কিছুদিন আগে পুলিশ বিভাগ থেকে তথ্য মন্ত্রনালয় এবং বিটিআরসি’র কাছে ৮৭টি দেশী পর্ণো সাইট বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে। অনেকেই একে সাধূবাদ জানিয়েছেন। ব্লগেও ২/৩ টা পোষ্ট এসেছিল বলে মনে পড়ে। আমার কিন্তু সেদিন এই খবরটা পড়ে খূব হাসি পেয়েছিল। মনে হয়েছিল গোড়া না কেটে এরা আগা ছেটে দেয়ার সুপারিশ করছে।
একটা ছোট ঘটনা শেয়ার করি। ১৯৮৫ সালের দিকে একজন ফ্রিল্যান্স ফটো সাংবাদিকের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল। তার কাছে সেবার আমি বেশ কিছু ন্যুড এবং সেমি ন্যুড ছবি দেখেছিলাম, ছবিগুলো তারই তোলা আর মডেলরা ছিল সবাই এদেশেরই। মডেলরা ছিল মধ্যবিত্ত বা নিম্ন-মধ্যবিত্ত ঘরের আর এদের স্বপ্ন ছিল ঢাকাই ছবির নায়িকা হ্ওয়ার। পরিচালক আর প্রযোজকদের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্যই তারা এসব ছবি তুলতো। অবশ্য এইসব ছবি নাকি চড়া দাম্ওে বিক্রি হতো। ন্যুড ছবিগুলো সেকারণেই তোলা হয়েছিল।
পাঠক, উপরের ঘটনা থেকে কয়েকটা ব্যাপার মাথায় গেথে নিন। সালটা ছিল ১৯৮৫, সেসময় বিনোদন বলতে বিটিভি আর ঢাকাই ছবি। তখন অবশ্য ভিসিআর চালু হয়েছে, তবে তা মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। তবে বেগমবাজারে হিন্দি-ইংরেজী ছবির পাশাপাশি ব্লু ফিল্ম ও দেখছে কেউ কেউ।
গত শতাব্দী ছেড়ে চলে আসুন এই শতাব্দীতে। ভিসিআর / ভিসিপি’র যুগ পার করে আমরা এখন স্যাটেলাইটের যুগে। ইন্টারনেট ছাড়াও নানারকম প্রযুক্তি পণ্য আমাদের নিত্য সঙ্গী। আর শুধূ উচ্চবিত্ত না, মধ্যবিত্ত্ও আজকাল ব্যবহার করছে এসব।
আর এই প্রযুক্তি পণ্যের প্রথম চমকটা বোধ হয় আমাদের দেখিয়েছিল সুমন। রিসেপশনিষ্ট, বিমান সংস্থার কর্মী আর প্রাইভেট ইউনির ছাত্রী – এই ৩ জন ছিলেন সুমনের প্রতারনার শিকার। সে সময়ের পর পদ্মা নদীতে আরো পানি গড়িয়েছে, পরিবর্তিত হয়েছে আমাদের মনমানসিকতা এবং এখন্ও হচ্ছে। বিয়ের আগে দৈহিক মিলনে যেমন আপত্তি নেই অনেকের, তেমনি আপত্তি নেই সে দৃশ্যাবলী ক্যামেরায় ধারনের। অনেকেই ন্যুড ছবি তুলছে সজ্ঞানেই। এখন আর সুমনের মতো গোপনে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে এসব করতে হচ্ছে না। এসবই আবার চলে আসছে পর্ণো সাইট গুলিতে, ছড়িয়ে পড়ছে মোবাইল থেকে মোবাইলে। তবে ব্যতিক্রম সবসময়ই আছে এবং থাকবে।
পাঠক, প্রশ্ন করতে পারেন এগুলো যে সজ্ঞানে হচ্ছে কিভাবে বুঝলাম। আপনি যদি কখন্ও কোন দেশী পর্ণো সাইট না দেখে থাকেন, তবে এই লেখাটা পড়ার পর যে কোন একটায় ঢু মারুণ। একটা -দু’টো ভিডিও ক্লিপ দেখুন, কয়েকটা ষ্টিল ছবি দেখুন। আপনি যদি জীবনে একবারও ক্যামেরায় ছবি তুলে থাকেন, আপনি আমার কথাটা ধরতে পারবেন।
আগে এইসব ছবি তোলা হতো নিতান্তই অর্থনৈতিক প্রয়োজনে। কিন্তু বর্তমানের পরিপ্রেক্ষিতটা আসলে কি ? অর্থনৈতিক প্রয়োজনে হয়তো এখন্ও কেউ কেউ এসব করছেন বা করতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু বাকিদের কাছে হয়তো বা সেটা যুগের হাওয়া। আর ছবি তুলছে হয়তো সামান্য সংখ্যক ছেলে-মেয়ে। এর বাইরে হয়তো একটা বড় অংশ আছে যারা বিয়ে বহির্ভূত দৈহিক সম্পর্কের ব্যাপারে নেভার মাইন্ড। পর্ণো সাইট থাকা না থাকা কি এদেও উপর কোন প্রভাব ফেলবে ? মনে হয় না।
তাহলে আমি কি চাইছি এই সাইটগুলো টিকে থাক ? সেটাও আসলে না। আমি চাইছি একেবারে গোড়ায় হাত দেয়া হোক। যেখান থেকে আমাদের মধ্যবিত্তের মনমানসিকতা পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে, সেটাকে রোধ করতে হবে সর্বাগ্রে।
তাহলে সেই গোড়াটা কোথায়। আমার মতে সেটা স্যাটেলাইট চ্যানেল, আরেকটু গভীরে গিয়ে বললে ভারতীয় চ্যানেল। কম্পিউটার, ইন্টারনেট ঘরে ঘরে নেই। কিন্তু টিভি সবার ঘরেই আছে, এমন কি নিম্নবিত্তদের ঘরেও। কি দেখছি আমরা ? হিন্দি সিনেমার সাথে বস্তাপচা সব সিরিয়াল। পরকীয়া যেখানে মূল উপজীব্য। এমন কি ভারতীয় বাংলা চ্যানেলগুল্ও কম যায় না। এগুলো এমনই স্লো পয়জনিং যে মানসিকতা কখন কিভাবে চেঞ্জ হয়ে গেছে কেউ টের পায় না। সাথে আছে ড্রেসআপ-গেটআপের জৌলুস। শুধূ মেয়েরা বা মায়েরা না, ছেলেরাও তো চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে। মেয়েকে না হয় আগলে রাখছি, বাইরে গিয়ে ছেলেটা আসলে কি করছে জানি কি আমরা। কেমন একটা নেভার মাইন্ড টাইপ মেন্টালিটির খপ্পরে পড়ে যাচ্ছি আমরা সবাই।
চোখ বন্ধ করলেই কি আর প্রলয় বন্ধ হবে। এইসব সাইট বন্ধ করে আসলে কিছু’ই হবে না। বন্ধ করতে হবে আসলে এই নেভার মাইন্ড হয়ে যাবার ধারাটা।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:৪১