'পরম সত্য' কি এবং কোন পথে তার সন্ধান পাওয়া যাবে এই সম্পর্কিত চিন্তাই আধ্যাত্মিক চিন্তা।
আদিকাল থেকেই বহু মুনি ঋষি, দার্শনিক, ধর্মীয় প্রবক্তাগণ এর সন্ধান করেছেন। অনেকে নিজস্ব পথে সন্ধানও পেয়েছেন।
ধর্মীয় প্রবক্তাগণ সরাসরি সৃষ্টিকর্তা হিসেবে 'পরম সত্যের' পরিচয় দিয়েছেন এবং তাকে লাভ করার পথও বলে গেছেন।
অনেকে পরম সত্যের পরিচয় গোপন রেখেছেন কিন্তু তাকে পাওয়ার পথ কি হতে পারে তার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
অনেকে বলেছেন পরম সত্যকে প্রকৃতির মধ্যে বা সৃষ্টির মধ্যে খুঁজতে হবে, অনেকে বলেছেন জীবের মধ্যে খুঁজতে হবে, আবার অনেকে বলেছেন মানুষের মধ্যে খুঁজতে হবে।
অনেক আধ্যাত্মিক ব্যক্তিরা তো পরম সত্যকে খুঁজে পেয়েছেন এবং তার পরিচয়ও দিয়েছেন, তাহলে তাকে সবার নতুন করে খোজার কি আছে?
কারণ পরিচয় পেলেই পরম সত্যকে পাওয়া যায় না। তাকে পেতে হলে নিজের মনে যে বাঁধাগুলো রয়েছে সেগুলো ক্রমান্বয়ে কঠোর সাধনায় দূর করতে হয়। কারণ পরম সত্য নির্মল। তাকে পেতে হলে প্রথমে নিজেকে নির্মল করে তুলতে হবে।
মনের সবচেয়ে বড় বাঁধা হোল অহংবোধ। কারণ অহংবোধ নিজেকে অন্যের থেকে পৃথক করে ফেলে। কিন্তু 'পরম সত্য' একটাই। তাই এককে আসতে হলে মনের পৃথক সত্তাকে প্রথমে দূর করতে হবে।
একাকী কঠোর সাধনায় এই অহংবোধ দূর করা সম্ভব। অথবা আধ্যাত্মিক গুরুর আদেশ পালন করে করেও সেটা অর্জন করা সম্ভব। অথবা ধর্মীয় অনুশাসন পালন করতে করতেও সেই অবস্থায় পৌঁছানো সম্ভব। তবে অনুশাসন পালন করলেই নির্মল হওয়া যায় না, অনুশাসন অহংবোধ কমাতে সাহায্য করে যদি তার লক্ষ্য থাকে অহংবোধ কমানো।
জন্মের পর শিশু অবস্থায় মানুষ থাকে নির্মল। কিন্তু তার শ্রেণী অবস্থান তার প্রাথমিক অহংবোধ তৈরি করতে থাকে। বড় হতে হতে সে সবদিক থেকে অন্য সবাইকে ছাড়িয়ে যেতে চায় এবং তার মধ্যে অহংবোধ বাড়তে থাকে। কারো কারো অহংবোধ এত বেড়ে যায় যে, যেকোনো পন্থা অবলম্বন করতে পিছপা হয় না, পরিশেষে তারা মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়ে উঠে।
অন্যদিকে 'আমি সবার থেকে ভাল' (আসলেই সে হয়তো ভাল কাজ করে), এই বোধও অহংবোধ জাগ্রত করে। ভাল হওয়া আর নির্মল হওয়া এক জিনিষ নয়।
অহংবোধের কিছু উদাহরনঃ কেউ যখন কেতা-দুরস্ত পোশাক পরিধান করে থাকে তখন সে নিজেকে চারিপাশের কিছু মানুষ থেকে উন্নত মনে করে এবং তার মধ্যে অহংবোধ তৈরি হয়। আধ্যাত্মিক গুরু তখন তাকে সব সময় সাদা বস্ত্র পরিধান করার আদেশ দেন। সে যদি সাদা বস্ত্র পরিধান করতে থাকে তাহলে পোশাক নিয়ে তার যে অহংবোধ ছিল সেটা কমতে থাকে।
এইভাবে ধর্মীয় অনুশাসন অহংবোধ কমাতে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু মন বড় বিচিত্র! সাদা বস্ত্র পরেও সে নিজেকে অন্যের থেকে উন্নত এই অহংবোধের শিকার হতে পারে।
তাই উত্তম পথ হোল সরল পথে থাকা, সরল জীবন যাপন করা, নিজের কাজ নিজে করা, অন্যের মনে আঘাত না দেয়া।
আসলে মানুষ নিজের মনের মধ্যে নিজে একা। শুরুতে সে ছিল নির্মল, পরম সত্যের কাছাকাছি। পরম সত্যে পঙ্কিলতা নেই। কিন্তু দিনশেষে পরম সত্য পঙ্কিলতায় চাপা পড়ে যায়।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫০