somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রকৃতির সবকিছুই রূপান্তর, এখানে কোন কিছু সৃষ্টি হয় না

২৭ শে জুন, ২০২৩ সকাল ৭:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে যা কিছু আছে তার সব কিছু নিয়েই প্রকৃতি। এই পৃথিবী, জীব জগত, মানুষ সব কিছুই প্রকৃতির অংশ। মানুষের চিন্তা প্রসূত জগতের বাইরে যা কিছুর অস্তিত্ব রয়েছে সবই প্রকৃতি। প্রকৃতির উদ্ভব এক অতীব উত্তপ্ত ও অতীব সংকুচিত অবস্থা থেকে, বিজ্ঞানীরা সেই অবস্থার নাম দিয়েছেন বৃহৎ সম্প্রসারণ বা বিগ ব্যাঙ্গ। ১৩.৮ বিলিয়ন বছর পূর্বে এই ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। এর পর থেকে আজ অবধি এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সম্প্রসারণ ঘটছে। সূত্রপাতের সময় এতে তাপীয় শক্তি ছাড়া আর কিছুই ছিল না। পরবর্তীতে সম্প্রসারণের ফলে এর তাপমাত্রা কমতে থাকে এবং বিভিন্ন ধাপে আলো, বল, বস্তু কণিকার মেঘ পুঞ্জ, মৌলিক পদার্থ সমূহ, তারকা পুঞ্জ, ছায়াপথ, সৌর মণ্ডল ও গ্রহ উপগ্রহের উদ্ভব ঘটে। মহা বিশ্ব একটি ক্ষুদ্র সরল অবস্থা থেকে ক্রমশ জটিল ও বিশৃঙ্খল অবস্থার দিকে একমুখী যাত্রা শুরু করে।

মানুষ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে মহা বিশ্বের এই ইতিহাস জানতে পেরেছে। মানুষের অনুসন্ধান এই প্রাকৃতিক পরিসরেই সীমাবদ্ধ। প্রায় ১৪ বিলিয়ন বছরে প্রকৃতি যে আচরণ করেছে ও করছে, মানুষ অনুসন্ধান করে সেই আচরণগুলোই সূত্রবদ্ধ করেছে। মানুষ দেখেছে প্রকৃতি কখনো এই সূত্রবদ্ধ আচরণের বাইরে যায় না। এই সূত্রগুলি প্রকৃতি গঠনের পর থেকে কার্যকর। এর পূর্বে এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড কোথা থেকে কি ভাবে এলো সেটা জানা যায় না। এখন এ পর্যন্ত জানতে পারা প্রকৃতির নিয়মগুলো কি?

এই মহা বিশ্ব ক্রম সম্প্রসারণশীল।

পরিবর্তন হচ্ছে একমুখী। অর্থাৎ সরল অবস্থা থেকে বিশৃঙ্খল অবস্থায় যাত্রা।

তাপীয় অবস্থা থেকে শীতল অবস্থার দিকে যাত্রা।

মহা বিশ্ব তার পরিসর নিয়ে একটি সিস্টেম, যার অভ্যন্তরে রয়েছে নিজস্ব নিয়ম বিধি।

এই সিস্টেমের মধ্যেই অসংখ্য সিস্টেমের উদ্ভব ঘটেছে। যেগুলোর রয়েছে নিজ নিজ নিয়ম বিধি।

প্রতিটি সিস্টেমের উদ্ভবের পিছনে পূর্বাপর এক বা একাধিক সিস্টেমের মধ্যে রূপান্তরের সম্ভাবনা বা উপযোগিতা থাকে।

মহা বিশ্বের উদ্ভব থেকে বর্তমান পর্যন্ত যত পরিবর্তন ঘটেছে তার সবই পূর্বাপর পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত।

