১.
রোববার ভোরসকাল। আমি মূলত: সান্ধ্যকালীন নির্জনতায় নিমগ্ন হতে বেশি ভালোবাসি। তাই প্রত্যহ সন্ধ্যায় নিয়ম করে দু’ঘন্টা হাটা হয়। নিজেকে সময় দেওয়া ছাডাও শরীরের যত্নের জন্য আমি বিশ্বাস করি এই ভ্রমণ খুব বেশি প্রয়োজন। আধার আর স্তব্ধতার যে এক অন্য সমীক্ষা তা সমুদ্রহাওয়ার সাথে খুব বেশি আত্মিক, সে রকম একটা প্রতিরুপের সাথে আমি নিজেকে গেথে নিয়েছি। তাই সারাদিন সবরকম কোলাহল আর ব্যস্ততায় নিজেকে সমার্পিত করে, সূর্য্য ডোবার পর আমি সহসাই পরিতৃপ্ত হয়ে নেমে আসি অন্ধকারের নুডিপাথর ঘেরা নির্জনতার মসৃন ছায়াপথে।
আমি দেখি নক্ষত্ররাজী, নিহারিকার চলাচল, আসমানব্যাপি জ্যোৎস্নার কারুকাজ, অপার্থিব হিমে সমুদ্রগামী জাহাজের ম্লান আলো, ফসফরাস ঢেউ, মাঝদরিয়ায় জ্বলে থাকা উইন্ডমিলের সাংকেতিক আলো। কখনও বা কোন কোন শখের শিকারী হুইল ছিপ ফেলে অপেক্ষার চুরুটে দম নেয়- তাদের দমকে উঠা অস্পষ্ট আলোয় শুধু একজোডা তীর্যক চোখ ছাডা আর কিছুই নজরে আসে না। আমি প্রায়শ: ভাবি, তাদের সাথে কোনদিন দাডিয়ে মাছ ধরার নিয়ম আর কলাকৌশলের ছবক নেব- আমার সেই কথা বলা হয়ে উঠেনি আজও!
সন্ধ্যার বাতাসে একরকম মায়া লেগে থাকে যেন। আমি কখনও চলাচলের রাস্তার পাশে রাখা কাঠের বেন্চিতে বসি। সমুদ্রমূখি হয়ে। বাতাসী মায়ায়। কোন কোন বেন্চে নামফলকে কারো স্মৃতিতে উৎসর্গীকৃত নাম থাকে। বেন্চের কোনায় ফ্লাউয়ার স্টান্ডে ফুল রাখা থাকে। কাগজের ফুল। প্লাস্টিকের ফুল। আমি আমার সাথে করে আনা ছোট টর্চলাইট জ্বেলে মাঝে মাঝে নামগুলো পডে নিই। মৃত মানুষের নাম। স্মৃতির সমীপে করুনার আহুতি।
যেসন্ধ্যায় বৃষ্টি নামে, আমি সেসময় পাথুরের স্তুপের পাশে নির্মিত একটা ছাউনিতে যেয়ে বসি। সেখানটাই কিংবা বলা যায় তার নিচে ভেঙে পডে নিযুত ঢেউ। বৃষ্টির মখমলে আচ্ছদিত ফসফরাস ঢেউ। বৃষ্টির ঝাপটা আর সমুদ্রের ছলাৎছলাৎ ভেদ করে আমি কখনও আকাশে তাকাই, অন্ধকারে- বৃষ্টিতে!
(ক্রমশ