somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসুন (অ) শালীন হই

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি পত্রিকা পড়া বাদ দিয়েছি। আর ভাল লাগে না। কাগজ খুললেই হয় মারামারি নয় দুর্নীতি না হয় অন্য কোন অস্থিরতা। আমি জানি এটা আমি শুধু আমার নিজের ভাল লাগার জন্যই করছি। কিন্তু কিছু দিন থেকেই আমি ফেসবুকে ঢুকতেই ভয় পাচ্ছি। আমার বন্ধু-মহল খুব আগ্রহ সহকারে দিল্লির ধর্ষিতা মেয়েটির ছবি, তার জীবনী কিংবা তার উপর ঘটে যাওয়া দুর্বিষহ অত্যাচারের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ বেশ ফলাও করে শেয়ার করছেন। বেশ ভয়ঙ্কর। ভাবলাম যাক এ সমস্যা আমাদের দেশে নেই। ভাগ্যের পরিহাস কিছুদিন পর জানতে পারলাম আমাদেরই এক বোনকে টাঙ্গাইলে গণ ধর্ষণ করা হয়েছে। কি নির্মম, কি নির্মম। মেয়েটি নাকি পুরুষ দেখলেই ভয় পাচ্ছে তাকে হাই পাওয়ারের ঘুমের ওষুধ দিয়েও ঘুম পাড়ানো যাচ্ছে না। অবশেষে জানলাম দোষীদের ধরা হয়েছে যাদের মধ্যে তার একজন বান্ধবীও আছে। কি জঘন্য। ঘটনাটা এখানে থেমে থাকলেই আমি খুশি হতাম। যাক পশুগুলো ধরা পড়েছে। কিন্তু আমি খুশি হতে পারলাম না। নানা ধরনের ধর্ষণের কাহিনী আসতে থাকলো। আমি বুঝতে চেষ্টা করলাম ঠিক কি হচ্ছে। শীত কি আমাদের ছেলেদের যৌন ক্ষমতা হঠাৎ বাড়িয়ে দিয়েছে। নাকি ভায়াগ্রার অনুমতি দেয়াতে আমাদের ছেলেরা তার ব্যাবহার পরীক্ষা করে দেখছে। নাকি দিল্লির মত তারাও পত্রিকার হেডলাইনে আসার প্রাণান্ত চেষ্টা চালাচ্ছে। ছেলে হিসাবে নিজেকে খুব ছোট মনে হল। ভাবলাম যাক আমরা যারা শিক্ষিত তারতোও আর এটা করছে না। কিন্তু আমাকে হতাশ করল আমাদের ছেলেরা। সাভারের ঘটনায় আটক ছেলেদের কয়েকজন নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। আমি কিঞ্চিত রেগে গেলাম। চিৎকার করে বলতে চাইলাম শূয়রের জাত তোরা কি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িস না বেশ্যা-বিদ্যালয়ে পড়িস। কিন্তু পারলাম না। কারণ আমি নিজেকে একটু সুশীল ভাবি কিনা। সুশীল সমাজ নাকি একগালে চড় দিলে আরেক গাল পেতে দেয়। এখনো পুরোপুরি সুশীল হতে পারিনি। মানে একগালে চড় খেলে আরেক গাল পেতে দেয়ার মত সুশীল হইনি আরকি। একগালে চড় খেলে গাল ঢলতে ঢলতে পালিয়ে বাঁচি আর কি।

যেহেতু আমি আধা সুশীল তাই পুরো সুশীলদের অনুকরণ করার চেষ্টা করি। তাদের মতই আমিও পাশ কাটিয়ে গেলাম পুরো ধর্ষণের ঘটনাগুলো। ভাবলাম আমাদের দেশে আন্দোলন করার লোকেরতো অভাব নেই। কোন কারণ ছাড়াই আমরা গাড়ি ভর্তি গাড়িতে আগুন দিতে পারি আর এতো বড় ঘটনা প্রতিবাদে আমাদের আন্দোলনকারীরা অবশ্যই কিছু একটা করবে। আমি অবশ্যই সেটাতে অংশগ্রহণ করবো। কিন্তু তেমন কিছুই দেখলাম না। আমাদের মিডিয়া ব্যাপারটা নিয়ে খুব বেশী উচ্চবাচ্যও করছে না। বুঝতে পারলাম আমার এখনো অনেক কিছুই জানতে হবে পরিপূর্ণ সুশীল হওয়ার জন্য। ঘটনাগুলো এভাবেই হয়ত মেনে নিতে পারতাম বাকি সব ব্যাপারের মত। এদেশে থাকতে থাকতে আমাদের অনুভূতিগুলো যা হয়েছে তাতে এটা নিয়ে তেমন কিছু হবে না। ভেবেছিলাম ভুলে যাব। পারলাম না।