বর্তমানের প্রতিটি বস্তু পূর্বাপর অবস্থার পরিবর্তিত রূপ।

মহা বিশ্বের শুরুতে যে পরিমাণ শক্তি ছিল শেষ পর্যন্ত তা ই থাকবে।
কিন্তু শক্তির রূপান্তর ঘটছে পদার্থে ও পদার্থের বিভিন্ন ক্রিয়ায়।

মহা বিশ্বে যে কয়টি বল রয়েছে সেগুলো সমগ্র অণু পরমাণু, গ্রহ, নক্ষত্রের সাথে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ায় জড়িত। কোন কিছু এই প্রভাবের বাইরে নয়।

মহা বিশ্বের সিস্টেমের বাইরের কোন কিছুর প্রভাব সিস্টেমের অভ্যন্তরে কোন কিছুর মধ্যে পরিলক্ষিত হয়নি বা হয়না।

সব কিছু নিয়ম মেনেই ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া করে, কোন কিছু অলৌকিক আচরণ করে না।

নিয়ম বিধির দুটো জগত রয়েছে। একটি হোল পরমাণু ও তার ক্ষুদ্র অংশের জগত, আর একটি হোল অণু থেকে বৃহত্তর অংশের জগত।

অণু পরমাণু থেকে বৃহত্তর বস্তু জগতের আচরণ আমরা পদার্থ বিজ্ঞান থেকে জানতে পারি।

অণু পরমাণুর মধ্যে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়াগুলো আমরা রসায়ন বিদ্যা থেকে জানতে পারি।

জৈব যৌগ থেকে যখন সক্রিয় আবদ্ধ চক্রের সিস্টেমের উদ্ভব ঘটে তখন সেগুলোকে আমরা জীবাণু বিদ্যা থেকে জানতে পারি।

অসংখ্য সক্রিয় আবদ্ধ চক্র সিস্টেম অর্থাৎ বহুকোষী জীব যখন বিভিন্ন অঙ্গ, প্রত্যঙ্গ, তন্ত্র নিয়ে একটি পৃথক সিস্টেমে পরিবর্তিত হয় তখন সেগুলোকে জীব বিদ্যার মাধ্যমে জানতে পারি।

এই পৃথক সিস্টেম অর্থাৎ উন্নত জীবের মধ্যে যখন বুদ্ধিমত্তা প্রকাশ পায় এবং তাদের মধ্যে যখন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন বা সামাজিক সিস্টেম গড়ে উঠে তখন আমরা সমাজ বিদ্যার দ্বারা জানতে পারি।

কোয়ার্ক কণিকা থেকে মানুষের বুদ্ধিমত্তা পর্যন্ত সবকিছুই প্রাকৃতিক সিস্টেমের অন্তর্গত। সবকিছুই একই উৎস থেকে উৎসারিত ও পরস্পর সম্পর্কিত। কিন্তু সিস্টেম থেকে সিস্টেমের পরিবর্তন ভৌত ধর্মের সম্পর্কহীন আমূল পরিবর্তন ঘটায়।

মানুষ সহ সকল জীব ও ছোট বড় বস্তু সমূহ বিভিন্ন মৌলিক পদার্থের পরমাণু দ্বারা গঠিত। পরমাণু আবার গঠিত হয়েছে আরও ক্ষুদ্র কয়েক গুচ্ছ কণিকা দ্বারা। এই কণিকার জগতকে বলা হয় কোয়ান্টাম জগত। এই জগতের নিয়ম বিধি ও ধর্ম ভিন্ন। এই জগত ভীষণ অস্থির। এখানে তরল, কঠিন বা বায়বীয় কোন ধর্ম নেই। এখানে আছে শুধু তরঙ্গ। একটি কোয়ান্টাম ফিল্ড বা ক্ষেত্র, যা পুরো বিশ্বব্যাপী কুন্ডুলি পাকিয়ে আছে। এই কুন্ডুলিতে চলছে কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন বা অস্থিরতা। অসীম সংখ্যক তরঙ্গের উত্থান ও পতন। এই তরঙ্গগুলোই বিভিন্ন কণিকা ও বল। কণিকাগুলোর ভর আছে কিন্তু অণু পরমাণুর মত কোন কঠিনত্ব নেই। এই অবস্থা একটি সিস্টেম। এই সিস্টেম দিয়েই আমাদের দেহ সহ এই বিশ্বজগৎ তৈরি হয়েছে, যাকে ধরা যায় না ছোঁয়া যায় না। এই অদৃশ্য তরঙ্গ দিয়েই আমাদের মস্তিষ্ক তৈরি, যা আবার নিজের অস্তিত্ব নিয়ে চিন্তা করতে পারে, হাসতে পারে, কাঁদতে পারে।

তাহলে এই অদৃশ্য সিস্টেম দৃশ্যমান হোল কিভাবে? কারণ হোল সিস্টেমের পরিবর্তন। কণিকাগুলো স্ট্রংগ ফোর্স দ্বারা একত্রিত হয়ে প্রোটন তৈরি করে আর প্রোটন ইলেকট্রনকে নিয়ে তৈরি করে পরমাণু। এই পরমাণু হোল ভিন্ন এক সিস্টেম, যার ভৌত ধর্ম অলৌকিকভাবে ভিন্ন এবং দৃশ্যমান। পৃথিবীর তাপমাত্রায় এর কোনটা কঠিন, কোনটা তরল, আবার কোনটা গ্যাসীয়।

অলৌকিক যদি কিছু থাকে তাহলে সেটা আছে সিস্টেমের ভৌত ধর্মে। হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন অণু দুটোই সাধারণ তাপমাত্রায় গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে কিন্তু এ দুটো মিলিত হয়ে যখন পানির সিস্টেমে পরিবর্তিত হয় তখন স্বাভাবিক তাপমাত্রায় পানির ভৌত ধর্ম হয় তরল। দুইটা সিস্টেম গ্যাসীয় অবস্থায় ছিল। এই দুইটি সিস্টেম রাসায়নিক ভাবে একত্রিত হয়ে পানির সিস্টেমে রূপান্তরিত হলো। এখন এই পানি কেন তরল হোল এর কোন জবাব নেই। পানি অক্সিজেন ও হাইড্রোজেনের রূপান্তরিত ফল। অর্থাৎ পানি হলো প্রকৃতির রূপান্তরিত অবস্থা। অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন ছাড়া পানির সৃষ্টি অসম্ভব। মানুষ কেন কোন শক্তিই মহা বিশ্বের সিস্টেমের অভ্যন্তরে এই সৃষ্টি করতে পারে না। আবার হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের রূপান্তরের ইতিহাস এই মহাবিশ্বের উদ্ভবের সময় পর্যন্ত প্রলম্বিত।

আবার কার্বন কেন্দ্রিক জৈব যৌগগুলিতে প্রাণের কোন ধর্ম থাকে না, কিন্তু তারা যখন যৌথ অবস্থায় একটি সক্রিয় আবদ্ধ চক্রের সিস্টেমে পরিবর্তিত হয় তখন তাতে জীবনের ধর্ম প্রকাশ পায়। কার্বন কেন্দ্রিক জৈব যৌগগুলোর ভৌত ধর্ম দেখে এটা বুঝার কোন উপায় নেই যে এরা রূপান্তরিত হয়ে একটি সক্রিয় আবদ্ধ চক্রে অর্থাৎ প্রাণে পরিণত হতে পারে। এই প্রাণে রূপান্তর হওয়ার ইতিহাস তো আরও জটিল ও দীর্ঘ। মানুষ কেন কোন শক্তির পক্ষেই পূর্ব উপাদানগুলো ছাড়া এর সৃষ্টি সম্ভব নয়। এভাবে প্রাণ কোষ থেকে মানুষে রূপান্তরের ইতিহাসও অনেক দীর্ঘ ও জটিল। এই প্রক্রিয়ায় অলৌকিক কিছু নেই, সবই প্রাকৃতিক রূপান্তর।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০২৩ সকাল ৭:৩৫
১৪টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×