‘গাড়ির রঙ টা ঠিক আছে বুড়ি?’
‘হু বাবা! এবার সত্যি সত্যি আমার পতাকার মত রঙ হয়েছে বাবা!’
‘কিন্ত এটা যে কিছুটা ছোট হয়ে গেলো রে! তোর ভাই যে দুষ্টু! পেছনের এতটুকু জায়গায় থাকতেই চাইবেনা!’
‘আমি আছি না! হুহ! আমি এখন ক্লাস টু তে পড়ি। মিস বলেছে আমি এখন অনেক বড়। আমি ভাইয়াকে দেখে রাখব।’
‘সে না হয় তুই করলি। কিন্ত তোর মা? তার যত জিনিস পত্র সঙ্গে নিতে হয়!’
‘হিহিহি! বাবা সত্যি! মা দিদাকে দেখতে গিয়েও আমার ভাইয়ার সব কিছু নিয়ে যায়!’
‘হাহাহা! তোর মার কথাই শুধু বলি কেন! আমরা যখন সামনের মাসে ক্যাম্পিং করতে যাব আমি ই তো কত কিছু নেব!’
‘উহু বাবা! আমরা আগে পাহাড় দেখতে যাব! সেদিন জানো তাসমিয়া রা গিয়েছিল! খুব মজা করেছে! আমি ছবিও দেখেছি! কত্ত উপরে সব কিছু!’
‘আচ্ছা বাবা আচ্ছা। আমরা তাহলে সিলেটেই যাব। কিন্ত মা গাড়ি তো হলো। চালাবে কে বলতো?’
‘তুমি! তুমি যে সেদিন বললে তুমি গাড়ি চালানো শিখছ?’
‘হ্যাঁ মা। আমি পারি তো। কিন্ত আমি যখন অফিসে থাকব তখন তোকে মা কে ভাইয়াকে কে নিয়ে যাওয়া আসা করবে!’
‘আমাদের ও একজন আংকেল লাগবে বাবা! রিফাত দের মত!’
‘আচ্ছা মা আমরা একজন আংকেল রেখে দেব।’
‘বাবা বাবা! আমরা কিন্ত গাড়িতে করে টুনিকেও নিয়ে যাব! খুব পচা হয়ে গিয়েছে আমার কথা একদম শোনেনা জানো?!’
‘সেদিন ই না বিয়ে দিলি? এখন কথা শোনেনা?’
‘হু। ওর বরের সাথে ঝগড়া করেছে। তাই মিমুর কাছ থেকে নিয়ে এসেছি। কিন্ত খুব জেদ করে! কথা শুনতেই চায় না! এখানে সেখানে একা একা চলে যায়!তুমি বকা দিয়ে দেবে!’
‘আচ্ছা মা দেব। কিন্ত তোর ভাইয়াও তো ওর সাথে খেলে। ওর সাথে হয়ত চলে যায়!’
‘তাইতো! আমি ভাইয়াকে বলে দেব। ছোট মানুষ হারিয়ে গেলে!’
‘মা তোর কি এই বাসাতে কষ্ট হয়? আগের বাসাটা কত বড় ছিল। এখন এই যে এত কাদা পার হয়ে যেতে হয়!’
‘না তো! মা তো বলেছে! আমরা পিকনিক করতে এসেছি! কিছুদিন পরেই আমরা আবার চলে যাব! তাইনা বাবা?’
‘হু মা। যাব। তুই সাবধানে থাকিস। সেদিন মত দেয়ালের চুন আবার চোখে ফেলিস না। যে ভয় পেয়েছিলাম!’
‘আমি কি ইচ্ছে করে করেছি? খেলছিলাম তো!’
‘তোকে একদিন ওই বড় টেডি বিয়ার টা কিনে দেব। মন খারাপ করিস না।’
‘সেদিন জানো বাজার থেকে এসে মা আমাকে অনেক মেরেছিল। আমি খুব কাঁদছিলাম। পরে মা ও আমার সাথে কেঁদেছে। আমি বলেছি আমি বড় হয়ে কিনব। তারপর মা আমাকে এত্তগুলোন আদর করেছে! ’
‘ওরে আমার পাকা বুড়ি রে! তুই এত বড় হয়ে গেলি কবে! আজ কিন্ত চিংড়ি নিয়ে এসেছি। অনেক ভাত খেতে হবে! ’
‘আমি তো খাই বাবা! ভাইয়া খেতে চায় না। ওর মাছ একদম পছন্দ না!’
‘হু!’
‘তোমার কি মন খারাপ বাবা? মিস বলেছে মন খারাপ করে থাকতে হয়না! তাহলে বড় হওয়া যায়না! '
‘না রে মা। চল খেলনা গুলো গুছিয়ে ফেল তো এখন। মা ডাকছে।’
‘গাড়িটা নিয়েই যাই বাবা? দেখ আমি সব গুলো ঝুড়িতে রেখে দিচ্ছি।’
‘আচ্ছা চল। আজ আমরা গাড়িতে করে বারান্দায় যাব। তারপর খেতে বসব! কেমন?’
‘আচ্ছা বাবা!’
‘লক্ষি মেয়ে আমার!’
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:০৯