আমার ব্লগিয় কিছু ভাই এবং আমার মহাজ্ঞানী কিছু বন্ধু তারস্বরে চেঁচিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছে যে ধর্ষণের ঘটনাগুলো মেয়েদের কারণেই হয়েছে। তাদের যে পোশাক পরা দরকার তারা সে পোশাক পরেননা। তাদের যেভাবে থাকা দরকার তাদের সেভাবে থাকে না। তাইতো ধর্ষণের মত ঘটনা ঘটছে। আমি বোঝার চেষ্টা করলাম আসলে বিজ্ঞরা কি বলার চেষ্টা করছেন। বুঝতে পারলাম উনারা বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে মেয়েদের শালীন পোশাক পরে থাকতে হবে। কিন্তু শালীন পোশাকের সংজ্ঞা আমি কোথাও খুঁজে পেলাম না। অনেকেই হয়ত বলবেন আমি আঁতলামো করছি। কিন্তু মোটেও না। জাতীয় পোশাক কি তা বের করার চেষ্টা করলাম। তাতে যা আসলো তাতে খুব একটা খুশি হলাম না। শাড়ী এবং লুঙ্গি। দুটোই আমার কাছে অশ্লীল। পৃথিবীর কোথাও মনে হয় হুড-খোলা কোন পোশাক শ্লীল পোশাক হিসাবে আসতে পারে না। আমি কিছুটা বিভ্রান্ত হলাম। বুঝতে চেষ্টা করলাম কেন শ্লীল পোশাকের কথা আসছে। এটা-তো ঝোপ জঙ্গলের পৃথিবী না। এটা মানুষের জগত। এখানে আমি বুঝতে পারি কখন আমাদের কাকে সম্মান করা উচিত। কখন কাকে গালি দেয়া উচিত। কারণ এটাই স্বাভাবিক। আমাদের বোঝার জ্ঞান আছে। আমরাতো পশু না। ঝোপের মধ্যে চুপ মেরে থাকবো আর খাবার আসলেই ঝাঁপিয়ে পড়বো। আমরাতো মানুষ। আমরা ইচ্ছে হলেই পাশের বাড়ির মেয়ের উপর হামলে পড়তে পারি না। কিন্তু কিছুটা অপ্রস্তুত হলাম। যারা বলছেন শালীন পোশাক পড়া উচিত তারা নিশ্চয় আমার থেকে বেশী বুঝে। তারা নিশ্চয় পাশের বাড়ির মেয়ের বুকের ওড়না সরে গেলে সেদিকে তাকিয়ে জিব চাটা শুরু করেন। অনেকটা শিয়ালের মুরগির খোয়ারের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ার মত। আমার বিজ্ঞ বন্ধুরা মনে হয় শিয়ালের মত সুযোগে অপেক্ষায় থাকেন, কখন পাশের বাড়ির মেয়েটা একাকী রাতের বেলা কাজ শেষে বাসায় যাবে। তার পর তিনি বা তাহারা মেয়েটাকে গণ ধর্ষণ করবেন। এরপর তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে তুলতে বলবেন "আমার কোন দোষ নেই সব দোষ ওই মেয়েটার। সে কেন এতরাতে একাকী বাসায় যাচ্ছে। সে কেন লিপস্টিক পরেছে। সে কেন চুল ছেড়ে দিয়ে হাঁটছিল। সে কেন সালোয়ার কামিজের বদলে জিন্স পরেছে। শীতের রাত হয়েছে তো কি হয়েছে তাকে অবশ্যই সালোয়ার কামিজ পরতে হবে মাথায় ঘোমটা দিতে হবে। আমরা নির্দোষ" আমরা চিন্তায় পড়ে গিয়ে হাত তালি দিবো। খুশিতে আমাদের চোখের কোন চিক চিক করবে। আহারে কি হক কথাই না বলেছেন। সুশীলর বিভ্রান্ত হবেন। বলার চেষ্টা করবেন একি বলছেন আপনারা। আমাদের মত আধা সুশীলরা আরও বেশী বিভ্রান্ত হয়ে বলবো পুরো দেশটাই রসাতলে গেল।

এরপরও যদি আমার ব্লগিয় এবং ফেসবুক বন্ধুদের শালীন পোশাকের ব্যাপারে চুলকানি থাকে তবে তারা এক কাজ করতে পারেন। খিলগাঁও রেল-গেট যেতে পারেন। সেখানে একটা পাগলী আছে। উলঙ্গ থাকেন। আপনারা গিয়ে তাকে গণ ধর্ষণ করতে পারেন। সে কোথাও অভিযোগ করবে না। আর আপনারা খুশি মনে বাক-বাকুম করতে করতে শালীন পোশাককে দোষারোপ করতে পারেন। যাহ শালা এটার তো পোশাকই নেই......
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৮
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×