ্ব আজ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আর গণতন্ত্রের পক্ষে লড়ছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রাষ্ট্র গড়তে শপথ নিয়েছে বিশ্ব। তাই অবশ্যই বিশ্ব নেতৃত্ব আজ মিয়ানমারের বৌদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠির কাছে হার মানবেনা। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শান্তিপ্রিয় বৌদ্ধ ধর্মালম্বিরাও এখানে জোড়ালো ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। কারণ তাদের ধর্মও অবশ্যই জঙ্গিবাদকে পশ্রয় দেয়না। মিয়ানমারের এই মানবিক বিপর্যয়কে কোন ভাবেই মেনে নিতে পারেনা বিশ্বমানবতা। দায়িত্ববোধ থেকে সন্ত্রাস বিরোধি অভিযানের জন্য ফিলিপাইন, পাকিস্থান, আফগানিস্থান ও ইরাকসহ নানা দেশে সামরিক অভিযান চালিয়ে সফল হয়েছে যুক্ত রাষ্ট্র। সাদ্দাম-গাদ্দাফিসহ অনেক শক্তিশালির বিরুদ্ধে গণহত্যার বিচারে যারা সফল তারাকি মিয়ানমারের জঙ্গিবাদের কাছে নতি স্বিকার করে নেবে। যদি মিয়ানমারকে ছাড় দেয়া হয় তাহলে প্রশ্নবিদ্ধ হবে মার্কিণ সম্রাজ্যবাদ। তাহলে গুলিয়ে যাবে আলকায়দা, আইএস, লাদেন, ইরাক, আফগানিস্থান, পাকিস্থান, সাদ্দাম, গাদ্দাফি, ইসলামী রাষ্ট্র, বৌদ্দিশ রাষ্ট্র, খ্রিষ্টপ্রধান রাষ্ট্র এসব। সৃষ্টি হবে ধর্মীয় উন্মাদনা। মুসলিমরা ধরেই নেমে সন্ত্রাস বিরোধি অভিযানের নামে জাতিগত নিধনে নেমেছে মার্কিণ সম্রাজ্য। শেষতক ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হাতছানি দিতে পারে বিশ্ব যুদ্ধ। বিশ্ব শান্তির জন্য যারা কাজ করছেন এটা তাদের ভাবার বিষয়। বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছে সে জন্য বাহবা আর ত্রান পাঠালেই হবেনা । রোহিঙ্গাদের মাতৃভূমির অধিকার নিশ্চিত করে শাসক গোষ্ঠির গণহত্যার বিচারের মাধ্যমে মিয়ানমারের গণতন্ত্রত আর বিশ্বমানবতাকে জঙ্গি বা সন্ত্রাসবাদের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।


সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×